আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কল্পনার চেয়ে ভাল একটা মানুষের সাথে স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটালাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। অনেক ভাল থাক, সুন্দর থাক।।

যে বিশ্বাস নিয়ে একটা ছোট্ট শিশু হেসে ওঠে তাকে পরে ছুড়ে দেয়া হলে, তেমনি বিশ্বাস আমি করি তোমাকে। আমি জানি তুমি দুঃখ কখনও দেবেনা আমাকে। যারা অনলাইনে চ্যাট করেন, তারা ভালো ভাবেই জানেন, অনলাইনে একটা ভাল বন্ধু পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যপার। এই দিক থেকে আমি অনেক অনেক ভাগ্যবতী বলতে হবে। ২/৪ জন অনেক ভাল বন্ধু আমি পেয়েছি।

কাব্য এমনই একজন বন্ধু আমার। আমার এই ব্লগে লেখা বেশীর ভাগ গল্পগুলোই আমার অনলাইন বন্ধুদের নিয়ে… কিছুটা বানানো… কিছুটা অন্যের গল্প গুছিয়ে বলা। আজ নিজের একটা গল্প বলতে ইচ্ছা করছে। কাব্যের সাথে আমার পরিচয় ১০ই জুন ২০১১ তারিখে। আমার স্মৃতি শক্তি ভীষন খারাপ।

কিন্তু কোন অদ্ভূত কারনে ওর সাথের প্রতিটা কথা আমার মনে আছে। আরও অনেক দিনের মত ইয়াহু তে চ্যাট করছিলাম সেদিন। একটা রুমে বসে গান শুনছিলাম। ও “hi” দিলো। শুরু হলো কথা।

অনলাইনের মানষগুলো সাধারনত যেসব কথা বলে, asl জানা, কি করে, কোথায় থাকে, এসব দিয়েই শুরু হল। ও বলল, ওর বয়স ৩১, সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বললাম, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি বিবাহিত, অথবা খুব পচা দেখতে। আমার এই ধারনার কারন জানতে চাইল। বললাম, আমার খুব ইচ্ছা আমি একজন সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কে বিয়ে করব।

কিন্তু পৃথিবীর কোথাও ভাল দেখতে, ৩০ উর্ধ, অবিবাহিত কোন সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। যদিবা অবিবাহিত পাওয়া যায়ও, সে দেখতে মাশাল্লাহ এত ভাল হয়, যে আমার বিয়ে করার ইচ্ছাই চলে যায়। ও বলল, আমি দেখতে ঐশ্বর্য রায়ের মত কিনা! বললাম, নাহ, এখানেই তো ভুল। আমি ঐশ্বর্য রায়ের মত সুন্দরী হলে সুন্দর স্বামী দিয়ে আমি করব কি! আমি নিজে দেখতে পচা। আমার স্বামী যিনি হবেন তিনিও যদি এমনই সুন্দর হয়, তাহলে ছেলে মেয়েগুলো তো এক একটা ইদুরের বাচ্চা হবে।

তখন তিনি বললেন তাহলে তোমার মা কে জানিয়ে দাও তোমার খোজার পালা শেষ। আমি হেসে বললাম, তুমি দেখতে শাহরুখ খান বুঝি? এভাবেই দু’জন একজন আর একজনকে খোচা খুচি করতে করতে অনেক অনেক কথা হল। আমি যখন বললাম আমি সিংহ রাশির জাতিকা, তার কথা হচ্ছে, তার খুব ইচ্ছা ছিল সিংহ রাশির কোন মেয়ের সাথে পরিচিত হবার। যখন আমার qualification এর কথা বললাম, তার তখনো কথা, এই profession এর কোন মেয়ের সাথে পরিচিত হবার তার অনেক দিনের শখ। বুঝলাম বেটা চরম ফ্লার্ট।

তবু কথা বলতে ভাল লাগছিল। খোচাখুচির মধ্যে একটা ভাল বন্ধু পেলাম। যেন দু’জনের পেটের ভেতর কথার পাহাড় জমা হয়ে আছে। কত্ত কথা। সে থাকে অস্ট্রেলিয়াতে।

প্রায় ৪ ঘন্টা কথা হবার পর তিনি আমার ফোন নম্বর চাইলেন, ভাবলাম, বেটার যদি পয়সা এত বেশি হয়, যে অত দূর থেকে ফোন করবেন, তো নম্বর দিলে আমার কি! দিলাম নম্বর। সাথে সাথে তিনি এসএমএস করলেন, ‘Its me, Kabbya’. তারপর আরও প্রায় ৪ ঘন্টা কথা হল। দু’জন দেখলাম দু’জনকে। ফেইসবুকে না। ওয়েব ক্যামেরার সাহায্যে।

