অচেনা মানুষ নগ্নতাবাদ বা নগ্নাচার কেউ মনে আর কেউবা দেহে চর্চা করে। আজ দেহ আর মনের নগ্নতা নিয়ে দুইটি কথা বলতে চাই। গোষল করতে যেহেতু শারীরিক নগ্ন হতে হয়। আসুন গোষল থেকেই শুরু করি।
অনেক ছোট ছোট বিভিন্ন তাপমাত্রার চৌবাচ্চা ও বাষ্প ঘরের সমষ্টি হল সাউনা বা বাষ্পস্নান বা স্নানঘর যেখানে একসঙ্গে অনেক পুরুষ অথবা আলাদা ভাবে একসঙ্গে অনেক নারী পুরোপুরি উলঙ্গ হয়ে অনেক সময় নিয়ে গোষল করেন।
ধরে নিতে পারেন আমাদের পুর্বপুরুষদের একসঙ্গে পুকুরে অর্ধউলঙ্গ হয়ে গোষল করার আধুনিক রুপ হল সা্উনা। তবে বেশির ভাগ দেশ যেমন জাপান, কোরিয়া, পুরো ইউরোপ আর পশ্চিমের দেশগুলিতে এটা পুরো পুরি উলঙ্গ ভাবে করাটাই জায়েজ।
জাপানে একবার এই কাজটি আমাকে করতে হয়েছিল তবে লজ্জা যেহেতু আমার আছে তাই ছোট খাট একটা প্যান্ট পরেই ওদের গরম চৌবাচ্চায় নেমেছিলাম। সবাই আমাকে চিড়িয়া ভেবে অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিল শুধু মাত্র ঐ ছোট্ট প্যান্ট পরার অপরাধে। এত নেংটার ভিড়ে আমার কিন্তু খুব লজ্জা লাগছিল, মনে হচ্চিল নেংটা হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেই আমি চিড়িয়া নই -তোমাদেরই একজন।
যাই হোক পারলাম না।
গত সপ্তাহের কথা। কোরিয়াতে আবার সেই সাউনাতেই যেতে হয়েছিল, কোন উপায় ছিল না, কেবল মাউন্টেন হাইকিং শেষ করে প্রফেসর আর এলুমনি সহ যেতে হল। এবার ইচ্ছে করে আরেকটু বড় সাইজের প্যান্ট পরলাম (আন্ডার গার্মেনটস এর চেয়ে দুই ইঞ্চি বড়)। নেংটার অপূর্ব সমাহার আর এর মাঝে আমি হলাম এক কিম্ভুতকিমাকার।
এক কোরিয়ান কলিগ বলিল তুমি প্যান্টস পরেছ কেন। আমি লজ্জায় মাথা নত করিয়া সরি বলিয়া, চৌবাচ্চা থেকে উঠিয়া ষ্টীম রুম এ চলে গেলাম। এবারও আমি পারলাম না। লজ্জায় আমার কালো মুখ লাল হয়ে গেল কারন একটাই আমি বাংলাদেশি আর এ সংস্কৃতি আমার জন্য না।
সাউনাতে উলঙ্গ হতে পারিনি কি হয়েছে।
সুযোগ পেলেই পৃথিবীর সব উলঙ্গ জিনিসগুলিই আমার বা আমাদের অনেক ভাল লাগে, কাছে টানে। যেমন, উলঙ্গ নারী, উলঙ্গ নৃত্য, উলঙ্গ আধুনিক বাতাস, উলঙ্গ পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, উলঙ্গ ব্যাবহার, উলঙ্গ মানসিক লেনদেন (এখানে উলঙ্গ শব্দটি অপরিমিত বা উদ্ধ্যত ও অনিয়ন্ত্রিত বোঝানো হয়েছে)।
এবার আসুন মানসিক নগ্নতার কথা বলি।
আমার একটা গরিবী হালের ল্যাপটপ আছে যদিও নতুন ও চুরির উপযুক্ত, ওটা সেদিন ভুল করে পাবলিক প্লেস এ রেখে এসেছিলাম, কয়েক ঘন্টা পর যেয়ে সেখানেই পেলাম। অবাক হয়ে গেলাম আসলেই তো এই জাতিকে যতটা উলঙ্গ ভেবেছিলাম ততটা না।
খুব প্রশান্তি পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল এখনি সাউনাতে যেয়ে একটা উলঙ্গ গোষল দিয়ে আসি। ঘটনাটিকে এক বা দেড় বছর আগে আমার প্রিয় দেশের এক প্রিয় ক্যম্পাসের ঘটনার সাথে মিলাতে লজ্জা লাগছে। মন্ত্রি পর্যায় পর্যন্ত ঘটনাটি নিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল মনে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ক্যন্টিন থেকে এক জাপানি প্রফেসরের খুব গুরুত্বপুর্ন তথ্য সহ একটা ল্যপটপ খোয়া গিয়েছিল।
পরে কি হয়েছে জানি না তবে আমার মত কোন এক শিক্ষিত চোর যে কাজটি করেছে তা আমি গ্যরান্টি দিচ্ছি। আসুন আমাদের মনটাকে একটু সত্যিকারের শালীনতার কাপড় পরাই।
পরসমাচার এই যে---------
আমাদের ল্যাব থেকে একটা আন্ডারগ্রেড এর টিম জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে শিক্ষা সফরে যাবে। ওরা আমার কাছে বাংলাদেশ সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে চায়।
যেমন:
১।
ওখানে জিনিসের দাম এত কম কেন?
