আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাধীনতা তুমি শোন

আমি জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েছি। স্বাধীনতা তুমি শোন স্বাধীনতা তুমি ধানের শীষে বয়ে যাওয়া মৃদু বায়, স্বাধীনতা তুমি ক্লান্ত পথিক ঘুমে ঢুলো তরুছায়। স্বাধীনতা তুমি আকাশের গায়ে উড়ন্ত ছোট পাখী, স্বাধীনতা তুমি ভাইয়ের হাতে বোনের বাঁধা রাখী। স্বাধীনতা তুমি সাঁঝ আকাশের জ্বলন্ত শুকতারা, স্বাধীনতা তুমি বিষাদ ভুলে খুশীতে পাগলপারা। স্বাধীনতা তুমি বধূর শাড়ীর রক্ত জবা পাড়, স্বাধীনতা তুমি মরালী গ্রীবায় ঝুলন্ত সীতাহার।

স্বাধীনতা তুমি ঠমকে-চমকে রমণীর চপলতা, স্বাধীনতা তুমি দমকে-ঢমকে বলে চলা রূপকথা। স্বাধীনতা তুমি নূপুর পরা কিশোরীর কথকতা, স্বাধীনতা তুমি পল্লী মায়ের হাতের কাজললতা। স্বাধীনতা তুমি টুনটুনিদের ছোট্ট পাতার ঘর, স্বাধীনতা তুমি বালিকা বধূর ছোট্ট কিশোর বর। স্বাধীনতা তুমি রূপালী নূপুর চপলা চরণে বাজো, স্বাধীনতা তুমি গোধূলি আকাশ আবীর রঙে সাজো। স্বাধীনতা তুমি পদ্ম বিলের লাল পদ্মের দল, স্বাধীনতা তুমি ফলজ গাছের রসে ভরপুর ফল।

স্বাধীনতা তুমি রানী শাইলের সুবাস ভরানো ভাত, স্বাধীনতা তুমি রাজা শাইলের পিঠা তৈরির রাত। স্বাধীনতা তুমি বানভাসি ধান, নাজির শাইলের ছড়া, স্বাধীনতা তুমি দাদখানি চাল, মাটির কোলায় ভরা। স্বাধীনতা তুমি মটরের ডাল, ছোট কাচকি মাছ, স্বাধীনতা তুমি কাঁঠাল, জাম আর কচি তালের শাঁস। স্বাধীনতা তুমি ফয়েস লেকের সুখের নৌকা ভ্রমণ, স্বাধীনতা তুমি পাথরের সাথে ঝর্ণা ধারার রমণ। স্বাধীনতা তুমি চলন বিলের তাজা সুস্বাদু মাছ, স্বাধীনতা তুমি সাগর কূলে বন বিভাগের গাছ।

স্বাধীনতা তুমি দিনাজপুরের দেবতা রামের সাগর, স্বাধীনতা তুমি সীতাকুণ্ডের গরম পানির নহর। স্বাধীনতা তুমি হিজল ডালে ছোট্ট পাখীর ডাক, স্বাধীনতা তুমি ভরা কাটালে মহেশখালীর বাঁক। স্বাধীনতা তুমি সজিনা ডাঁটা সরিষা বাটার সাথে, স্বাধীনতা তুমি চালতার চাট ছোট্ট খুকির হাতে। স্বাধীনতা তুমি ধনেপাতা শাক, টক বরই এর ঝাল, স্বাধীনতা তুমি শুটকি ভর্তার ঝালেতে পোড়াও গাল। স্বাধীনতা তুমি নাচের পুতুল সুতায় বাঁধা হাত, স্বাধীনতা তুমি যাত্রাপালার গানে ভরপুর রাত।

স্বাধীনতা তুমি খোকার হাতে শ্যাওড়া পাতার বাঁশি, স্বাধীনতা তুমি বায়না খুকুর, চোখের অশ্রু রাশি। স্বাধীনতা তুমি চাষির ক্ষেতে ফিরোজিয়া ঝিঙ্গে ফুল, স্বাধীনতা তুমি সাগরের পাড়ে যুবতীর খোলা চুল। স্বাধীনতা তুমি কেরু কোম্পানির মোটা দানার চিনি, স্বাধীনতা তুমি মুরং মেয়ের সযত্নে বাঁধা বেণী। স্বাধীনতা তুমি ময়নামতির অমুল্য পুরাকীর্তি, স্বাধীনতা তুমি নাও ভাসিয়ে জোয়ার ধরো ফিরতি। স্বাধীনতা তুমি চর দখলের কাজিয়ার রণতূর্য্য, স্বাধীনতা তুমি কুয়াকাটার অস্ত বেলার সূর্য্য।

স্বাধীনতা তুমি জাফলঙ্গেতে স্রোতে গড়ানো নুড়ি, স্বাধীনতা তুমি বরেন্দ্রভূমির ঘোড়ায় টানা গাড়ী। স্বাধীনতা তুমি বৃষ্টিধারা গাছের পাতায় ঝরো, স্বাধীনতা তুমি বন্যার জল, মাঠ-খাল-বিল ভরো। স্বাধীনতা তুমি বহুতল বাড়ী ঢাকার আকাশ ছোঁয়া, স্বাধীনতা তুমি প্রিয়ার কপোল অনেক কান্না ধোঁয়া। স্বাধীনতা তুমি রামপাল হাটে পুরুষ্টু সাগর কলা, স্বাধীনতা তুমি জ্যোৎস্না রাতে নদীর পাড়ে চলা। স্বাধীনতা তুমি শিশু পার্কের ছোট্ট রেলের গাড়ী, স্বাধীনতা তুমি রসুলপুরে আসমানীদের বাড়ী।

স্বাধীনতা তুমি কচু শাকের সাথে নারকেল দুধ, স্বাধীনতা তুমি বউয়া রাঁধো নিয়ে চালের ক্ষুদ। স্বাধীনতা তুমি শিশুর মায়ের ঘুম পাড়ানী গান, স্বাধীনতা তুমি নুতন বধুর প্রভাত বেলার স্নান। স্বাধীনতা তুমি খাসিয়াদের বিখ্যাত জুম চাষ, স্বাধীনতা তুমি চাকমা রাজার পূর্ণিমা উল্লাস। স্বাধীনতা তুমি অলস দুপুর, সন্ধ্যা-গোধুলিবেলা, স্বাধীনতা তুমি রাতের আঁধার, হাজার জোনাকী জ্বলা। স্বাধীনতা তুমি শিউলি-বকুল, শিশিরস্নাত ভোর, স্বাধীনতা তুমি হরিণ শিশুর উষ্ণ মাতৃক্রোড়।

