আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দামের রাজা ইলিশ

মাস ছয়েক আগের কথা। গ্রামে বেড়াতে গেছি। অনেকদিন পর গ্রামের যাওয়ার কারণে সবকিছুর দিকেই একটু বাড়তি আগ্রহ। বিকাল হওয়ার আগেই আমি বেরিয়ে পড়লাম গ্রাম ঘুরে দেখার জন্য। ঘুরতে ঘুরতে পাশের পাড়ায় যেতেই দেখি আমাদের বিখ্যাত সেই কাশেম ভাই তার পুকুরের শ্যাওলা পরিষ্কার করছেন।

কাশেম ভাইকে বিখ্যাত বলছি এই জন্য, যেহেতু তিনি উদ্ভট সব কাজকর্ম করার সুবাদে এলাকার সবার কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত। আমাকে দেখে কাশেম ভাই শ্যাওলা পরিষ্কারের কাজে ইস্তফা দিয়ে পাড়ে ওঠে এলেন। আমি হালকা কুশল বিনিময়ের পরে জিজ্ঞেস করলাম পুকুরে শীঘ্রই মাছটাছ ছাড়বেন কিনা। যেহেতু শ্যাওলা পরিষ্কার করছেন। কাশেম ভাই বললেন- অবশ্যই ছাড়মু।

আর মাত্র কয়েক মাস পরই পয়লা বৈশাখ। পয়লা বৈশাখে ইলিশ মাছের দাম কী পরিমাণে বাড়ে তা তো তুই জানস। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিছি পুকুরে ইলিশ মাছ ছাড়মু। কাশেম ভাইয়ের কথা শুনে আমি এত জোরে হাসলাম যে, কাশেম ভাই নিজেই খানিকটা ভয় পেয়ে গেলেন। হাসি থামার পর তাকে জিজ্ঞেস করলাম পুকুরে ইলিশ চাষের এই বলদমার্কা বুদ্ধি তাকে কে দিয়েছে।

কাশেম ভাই সাগ্রহে জানতে চাইলেন, ক্যান, কী হইছে? আমি বললাম, কী হয়েছে বুঝতে পারছেন না? ইলিশ পুকুরে চাষ করার মাছ? ইলিশ হচ্ছে লোনাপানির মাছ, বোঝা গেল? আমার কথা শুনে এবার সশব্দে হাসলেন কাশেম ভাই, তুমি কি আমারে বেক্কল মনে করো? ইলিশ যে লোনাপানির মাছ এইটা কি আমি জানি না? সেই জন্যই তো আমি দুই বস্তা লবণ কিনছি। পুকুরে ঢালমু, তারপর যখন পানি লোনা অইবো, তখন ইলিশের পোনা ছাড়মু। পাঠক, এই হলো অবস্থা। যেহেতু ইলিশের দাম আকাশচুম্বী, অতএব এর জন্য যে কোনো পাগলামি করা যেতে পারে। আর এই পাগলামির সিংহভাগই সম্পন্ন করে থাকে ইলিশ মাছ বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পরশুদিন বাজারে গেছি। এমনিতে যার কাছ থেকে সবসময় মাছ কিনি তাকে জিজ্ঞেস করলাম পহেলা বৈশাখে ভালো ইলিশ দিতে পারবে কিনা। মাছওয়ালা বলল, অবশ্যই দিতে পারমু। তবে দামটা একটু বেশি পড়ব। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী রকম? সে তার সামনে বিছিয়ে রাখা একটা ইলিশ দেখিয়ে বলল, এই সাইজের একটা ইলিশের দাম পড়ব দুই হাজার টাকা।

আমি বললাম, তুমি কি পাগল হয়েছ? এইটুকু ইলিশের দাম দুই হাজার টাকা হয় কী করে? আমি বড়জোর ছয় বা সাতশ টাকা দিতে পারি। ইলিশওয়ালা কিছুক্ষণ আমার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে থাকল। আমি স্থানত্যাগ করলাম। স্থানত্যাগ করলাম বলতে পাশের দোকানে গেলাম মাছ কেনার জন্য। এ সময় ইলিশওয়ালা আমাকে হাতের ইশারায় ডাকল।

যেহেতু সে 'ইশারায় শিষ দিয়ে' আমাকে ডাকেনি বরং হাতের ইশারায় ডেকেছে, তাই তার ডাকে সাড়া দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেন ডেকেছ। ইলিশওয়ালা বলল, আপনে ইলিশ মাছের যেই দাম বললেন, এই দামটা আমার বাক্সে যত ইলিশ আছে, সবগুলায় শুনছে। এত অল্প দাম বলার কারণে ইলিশগুলো মনে যেই কষ্ট পাইছে, এই কষ্টে সবগুলা ইলিশ 'ইস্ট্রোক' কইরা মইরা গেছে। ইলিশওয়ালার কথায় আশপাশের সব মাছওয়ালা আওয়াজ করে হাসতে লাগল। বুঝলাম ইলিশের দাম কম বললেও হাসির পাত্র হতে হয়।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.