আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দফতরি-ঝাড়ুদারের কাজও করেন শিক্ষকরা

আলো ঝলমলে রাজধানীর উপকণ্ঠের এক সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি দফতরি ও কর্মচারীর কাজও করতে হয়। নামে সরকারি স্কুল হলেও দফতরি ও ঝাড়ুদার না থাকায় স্কুলের ক্লাস রুম ও বারান্দা পরিষ্কার রাখতে কখনো শিক্ষকরাও নামেন ঝাড়ুদারের ভূমিকায়। স্কুলের চারপাশে এলাকাবাসী ময়লা-আবর্জনা ফেলে। দুর্গন্ধময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্লাস করেন কোমলমতি শিশুরা। ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনে চলছে দুই শতাধিক কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীর পড়ালেখা। এই চিত্র নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের করাটিয়া আঙ্গারজোড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলের। সম্প্রতি সরেজমিন এই স্কুল ঘুরে শিশু শিক্ষার করুণ চিত্র দেখা গেছে। দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য স্কুলটিতে শিক্ষিকা রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। এ ছাড়া কাগজে-কলমে এই স্কুলের ৩৩ শতাংশ জমি থাকলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র চার শতাংশ। বাকিটা বেদখল হয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রীর তুলনায় টেবিল ও বেঞ্চের সংকট, প্রয়োজনীয় রুম না থাকায় বারান্দায় বসেও ক্লাস করতে হয় শিশুদের।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছনপাড়ার তিন কিলোমিটার ভেতরে রূপগঞ্জে করাটিয়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলটির অবস্থান। সকাল পৌনে ৯টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শিশু শিক্ষার্থীরা বই-খাতা নিয়ে স্কুলে ছুটে আসছে। অনেকের পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল ও কেডস। সকাল ৯টার দিকে স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষিকা শাহিনা পারভীন। নিজেই ব্যাগ থেকে চাবি বের করে রুমের তালা খোলেন। জিজ্ঞাসার জবাবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বললেন, স্কুলে কোনো দফতরি বা কর্মচারী নেই। বৃষ্টির সময় ছাদ চুঁইয়ে ক্লাস রুমের মেঝেতে পানি পড়ে। ভারী বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায় ক্লাস রুম। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, এসব ক্লাস রুমের বেশির ভাগ টেবিল ও বেঞ্চ লক্কড়-ঝক্কড়। কষ্ট করে বসতে হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ক্লাস রুমের জানালা ভাঙা। দরজার নিচের অংশে কাঠ নেই। দ্বিতীয় শ্রেণীর রুমে দেখা যায়, শিশুদের অনেকে বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষিকার কথা শুনছে। পঞ্চম শ্রেণীতে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস রুমের পশ্চিম পাশের দেওয়াল ভাঙা। ফ্লোর দেবে গেছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে।

স্কুলে টয়লেট আছে একটি, সেটাও ব্যবহারের অনুপযোগী। এমনকি পুরো স্কুলে পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। একটি টিউবওয়েল থাকলেও দীর্ঘদিন সেটি অকেজো পড়ে আছে। স্কুলের ক্লাস রুমের দেওয়াল ঘেঁষে সদর রাস্তা হওয়ায় যানবাহনের শব্দে পড়ালেখায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন। স্কুলের জমিতে বেবিট্যাঙ্ িস্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় স্কুলের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, সরকারি করার পর থেকে স্কুলের সংকট বাড়ছে। তিনি বলেন, যানবাহনের উচ্চ শব্দে লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘি্নত হচ্ছে। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা মনিরা বেগম বলেন, এই স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ৪৫, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৪৬, তৃতীয় শ্রেণীতে ৫৯, চতুর্থ শ্রেণীতে ৩৩ ও পঞ্চম শ্রেণীতে ২৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর আগে সকাল ৯টায় পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম ক্লাস শুরুর ঘণ্টা বাজায়। ঘণ্টার ঢং ঢং শব্দে ক্লাসে ঢোকে শিক্ষার্থীরা।

রূপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, করাটিয়া আঙ্গারজোড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলটির ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য এলজিইডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক ও কর্মচারী সংকট নিরসনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে পত্র দেওয়া হয়েছে। ভাঙাচোরা টেবিল ও বেঞ্চ মেরামতের জন্য শীঘ্রই এলজিইডি থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.