যিনি সেটা আবিষ্কার করেছেন, তাকে অশেষ ধন্যবাদ। যাহোক, দেখলাম, দেখে বললাম, কাব্য, অসম্ভব যে তুমি অবিবাহিত। এত সুন্দর দেখতে একটা ছেলে এখনও অবিবাহিত আছে এটা জগতের আর যেই বিশ্বাস করুক, আমাকে বোঝাতে পারবে না। ও শুধু হাসে। আর সবার কথা জানিনা, আমি সাধারনত কারও ক্যাম দেখলেও সেটার দিকে খুব একটা তাকাইনা।

কিন্তু ওর সাথে কথা বলার সময় ওর প্রতিটা expression দেখতে ভাল লাগছিল। আসলে এত সুন্দর একটা মানুষকে না দেখে বোধ হয় থাকাও যায় না। সব থেকে মজার ছিল আমার প্রতিটা expression এ ওর মন্তব্যগুলো। আমি হাসলে ওর মন্তব্য ছিল sparkling teeth, আমার চোখ দেখে বলছিল sleepy eyes… আরও কত কি! আমার প্রতিটা expression এ ওর একটা মন্তব্য তো ছিলই। অনেক অনেক কথার পর অস্ট্রেলিয়াতে যখন ভোর সাড়ে চারটা তিনি আমার অনুমতি নিয়ে ঘুমাতে গেলেন।

কি মনে করে তাকে একটা এসএমএস করলাম। আমাকে এত ভাল, এত সুন্দর, এত অসাধারন একটা বন্ধু উপহার দেয়ার জন্য তার শুকরিয়া আদায় না করে পারিনি। তিনি সেটার reply করলেন। তারপর মনে হল, অসম্ভব যে এই ছেলে অবিবাহিত। সন্দেহ প্রবন মন! Thanks to facebook।

জগতটাকে ছোট করে দিয়েছে। তাকে পেয়ে গেলাম সেখানে। দেখে মনে হল বিয়েতে তোলা ছবি। এই নিয়ে কত প্রশ্ন কত জিজ্ঞাসা নিয়ে একটা পর একটা এসএমএস আদান প্রদান চলছিল। তারপর বললাম, আমার হাত ব্যথা করছে এসএমএস করতে করতে, সে আবার এল অনলাইনে।

অনেক অনেক ক্ষমা চেয়ে বলল, শুরুতেই বিবাহিত আর ২ বাচ্চার বাপ শুনলে কেউ কথা বলতে চায়না। তাই তাকে মিথ্যা বলতে হয়েছে। তখন আমার পালা। বললাম, এর মধ্যেই যে আমি তার প্রেমে পড়ে গেছি, তার কি হবে? তার উত্তর “চড় খাবি… প্রেম কি রে!” সেই শুরু, মাঝে মাঝেই কথা হয় দু’জনে। অনেক অনেক ভাল বন্ধু আমরা।

আমি একটু দুষ্টুমি করে প্রেমে পড়েছি বলতে গেলেই ওর চড় খেতে হয়। পরিচয়ের ৬ মাস পর কাব্য দেশে এসেছে। অবশ্য প্রথম দিনই বলেছিল, ডিসেম্বরে ওর বোনের বিয়ে। ৮ বছর পর দেশে আসছে। ওহ, আমরা কিন্তু ফেইসবুকে তখনও বন্ধু হইনি।

ও এত সহজে অনলাইনের পরিচয়ে কাউকে ওর ফেইসবুকে স্থান দেয়না। আমাকে পরীক্ষা করছে। সীতার মত অগ্নি পরীক্ষা দিয়ে কল্পনাতীত ভাল একটা বন্ধু পেয়েছি। সত্যি বলতে, কিছুটা প্রেমে ওর পরিনি সেটা বলব না। শুধু কি কিছুটা, অনেক খানি।

এটাকে প্রেম বলে আমার ভালবাসার সম্পর্কটাকে ছোট করব না। কিন্তু অজানা একটা মায়া তৈরি হয়েছে নিশ্চয়ই। গত ২১শে ডিসেম্বর তার সাথে আমার দেখা হল। আমি ওর ছবি দেখেছি, ওকে ওয়েব ক্যামে দেখেছি। কিন্তু কোনদিন কল্পনাও করিনি সামনা সামনি ও এত সুন্দর দেখতে।

