আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনেক ভাবিয়া দেখিলাম,প্রকৃতপক্ষে আমি নির্দিষ্ট কোন পন্হীরই লোক নই ! খুঁজিয়া বেড়াই... কি আমার আদর্শ?

ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না গুণীজনেরা বলেন, প্রত্যেক মানুষের একটা আদর্শ থাকা চাই যেটাকে লালন করে সামনে এগিয়ে যাবে অভিষ্টলক্ষে. অথচ আমি অধম কিছু না খুঁজিয়া পাই, চিরাচরিত ধরাবাধা প্রচলিত আদর্শহীন এই পথচলার শেষ কোথায়??? আগাগোড়া আস্তিক বলতে যা বোঝায় অন্ধভাবে সবকিছু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা, তা পারি না...হিয়ার মাঝে সর্বনাশা কেন নামক রোগের জন্ম হয়! আবার আমি নাস্তিকও নই. না কওমীপন্হী,না তাবলীগপন্হী, আমি খাজা বাবার মাজারের অনুসারীও নই আর না সূফি দরবেশের অনুসারী. রাজনৈতিক দিক চিন্তা করলে দল/লীগ/জাশি কোনটাই নই; না আমি রক্ষণশীল আর না মুক্তমনা! স্বপ্ন দেখি না আলিশান জীবনযাপনের আবার গরীবও হতে চাই না! খুঁজিয়া না পাই, কি আমার আদর্শ? বয়স যদিও খুব বেশি হয় নি তবু এই অল্প সময়ের মধ্যেই নানা মতের নানা পথের নানান কিসিমের মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি. পানি পড়া-গায়ে ফুঁ দেওয়া বাবাদের মোরাকাবা করতে দেখেছি, শুনেছি তাদের মারফতী-শারফতী, হাত মোসাফা করে ৫টাকা করে নজরানা দিয়েছি, মাথা ঝাঁকিয়েছি খাজা বাবাদের আশেকানা জিকিরে, লালন ভক্তদের বৈঠকী গানে সুর মিলিয়েছি, গিয়েছি শাহজালালের মাজারে, ওরসের ঢ্যালঢালা খিচুরিও খাইছি. মারকাজে মুরুব্বিদের মুখে দ্বীনের দাওয়াতের কথা শুনেছি,তাবলীগে সময় লাগিয়ে জামাতের সাথে রাস্তার ডান পাশ ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈমান ও আমলের পথে আসতে বলেছি,গিয়েছি বিশ্বইজতেমায় ; মাহফিলে মুফতি-মাওলানাদের ওয়াজ-নসিয়ত শ্রবণ করেছি, শিবিরের শিক্ষা সফরে গিয়ে আবুল আসাদ সহ মডারেট মুসলিম নেতাদের আধুনিক যুক্তি শুনেছি, বৈদেশে এসে মসজিদে ক্লিনসেভ জিন্স প্যান্ট পরিহিত ইমামের পিছনে নামাজ পড়েছি-খুতবা শুনেছি; নাইট ক্লাবে যাওয়া লোককে ডরমের মসজিদে জামাতে ইমামতি করতে দেখেছি. স্বল্পবসনা শীশা খাওয়া জিপসি রাশান মেয়ের পরিবর্তন হয়ে পুরোদস্তুর হুজুরাইন পোশাকে ইসলামের ছায়ায় আসতে দেখেছি. প্রোটেস্টাইন-ক্যাথলিকদের নিয়ম-কানুন শুনেছি, বুদ্ধিষ্টদের সান্নিধ্যও পেয়েছি, হিন্দুদের পূজামন্ডপের প্রসাদ খেয়েছি, যবনকে দেখেছি দেবীর সামনে নেচে গেয়ে কিত্তন করতে, শ্মশানে মরদেহ পোড়ানোর গন্ধ সইতে না পেরে নাক চেপে ধরেছি. কবরে নেমে নিজ হাতে লাশ মাটিতে শুইয়ে দিয়েছি. কমিউনিষ্টদের মুখে লেলিনবাদ, মাওবাদীদের কাছে মাও এর চেতনা জেনেছি, নাস্তিকতার পক্ষে যুক্তি