আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

শেখ হাসিনা। এই নামের আগে-পরে কোন বিশেষণ যোগ করার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যার। কঠিন এক সংগ্রামের পথ বেয়ে স্বীয় প্রতিভায় বিকশিত শেখ হাসিনা এখন এই ভূখ-ের আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক হয়ে বিরাজ করছেন এ কথা স্বীকার করতে অনেকেরই অনীহা। কিন্তু এটাই বাস্তবতা, এটা বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও ছিল।

সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শাহাদাতকালে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচনের পর দীর্ঘ ৭ বছর পর নির্বাসন কাটিয়ে ১৭ মে ১৯৮১ শেখ হাসিনা ঢাকায় ফেরেন। সেদিন ঢাকায় লাখো লোকের সমাবেশ ঘটেছিল। তা দেখে বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল জিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন হবে। জিয়া খালি মাঠে গোল দিয়েছেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে আন্দোলনের কোন সুযোগ না দিয়েই নিজ সৈনিকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হলেন ৩০ মে ১৯৮১ এবং জেনারেল এরশাদ ও মিডিয়ার কল্যাণে শহীদের অমরত্ব ভোগ করছেন।

জিয়ার পর এরশাদবিরোধী আন্দোলন করলেন শেখ হাসিনা। প্রাণ দিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বেলা দুটায় চট্টগ্রামে কোতোয়ালি থানার সামনে পুলিশ শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তিনি কোনরকম প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু শাহাদাতবরণ করেন আওয়ামী লীগের অন্তুত ৩৫ জন নেতাকর্মী। উল্লেখ্য, সেদিন সকালের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে পৌঁছলে সুসজ্জিত ট্রাকে গণমিছিলে কোতোয়ালি থানার সামনে পৌঁছতে পায় ৬ ঘণ্টা সময় লেগেছিল (সেই ট্রাকে এই লেখকও ছিলেন)।

আর আপোসহীন খেতাব পান বিএনপি নেত্রী (ম্যাডাম খালেদাকে রাজপথে রাখার কৌশলটি ছিল এরশাদের)। ১৯৮৬ এরশাদের সামরিক আইনে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি-বিএনপি আওয়ামী লীগ ঠেকানোর কৌশল এবং মিডিয়া ক্যু দিয়ে ১০০ আসনে আওয়ামী লীগ ঠেকাতে পারেনি। বিএনপি নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ ২০০ আসন পেত। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপি আওয়ামী লীগ একটি সমঝোতায় এসেছিল যে স্বৈরাচার দোসর মন্ত্রী সচিব কাউকে দলে নেয়া হবে না। এটা আওয়ামী লীগ কঠোরভাবে মেনেছিল কিন্তু বিএনপি মানেনি।

সবার ধারণা ছিল ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে। কারণ ১৯৮৬ তে বিএনপি ৩০০ প্রার্থী জোগার করতে পারেনি। কিন্তু একানব্বই-এ সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিএনপি এরশাদের উত্তরাধিকার হলো। এটিও ছিল জাতীয় পার্টি-বিএনপি-জামায়াতের অঘোষিত জোট আওয়ামী লীগ ঠেকাতে। একানব্বইয়ের নির্বাচনের পরে দলত্যাগ করলেন ড. কামাল হোসেনের মতো বঙ্গবন্ধুর অতি প্রিয়জন।

এর কারণ কখনও অনুসন্ধান করা হয়নি। অথচ শেখ হাসিনা কিন্তু তাঁকে অভিভাবক মেনেই রাজনীতিতে এসেছেন। এই লেখকের কাছে একান্তে শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, তিনি প্রথম ১৯৮১ সাল থেকে ড. কামাল হোসেননির্ভর হন। ১৯৮৬ সালেও তিনি নির্বাচনের বিপক্ষে ছিলেন। ড. কামালের পরামর্শে যোগ দেন।

তবে ড. কামাল হোসেন যেহেতু আইন ব্যবসায়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন। সেহেতু দলের প্রয়োজনে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর ড. কামাল হোসেন দল ত্যাগ করেন। ড. কামাল হোসেনবিহীন আওয়ামী লীগ ’৯১-৯৬-এর ব্যাপক আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে এবং মেয়াদ শেষ (২০০১) করতে সক্ষম হয়। এই নির্বাচনে নতুন মুখ দলে আসেন যার মধ্যে শামস কিবরিয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়।

শেখ হাসিনার শাসন আমলে (৯৬-২০০১) যে সব বিষয় অবশ্য প্রশংসার দাবি রাখে তা হচ্ছে পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে যে পার্বত্য অঞ্চল বিদ্রোহীদের দখলে ছিল সে অঞ্চলে প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব নিরঙ্কুশ করা। এটি বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এরপর ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদী পানিচুক্তি। বাংলা আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে জাতিসংঘ স্বীকৃতিলাভ। এ সুবিধায় যে কোন দেশে বাংলায় উপস্থাপিত যে কোন চিঠিপত্র আমলযোগ্য।

দেশে খাদ্য উৎপাদন ছিল রেকর্ড পরিমাণ। ৫ বছরে দ্রব্যমূল্য ছিল স্বাভাবিক। প্রবৃদ্ধির হার ছিল সর্বোচ্চ। আইনশ্ঙ্খৃলা সহনীয়, এখনকার চাইতে অনেক অনেক বেশি ভালো। উন্নয়নমূলক কাজও হয়েছে প্রচুর।

