আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যাম্পাসে বেপরোয়া ছাত্রলীগ

বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তাদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। নিজ দলীয় কর্মীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, পিটিয়ে হত্যাসহ কিছুই বাদ যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহেই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছেন দুই ছাত্রলীগ নেতা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ।

গত এক মাসে নিজ দলের অভ্যন্তরে ও বিরোধী ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে অন্তত ১৫ বার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে তারা। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে পাঁচ নেতা-কর্মী। এদের নিয়ন্ত্রণ করার যেন কেউ নেই। নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণে সমালোচনায় পড়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করা এ সংগঠনটি ছাত্র রাজনীতি ছাড়িয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম কাজে জড়িয়ে পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বেপরোয়া কার্যক্রম থেমে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিন মাস আগে ছাত্রলীগ কর্মীদের চাঁদাবাজির তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করা হয়। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় তিন ছাত্রীকে মারধর করে ছাত্রলীগ। মদের বিল পরিশোধ করা নিয়ে বারকর্মীদের হাতে বেধড়ক পিটুনির শিকার হন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সভাপতি মেহেদী হাসান। গত ২৯ জানুয়ারি এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এই নেতাকে বহিষ্কার করে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রী নির্যাতনেরও অভিযোগ রয়েছে। এক রুমের জুতা অন্য রুমে নেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনায়ও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে গত ৬ মার্চ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে। এ ছাড়াও ছাত্রলীগ না করায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ইমরান হোসেনকে গত ২৮ জানুয়ারি মারধর করে বলে জানা গেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : দেশের উচ্চশিক্ষার এ বিদ্যাপীঠে গত চার বছরে ছাত্রসংগঠনগুলোর কোন্দলে নিহত হয়েছে ৭ মেধাবী ছাত্রনেতা।

আর পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন ১২ জন। গত ২ ফেব্রুয়ারি ভর্তি ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফিল্মি স্ট্যাইলে সশস্ত্র হামলা চালালে সাংবাদিকসহ অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। সর্বশেষ, গত শুক্রবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দ খুন হন। ছাত্রলীগ এ হত্যাকাণ্ডের জন্য শিবিরকে দায়ী করে মামলা দায়ের করেছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে।

পরীক্ষার তারিখ পেছানোকে কেন্দ্র করে নিজ দলের কর্মী সায়াদ ইবনে মোমতাজকে ৩১ মার্চ রুমে ডেকে নিয়ে রড, লাঠি, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। আহত সায়াদকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে পরদিন তিনি মারা যান। ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই জড়িত বলে আহতাবস্থায় সায়াদই তার ভাইকে জানিয়েছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : এ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বাইরে গিয়ে ছাত্রলীগ নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, মহাসড়কে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি জাবি ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটো হলের রুমে বান্ধবীসহ ধরা পড়েছেন। তিনি মাঝে মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে নিয়ে মীর মোশাররফ হোসেন হলের ১১০ নম্বর কক্ষে অবস্থান করতেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে ওই ছাত্রীসহ আটক করা হয়। এ ছাড়াও খাবারের বিল পরিশোধ করা নিয়ে পহেলা মার্চ সংগঠনটির দুই গ্রুপের মধ্যে দিনভর দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় গ্রুপের অন্তত ৩০ নেতা-কর্মী আহত হয়।

এ ছাড়া গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মামুন খান গত ২২ জানুয়ারি নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি ড. গোলাম মঈনুদ্দিনের ওপর হামলা চালায়। পরে শিক্ষকের ওপর হামলাকারী উচ্ছৃঙ্খল এ ক্যাডারকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। পরে ছাত্রদল করার অভিযোগ এনে রাতে সাধারণ শিক্ষার্থী রেজাউল করিম বর্ষণ ও আবদুল জলিলকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের কয়েক ক্যাডার।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা গত ১৩ মার্চ রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ আলমকে অস্ত্র ঠেকিয়ে টেন্ডার ছিনতাই করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১তম সিন্ডিকেটে তিন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।

১৮ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সিরাজুল ও শামীম রেজাকে বহিষ্কার করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : পাহাড়ি এ ক্যাম্পাসে গত পাঁচ বছরে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে ছয় ছাত্রনেতা নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ কর্মী যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী ও ক্রীড়া সম্পাদক মামুন এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তার মোবাইল ও সাড়ে ৩১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রেমিক জুটির ওপর হামলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে ভাঙচুর, পরিবহন অবরোধ কোনো কিছুই বাদ রাখেনি তারা।

গত এক সপ্তাহ চাকরিপ্রার্থী এসব ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ক্যাম্পাসকে অচল করে রেখেছে। তবে এদের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী মানতে নারাজ ইবি ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম খান। তিনি বলেন, কিছু বহিরাগত ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির দাবিতে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে তুলছে।

 

এ ছাড়া ৩০ মার্চ ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১২ জন আহত হয়। গত রবিবারও বরিশালের একটি শ্রেণীকক্ষে ঢুকে শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের এক নেতা।

সরকারদলীয় এ ছাত্রসংগঠনের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্কিত হচ্ছেন সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীরা। তারা এলাকায় গিয়ে ইমেজ সংকটে পড়ছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও এদের লাগাম ধরে রাখতে পারছেন না।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.