আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাঁর জন্য ভালোবাসা- ১ (সংশোধিত)

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা যারা গতরাতে পড়তে পারেননি, তাদের জন্য রিপোস্ট তার নাম বিলাল। গায়ের রং কালো। হাবশা দেশের মানুষ তিনি। গত কদিন ধরে তার মন বিষণœ। ।

তিনি অনবরত কাঁদছেন। যতদিন রাসূল বেঁচেছিলেন, তিনিই তো ছিলেন তার মুআজ্জিন। রাসূল তাকে খুব বেশী ভালোবাসতেন। সুদূর হাবশা দেশের মানুষ। অথচ কি পরম মায়ায় তাকে কাছে কাছে রাখতেন প্রিয়নবী।

সেসব ভেবে কান্না আসছে বিলালের। কে তাকে এখন এভাবে আশ্রয় দিবে, নিজের চাদরে ঢেকে রাখবে। তিনি অনেক দূরে কোথাও চলে যাবেন? রাসূলছাড়া এ মদীনা তার আর ভালো লাগছে না। রাসূল নেই, আর সব আছে, এ দৃশ্য তার জন্য বড় কষ্টের। মদীনার মসজিদে নববী।

সবার মন ভরাক্রান্ত। তারা যেন সব হারিয়ে নিঃস্ব। প্রিয়নবীর মৃত্যুর পর থেকে আর শোনা যাচ্ছে না বিলালের আজান। সবকিছু যেন বদলে গেছে। বিলাল তার আজান দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

কে শুনবে তার আজান? তার আজান শুনে কে বের হয়ে আসবে ঐ ঘরটি থেকে? কেউ না!! এ কষ্ট সহ্য করার না। এই একটু আগে আবু বকর রা.কে খলীফা নির্বাচন করা হল। সবাই তার হাতে হাত রেখে আনুগত্যের শপথ নেওয়া শেষ করল। আজ থেকে মদীনার খলিফা হযরত আবু বকর। তিনিই আজ থেকে মুসলমানদের নেতা।

সবাই তা মেনে নিলেন। কারণ রাসূল সবচেয়ে বেশি ভালবাসতে আবু বকরকে। সবচেয়ে বেশি সম্মান করতেন তাকে। সুদীর্ঘকাল ধরে আবু বকর রা. রাসূলকে আগলে রেখেছেন। সেই শুরু থেকে।

নামাযের সময় হয়েছে। সাহাবারা মসজিদের দিকে যাচ্ছেন। অথচ তখনও আজান হয়নি। বিলালের মন বিষন্ন ও ভরাক্রান্ত। তার যে কিছুই ভাল লাগছে না।

চারিদিকের আমেজ আয়োজন তাকে টানছে না। নতুন খলীফা আবু বকর রা. মসজিদে এসে প্রবেশ করলেন। তার চারপাশ ঘিরে আছেন সাহাবায়ে কেরাম। তিনি বিলালের কাছে গেলেন। -বিলাল, উঠুন, আজান দিন।

এখন নামাজের সময়। -আমাকে মাফ করবেন। প্রিয় রাসূল ছাড়া আমি আর কারো জন্য আজান দিবো না। -বিলাল, উঠুন, আজান দিয়ে দিন। সময় এখন নামাজের।

নতুন খলীফার আদেশ। বিলাল রা. তো আর অবাধ্য হতে পারেন না। কারণ আবু বকর রা. তো তারই প্রিয়তম রাসূলের সবচেয়ে কাছের মানুষ। তার নিকটতম আত্মীয়। বিলাল রা. উঠে দাঁড়ালেন।

তিনি আজান দেয়া শুরু করলেন। আহা!! আবার শোনা গেল সেই আজান। এ তো রাসূলের যুগের আজান। এ আজান শুনেই তো রাসূল বের হয়ে আসতেন। সাহাবাদের চোখে পানি চলে এল।

তারা কাঁদছেন। বিলালের আজান চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ঘরে ঘরে আবার কান্না শুরু হল। সবার চোখের সামনে ভেসে উঠল রাসূলের স্মৃতিগুলো। এই তো সেই আজান।

বিলালের আজান। রাসূলের মুআজ্জিনের আজান। এ আজান তো রাসূল শুনতেন। আজ যে তিনি নেই। আজান দিচ্ছেন বিলাল।