স্বাধীনতা তুমি সন্ধ্যাপ্রদীপ তুলশীতলায় জ্বালো, স্বাধীনতা তুমি মঙ্গলদ্বীপ, আঁধার ঘরের আলো। স্বাধীনতা তুমি আঁধার রাতে কুহক পেঁচার ডাক, স্বাধীনতা তুমি বনবাদাড়ে শত শেয়ালের হাক। স্বাধীনতা তুমি মুরগীর ওমে ডিমে বসাও তা, স্বাধীনতা তুমি খুকুর মাথায় রঙিন চুলের ফিতা। স্বাধীনতা তুমি একঠ্যাঙ্গা বক, বেজায় লম্বা নাক, স্বাধীনতা তুমি সুন্দরবনে হেঁড়ে মৌমাছি চাক। স্বাধীনতা তুমি লাল কাঁকড়া, সাগরের বেলাভূমে, স্বাধীনতা তুমি শিশুর কপোল, মা যায় চুমে চুমে।

স্বাধীনতা তুমি ভাই ও বোনের সুগভীর ভালবাসা, স্বাধীনতা তুমি মায়ের মনে সোনালী দিনের আশা। স্বাধীনতা তুমি ভোরের আকাশ, রক্তিম রঙে রাঙা, স্বাধীনতা তুমি বাসর ঘরেতে বধুর লজ্জা ভাঙা। স্বাধীনতা তুমি লাঙ্গলের ঈশে শালিক পাখী বসা, স্বাধীনতা তুমি স্বপ্ন আশায় খেতের জমিন চষা। স্বাধীনতা তুমি থোড় ভরা ধানে বাতাস সুবাসে ভরা, স্বাধীনতা তুমি নবান্ন খুশীতে হৃদয় মাতাল করা। স্বাধীনতা তুমি নবীন মাঝির ছোট্ট কোশা নাও, স্বাধীনতা তুমি মটর লতা, কড়াই শুটি, লাউ।

স্বাধীনতা তুমি পরবের দিন, বধুর রজোৎসব, স্বাধীনতা তুমি গাঙ শালিকের কিচির-মিচির রব। স্বাধীনতা তুমি মেষের শাবক, লোমে ভরা তুলতুল, স্বাধীনতা তুমি বৃক্ষ শাখায় গান গাওয়া বুলবুল। স্বাধীনতা তুমি যষ্ঠি মধু মিষ্টি গুড়ের মতন, স্বাধীনতা তুমি মগডাল হতে দুষ্টু ছেলের পতন। স্বাধীনতা তুমি হাওয়াই মিঠাই আমার ছেলের হাতে, স্বাধীনতা তুমি কাঁসার থালায় তরকারী হও পাতে। স্বাধীনতা তুমি কুমোরের চাকে হাড়ী-কলসি গড়ো, স্বাধীনতা তুমি জলকে গিয়ে কাঁখের কলস ভরো।

স্বাধীনতা তুমি পাঠশালাতে শোরে শতকিয়া পাঠ, স্বাধীনতা তুমি ধবলী গাইয়ের দুধে ভরানো বাট। স্বাধীনতা তুমি আকাশ-কুসুম কবির কল্পনা, স্বাধীনতা তুমি মেহেদী রঙে আঁকা নানা আল্পনা। স্বাধীনতা তুমি আঙ্গিনা জুড়ে শাক-সব্জির চাষ, স্বাধীনতা তুমি কাজলা নদীর গলদা চিংড়ি মাছ। স্বাধীনতা তুমি চাঁদনী রাতে কানামাছি ভোঁভোঁ খেলা, স্বাধীনতা তুমি শহীদ স্মরনে একুশের বই মেলা। স্বাধীনতা তুমি ফুলশয্যার রজনীগন্ধ্যা ফুল, স্বাধীনতা তুমি যুবতীর কানে গোলাপী মুক্তা দুল।

স্বাধীনতা তুমি রাজহংসীর লম্বা উঁচু গলা, স্বাধীনতা তুমি পাতিহাঁসের থপথপিয়ে চলা। স্বাধীনতা তুমি ছোট্ট কুড়ে, কলার পাতায় ছাওয়া, স্বাধীনতা তুমি কিষাণী বধুর গোবর নিকনো দাওয়া। স্বাধীনতা তুমি পুকুর পাড়ের হলুদ কোলাব্যাঙ, স্বাধীনতা তুমি বৃষ্টি আশায় ডাকো ঘ্যাঙরঘ্যাঙ। স্বাধীনতা তুমি শিশুর মুখের প্রাণ জুড়ানো হাসি, স্বাধীনতা তুমি ছোট্ট শিশুর দন্ত মুক্তা রাশি। স্বাধীনতা তুমি হরবোলা পাখী বিচিত্র সুরে ডাকো, স্বাধীনতা তুমি চাঁদের কপালে চাঁদ দিয়ে টিপ আঁকো।

স্বাধীনতা তুমি দীঘির বুকে শ্বেত পদ্ম ফোটা, স্বাধীনতা তুমি সন্ধ্যা রাতে স্নিগ্ধ চন্দ্র ওঠা। স্বাধীনতা তুমি চাঁদের হাসি, উছলে পড়া আলো, স্বাধীনতা তুমি গন্ধরাজের গন্ধ সুধা ঢালো। স্বাধীনতা তুমি বাংলার বুকে অঢেল রত্নরাজি, স্বাধীনতা তুমি জুয়েল আইচের মনোহরণ বাজি। স্বাধীনতা তুমি ধান সায়রে নীলপদ্মের মেলা, স্বাধীনতা তুমি বীণ বাজিয়ে সাপুড়ের সাপ খেলা। স্বাধীনতা তুমি রাখাল ছেলে, চরাও মাঠে ধেনু, স্বাধীনতা তুমি হ্যাচারি ভরে ফোটাও মাছের রেণু।

স্বাধীনতা তুমি ঘুটঘুটে রাত, নিকষ অন্ধকার, স্বাধীনতা তুমি অভিমানিনীর বন্ধ ঘরের দ্বার। স্বাধীনতা তুমি মেঘে ঢাকা চাঁদ, সুদূর নীলিমায়, স্বাধীনতা তুমি হংসমিথুন, সাঁঝ আকাশের গায়। স্বাধীনতা তুমি শীতের পাখী, নীলসায়রের জলে, স্বাধীনতা তুমি ঘর ভাঙ্গা ঘর, শকুনি মামার ছলে। স্বাধীনতা তুমি কৃষি জমির লক্ষ কোটি আল, স্বাধীনতা তুমি জিয়ার কাটা পানি সেঁচের খাল। স্বাধীনতা তুমি পালকি চড়ো চার বেহারার কাঁধে, স্বাধীনতা তুমি বস্তি বানাও শহর রক্ষা বাঁধে।