এমন না আমি এর আগে সুন্দর কোন ছেলে দেখিনি। কিন্তু কেন জানিনা, ওকে দেখতে এত ভাল লাগছিল! আমি ওর ২ মিনিট আগে পৌছে গিয়েছিলাম। দেখলাম দূর থেকে ও হেটে আসছে। আমাকে দেখে মাথাটা একটু কাত করে হেসে হাত নাড়ল। আমি অনেক অনেক দিনের মধ্যে এত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখিনি।

ওকে ওই মুহুর্তে দেখে Kabhi Khushi Kabhi Gum ছবিটার একটা দৃশ্য মনে পড়ল। Blue Water Shopping Mall এ জয়া ভাদুড়ি শাহরুখকে যে অবস্থায় দেখেছিল। মাথা কাত করে, হেসে, হাত নেড়ে। যাহোক, সামনে এসে সালাম দিল। দিয়েই বলল, ওর বউ ফোন করেছে ওকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

আমি কি বলব ভেবে পাই না। একটা মানুষ দেখা করতে এসে কেমন আছি, কেমন ছিলাম, অনেক আগে এসেছি কিনা এসব কিছু না বলে, শুরুতেই যাবার কথা বলছে। ওকে অভিযোগও করলাম এই ব্যপারে। ও হেসে বলল, “পাগল তোকে আগে জানিয়ে না রাখলে, হঠাৎ বললে তুই মন খারাপ করবি, তাই আগেই জানালাম। জানানোটা একটু বেশিই তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে বুঝতে পারছি।

কিন্তু কি করব বল। আমার যে একদম সময় নেই!” আমাকে আল্লাদ করে তুই করে বলে কাব্য। যাহোক, একটা কফি শপের টেরিসে বসলাম দু’জনে। দোকানে ঢুকার সময় তিনি দরজা খুলে দাড়ালেন। বসার জন্য আগে আমাকে চেয়ার এগিয়ে দিলেন।

১ ঘন্টা দু’জন অনেক কথা বললাম, কিন্তু মনে হচ্ছে কিছুই যেন বলা হল না। কত্ত কথা মনে! বিকাল ৪টার সময় দেখা করেছিলাম। শুনেছি সন্ধ্যার এই আলোটাকে নাকি কনে দেখা আলো বলে। ওকে বললাম আমার একটা মিউজিয়াম আছে, যেখানে আমার প্রিয় মানুষগুলোর কিছু না কিছু ব্যবহার্য জিনিস আমি রেখে দেই। কারও টাই, কারও লাইটার, কারও অসমাপ্ত সিগারেটের টুকরো…।

সে তার হাতের বললাম, ওর লাইটারটা আমাকে দিয়ে যেতে। ওটার দিকে চেয়ে বলল, “এটা দিয়ে দিলে আজ আর আমার সিগারেট খাওয়া হবে না। ” আমি হেসে ফেললাম। বললাম, কিছু তো দিয়ে যাবে! সে আর একটা সিগারেট জ্বালিইয়ে লাইটারটাই দিয়ে দিল। তারপর অনেক করে ক্ষমা চাইল।

আমার জন্য আমার পছন্দের টোবলার ওয়ান চকলেট নিয়ে এসেছিল ও। কিন্তু ওর মা ঐ চকলেটগুলো কাউকে দিয়ে ফেলেছেন। আমি সত্যি অবাক হয়েছি আমার পছন্দের কথা ওর মনে আছে বলে। ওকে সেই পরিচয়ের দিন বলেছিলাম ওই চকলেটটা আমার পছন্দের। যাহোক, দু’জনে সান্ডুইচ আর কফি খেলাম।

তারপর যে যার পথে। কিন্তু মনে হচ্ছে এই একটা সন্ধ্যার কথা এই জীবনে ভোলা সম্ভব না। এত ভাল, এত সুন্দর একটা মানুষের দেখা অনেক কালে পাইনি। অনেকে বলে, বউ থাকতে আমার সাথে দেখা করা, বা আমার ওর সাথে দেখা করা উচিত হয়নি। আমি ভুল কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

তবে একটা তো কাজ হয়েছে, এর পর হয়ত অন্য কারও সাথে দেখা করতে গেলে আমি ওর সাথে তুলনা করব। ওকে মাপকাঠী বানিয়ে নিলে তো ইহ জগতে অন্য কাউকে ভাল মনে করতে কষ্ট হয়ে যাবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।