মদীনার পরিবেশ নিরবতায় ছেয়ে গেল। আজানের মাঝপথে এসে যখন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর নাম এল, বিলাল হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলেন। এ নাম তিনি কিভাবে উচ্চারণ করবেন!! এ যে প্রিয়তমের নাম। কে শুনবে তার কন্ঠের এ ডাক!! বিলাল কাঁদতে লাগলেন। তার গলা ক্ষীণ হয়ে আসছে কান্নার প্রবল স্রোতে।

কোনরকম তিনি বাক্যগুলো শেষ করলেন আজানের। তাও থামছে না তার কান্না। কে তাকে সান্তনা দিবে? সবার যে একই বিষন্নমুখ। এই শেষ। আর কোনদিন বিলাল আজান দেননি।

রাসূল ছাড়া তিনি আর কার জন্য তিনি আজান দিবেন? সেই মানুষটি তো নেই। তিনি মদীনা ছেড়ে চলে গেলেন। রাসূলবিহীন এ মদীনা তার আর ভালো লাগছে না। অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। বিলাল মদীনায় নেই।

হযরত আবু বকর রা. এর ইন্তেকাল হল। তারপর হযরত উমর খলীফা হলেন। চারিদিকে নতুন যুগের সূচনা হল। শোক দুঃখ ভুলে মুসলমানরা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। প্রতিদিন বিজয় আসছে।

প্রতিটি সূর্যোদয় তাদের জন্য নতুন নতুন আনন্দ সংবাদ বয়ে আনছে। মদীনার ছোট্ট দেশটি এখন অনেক বড়। ইসলামী সাম্রাজ্যের সীমান্ত বেড়েই চলেছে। বাইতুল মুকাদ্দাসও তারা জয় করে নিলেন। ফিলিস্তীন এখন মুসলমানদের হাতে।

এ সংবাদে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মসজিদুল আকসায় এলেন হযরত উমর। এমন জয়ের সংবাদে ছুটে এলেন বিলাল রা.। তিনিও আনন্দিত। এ মসজিদেও যে রাসূলের স্মৃতি। তিনি তো এখান থেকেই মিরাজে গিয়েছিলেন।

নামাজের সময় হয়ে এল। মসজিদুল আকসায় আজ থেকে আজান দেয়া হবে। কে দিবে সেই আজান? বিলাল। বিলাল রা. সব আবেগ ঢেলে আজান দিলেন। আবারও সেই সুর।

মদীনার সুর। রাসূলের ভালোবাসার সুর। সমবেত সাহাবারা ডুকরে কেঁদে উঠলেন। হাউমাউ করে কাঁদছেন সবাই। তাদের মনে পড়ে গেল সেই দিনগুলোর কথা।

রাসূলের জীবন্ত হাঁটাচলার স্মৃতিগুলো। ২. মদীনার পরিবেশ নিরব নিস্তব্ধ। চারিদিকে চাপাকান্না। কোথাও আর প্রাণ”াঞ্চল্য নেই। মানুষের মুখে হাসি নেই।

মাত্র কদিন আগে রাসূল মুহাম্মাদ সা. চলে গেলেন। তিনি আর ফিরবেন না। তার প্রয়াণে মদীনাবাসী কাঁদছে। তারা খুঁেজ ফিরছে রাসূলের স্মৃতিমাখা অলিগলি। সবার চোখে অশ্র“জল।

আহা!! তাঁর মধুর ডাক আর শোনা যাবে না। তাকে দেখা যাবে না এ মসজিদের আঙিনায়। তার হাসিমাখা মায়াবী আর অপূর্ব সুন্দর চেহারা তাদের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে!! তিনি চলে গেলেন পরম বন্ধুর ডাকে সাড়া দিতে। প্রিয়তম নবীর এমন চলে যাওয়ায় মদীনার মানুষগুলো শোকে পাথর হয়ে আছে। এমন সময় খবর এল, মুসায়লামা নামের এক ভন্ড নিজেকে নবী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