স্বাধীনতা তুমি জুড়ীগাড়িতে আদি ঢাকাইয়া বর, স্বাধীনতা তুমি বারিধারার মার্বেলে মোড়া ঘর। স্বাধীনতা তুমি কুতুবদিয়ার সাগরের বাতি ঘর, স্বাধীনতা তুমি মেঘনার বুকে কাশ ফুল ভরা চর। স্বাধীনতা তুমি গড়াই নদী কাদা বালিতে ভরো, স্বাধীনতা তুমি বাঁশপাতা মাছ খেপলা জালে ধরো। স্বাধীনতা তুমি হেলিকপ্টার, সোনাবাড়িয়ার পথে, স্বাধীনতা তুমি লৌহ-চক্র ধামরাই হাট রথে। স্বাধীনতা তুমি দখিনোপকুলের সমুদ্র তটরেখা, স্বাধীনতা তুমি কিশোরী মেয়ের প্রেমপত্র লেখা।

স্বাধীনতা তুমি পাহাড়ি বালা, বোমাং রাজার বাড়ী, স্বাধীনতা তুমি নুলিয়া হয়ে সাগরেতে দাও পাড়ি। স্বাধীনতা তুমি সাগরকুলে ঝাউ পাইনের গাছ, স্বাধীনতা তুমি চিংড়ি ঘেরের বাগদা চিংড়ি মাছ। স্বাধীনতা তুমি পোশাক শিল্প ঢাকা শহর জুড়ে, স্বাধীনতা তুমি ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগের মোড়ে। স্বাধীনতা তুমি বদর বলে কালিদহে হও পার, স্বাধীনতা তুমি ভাটির খালে পারাপারের চার। স্বাধীনতা তুমি ঝিনুকে ভরে মুক্ত করো চাষ, স্বাধীনতা তুমি দোমালা ডাবের হাল্কা মিষ্টি শাঁস।

স্বাধীনতা তুমি ঝাল-মরিচে ঝালানো কামরাঙা, স্বাধীনতা তুমি শিকে ছিঁড়ে কাঁচের বৈয়াম ভাঙা। স্বাধীনতা তুমি স্মৃতি সৌধ, সাভারের লাল মাটি, স্বাধীনতা তুমি চাষের জমি, খরতাপে যাও ফাটি। স্বাধীনতা তুমি বাগদী পাড়ার তল্লা বাঁশের ঝুড়ি, স্বাধীনতা তুমি চুড়ি পট্টির রঙিন কাঁচের চুড়ি। স্বাধীনতা তুমি আমার প্রিয়ার মেঘবরণ চুল, স্বাধীনতা তুমি বাবলা গাছের হলুদবরণ ফুল। স্বাধীনতা তুমি রূপায় মোড়া মেহগনির খাট, স্বাধীনতা তুমি অবধুতের উদ্ধারনপুর ঘাট।

স্বাধীনতা তুমি বেদের তূণে বিষ মাখানো শর, স্বাধীনতা তুমি সয়ফুল মূলক, চাঁদ সওদাগর। স্বাধীনতা তুমি অলকা-তিলকা পল্লী কুমারী বালা, স্বাধীনতা তুমি মানস প্রিয়ার বিনিসুতে গাঁথা মালা। স্বাধীনতা তুমি শ্রাবণ আকাশে নিড়িন পাখীর ওড়া, স্বাধীনতা তুমি দখিন-পুবের বাতাসে বৃষ্টি ভরা। স্বাধীনতা তুমি কিশোরের মুখে কুমড়া লতার ধোঁয়া, স্বাধীনতা তুমি বটবৃক্ষের মাটিতে প্রোথিত বোয়া। স্বাধীনতা তুমি ছোট শিশুদের এক্কাদোক্কা খেলা, স্বাধীনতা তুমি যুবতী মেয়ের এসিডে গাত্র জ্বলা।

স্বাধীনতা তুমি ছোট্ট বেলার পুতুল খেলার বর, স্বাধীনতা তুমি যৌতূকে ভাঙা শত রমণীর ঘর। স্বাধীনতা তুমি পায়রা ডাকো বাকুম-বাকুম-বাক, স্বাধীনতা তুমি সোহাগী নারীর নোলক পরা নাক। স্বাধীনতা তুমি তন্বী তরুণী, রূপচর্চা করো, স্বাধীনতা তুমি আঁধার দিয়ে রাঘববোয়াল ধরো। স্বাধীনতা তুমি প্রেমিকের চোখে হরণ করো ঘুম, স্বাধীনতা তুমি নবজাতকের কপালে আঁকো চুম। স্বাধীনতা তুমি বিয়ের ভোজে চর্বি-আলুর দম, স্বাধীনতা তুমি মেহেরপুরের বাসুর রসকদম।

স্বাধীনতা তুমি বোরহানি দিয়ে বিরিয়ানি গোশ খাও, স্বাধীনতা তুমি প্রবাসে যেতে পিছু ফিরে ফিরে চাও। স্বাধীনতা তুমি প্রবাসী স্বামীর বিষাদক্লিষ্ট বধু, স্বাধীনতা তুমি হৃদয় মাঝে কান্না ঝরাও শুধু। স্বাধীনতা তুমি বধুকে লেখা প্রবাসী স্বামীর পত্র, স্বাধীনতা তুমি চারণ কবির লেখা কয়েক ছত্র। স্বাধীনতা তুমি সবুজ ছাতা, স্বাস্থ্য কর্মীর হাতে, স্বাধীনতা তুমি হুক্কাহুয়া শিয়ালের ডাক রাতে। স্বাধীনতা তুমি গাঁও গেরামের সাইকেল চড়া বর, স্বাধীনতা তুমি বিলের ভেতর মাছ পাহারার ঘর।

স্বাধীনতা তুমি চায়ের দোকানে সন্ধ্যারাতের আড্ডা, স্বাধীনতা তুমি বাড়ীর পাশের পচা পানির গাড্ডা। স্বাধীনতা তুমি যন্ত্রযানের দুষিত কালো ধোঁয়া, স্বাধীনতা তুমি ঝোলা গুড়ে তৈরি মুড়ির মোয়া। স্বাধীনতা তুমি শ্যাওড়া গাছে ভুত-পেত্নীর বাসা, স্বাধীনতা তুমি বুনো ওলে তেতুলের টক খাসা। স্বাধীনতা তুমি বঙ্গ ললনার গুরু নিতম্ব দোলা, স্বাধীনতা তুমি দৃষ্টি সুখী যুবক আত্মভোলা। স্বাধীনতা তুমি গোশাবকের টলমল পায়ে দৌড়, স্বাধীনতা তুমি চিংড়ি মাছে কলা গাছের থোড়।

