আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকার গোপন গোয়েন্দা জগত (শেষ পর্ব)

হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই আমেরিকার গোপন গোয়েন্দা জগত (প্রথম পর্ব) আমেরিকার গোপন গোয়েন্দা জগত (দ্বিতীয় পর্ব) এন এস এতে কাজ করার জন্য কিছু কিছু স্কুল আছে। স্কুলগুলো নিঃসন্দেহে সেরা স্কুল গুলোর মধ্যে পড়ে। কোন কোন স্কুলে এমন পাঠ্যক্রমও আছে যেখানে ১০ বছরের একটি ছেলেকে শিখানো হয় কি করলে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যায় কি করলে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স হারানো হয়।

কারা পড়ে এসব স্কুলে? আশেপাশের লোকালয়ের ছেলেমেয়েরা। হলদে স্কুল বাসে করে এদেরকে আনা নেয়া করা হয়। যেসব এলাকা থেকে এই সব ছেলে মেয়েরা আসে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সব থেকে ধনী এলাকাগুলোর অন্তর্গত। সব চেয়ে বিত্তবান ১০টি কাউন্টির ৬টি কাউন্টিই এই ফোর্ড মীডের আশেপাশে অবস্থিত। এ কথা বলাবাহুল্য আমেরিকার গোপন জগতে ঢোকার অন্যতম ছাড়পত্র হল বিত্তশালীদের সন্তান বা আত্মীয় হতে হবে।

আমেরিকার সবচেয়ে বিত্তবান কাউন্টি হিসাবে পরিচিত লউডুন কাউন্টি গোয়েন্দা উপগ্রহের দ্বারা পরিচালিত গুপ্তচরবৃত্তিতে নিয়োজিত ন্যাশনাল রিকনাইসেন্স সদর দপ্তরে লোকবল সরবরাহ করে। দ্বিতীয় সর্বাধিক পরিচিত বিত্তবান কাউন্টির নাম ফেয়ারফ্যাক্স সেখানেই রয়েছে এনআরও, সিআইএ এবং ডিএনআই এর অফিস। ধন সম্পদের দিক থেকে নবম স্থানে রয়েছে আরলিংটন কাউন্টি আর সেখানেই রয়েছে পেন্টাগন ও অন্যান্য বড় বড় গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়। দশম স্থানে যে মন্টগোমারী কাউন্টি সেখানেই আছে ন্যাশনাল জিও স্প্যাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সী। আর তৃতীয় ধনী কাউন্টি হাওয়ার্ড কাউন্টিতে এন এস এ র ৮ হাজার কর্মচারী বাস করে।

এ প্রসঙ্গে আর একটু বলা যায় যে একটি স্কুলের অদূরে একটা ভবন আছে যেখানে ‘আই ফাইভ’ এ্যালাইস অর্থ্যাৎ পাচ মিত্র দেশ আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গোটা বিশ্ব সম্পর্কে সমস্ত টপ সিক্রেট তথ্য নিজেদের মধ্যে আদান প্রদান করে। এই টপ সিক্রেট জগতের সাথে যে সাধারনের সংযোগ একেবারেই নেই তা কিন্তু না, যেমন এ তল্লাটে কুইজোন্স স্যান্ডউচের দোকান আছে। অন্যান্য কুইজোন্স চেইনের সাথে এর কোন পার্থক্য নেই শুধু একটি ক্ষেত্রে ছাড়া। এখানে আশেপাশের লোকজন ও খেতে আসে। বেলা ১১টা থেকে এখানে লাইন শুরু হয়ে যায়, যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে তাদের অনেকের চোখেই দেখবেন ওকলে সানগ্লাশ।

আফগানিস্থানে বা ইরাকে কাজ করে আসা লোকজনের পছন্দের জিনিস এটা। পায়ে জুতোর জায়গায় মরুভূমির বালুরঙা বুট জুতো। এন এস এর কর্মীবাহিনীর ৪০% সামরিক বাহিনীর এ্যাকটিভ ডিউটিতে নিয়োজিত। জেনোম জোন্স টপ সিক্রেট এলাকার আর এক প্রান্তে বসবাস করে, হঠাৎ একদিন দেখল তার বাড়ীর পিছনে খোড়াখুড়ি আর রাতারাতি সেখানে গজিয়ে উঠল ফুটবল মাঠের সমান এক বিল্ডিং। কাটা তার আর জার্সি ব্যারিয়ার দিয়ে পুরো বিল্ডিং সীল করা।

