আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবলিকের খাদ্য

দুর্নীতি নিয়ে পত্র পত্রিকায় লেখালেখির অন্ত নাই। সাধারণত পত্র পত্রিকা সেই সব খবরই ছাপার যোগ্য মনে করে—যে লেখাগুলো জনগন গোগ্রাসে গিলে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই সারাংশ দাঁড়ায়—‘আমরা পাঠকরা দুর্নীতি সম্পর্কে পড়তে বা জানতে পছন্দ করি। ‘ কথাটার সঙ্গে আমি অনেকাংশে একমত, তবে এর মাঝে কিছু শ্রেণীবিভাগ আছে। সবচে পছন্দ বোধহয় চিকিৎসক, মন্ত্রী বা কোন ধনকুবেরের দুর্নীতি।

পুলিশ, আমলা কিংবা কোন সাংবাদিকের দুর্নীতি নিয়ে কদাচিৎ রিপোর্ট দেখতে পাওয়া যায়। পত্রিকাকে সমাজের আয়না মেনে নিলে—ধরে নিতে হয়—এই সম্প্রদায় দুর্নীতি করে না। কথাটা আংশিক সত্য। আঁতকে উঠবেন না প্লিজ—আমাকে একটু ব্যাখ্যা করতে দিন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন লোক যদি অল্প কিছু দক্ষিণার বিনিময়ে আপনার কাজ করে দেয়—তিনি নিঃসন্দেহে একজন নীতিবান মানুষ।

কোন অফিসে কোন কাজ হাসিলের জন্যে গেলে আমরা সবার আগে এমন একজন নীতিবান লোক খুঁজি। আর পেয়ে গেলে বর্তে যাই ‘যাক কাজটা হবে মনে হচ্ছে । ‘ আর হয়ে গেলে অকুণ্ঠ গুনগান করি—‘এমন লোক হয় না’ ‘অর্থের বিনিময়ে কাজ করিয়ে নেয়া’—বোধহয় এখন আর দুর্নীতির পর্যায়ে পরে না। তাই—কোন থানাতে যেয়ে একটা জিডি করতে ও যে কিছু ‘খরচ’ করা লাগে—এমন কোন রিপোর্ট কোন পত্রিকায় পাবেন না—এর দুটো মানে হতে পারে—‘এমনটা হয় না’ কিংবা ‘এটা দুর্নীতি না’—আর পত্রিকা সম্পাদকের মতে—এমন সংবাদ—‘পাবলিক খাবে না’ ধনকুবেরের দুর্নীতি নিয়ে যা কিছু রিপোর্ট হয়—তা হয় ‘Professsional Jelousy’ থেকে। দুর্নীতি কমবেশি সব ধনকুবের ই করেন—পত্রিকায় আসে তাদের নাম—যারা রিপোর্টারকে কোন কারণে অসন্তুষ্ট করেছেন বা প্রতিপক্ষ রিপোর্টারকে সন্তুষ্ট করেছেন।

‘মিটার রিডার থেকে কোটিপতি’ এমনতর প্রতিবেদন নিয়েও সন্দেহ জাগে—ঢাকা শহরে এমন কোন ‘মিটার রিডার’ নাই যিনি কোটিপতি নন—তবে শুধু শুধু দুই একজনের সম্পর্কে প্রতিবেদন কেন—উত্তরটি সম্ভবত —প্রতিদিন দিলে ‘পাবলিক খাবে না’। দারুণ ঝুঁকিপূর্ণ একটি ‘Investigation’ করে, অকাট্য প্রমাণসহ একটি প্রতিবেদন—তাও আবার কোন রুই কাতলার বিরুদ্ধে—এবং কারো আর্থিক প্রণোদনা ছাড়া-- এমনটি কখনই ঘটবে না (?)। এ কারনেই বোধহয় কোন আমলার দুর্নীতির কোন প্রতিবেদন দেখতে পাওয়া—দুষ্কর। তাই ‘পাবলিকের খাদ্য’ হওয়ার মত দুর্নীতি যতক্ষণ না আপনি করছেন—‘নো টেনশান’। এবার আসি ‘পাবলিকের খাদ্য’ নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় অংশে।