স্বাধীনতা তুমি মুখ ভেংচাও খেয়ে উচ্ছের তিতা, স্বাধীনতা তুমি সতি সাবিত্রীর সহমরণের চিতা। স্বাধীনতা তুমি বিয়ের পিড়িতে বসা কুমারী নারী, স্বাধীনতা তুমি অনাস্বাদিত ঘটের কারণবারি। স্বাধীনতা তুমি ছাঁদনাতলায় বিয়ের হুলুধ্বনি, স্বাধীনতা তুমি মৃদু মন্দ্র সন্ধ্যা শঙ্খ ধ্বনি। স্বাধীনতা তুমি ধূপধূনা দাও সাঁঝের বেলায় ঘরে, স্বাধীনতা তুমি আগর চন্দন পোড়াও দোকান পরে। স্বাধীনতা তুমি লোবান জ্বালাও মৃতের শিয়র পাশে, স্বাধীনতা তুমি মোমবাতি জ্বালো দুখ নিবারন আশে।

স্বাধীনতা তুমি পদ্মার বুকে ইলিশ মাছের ঝাঁক, স্বাধীনতা তুমি কর্ণফুলীর খরস্রোতা বাঁক। স্বাধীনতা তুমি গোমতী তীরে সমবায় করে বাঁচো, স্বাধীনতা তুমি মুসা-মুহিত এভারেস্ট চুড়ায় নাচো। স্বাধীনতা তুমি সাগরের বুকে জল পায়রার ঝাঁক, স্বাধীনতা তুমি সুরমার তীরে গাঙ শালিকের ডাক। স্বাধীনতা তুমি বলেশ্বরের ফুসে ওঠা মহাবান, স্বাধীনতা তুমি সাঙ্গু নদীর স্রোত বহা কলতান। স্বাধীনতা তুমি বুড়িগঙ্গাতে নৌকা বাইচ খেলা, স্বাধীনতা তুমি সাতক্ষীরাতে গুড়পুকুরের মেলা।

স্বাধীনতা তুমি মধুমতিতে পাল খাটানো নাও, স্বাধীনতা তুমি শঙ্খ নদীতে সদা সাম্পান বাও। স্বাধীনতা তুমি পশুর, ভৈরব, রূপসা, তালখড়ি, স্বাধীনতা তুমি শিবসা, গড়াই, কুমার, ধানসিঁড়ি। স্বাধীনতা তুমি মধুসূদনের কপোতাক্ষ নদ, স্বাধীনতা তুমি জসীম উদ্দিনের গায়ের মেঠো পথ। স্বাধীনতা তুমি সুন্দরবনের কেওড়া ফলের টক, স্বাধীনতা তুমি পায়রা নদীতে চরের সাদা বক। স্বাধীনতা তুমি সুন্দরবনে বাঘ-হরিণের মেলা, স্বাধীনতা তুমি ভৈরব নদে ভাসানো কলার ভেলা।

স্বাধীনতা তুমি মেঘনার চরে হলুদ সরিষা ফুল, স্বাধীনতা তুমি সাতক্ষীরাতে মিঠা নারকেল কুল। স্বাধীনতা তুমি চিত্রা পাড়ে এস এম সুলতানের বাড়ী, স্বাধীনতা তুমি সন্ধ্যা, পায়রা, ইছামতি, মাতামুহুরী। স্বাধীনতা তুমি হালদা নদী, পুরানো ব্রহ্মপুত্র, স্বাধীনতা তুমি জলঙ্গিতে খোঁজো মাথাভাঙ্গার সুত্র। স্বাধীনতা তুমি আত্রাই তীরে পিয়াজ বীজের হাট, স্বাধীনতা তুমি মাটিরাঙ্গার শাল-সেগুনের কাঠ। স্বাধীনতা তুমি তিতাস নদীর গ্যাস সমৃদ্ধ তীর, স্বাধীনতা তুমি মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদান বীর।

স্বাধীনতা তুমি ঝুমকো লতা, ছন্দে দোদুল দোলো, স্বাধীনতা তুমি দুদ-সাগরে নৌকায় পাল তোলো। স্বাধীনতা তুমি শিবসা নদীর ঢেউয়ের দোলায় ভাসো, স্বাধীনতা তুমি চিলমারীতে নৌকা পথে আসো|। স্বাধীনতা তুমি নবগঙ্গায় তালের ডিঙ্গার বহর, স্বাধীনতা তুমি তুরাগ তীরে গড়া উত্তরা শহর। স্বাধীনতা তুমি তিস্তা নদীর পাড় ভাসানো দুখ, স্বাধীনতা তুমি যমুনা সেতুর বুক ভরানো সুখ। স্বাধীনতা তুমি লালন সেতু পদ্মার বুক জোড়া, স্বাধীনতা তুমি মেঘনা সেতু, জাপানীদের গড়া।

স্বাধীনতা তুমি মৈত্রী সেতুতে আন্তরাষ্টীয় সুর, স্বাধীনতা তুমি পথ বেঁধে দিয়ে নিকটে এনেছ দূর। স্বাধীনতা তুমি রঙ্গ ভরা আমার বঙ্গদেশ, স্বাধীনতা তুমি ফরিদপুরের গুড় ভরা সন্দেশ। স্বাধীনতা তুমি পোড়াবাড়ীর রস ভরা চমচম, স্বাধীনতা তুমি নড়াইলের ক্ষীর ভরা কালোজাম। স্বাধীনতা তুমি রানী ভবানীর নাটোরের কাঁচাগোল্লা, স্বাধীনতা তুমি পুরান ঢাকার লালবাগেরই কেল্লা। স্বাধীনতা তুমি বাগেরহাটের ঘন সুপারির বন, স্বাধীনতা তুমি স্নেহেতে ভরা মা-ঠাকুমার মন।