দালানটির কোন নাম নেই নেই কোন পরিচয়। গুগলেও একে চেনার উপায় নেই প্রতিবার টাইপ করে সার্চ দিলে শুধু ভেসে ওঠে একটা নাম্বার ৬৭০০। এমন ভবনের ভেতর কি চলে বাইরে থেকে বুজার কোন উপায় নেই। অচিরেই ফোর্ড মীডের ভবন গুচ্ছের সাথে এই ভবনটি যোগ হতে চলছে। ৯/১১ র পর থেকে এনএসএর যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে।

প্রতি ২৪ ঘন্টায় সংস্থাটি ১৭০ কোটি পিস ইন্টারসেপটেড কমিউনিকেশন গ্রহন করবে যেমন ই মেইল, বুলেটিন, বোর্ড পেষ্টিং, ইনষ্ট্যান্ট ম্যাসেজ, আইপি ঠিকানা, ফোন নাম্বার, টেলিফোন কল। এগুলো রিসিভ করে পরে বিশ্লেষন করা হচ্ছে, পৌছে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির কাছে যেমন আমি আগেই লিখছিলাম। এ ক্ষেত্রে থার্মাল ক্যামেরা ও ফিজিট মিটার সহ সর্বশেষ আবিস্কৃত গ্যাজেট যেগুলোর পরিচয় এখনো হয়ত আপনার আমার কাছে আসেনি। ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্য র ম্যাকলিন কাউন্টিতে লিবার্টি ক্রসিং নামে একটা জায়গা আছে, জায়গা টিকে জন সাধার নের দৃষ্টির আড়ালে রাকার জন্য আপ্রান চেষ্টা চলছে তারপরো শীতে গাছের পাতা ঝরে পরলে বেরিয়ে প্রে লিবার্টি ক্রসিং এর অনেক কিছু। দেখা যাবে পাচটা ওয়াল মার্ট দোকান।

বিনা অনু ম তি এর কাছা কাছি গেলেই বাতাস থেকে অস্ত্র হাতে কালো পোষাক পরা কিছু মানুষ উদয় হবে। এদের পার হ্য়ে আরো ভেত রে গেলে দেখা যাবে লিবার্টি ক্রসিং এর সেই বাড়িতে ১৭০০ সরকারী কর্মচারী আর ১২০০ প্রাইভেট কন্ট্রাকটর। লিবার্টি ক্রসিং হল ডিরেক্টর অভ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (DNI) এবং এর জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রের সদর দফতর। দুটি সংস্থার অভিন্ন পুলিশ বাহীনি, ডগ স্কোয়াড আর গাড়ী রাখার জায়গা আছে। আমেরিকার ক্রম্ প্রসারমান টপ সিক্রেট জগতের আর একটা দৃশ্য পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে ডালেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের দিকে।

যাবার পথে পশ্চিম দিকে কিছুদুর এগোবার পর চোখে পড়বে আইস কিউবের মত পাঁচতলা দুটি বিল্ডিং নীলরঙ্গে রাঙ্গানো। ভবন দুটো ন্যাশনাল জিও স্পেশাল-ইন্টেলিজেন্স এজেন্সীর। পৃথিবীর ভৌগলিক অবস্থার ইমেজ ও ড্যাটা বিশ্লেষন করাই এর কাজ। এর আশেপাশে রয়েছে সামরিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান নর্থরোপ ক্রুম্যান ও লকহীড মার্টিন। আছে গোয়েন্দা সংস্থার আর এক ঠিকাদার কারাহসফট- যা মানচিত্র তৈরী, ড্যাটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষনে বিশেষ পারদর্শী।

আরো আছে সরকারের আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্যাসিলিটির এনালিসিস সেন্টার। সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোর সাথে বিদেশী কমান্ড সেন্টার গুলো কিভাবে ধ্বংস করা যায় তার উপায় সরকারকে বলে দেয়া এর কাজ। ৯/১১ পরবর্তী যেসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার প্রায় অর্ধেকই লীসবার্গ থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন হয়ে বাল্টিমোর-ওয়াশিংটন ইন্টারন্যাশনাল মার্শাল এয়ারপোর্টের ঠিক উত্তরে লিনথিকামের উত্তর পূর্ব পর্যন্ত ধনুকের মত বাঁকা ভূখন্ডের ওপর অবস্থিত। অনেক ভবন সরকারী বি্ল্ডিং বা সামরিক ঘাটির চৌহদ্দির ঠিক বাইরে অবস্থিত। অন্যগুলো বিজনেস পার্ক বা আশেপাশের স্কুল বা বিপনি বিতানের ঘা ঘেসে আছে।