সত্য একটি ঘটনা বলি। একবার এক মন্ত্রীর শ্বাশুড়ী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সিট না পেয়ে ফ্লোরে ছিলেন। আর্থিক কারণে কেবিন এর জন্য ও তাঁরা আবেদন করেন নি। মন্ত্রী নেহায়েত ‘বেকুব’ (সৎ) প্রকৃতির ছিলেন—তিনি কোন ফোন ও করেন নি বা সেই আত্মীয়ও নিজের ‘ক্ষমতাধর’ পরিচয়টা দেন নি। আর সব স্বাভাবিক রোগীর মতই তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন।

এরপর কোন এক ‘আহাম্মক’ রুগীনীর ‘ক্ষমতাধর’ পরিচয়টা অধ্যাপক মহোদয়কে জানিয়ে দেন। আর তৎক্ষণাৎ শুরু হয়ে যায় ‘Damage Contol’—দিনে তিন বেলা অধ্যাপক নিজে দেখতে আসতে লাগলেন, কেবিন তো সঙ্গে সঙ্গে ই পেয়ে গেলেন, বোর্ড বসলো, পরিচালক সাহেব পারলে নিজের বাড়ি থেকে উপাদেয় খাবারের যোগান দেন—‘Typical High Profile Patient Management’—শুরু হয়ে গেল। ঘটনাটির প্রথম অংশ নিঃসন্দেহে ‘পাবলিকের খাদ্য’। একজন মন্ত্রির আত্মীয়—একজন সাধারণ রোগীর মত চিকিৎসা নিয়েছেন— জেলার সিভিল সার্জন, হাস্পাতালের ডিরেক্টর তাকে দেখতে যায় নি— তাঁর জন্য স্পেশাল বোর্ড করা হয় নি—কিংবা তাকে স্পেশাল অর্ডারে কেবিন বরাদ্দ দেয়া হয় নি—প্রতিটি ই এক একটা ‘পাবলিকের খাদ্য’ হওয়ার মত খবর। পত্রিকা এমন একটি খবর ছোঁ মেরে নেবে।

বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারী হাসপাতালের নিত্তদিনের চিকিৎসার এটি একটি চিত্র—যা একজন নামী মানুষের জন্য হলে—ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে সেই হাসপাতালের প্রতিটি চিকিৎসকের জন্য—শোকজ , সাস্পেন্ড এমনকি ‘রৌমারী’তে (শহীদ ডাঃ মিলনকে বদলী করা হয় এরশাদ বিরোধী আন্দলনের জন্য—শাস্তিমুলক ট্রান্সফারের জন্য খুবই পছন্দনীয়) ট্রান্সফার— এই শাস্তি গুলোর যে কোন একটি ‘ওপর মহলে’র জন্য অবশ্য করণীয় একটি ‘পাবলিকের খাদ্য’। আর দ্বিতীয় অংশটি ‘দুর্নীতি’ (যদি নীতি থেকে সরে যাওয়া কে দুর্নীতি বলি, এবং সাধারণ একজন রুগী সরকারী হাসপাতালে যে চিকিৎসা পায় তাকে নীতি বলি) এর মহোৎসব—তবে ‘পাবলিকের খাদ্য’ নয়—‘মন্ত্রীর শাশুড়ীর জন্য তো এমনটা হবেই’। তাই ‘দুর্নীতি’ সবসময় বিবেচ্য বিষয় নয়। সমাজের কোন অংশ দুর্নীতি করছে, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন করলে—‘পাবলিক খাবে’ কি না, পত্রিকার বিক্রি বাড়বে কি না, প্রতিপক্ষের কাছে কিছু ‘আশীর্বাদ’ পাওয়া যাবে কি না, আমার নিজের কোন ক্ষতি হবে কি না— এমন হরেক রকম ‘Factor’ কে বিবেচনায় আনতে হয়। আমি একক্ষণ যা করলাম—পুরো দেশ এখন সেই কাজেই ব্যাস্ত—‘সমালোচনা’—অন্যের দোষ ধরা।

কেউ একবার ও ভেবে দেখি না—‘আমার কাজ কি আমি ঠিক মত করছি?’ কারণ ভাবতে গেলেই সমস্যা—বহু ভুল ধরা পরবে—‘দুর্নীতি’ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তাই ‘সমালোচনা’ দিয়েই আপাতত ‘আত্মসমালোচনা’কে চাপা দিয়ে যাচ্ছি—এবং যাবো—যতদিন পারা যায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.