স্বাধীনতা তুমি রংপুরের ঐ তামাক গাছের ফুল, স্বাধীনতা তুমি পল্লী গায়ের কাঁটা ভরা শিয়াকুল। স্বাধীনতা তুমি ঈশান কোণে কালবৈশাখীর ঝড়, স্বাধীনতা তুমি ঝড়ে উপড়ানো অগণিত কুঁড়েঘর। স্বাধীনতা তুমি গুড়ুম গুড়ুম ভাদ্র মেঘের ডাক, স্বাধীনতা তুমি চিটাগাং রোডে দ্রুত ছুটে চলা ট্রাক। স্বাধীনতা তুমি যশোরের শীতে মিষ্টি খেজুর গুড়, স্বাধীনতা তুমি রাজশাহীতে শুকানো আমের চুর। স্বাধীনতা তুমি সেন্ট মারটিনের শুটকি মাছের রাশ, স্বাধীনতা তুমি ময়মনসিংহের সোনালী পাটের আঁশ।

স্বাধীনতা তুমি চাপাই জেলার কলাই আটার রুটি, স্বাধীনতা তুমি গারো পাহাড়ের চ্যাপা শুটকি পুঁটি। স্বাধীনতা তুমি গহীন বনে পাখীদের কল্লোল, স্বাধীনতা তুমি ধানক্ষেতে দাও বাতাসের হিল্লোল। স্বাধীনতা তুমি চা বাগানের মহুয়া ফুলের রস, স্বাধীনতা তুমি কুলিকামিনের নেশা ভরা উল্লাস। স্বাধীনতা তুমি কিশোরগঞ্জের বাওড়ে কলমিলতা, স্বাধীনতা তুমি শ্রীমঙ্গলের এক কুঁড়ি দুটি পাতা। স্বাধীনতা তুমি বিক্রমপুরের বাতাবী নেবুর গন্ধ, স্বাধীনতা তুমি আঁধার রাতে ঝিল্লী নূপুর ছন্দ।

স্বাধীনতা তুমি রামুর বাগানে রবার গাছের কস, স্বাধীনতা তুমি কক্সবাজারের পাহাড় কাটা ধ্বস, স্বাধীনতা তুমি সোনারগাঁয়ের নকশা করা পাখা। স্বাধীনতা তুমি হিন্দু বৌয়ের হাতের সাদা শাঁখা। স্বাধীনতা তুমি বগুড়ার দৈ, ঢাকার বাকরখানি, স্বাধীনতা তুমি সুনামগঞ্জের হাওড়ের নীল পানি। স্বাধীনতা তুমি মেলার মাঠে দেখা মাদারির খেল, স্বাধীনতা তুমি নোয়াপাড়ার ডাব, মিষ্টি নারিকেল। স্বাধীনতা তুমি সিলেটের চা, সাতকড়ার টক ঝোল, স্বাধীনতা তুমি আমের শাখায় অজস্র ফোটা বোল।

স্বাধীনতা তুমি সুন্দরবন, গোলপাতা দিয়ে ছাওয়া, স্বাধীনতা তুমি শাল-পিয়ালের বনে বহা মৃদু হাওয়া। স্বাধীনতা তুমি চন্দ্রার বন, মধুপুরের গড়, স্বাধীনতা তুমি লখিন্দরের লোহার বাসর ঘর। স্বাধীনতা তুমি বিস্তীর্ণ ক্ষেত, খুলনাতে তিল-তিসির, স্বাধীনতা তুমি বেগুন পাতায় রাতের ঝরা শিশির। স্বাধীনতা তুমি কাশিয়ানির তেল ভরা কৈ মাছ, স্বাধীনতা তুমি রেশম ফলানো চাপাইয়ের তুত গাছ। স্বাধীনতা তুমি জামদানীতে ফুটিয়ে তোলা কাব্য, স্বাধীনতা তুমি আরিচা ঘাটের হারিয়ে ফেলা নাব্য।

স্বাধীনতা তুমি মুন্সিগঞ্জের আলু ক্ষেতের পানা, স্বাধীনতা তুমি মাদারীপুরের পুরুষ্টু মোটর দানা। স্বাধীনতা তুমি আহসান মঞ্জিল, বুড়িগঙ্গার তীরে, স্বাধীনতা তুমি স্বপ্ন আমার, সোনার বাংলা ঘিরে। স্বাধীনতা তুমি নয়নলোভা, এদেশ বাংলাদেশ, স্বাধীনতা তুমি কেওক্রাডাং, রূপের নাইকো শেষ। স্বাধীনতা তুমি কাপ্তাই লেকে বাঁশ দিয়ে বাঁধা ভেলা, স্বাধীনতা তুমি নীলগিরিতে বসে বয়ে যাওয়া বেলা। স্বাধীনতা তুমি সুজন গাঁয়ের ধূলি ধূসরিত পথ, স্বাধীনতা তুমি লালচেলী পরা তরুণী বধুর নথ।

স্বাধীনতা তুমি আমের আচার, মুগ-মশুরীর ডাল, স্বাধীনতা তুমি বাকেরগঞ্জের কাঁচা লঙ্কার ঝাল। স্বাধীনতা তুমি মহাস্থান গড়, পাথর বাটির দৈ, স্বাধীনতা তুমি ভেড়ামারার ভুট্টা ভাঁজা খৈ। স্বাধীনতা তুমি শরীয়তপুরের লাউখোলা-কাজিহাট, স্বাধীনতা তুমি বাবু বাজারের তাঁতির কাপড় লাট। স্বাধীনতা তুমি বড়পুকুরিয়া, কালো মানিকের খনি, স্বাধীনতা তুমি পাহাড়ি ছড়ার জলপ্রপাতের ধ্বনি। স্বাধীনতা তুমি বাখরাবাদের কূপের জ্বালানি গ্যাস, স্বাধীনতা তুমি একানব্বইয়ের ভয়াল জলোচ্ছ্বাস।

স্বাধীনতা তুমি গাজী, কালু আর চম্পাবতীর মাজার, স্বাধীনতা তুমি বার আউলিয়ার নামের বার বাজার। স্বাধীনতা তুমি ওড়াকান্দির কুম্ভস্নানের মেলা, স্বাধীনতা তুমি চট্টগ্রামের জব্বরের বলি খেলা। স্বাধীনতা তুমি সাতকানিয়ার প্রথাগত মেজবান, স্বাধীনতা তুমি হাতিয়া দ্বীপের যান্ত্রিক জলযান। স্বাধীনতা তুমি সরাইল গ্রামে সঙ্কর সারমেয়, স্বাধীনতা তুমি যশোরের ডাব সুস্বাদু-সুপেয়। স্বাধীনতা তুমি মাঘী পূর্ণিমা চায়ের বাগান জুড়ি, স্বাধীনতা তুমি বনসাই-বট, নাই তাহাতে ঝুরি।

