আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল যদি কুসংস্কারকে ভাবতে গিয়ে রাতের বেলা সুঁই বিক্রি, সন্ধ্যে বেলা ঘরের দরজা দেয়া বা (পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে ডিম খাওয়া? ) ও এই জাতীয় লোকজ অন্যান্য অসংখ্য তুচ্ছ, হাস্যকর, গুরুতর কিংবা তিক্ত সংস্কারের লালন ও অনুশীলন করাকে বুঝি, এবং এই ভেবে মনে করি আমি কুসংস্কারাচ্ছন্ন নই, তবে ভুল বুঝি, ভুল ভাবি।
অনুসন্ধান, নিরীক্ষণ, বিচার-বিবেচনার পূর্বেই কোন বিষয় সম্পর্কে আপোষহীন ধারণার ভরণপোষণের দায়িত্বভার নিয়ে লালন করে বড় করে তুলে তা পালন করাই হল কুসংস্কার।
আরেকটু পরিষ্কার করে বলতে, আমরা পরীক্ষা করিনি, নিজে ভেবে যৌক্তিকতা খুঁজে বের করিনি, বরং আমার মাঝে পূর্ব থেকেই রোপিত ছিল, এমন কোন বদ্ধমূল ধারণায় বুঁদ হয়ে থাকাই হল কুসংস্কার।
কুসংস্কারের ব্যাখ্যা আগে দিলাম কারণ বাংলাদেশের তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত সার্টিফিকেট'ধারিগন নিজেদের শিক্ষিত বলে ঘোষণা করার যোগ্যতা রাখেন কিনা তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
অক্ষর জ্ঞান-সম্পন্ন ব্যক্তি আর শিক্ষিত ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য আছে।
ইংরেজি লিটারেট পারসন’এর সবচেয়ে সরল সংজ্ঞা হল একজন ব্যক্তি যে লিখতে ও পড়তে পারে। (এবং সকল সাধারণ মাধ্যমের ব্যবহারে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম)।
কিন্তু একজন শিক্ষিত ব্যক্তির সংজ্ঞায়ন সরল নয়। একজন মানুষ শিক্ষিত শুধু শিক্ষার গ্রহণেই হয়ে উঠে না। বরং জ্ঞানের সঠিক প্রভাবে ব্যক্তির অন্তর্দেশে প্রজ্ঞার মুক্তি ও বিশ্লেষণ করার ক্ষমতার সফল সূত্রপাত এবং এর ধারাবাহিকতাই একজনকে শিক্ষিত করে তোলে।
একজন শিক্ষিত ব্যক্তি একজন অশিক্ষিত ব্যক্তির চেয়ে অনেক গভীর ও পরিষ্কার’ভাবে যুক্তি নির্ভর চিন্তা করতে পারে। কি চিন্তা করতে পারে? কি থাকে এই চিন্তায়? একজন শিক্ষিত ব্যক্তির চিন্তায় থাকে যুক্তির বিচ্ছুরণে সত্যের অনুসন্ধান।
সক্রেটিস নিজের মাঝে সত্যিকারের জ্ঞানের অভাবের আশঙ্কায় নিজেকে সবচেয়ে জ্ঞানী হিসেবে ঘোষণা করতে করেছিলেন আপত্তি। এর কারণ তিনি নিজেকে নিরীক্ষা করেছিলেন, স্বীয় জ্ঞানের যাচাই করেছিলেন এবং অনুসন্ধানে জানতেন নিজেকে; নিজের ক্ষমতাকে।
যে মতবাদ আমি যৌক্তিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে যাচাই করিনি, মন্ত্রমুগ্ধের মত ধারণ করেছি মাত্র, সেই মতবাদ আমার নয়।
যদি আপনার জীবন আপনি নিজের সিদ্ধান্তে নয় বরং অন্যের সিদ্ধান্তে গঠন করে থাকেন, তবে সেই জীবন আপনার নয়, অন্য কারো। আপনার জীবনের হয়েছে অনধিকার অধিগ্রহণ।
আপনি কি শিক্ষিত?
১) যুক্তি নির্ভর অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রচলিত মতামত ও ধ্যানধারণার বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন? শাশ্বত, বা বহুদিন ধরে চলে আসছে বা লোকে বলে বলেই কোনকিছু সত্য বলে মেনে নেননি?
২) যুক্তি ও কারণ অনুসন্ধানে পাওয়া সিদ্ধান্ত কি আপনার হৃদয়ে অটুট? ব্যক্তিগত মতামতের প্রতি কি প্রতিশ্রুতিশীল? সকল পরিস্থিতিতে নিজ মতামতে অটল থাকতে পারেন; যতক্ষণ না শক্তিশালী’তর কোন যুক্তি তা অধিগ্রহণ করছে?
৩) বৈপ্লবিক চেতনা সত্ত্বেয় সক্রেটিস যে বিষটির গুরুত্বারোপ করেছিলেন তা হল, একজন শিক্ষিত মানুষের দেশের আইন ব্যবস্থার প্রতি থাকা উচিৎ গভীর শ্রদ্ধা। এর কারণ সমাজের নিয়ম কানুন একজন মানুষকে দিচ্ছে নিরাপত্তা, বসবাসের উপযোগী বাসস্থান, ও নাগরিক অন্যান্য সুবিধা। তার জন্য প্রতিদানে কিছু আইন স্বাচ্ছন্দ্যের বিপক্ষে গেলেও একজন শিক্ষিত ব্যক্তি তা উপেক্ষা করতে পারেন না।
কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য ও উন্নয়নকে মাথায় রেখে একজন শিক্ষিত মানুষ দেশ ও সমাজের ক্রমশ সংস্কারের ও আইনের সংশোধনের উদ্দেশ্যে সমাজকে খুঁচিয়ে যাবেন। যেমন সক্রেটিস নিজেকে বলতেন, তিনি এক ডাঁশ, আর এথেন্স এক অলস ঘোড়া যে তার বিশাল আকারের কারণে ধীরগতি সম্পন্ন। তাই তিনি এর গায়ে হুল ফুটিয়ে যান যেন এ ঘুমিয়ে না পরে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।