আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

::::বাবুই বাড়ী::::

::::: দেখবো এবার জগতটাকে ::::: সেলাই এ মগ্ন প্রাকৃতিক আর্কিটেক্ট। গ্রামটাকে খাস বাংলায় একদমই গন্ড গ্রাম বলা যায়। দির্ঘ কাঁচা রাস্তায় নসিমনে করে জার্নি। জায়গায় জায়গায় জোরালো স্রোতের খাল, তার উপরে বাশের চাটাই বেছানো জোড়াতালি দেয়া ব্রিজ। নসিমন এর উপর দিয়েও দিব্বি চলে আসে।

গত রাতের বৃষ্টিতে মেয়েদের চুলের ফিতার মতোন আঁকা বাঁকা কাঁচা রাস্তা জায়গায় জায়গায় ধুয়ে চলে গেছে। সে সব জায়গায় চাকা ঘোরে না। কাঁদায় আঁটকে আসে। কোন মতে গ্রামে ঢুকেই কাজে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে গ্রাম দেখতে গিয়ে একটা জাম্বো সাইজ তাল গাছে বিশাল হাট বসেছে দেখলাম।

কয়েক হাজার বাবুই পাখির বিশাল কলোনি। ক্যামেরা চোখে লাগিয়ে আয়োজন করে বসে গেলাম। শুধু শাটার টেপা মাত্র। ভর দুপুরের রোদ একদম খাড়া ভাবে পড়ছে। সব ছবিই ঝাপসা আসে।

চারপাশে ফসল লাগানো গাছটার। ফসলের ক্ষেত মারিয়ে পছন্দের জায়গাতেও যাওয়া সম্ভব না। নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাঁসা। ম্যাটেরিয়াল নির্বাচনে ব্যাস্ত। বাবুই এর চিতকারে কান পাতা দায়।

অনেকক্ষন ধরে তাকিয়ে থাকায় বাবুই সম্পর্কে বেশ কিছু জ্ঞান লাভ হলো। দেখলাম বাবুই পাখি তার আলিশান মোটা ভোঁতা ঠোঁট দিয়ে তালপাতার আঁশ চেছে তুলে নেয়। তার পরে সেটা নিজের বুকের পালকের সাথে ঘসে ঘসে নিখুঁত সুতো বানিয়ে ফেলে। এই সুতো দিয়েই নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা তৈরি হয়। লম্বাটে বাসাটা প্রায়ই দুই বেডরুমের ছোট্ট এপার্টমেন্ট।

উপরের দিকের লম্বাটে অংশটা তালের পাতার সুতো দিয়ে তাল গাছের শক্ত পাতায় সেলাই করে দেয়া। ঝর বৃষ্টির দিনে প্রাকৃতিক ছাদের ফলে পানি ঢোকে না। তীব্র ঝরো হাওয়ায় এপাশ ওপাশ দোল খায়... ছিড়ে নিচে পড়ে যায় না। সবগুলো বাসাতেই দেখি ভেতরে বাসিন্দা আছে। রাশু ভাই মহা অভিজ্ঞ গাইড।

তার কাছে শুনলাম শুধু পুরুষ বাবুই’রাই বাসা বানায়। প্রজননের সময় স্ত্রী বাবুইকে আকর্ষন করতে বাসা বানিয়ে লোভ দেখায়। স্ত্রী বাবুই সেই বাসায় ডিম পারে, সেই সঙ্গে বেদখল হয়ে যায় বাসা। পুরুষ বাবুই ছোট্ট দরজা দিয়ে বাইরে থেকে খাবার সাপ্লাই দেয়। কিন্তু কিছুতেই স্ত্রী বাবুই তাকে বাসায় ঢুকতে দেয় না।

পুরুষ বাবুই নাছোরবান্দার মতো চেষ্টা চালিয়ে যায় বাসা পূনর্দখলের। কিন্তু স্ত্রীবাবুই কামড় দিয়ে খামছি মেরে আক্ষরিক অর্থেই লাথি মেরে তাকে খেদিয়ে দেয়। সারাদিন চেষ্টা চালিয়ে ক্লান্ত পুরুষেরা দল বেধে চলে যায় বাঁশ বনে। রাত কাটায় সেখানেই। বাবুই পুরো পুরি দক্ষিন এশিয়ার পাখি।

ইংরেজীতে বলে Baya Weave। বাংলাদেশ, ভারত নেপাল এবং পাকিস্তান ছাড়া বাবুই পৃথিবীর আর কোথাও মেলে না (সুত্র-উইকিপিডিয়া)। এদেশে ৩ প্রজাতীর বাবুই দেখা যায়, (ক) দেশী বাবুই, (খ) দাগী বাবুই (গ) বাংলা বাবুই। দেশী বাবুই ছাড়া বাকী ২ প্রজাতী এখন বিলুপ্তীর পথে। সাধারনত তাল গাছ, নইলে নারিকেল, রেইন্ট্রি গাছে বাবুই লম্বাটে বাসা বানায়।

একটা গাছে শখানেক বাসার পুরো কলোনী বানিয়ে ফেলে। নির্মান কাজ চলিতেছে ... লোকে বলে ঘর বাড়ি ভালা না আমার... কে কয় সামনে আইসা ক দেখি।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।