স্বাধীনতা তুমি প্রীতিলতা সেন মাস্টারদার চট্টলা, স্বাধীনতা তুমি বাঁধানো বেদীতে নববর্ষের মেলা। স্বাধীনতা তুমি সোনারগাঁয়ে জ্যোতিবসুর বাড়ী, স্বাধীনতা তুমি সুচিত্রা সেনের পাবনা তাঁতের শাড়ী। স্বাধীনতা তুমি নিয়াজ মোর্শেদ, গুণী খেলোয়াড় দাবার, স্বাধীনতা তুমি কস্তূরী হোটেল, সুস্বাদু বাংলা খাবার। স্বাধীনতা তুমি রবীন্দ্রনাথ, বাঙ্গালী হৃদয় ভরো, স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল, বিদ্রোহী গান করো। স্বাধীনতা তুমি শামসুর রহমান, প্রথিতযশা কবি, স্বাধীনতা তুমি খান জয়নুলের আঁকা মনোহর ছবি।

স্বাধীনতা তুমি পটুয়ার পটে মেঘেতে ঢাকা তারা, স্বাধীনতা তুমি হুমায়ুনের গল্প লেখার ধারা। স্বাধীনতা তুমি আবু হেনার শত প্রবন্ধ কথা, স্বাধীনতা তুমি বীর তিতুমীর, বাঁশের কেল্লা গাঁথা। স্বাধীনতা তুমি আল্লার দান, সোনার বাংলাদেশ, স্বাধীনতা তুমি নদী মাতৃক আমার বাংলাদেশ। স্বাধীনতা তুমি শাহজালালের পুণ্য ভরা স্মৃতি, স্বাধীনতা তুমি ছেউড়িয়াতে লালনের মধুগীতি। স্বাধীনতা তুমি ছন্দে ছন্দে মনিপুরী নাচ নাচো, স্বাধীনতা তুমি নকশী কাঁথায় বিরহ কাব্য রচো।

স্বাধীনতা তুমি গরুগাড়ী চড় ভাওয়াইয়া গানের সুরে, স্বাধীনতা তুমি শান্তির বাণী রচো বসে পাহাড়পুরে। স্বাধীনতা তুমি জিয়াউল হকের মাইজভাণ্ডারী গান, স্বাধীনতা তুমি হাসন রাজার মারফতী সুরের প্রাণ। স্বাধীনতা তুমি রাগ মালকোষে কোমল জ্ঞা-ণা-ধৈবত, স্বাধীনতা তুমি কক্সবাজারের ঝিনুক কুড়ানো সৈকত। স্বাধীনতা তুমি আব্বাস উদ্দিনের ভাটিয়ালী সুরে গান, স্বাধীনতা তুমি আব্দুল আলীমের পল্লী গীতির টান। স্বাধীনতা তুমি কবিয়ালী গান, প্রাণ মাতানো জারী, স্বাধীনতা তুমি টাঙ্গাইলের হাতে তাঁতে বোনা শাড়ী।

স্বাধীনতা তুমি নানা-নাতির গাওয়া গম্ভীরা গান, স্বাধীনতা তুমি দখিণা বাতাসে শীতল করো প্রাণ। স্বাধীনতা তুমি কাঁচকলা দিয়ে গন্ধভাদালী ঝোল, স্বাধীনতা তুমি কীর্তনিয়ার সোমে লয়ে বাজা খোল। স্বাধীনতা তুমি বাউলের হাতে লাউয়ের একতারা, স্বাধীনতা তুমি কবি নজরুলের কাব্য বাঁধনহারা। স্বাধীনতা তুমি বোষ্টমীর হাতে দোতারা-খঞ্জনী, স্বাধীনতা তুমি চোখের পাতায় ব্যাথা ভরা অঞ্জনী। স্বাধীনতা তুমি বাদক দলের সারেঙ্গীতে বাজা সুর, স্বাধীনতা তুমি তক্ষক ডাকা প্রহর, রাত-দুপুর।

স্বাধীনতা তুমি প্রাচীন কবির আদিরসাত্মক কাব্য, স্বাধীনতা তুমি রম্যগীতি, অবসরে সুখশ্রাব্য। স্বাধীনতা তুমি ঝিনিকি ঝিনি নূপুরের মধুশিঞ্জন, স্বাধীনতা তুমি মৌমাছিদের একটানা মৃদু গুঞ্জন। স্বাধীনতা তুমি পাগল বেশে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করো, স্বাধীনতা তুমি ক্ষ্যাপা বাউল, দেহ সঙ্গীত ধরো। স্বাধীনতা তুমি সিরাজ সাইয়ের ভাব সঙ্গীতের ধারা, স্বাধীনতা তুমি রাগ সঙ্গীতে হৃদয় মাতাল করা। স্বাধীনতা তুমি ব্যান্ড সঙ্গীতে কথা ছাড়া বাদন, স্বাধীনতা তুমি পপ সঙ্গীতে অযথা নাচন-কুদন।

স্বাধীনতা তুমি বিবাহগীতি, গায়ে হলুদের দিনে, স্বাধীনতা তুমি বিরহগীতি, বিরহী যক্ষ প্রাণে। স্বাধীনতা তুমি ছাঁদ পেটা গান, বাড়ির উপর বাড়ি, স্বাধীনতা তুমি ধান কাঁটা গান, গাও যে গলা ছাড়ি। স্বাধীনতা তুমি আশাবরী ঠাট, বেহাগ, শিবরঞ্জন, স্বাধীনতা তুমি কীর্তনিয়ার রাধার মান ভঞ্জন। স্বাধীনতা তুমি নৌকাবিলাস, পদাবলীতে গাওয়া, স্বাধীনতা তুমি ভৈরব রাগে ভোরের শীতল হাওয়া। স্বাধীনতা তুমি লক্ষণ গীত, ইমনকল্যান, দেশ, স্বাধীনতা তুমি বসন্ত, বাগেশ্রী, জয়জয়ন্তীর রেশ।

স্বাধীনতা তুমি দীপক রাগে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালো, স্বাধীনতা তুমি বিলাবল ঠাটে মনেতে জ্বালাও আলো। স্বাধীনতা তুমি কৌশিক রাগে ঘুচাও মনের ব্যাথা, স্বাধীনতা তুমি শ্রী রাগেতে মুখে যোগাও কথা। স্বাধীনতা তুমি হিন্দোলে দাও গাছের পাতায় দোল, স্বাধীনতা তুমি ভূপালী রাগে বলো বধু আঁখি খোল। স্বাধীনতা তুমি মেঘমল্লার রাগেতে ঢেউয়ের দোলা, স্বাধীনতা তুমি মালশ্রীতে শ্রীমতীর চুল খোলা। স্বাধীনতা তুমি বিরিঞ্চি ধানে চাষির গোলা ভরো, স্বাধীনতা তুমি মেহেরপুরে বারিঞ্চি গান করো।

