আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সকল পেশায় সফল পেশায় শীর্ষে নারী

নারীদের চার দেয়ালে বন্দী থাকার দিন আর নেই। তারা এখন পুরুষের পাশাপাশি সমশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন। নিজ যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে পুরুষের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে সাফল্য ছিনিয়ে আনছেন। 'নারীকে দিয়ে এ কাজ হবে না' কথাটি মনে হয় শীঘ্রই হারাতে বসবে। কিছুদিন আগেও চিকিৎসক, স্থপতি, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিকতা, ব্যাংকার, পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে একজন নারীর পেশা গ্রহণ করাকে সমাজ চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করত, এখন আর তা মনে করে না। সময়ের পরিক্রমায় নারীরা সম্মানজনক ও সাহসী পেশায় নিজের দক্ষতা প্রমাণ করছে। বাংলাদেশের নারীরা বিচারপতি, ডেপুটি গভর্নর, স্পিকার, উপাচার্য, পর্বতারোহী এবং প্যারাট্রুপার হওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। অর্থাৎ নারী সব ক্ষেত্রেই সমান পারদর্শী- এখন প্রমাণিত। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এ ছাড়া দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল নাজুমন আরা সুলতানা প্রথম নারী বিচারপতি হন। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কয়েকজন নারী উপদেষ্টা সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর হিসেবে নাজনীন সুলতানা নারী সমাজের কৃতিত্বকে আরও একধাপ বিস্তৃত করেছেন। গত বছর বার্লিনে বর্ষসেরা নারীনেত্রী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন নাজমা আক্তার।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, 'ধীরে ধীরে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটছে এ কথা সত্য। তবে আমি মনে করি নারীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হলেই নারীর ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত হবে।' বলা হয়ে থাকে নারী গাড়ি চালকরা পুরুষের চেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটান এবং তুলনামূলক মনোযোগী। বর্তমানে নারীদের প্রাইভেট কার চালাতে দেখা গেলেও গণপরিবহন চালাতে তেমন দেখা যায় না। এমনকি হাতেগোনা কয়েকজনকে বেতনভুক্ত গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেলেও এ সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ কারণেই মহিলাবিষয়ক অধিদফতর সম্প্রতি গাড়িচালক হিসেবে নারীদের নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অন্যদিকে গণপরিবহনের মধ্যে ট্রেন চালাতেও পিছিয়ে নেই নারীরা। ২০০৪ সালে টাঙ্গাইলের সালমা খাতুন প্রথম নারী চালক হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগ দেন। ২০০৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি লাকসাম-নোয়াখালী রুটে প্রথম ট্রেন চালান তিনি। এ ছাড়া প্রথম নারী প্যারাট্রুপার হিসেবে ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসের পানিছড়া এলাকায় একটি বিমান থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে সফলভাবে মাটিতে অবতরণ করেন। দেশের রাজনীতিতে যেমন নারীদের সফলতা রয়েছে একইভাবে দেশের বাইরেও আলোচিত নারী হিসেবে লন্ডনের হাউস অব কমনসে প্রথমবারের মতো বাঙালি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলী। এ ছাড়া খেলাধুলায়ও পিছিয়ে নেই নারীরা। বাংলাদেশের জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্যরা ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতার পাল্লা ভারী করছেন। ইতোমধ্যেই ওয়ানডে স্ট্যাটাস অর্জন শেষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাচে অপরপক্ষকে পরাজিত করার মতো সামর্থ্য অর্জন করতে শুরু করেছেন তারা। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে ওঠে আমাদের সুনাম বাড়িয়েছেন নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়ারা। বাংলাদেশের নারীরা তাদের কৃতিত্বের কারণে অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক সম্মাননাও। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসান পেয়েছেন এশিয়ার নোবেল 'ম্যাগসেসে পুরস্কার'। তিনি পরিবেশ-সুশাসন নিশ্চিত করতে আইনি লড়াই চালানোর স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ২০০৯ সালে পরিবেশের ওপর অবদানের জন্য গোল্ডম্যান পুরস্কার পান রিজওয়ানা। অপরাধ কর্মকাণ্ডে যে হারে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না নারী পুলিশের সংখ্যা। বর্তমানে দেশে ৬ হাজারের বেশি নারী পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন। নারী পুলিশরা বর্তমানে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তি মিশনেও। ফাতেমা বেগম বর্তমানে স্পেশাল ব্র্রাঞ্চে (এসবি) ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাছে যখন জানতে চাওয়া হলো পেশা কেমন লাগছে? সময় না নিয়েই বললেন, অবশ্যই ভালো। পুরুষদের কাজ আমরা অনায়াসেই করছি। দায়িত্ব পালনকালে কখনো মনে হয়নি যে নারী হিসেবে প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছি।' এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেয়েরা এখন কৃতিত্বের সঙ্গেই কাজ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে ১৩০০ নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে সেনাবাহিনীতে মেয়েদের রেগুলার অফিসার কোর্সে নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.