সরকারের ছিল গতিশীলতা। শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে রাষ্ট্রপতি বানিয়ে রাজনীতিতে স্বচ্ছতার নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন কিন্তু এজন্য তাঁকে মোটা দাগে মূল্য দিতে হয়েছে। ৫ বছর তিনি ভালো কাজ করেছেন সে সুবাদে পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবেন। এই আত্মবিশ্বাসের বিপরীতে তার বিরুদ্ধে যে সাহাবুদ্দীন-লতিফুর-সাঈদ গংয়ের ব্যবহার করে মূল শত্রুরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তা ছিল শেখ হাসিনার কল্পনার বাইরে। সমাজের এই সব শীর্ষস্থানীয় লোকের চরিত্র যদি এই হয় তবে মানুষ আস্থা রাখবে কোথায়? ২০০১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপর্যয় কি তাদের ৫ বছর শাসনামলের কর্মফল না গভীর ষড়যন্ত্রের ফসল সে নিয়ে নির্মোহ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।

তবে এটা ছিল গভীর ষড়যন্ত্র। যার প্রমাণ নির্বাচন পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের ওপর হত্যা-নির্যাতন যা একাত্তরকে হার মানিয়েছে। এতেই আওয়ামী লীগের নির্মূল অভিযান থেমে যায়নি। খুলনার মঞ্জুরুল ইমাম, টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার, শামস কিবরিয়াকে হত্যার পরেও এর মূল টার্গেট শেখ হাসিনাকে হত্যা। ২১ আগস্ট ০৪ গ্রেনেড দিয়ে হত্যায় সফল না হলেও আইভি রহমানের মতো প্রবীণ ও সুদক্ষ নেতাসহ কমপক্ষে ২৪জনকে হত্যা এবং শতাধিক প্রবীণ-নবীন নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে গ্রেনেডবিদ্ধ হয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, ২১শের গ্রেনেড হত্যার অভিযুক্তদের এখন বিচার হচ্ছে। যার শীর্ষ আসামি তারেক জিয়া, বিএনপি জামায়াত নেতা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতের মুজাহিদী, এনএসআই পুলিশ-এর উর্ধতন কর্মকর্তা এবং বেশকিছু বিএনপি নেতা। আওয়ামী লীগের বয়স ৬৩ বছর। রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ মাত্র ১২ বছর। বাকি সময় রাজপথে।

বাঙালীর ঠিকানা, ভাত-কাপড়, এবং উন্নত জীবন সন্ধানে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ২৬ বছর যার মাত্র সাড়ে ৩ বছর রাষ্ট্রক্ষমতা। বঙ্গবন্ধুর সময়কালে তিনি পেয়েছিলেন বিশ্বস্ত জনগোষ্ঠী এবং সহকর্মী। মানুষের মধ্যে সহনশীলতা ছিল এখনকার চাইতে অনেক বেশি। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব এমনই ছিল যে দলমত নির্বিশেষে সবাই তাঁকে সম্মান করত।

শেখ হাসিনার সময়কাল ৩১ বছর। রাষ্ট্রক্ষমতা ৮ বছর আর রাজপথে ২৩ বছর। শেখ হাসিনা পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু খুনী উত্তর বাংলাদেশ। একটি প্রভাবশালী বৈরী গোষ্ঠী, একাত্তর ও পঁচাত্তরের ঘাতক সমন্নয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে বহুবার (যা এখনো অব্যাহত) তবে অন্তত দুবার সরকারী মদদে ১৯৮৮, ২০০৪ এবং ১০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে কথিত সেনা বিদ্রোহের নামে এটি সেনাবাহিনী দমন করেছে।

দলে প্রভাবশালী অনেকেই ছেড়ে গেছেন। কেউবা ফিরেছেন, কিন্তু সংগ্রামের ধারা ব্যাহত হয়নি। তবে শেখ হাসিনাকে সফলতা বা ব্যর্থতার দায় বহন করতে হচ্ছে জনকের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে। সে দায়িত্ব তিনি পালনে সচেষ্ট, গভীর আগ্রহে এবং নিষ্ঠায়। দেশবাসী মনে করে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে জাতি বিজয়ী হয়।

আর পরাজিত হলে জাতি পরাজিত হয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে প্রাধান্য ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর। যারা ভেবেছিল ১৯৭৫ আওয়ামী লীগ শেষ। কিন্তু আওয়ামী লীগের জন্ম জনগণের অভিপ্রায়ে জনগণের জন্য, জনগণ থেকে দেশ ও জাতিকে কিছু দেয়ার জন্য এবং যা কিছু অর্জন ও প্রাপ্তি তার সব কৃতিত্ব আওয়ামী লীগের, ধ্বংস করা যায় না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে সুদীর্ঘ ২১ বছর পরে তাঁর দল রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাওয়া এবং ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্¯’াপন আসলেই ইতিহাসে নজিরবিহীন বিস্ময়কর এবং প্রশংসনীয় ঘটনা যার কৃতিত্ব আওয়ামী লীগের।

২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন শেখ হাসিনা। যে যাই বলুন না কেন শেখ হাসিনা যে সঠিক পথে আছেন তার প্রমাণ ’৭৫-এ জনককে হত্যা আর এখানও বন্দুক শেখ হাসিনার দিকে। বাঙালীর ঠিকানা আওয়ামী লীগ এবং তার নেত্রী শেখ হাসিনা, এখনও তারুণ্যের প্রতীক হাতে মঙ্গল ও প্রগতির আলোকবর্তিকা। তিনি ভুলে যান নি জীবন কাঁপানো জয় বাংলা আর দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অঙ্গীকার। জন্মদিনে শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।