স্বাধীনতা তুমি নব ইতিহাস, বাংলা ভাষায় লেখা, স্বাধীনতা তুমি বিদেশী শাসন, পিছু ফিরে ফিরে দেখা। স্বাধীনতা তুমি কাব্য রচো, মুক্ত স্বদেশ নিয়ে, স্বাধীনতা তুমি দহগ্রাম যাও, নয়া করিডোর দিয়ে। স্বাধীনতা তুমি আমার প্রিয়ার কাজল কালো আঁখি, স্বাধীনতা তুমি কায়েম, সারস, সবুজ টিয়া পাখী। স্বাধীনতা তুমি দোয়েল, শ্যামা, ফিঙ্গে রাজার ভোর, স্বাধীনতা তুমি শিশুর মাজায় রূপার তৈরি ডোর। স্বাধীনতা তুমি আঁখের ক্ষেতে চড়ুই পাখীর ঝাঁক, স্বাধীনতা তুমি শাহজালালের গোলা পায়রার ডাক।

স্বাধীনতা তুমি চোখ গেল পাখী আকাশে বেড়াও উড়ে, স্বাধীনতা তুমি লাজ্বে রাঙা হও বউ-কথা-কউ সুরে। স্বাধীনতা তুমি মাছরাঙা পাখী, ডুব দিয়ে মাছ ধরো, স্বাধীনতা তুমি সিলভারকার্প, নদী-খাল-বিল ভরো। স্বাধীনতা তুমি বাবুই পাখীর খড়ে বানান বাসা, স্বাধীনতা তুমি ক্রৌঞ্চমিথুনের সুখ ভরা ভালবাসা। স্বাধীনতা তুমি রূপচাঁদা মাছ, ছই-বিচি দিয়ে রাঁধা, স্বাধীনতা তুমি লাক্কা শুটকি, ছন দিয়ে আঁটি বাঁধা। স্বাধীনতা তুমি চিংড়ি, খলসা, তেল ভরা সরপুঁটি, স্বাধীনতা তুমি কাকাতুয়ার সুশোভন লাল ঝুঁটি।

স্বাধীনতা তুমি গুলশা মাছের ঘন মশলার ঝোল, স্বাধীনতা তুমি চ্যাং, টাকি আর নোনাপানির ভোল। স্বাধীনতা তুমি রুই, কাতলা, মিষ্টি পানির মৃগেল, স্বাধীনতা তুমি পাঙ্গাশ মাছের পেট ভরা স্বাদু তেল। স্বাধীনতা তুমি সাঁওতালীদের নাচের মাদল ধ্বনি, স্বাধীনতা তুমি নবীনগরের কাঁচা দুধের ননী। স্বাধীনতা তুমি হেমন্তকালে কৃষাণী বধুর গান, স্বাধীনতা তুমি ঠোঁট রাঙানো আলমডাঙ্গার পান। স্বাধীনতা তুমি সিলেটের বেত, বরিশালের পাটি, স্বাধীনতা তুমি সোনালী আঁশের পানিতে পচা আঁটি।

স্বাধীনতা তুমি ম্যাক্সি গাড়ী, রাজপথ ধরে ছোটো, স্বাধীনতা তুমি কদম্ব ফুল, বর্ষা ঋতুতে ফোটো। স্বাধীনতা তুমি ফণীমনসা, বেতসলতার কাঁটা, স্বাধীনতা তুমি বৈঁচির ফল, শিরীষ গাছের আঠা। স্বাধীনতা তুমি বাজনা বাজা নাটাইয়ের ঝুনঝুনি, স্বাধীনতা তুমি উই ঢিবিতে উই পোকাদের রানী। স্বাধীনতা তুমি ষাঁড়ের লড়াই, চর দখলের ক্ষণ, স্বাধীনতা তুমি সমুদ্রকুলের জোয়ারভাটার গণ। স্বাধীনতা তুমি শৈবাল দ্বীপ, ঢেউ ভরা সাগরে, স্বাধীনতা তুমি প্রাসাদ শীর্ষ, প্রাচীন গৌড় নগরে।

স্বাধীনতা তুমি রাজশাহীতে পুঠিয়া রাজার বাড়ী, স্বাধীনতা তুমি সিংহ দুয়ারে লাগানো খড়খড়ি। স্বাধীনতা তুমি ইশ্বরীপুরের যশোরেশ্বরী রাজ, স্বাধীনতা তুমি বিজয় সরণীর মিলিত কুচকাওয়াজ। স্বাধীনতা তুমি আউশের ভাত, কচুপাতা শাক দিয়ে, স্বাধীনতা তুমি মাঘ-ফাগুনের শতসহস্র বিয়ে। স্বাধীনতা তুমি পান্তা ভাতে পিয়াজ-মরিচ পোড়া, স্বাধীনতা তুমি খোকার হাতে আঁখের মিষ্টি গোঁড়া। স্বাধীনতা তুমি গহীন বনের ঔষধি গুল্ম-লতা, স্বাধীনতা তুমি তেতুল গাছের হাজার চিরল পাতা।

স্বাধীনতা তুমি পলাশ ফোটাও বুলবুলিদের গানে, স্বাধীনতা তুমি নাও বেয়ে যাও ভাটির স্রোতের টানে। স্বাধীনতা তুমি গুলতি হাতে দামাল ছেলের শিকার, স্বাধীনতা তুমি বর্ষায় ভেজা শিশুর জ্বরের বিকার। স্বাধীনতা তুমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধর্মস্টলের ডাল, স্বাধীনতা তুমি বটিয়াঘাটার রানী ছালটের চাল। স্বাধীনতা তুমি চৈ ঝালে রাঁধা রসনাতৃপ্ত গোশ, স্বাধীনতা তুমি নবাবপুরের খিলি পানে দিলখোশ। স্বাধীনতা তুমি হাজীর বিরানী, চকবাজারের লাচ্ছি, স্বাধীনতা তুমি দারুল কাবাব, ক্যাফে ঝিলের কাচ্চি।