শুনেছি; কনফুসিয়াসের বাণীও জানা হয়েছে. রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্হার মধ্যে মানুষের দিনাতিপাত যেমন দেখেছি তেমনি মুক্তমনা প্রগতিশীল মনোভাবের ওপেন সমাজের কিছু লোকের জীবন ব্যবস্হাও দেখেছি. গ্রামের দরিদ্র মানুষের সাথেও মিশেছি, চাঁদনী রাতে বাড়ির উঠোনে বসে অক্ষরজ্ঞানহীন লোকদের সাথে পুঁথির সুরে গাজীর গান শুনেছি, দোয়াতের আলোয় দলবেঁধে পাশের গ্রামে টিভিতে আলিফ লায়লা দেখতে গিয়েছি; দুঃখ-কষ্ট দেখেছি উত্তরা এস্তেমা মাঠ সংলগ্ন আর তেজগাঁও রেললাইনের বস্তির মানুষগুলার. নানা শ্রেণীপেশার, নানা মতের নানা জাতির মানুষের চিন্তা-চেতনা বোঝার চেষ্টা করে এখন নিজেই খুঁজিয়া না পাই, কি আমার আদর্শ? সাম্প্রতিককালে আস্তিক বনাম নাস্তিকের যে বিবাদ শুরু হয়েছে তার প্রেক্ষিতেই উপরের কথাগুলো বলা, সবার প্রতি একটা আকুল আবেদন জানাব উদাহরনের মধ্য দিয়ে- বিএনপির ২০০১-০৬ মেয়াদকালীন সময় আওয়ামীলীগের নেতারাই ছাত্রলীগের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরী করে, কে কার দলে কত লোক টানতে পারে, এটাই পরে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে পরিণত হয় যা এখন বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে. ঐ সময় ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে যে শত্রুতা তৈরী হয়েছে আজ তার লাগাম কেউ টানতে পারছে না, হলে একই রুমে একজন সভাপতির পক্ষের অন্যজন সাধারন সম্পাদকের যারা কেউ কাউরে বিশ্বাস করে না. এখন ফেবুতে লোকজন স্ট্যাটাস দিচ্ছে, এফএনএফ লিস্টে নাস্তিক/ছাগু যারা আছে তারা যেন নিজ থেকে আনফ্রেন্ড হয়ে যায় অন্যথায় উষ্টা মারা হবে! লেবাননে আস্তিক/হেজবুল্লাহপন্হী বনাম প্রগতিশীল/নাস্তিকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী লড়াই বহুদিন চলার পর তাদের মধ্যে যখন বুঝ আসে তখন সমঝোতায় আসছে, এখন মিলেমিশে বসবাস করছে এমনকি কোয়ালিশন সরকারও গঠন করেছে. আমরা যদি ইসলামপন্হী বনাম প্রগতিশীল সমাজের বিরোধের রেশ এখনই না মিটাই তাহলে লেবাননের মতই রক্তক্ষয়ী পরিস্হিতি হবে. [ক্যাম্পাস লাইফে এমনও হয়েছে আমার ৩ রুমমেট ছিল তিন মতের ১জন দল,১ জন লীগ,১ জন তাবলীগ; আবার শুধু দলের পোলাপানের সাথেও থেকেছি কিংবা শিবিরপন্হীদের সাথে; মেসে কওমীপন্হীদের সাথেও থেকেছি, ঢাকায় থাকাকালীন লীগের এক নেতা ও বামপন্হী ফ্রেন্ডের সাথে থেকেছি, আর এখন আছি মুক্তমনা নাস্তিক দুই ভিনদেশী হাউজমেটের সাথে] হরেক রঙ্গের মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে একটা জিনিসই উপলব্ধি করি "বিচিত্র দুনিয়া,আজব মানুষ আর আচানক তাদের মন"

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.