২। ঢাকা থেকে চিটাগাং যেতে কতক্ষণ লাগবে?
৩। তোমাদের দেশের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার কি কি?
৪। বাংলাদেশের মানুষরা নাকি অনেক সুখি! তোমরা এত সুখি কেন? ইত্যাদি.........
কি করে আমি ওদের বোঝাব যে..........আমাদের তো টাকা নাই, শ্রমের কোন মূল্য নাই............যা দাম তাই তো বেশি ......কম আবার কোথায় পেলে। যে দেশে যাচ্ছ সে দেশের শ্রেষ্ঠ ইন্টারন্যশনাল বিমান বন্দরে মশার চোটে লাউনজ এ বসে থাকাই দায় (উল্লেক্ষ্য কোরিয়ার ইনচিয়ন,বিমান বন্দর পৃথিবীর সবসেরা বিমান বন্দরের একটি)।
যায়গা মত যাও যে কেউ খাসি করে দিবে, বুঝবে বেটা কত ধানে কত চাল।
ঢাকা থেকে চিটাগাং কতক্ষণ লাগবে এটা আমি কি করে বলি বলেন। আমাদের দেশে তো সময়ের কোন অভাব নাই, আমাদের অঢেল সময়। যাত্রাবাড়ি থেকে চট্টগ্রাম যেতে যে সময় লাগে, গাবতলি থেকে যাত্রাবাড়ি যেতেও সেই সময় লাগে (এই ইকুয়েশন তো ওকে বোঝাতে পারি না), রাস্তারও তো কোন ঠিক নাই (সব কিছু আবুল আবুল গন্ধ করে)। তুই বেটা যাচ্ছিস, তোর লাশ ফিরে আসবে নাকি তুই ফিরে আসবি সেটারও কোন নিশ্চয়তা নাই।
আমি কিভাবে বলি কতক্ষণ লাগবে।
আবার জিগায় খাবার (ভাল কথা জিগাইছ বাছাধন)। ৩-৪ বছর আগে একবার শুনলাম গলদা চিংড়ির পেট থেকে পিন বের করা হয়েছে, ওজন বাড়ানোর জন্য নাকি আরও কিছু ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ইদানিং সুস্বাদু সব রংচংয়ের ফল খেয়ে কিছু শিশু ও বড় মানুষ অসুস্থ্য হচ্ছে। সেদিন কি যেন এক জুস খেয়ে নাটরে এক পরিবারে তিনজন মারা গেল।
কি করে বলি মাছ, মাংস, সি-ফুড, ফলমুল যা খাবি তাতেই বিষ।
এর ভেতর একটা সুখবর আছে------আমরা এবার এই মায়াময় পৃথিবীর এগারো তম সুখি জাতি হিসেবে চিন্হিত হয়েছি।
আমরা লাউনজ এ বসে মশার কামড় খেয়েই সুখি। আমরা নিজের ভাইকে রাস্তায় লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখেই সুখি। আমরা এসব বিষাক্ত খাবার খেয়েই সবচেয়ে সুখি।
পত্রিকার একপাতায় ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পড়ে দু-ফোটা চোখের জল ফেলি আর ঠিক ২ পাতা পরই আনন্দ ফিচার দেখে পুলকিত হই। অথবা উলঙ্গ কোন খবর পড়ে কেউ কেউ মানসিক মৈথুন করি আর অন্যকে বলি ছি ছি ছি। আমাদের অনুভুতিগুলি খুবই ক্ষনস্থায়ী ও ভঙ্গুর।
পরিশেষে----আসুন সরকারি ব্যাংক কে নিজের পকেট মনে না করি, দুর্নীতি কে বাসর রাতের কুমারি বধূ মনে না করি, কোটি কোটি টাকার ঋনখেলাপি হয়ে নিতম্বের ফাঁকে সম্পত্তি না জমাই। সরকারের সকল মন্ত্রি মহাদয়দের দুর্নীতির সাউনায় ডুবে উলঙ্গ গোষল দিতে মানা করি।
বাংলার আলো বাতাসকে সকল উলঙ্গ সংস্কৃতি থেকে মুক্ত রাখি।
পুনশ্চ: আমি এসব কাকে বলছি! আমরা যেহেতু দুর্নীতির সাউনায় সাবাই নেংটা, তাই অনেক নেংটার মাঝে প্যান্ট পরে বেড়ানোর লজ্জাও যে অনেক অনেক বেশি।
দক্ষিণ কোরিয়া
১৭/১০/২০১২ ইং ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।