স্বাধীনতা তুমি বিকেল বেলায় রংধনু রং বৃষ্টি, স্বাধীনতা তুমি বিশ্বসেরা আলাউদ্দিনের মিষ্টি। স্বাধীনতা তুমি ফাগুন বায়ে আগুন পোড়া ঘর, স্বাধীনতা তুমি চৈত-বোশেখে মেঘবৃষ্টি-ঝড়। স্বাধীনতা তুমি জ্যৈষ্ঠ মাসে রসালো ফল কাঁঠাল, স্বাধীনতা তুমি ভাদ্র দিনে গাছ হতে পড়া তাল। স্বাধীনতা তুমি হেমন্ত রাতে শিশির হয়ে ঝরো, স্বাধীনতা তুমি বর্ষা ঋতুতে বৃষ্টির গান করো। স্বাধীনতা তুমি রজতরেখা, ঢেউ খেলা গম ক্ষেত, স্বাধীনতা তুমি বাবলার ঝোপ, কাঁটায় ভরা বেত।

স্বাধীনতা তুমি কড়ই ফলে শত ঝুমঝুমি বাজাও, স্বাধীনতা তুমি চৈত্র সংক্রান্তিতে রামকৃষ্ণ সাজাও। স্বাধীনতা তুমি ছিরিং মাছ লাফাও সাগর কূলে, স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনার ভরাও ফুলে ফুলে। স্বাধীনতা তুমি ঢ্যাপের খৈ আর শালী ধানের চিড়ে, স্বাধীনতা তুমি জলপান তরে নিয়ে বস পিঁড়ে। স্বাধীনতা তুমি হুঁকোর টিকে ঢিমে জ্বলা আগুন, স্বাধীনতা তুমি গফরগাঁওয়ের কালো বড় বেগুন। স্বাধীনতা তুমি সাগর পাড়ে লবন চাষির খোলা, স্বাধীনতা তুমি মঠবাড়িয়ার ধানে ভরা গোলা।

স্বাধীনতা তুমি টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সাহার বাড়ী, স্বাধীনতা তুমি ঘোড়ায় টানা ষোল চাকার গাড়ী। স্বাধীনতা তুমি মিষ্টি আলুর স্বাদে ভরা রুটি, স্বাধীনতা তুমি বেলে মাটির রস ভরপুর ফুঁটি। স্বাধীনতা তুমি বাউল বাতাস, চৈত্র মাসের দুপুর, স্বাধীনতা তুমি ফাগুন হাওয়ায় ঝরা পাতার সুর। স্বাধীনতা তুমি ময়মনসিং এর ত্রিশাল মোষের শিং, স্বাধীনতা তুমি পান-চিনিতে কনের হাতের রিং। স্বাধীনতা তুমি শীতের সকাল, খেজুর রসের ক্ষীর, স্বাধীনতা তুমি স্মরন করো শত আউলিয়া পীর।

স্বাধীনতা তুমি রাজশাহী সিল্ক, রেশমে তৈরি শাড়ী, স্বাধীনতা তুমি লাজে রাঙা হওয়া বাংলাদেশের নারী। স্বাধীনতা তুমি নানি-দাদীর পিতলের পান বাটা, স্বাধীনতা তুমি পিঠা পুলির খামির করা আটা। স্বাধীনতা তুমি উপকূলের নদীতে জোয়ারভাটা, স্বাধীনতা তুমি নারকেল খিলে শুজনী ঝাড়া ঝাঁটা। স্বাধীনতা তুমি শরত মেঘের ইলশে গুড়ি বৃষ্টি, স্বাধীনতা তুমি ঢাকাই মসলিন, কি অপরূপ সৃষ্টি। স্বাধীনতা তুমি মায়া হরিণের দীঘল চোখের মণি, স্বাধীনতা তুমি মোয়াজ্জিনের ভোরের আজান ধ্বনি।

স্বাধীনতা তুমি ভাদ্র মাসের ঝুলনযাত্রার মেলা, স্বাধীনতা তুমি গাজন তলার আসর বিকেল বেলা। স্বাধীনতা তুমি কাকের বাসায় কোকিলের ডিম পাড়া, স্বাধীনতা তুমি পানিতে ডুবানো আমন ধানের চারা। স্বাধীনতা তুমি কুঁচবর্ণার ডাগর কালো আঁখি, স্বাধীনতা তুমি রং ফিরে পাও কাঁচা হলুদ মাখি। স্বাধীনতা তুমি মেঘবতী কেশ, শুভ্র দাতের হাসি, স্বাধীনতা তুমি প্রণয় রাগে বাজানো মোহন বাঁশি। স্বাধীনতা তুমি চম্পা ফুলে গাঁথা চম্পকদাম, স্বাধীনতা তুমি বুকে লুকানো রঙিন চিঠির খাম।

স্বাধীনতা তুমি হতাশ প্রেমীর মরদেহ নদীকুলে, স্বাধীনতা তুমি ঘর-ভাঙ্গা-ঘর একটি মাত্র ভুলে। স্বাধীনতা তুমি ঘাসের উপর একটি শিশির বিন্দু, স্বাধীনতা তুমি পাহাড়ি ঝরার স্রোতধারার সিন্ধু। স্বাধীনতা তুমি আমলকী ফলে হজম শক্তি ভরা, স্বাধীনতা তুমি কচুর পাতায় রাতের শিশির ঝরা। স্বাধীনতা তুমি চিনির সিরায় ভেজানো জিভেগজা, স্বাধীনতা তুমি কুষ্টিয়া খ্যাত সাদা তিলের খাজা। স্বাধীনতা তুমি জাতি ভেদ ভোলা সুখের বাসস্থান, স্বাধীনতা তুমি ভেদাভেদ ভোলা হিন্দু-মুসলমান।

স্বাধীনতা তুমি ধন্য হয়েছ কদম রসুল (দঃ) চুমি, স্বাধীনতা তুমি বায়ান্ন মধ্যে একটি তীর্থভূমি। স্বাধীনতা তুমি বার আউলিয়া ধর্ম করো প্রচার, স্বাধীনতা তুমি নলতা শরীফ, আহসানুল্লার মাজার। স্বাধীনতা তুমি কদরের রাত, হাজার রাতের সেরা, স্বাধীনতা তুমি পদ্মার চরে শাহ মখদুমের ডেরা। স্বাধীনতা তুমি শবেবরাতের মিষ্টি হালুয়া রুটি, স্বাধীনতা তুমি খানজাহানের ষাটগম্বুজের খুঁটি। স্বাধীনতা তুমি পোয়াতি বধুর সাত মাসে খাওয়া সাধ, স্বাধীনতা তুমি ঈদগাহে গিয়ে কাঁধেতে মিলাও কাঁধ।

স্বাধীনতা তুমি কুরবানী তরে পশু জবাই করো, স্বাধীনতা তুমি পুণ্য যেচে হজ্বের জাহাজ ধরো। স্বাধীন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.