সে তার সাথীদেরকে নতুন তালিম দেয়া শুরু করেছে। মুসায়লামার নিজেকে নবী হিসেবে দাবি করার সংবাদে মুসলমানরা ফুঁসে উঠলেন। দুঃখশোক ভুলে তারা তৈরী হলেন। এ ব্যাটা বেয়াদবকে শিক্ষা দিতেই হবে। তারা রওয়ানা হলেন।

মুসায়লামাও তার সাথীদেরকে নিয়ে তৈরী হল। তুমুল যুদ্ধ হল। এ যুদ্ধের নাম ইয়ামামার যুদ্ধ। অনেক সাহাবী শহীদ হলেন এ লড়াইয়ে। তাদের তরতাজা প্রাণ উৎসর্গিত হল রাসূলের সম্মানে।

ইয়ামামার এ যুদ্ধে তিনি গ্রেফতার হলেন প্রতিপক্ষের হাতে। তার নাম হাবিব ইবনে যায়েদ ইবনে আসেম। মুসলমানদের প্রতিপক্ষ বাহিনীর সর্দার মুসায়লামার কাছে তাকে ধরে আনা হল। মুসায়লামা বসে আছে। তার হাতে তরবারী।

প্রচন্ড ধারালো। চিকচিক করছে এর পৃষ্ঠদেশ। সামান্য আঁচড়ে প্রাণ শেষ। হাবীবকে আনা হল তার সামনে। রাসূলের এ সাহাবী নিরব, নিশ্চুপ।

-এই, শোনো, তুমি কি বিশ্বাস করো যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। -হুম, আমি বিশ্বাস করি, তিনি আল্লাহ পাকের প্রিয় রাসূল। -ভালো কথা। তুমি কি বিশ্বাস করো যে, আমিও আল্লাহর নবী? -আপনার কথা আমি শুনি নাই। -আমি যে আল্লাহর নবী, তুমি কি এটা সাক্ষ্য দাও? -আপনার কথা আমি শুনতে পাচ্ছি না।

মুসায়লামা বুঝে ফেলল, এই লোক সাংঘাতিক। একে শাস্তি না দিলে হবে না। খাপ থেকে তলোয়ার টেনে বের করল লোকটি। তারপর ঝপাত করে কোপ দিয়ে কেটে ফেলল হাবীব রা. এর একটি হাত। রক্ত ছুটে বের হচ্ছে।

তবুও তিনি নিরব। সব কষ্ট তিনি সয়ে যাবেন, রাসূলের খাতিরে। তাকে যে তিনি বড্ড ভালোবাসেন। কি এবারও সাক্ষ্য দিবা নাকি শুনতে পাচ্ছ না? হাবীব রা. এর মুখে উত্তর নেই। মুসায়লামা আবারও তলোয়ার উঁচু করল।

এবার বাম হাত। কোপ দেয়ার সাথে সাথে শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেল হাতটি। আবারও রক্ত। প্রচন্ড যন্ত্রনায় হাবীব রা. এর মুখ বিষাদ হয়ে আসছে। মুসায়লামার খেলা চলতে থাকল।

একটি একটি করে সবগুলো অঙ্গ কেটে ফেলল সে। ঠান্ডা মাথায় সে হাবীব রা.কে টুকরা টুকরা করে ফেলল। তবুও তার স্বস্তি নেই। হাবীব রা. এর প্রচন্ড ধৈর্যশক্তি তাকে পরাজিত করেছে। নিজের কাছে তাকে পরাজিত মনে হচ্ছে।

এতগুলো টুকরা করা হল তার দেহকে, তবুও একবারের জন্য সে আমাকে নবী হিসেবে মেনে নিল না। মুহাম্মাদ সা. এর জন্য তার কি এতই মায়া! কোথায় পেল সে এত ভালবাসা। মুসায়লামা ভাবতে থাকল। ততক্ষণে হাবীবের শরীর থেকে কর্তিত টুকরাগুলো নিস্তেজ হয়ে এসেছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ।

তার প্রাণপাখি উড়ে গেছে প্রিয়তম বন্ধুর সান্নিধ্যে। এই না হলে কি আর তিনি রাসূলের হাতে গড়া সাহাবী!! সাহাবাদের হৃদয়ে প্রিয়তম নবীর ভালোবাসা নিয়ে এ নতুন সিরিজে আপনাদেরকে স্বাগতম। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.