যা সাধারন অবস্থায় চোখে পরে না। আমেরিকার টপ সিক্রেট জগতের সম্প্রসারন আকার ও ব্যায়ের পরিমান এসব ভবনের সংখ্যা বা আকৃতি দিয়ে বোজা যাবে না, এগুলোর ভেতর কি আছে তা দিয়ে বুজতে হবে। যেমন অসংখ্য টিভি মনিটর, এক্স-রে মেশিন, লকার, আড়িপাতার যন্ত্রের কাছে দূর্ভেদ্য ধাতব বা কংক্রিটের দেয়াল ঘেষা বিশেষ কক্ষ যার দরজা খোলার জন্য রয়েছে কী প্যাড ডোর লক এবং আরো অনেক কিছু। প্রত্যেক ভবনে এ ধরনের বিশেষ কক্ষ আছে। কোন কোনটি আলমারির মত ছোট আবার কোন কোনটি একটা ফুটবল মাঠের ৪ গুন।

এটা হল সেনসিটিভ কম্পার্টমেন্ট ইনফরমেশন ফ্যাসিলিটিজ বা সিফ। আমেরিকার টপ সিক্রেট জগতে কার ষ্ট্যাটাস কত তা বিচারের মাপকাঠি হল এই সিফ। শুধু সিফ থাকলেই হবে না। প্রতিটি সেন্টারের নিজ নিজ কমান্ড সেন্টার, অভ্যান্তরীন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, ভিডিও ওয়াল, আর্মাড এস ইউ ভি এবং মুহুর্তের মধ্যে ছুটে আসতে সক্ষম ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী দল। সিফের অভ্যান্তরে যারা কাজ করে তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিদের মধ্যে রয়েছে এমন লোক জন যারা পয়সা বাচাবার জন্য সঙ্গে লাঞ্চ নিয়ে আসে।

এদের বলা হয় এনালিষ্ট। বয়স ২০-৩০ এর কোঠায়। বেতন পায় বছরে ৪১ থেকে ৬৫ হাজার ডলার। কিন্তু এরাই হল টপ সিক্রেট আমেরিকার প্রান ভোমরা। এরা খন্ড খন্ড কথা বার্তা, সাংকেতিক সংলাপ, অজ্ঞাত পরিচয় ব্যাক্তির কোন সংলাপ যা কিনা আপাত দৃষ্টিতে নিতান্তই জঞ্জাল এখান থেকেই কিন্তু বের করে নিয়ে আসে কোন সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের হাদিস।

এ কাজের জন্য আমেরিকায় ৬০টি ক্লাসিফায়েড এনালিটিক ওয়েব সাইট চালু। তবে অনেক গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে কিন্তু সমস্যাও আছে, তা হল ইতিমধ্যে যে সব ঘটনা জানা হয়ে গেছে বা ঘটে গেছে সেগুলোই হয়ত ঘুরে ফিরে আসে। এদিক দিয়ে দূর্নাম আছে কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের। সব চেয়ে স্পর্শকাতর তথ্য কিন্তু এরাই তৈরী করে। এভেবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ঘন্টায় ঘন্টায় ঘুরে ফিরে যেসব রিপোর্ট তৈরী করে তাতে কাজের থেকে অকাজই বেশী হচ্ছে বলে অনেক নীতিনির্ধারক মনে করেন।

এত তথ্যের পরও ছোট একটা ঘটনা মনে করিয়ে দেই ২০০৯ এর শরতে মার্কিন মেজর নিদাল মালিক হাসান গুলি করে ১৩ জন কে হত্যা করেছিল। ইয়েমেনের এক সুপরিচিত র্যাডিক্যাল ধর্মীয় নেতার সাথে যে নিদালের যোগাযোগ আছে সেটা কিন্তু সময় মত বের করতে সক্ষম হয়নি এই বিলিয়ন ডলার প্রজেক্ট। সব কথার শেষ কথা সর্ষের মধ্যে ভূত সব সময় ই থাকবে। কৃতজ্ঞতাঃ টপ সিক্রেট আমেরিকা শেষ  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.