আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার বাগড়া দিন খাগড়াছড়িতে (১৮+ এবং ৫০-) পর্বঃ ০২

জড় এক প্রসঙ্গ কাঠামোর নিবিড় পর্যবেক্ষক :P এবার বাগড়া দিন খাগড়াছড়িতে (১৮+ এবং ৫০-) পর্বঃ০১ মাটিরাঙ্গা বাজার দেখে মনে একটা প্রশ্ন আসল, "এখানের মাটি কি লাল রঙের নাকি?" লাল রঙের মাটি না দেখলেও দেখলাম মাটির তৈরী অনেক ঘর। এই অধমের আবার কিঞ্চিত গ্যাস্ট্রিকের প্রব্লেম আছে। বাস থেকে নেমে গেলাম এক অদ্ভুত ফার্মেসীতে। জীবনে প্রথম কোন ফার্মেসী দেখলাম যেখানে বার্থ কন্ট্রোলের জিনিসপত্র পাওয়া যায় না। এই প্রথম অনুধাবন করলাম এগুলো ছাড়া একটা ফার্মেসী কেমন খালি খালি লাগে ।

দোকানদারকে কথাটা বলতে গিয়েও শেষ মুহুর্তে সামলে নিলাম। পেটের মধ্যে তখন ছুঁচো জিম করছে। জলদি খুজে বের করলাম এক "হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট" মফঃস্বল এলাকার এই আরেক সার্কাস। যেকোন রেস্টুরেন্ট এর নাম "অমুক হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট" কিন্তু এগুলোর একটাতেও থাকার ব্যাবস্থা নেই। আমাদের গ্রামেও এই টাইপ এক জিনিস ছিল।

সেখানে লিখা--- "নিউ আল মদিনা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট" এখানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে উন্নত মানের খাবারের একমাত্র নির্ভরযোগ্য সরবরাহ করে থাকি। মহিলাদের জন্য সুব্যাবস্থা আছে। খালপাড় পাবলিক টয়লেট সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড। (ব্যাকরনবিদরা ইগ্নোর করেন ) খাগড়াছড়ির ঐ রেস্টুরেন্টে দেখা পেলাম এক আজব কিসিমের লোকের। বৃদ্ধ মানুষ, পাকা দাঁড়ি, পান খাওয়া লাল দাঁত।

আমাদের দেখেই দাঁত বের করে জিজ্ঞেস করলেন "ঢাকা থেকে আসছেন?" আমরা অবাক হয়ে বললাম "জি" তিনি ঘুরে ঘুরে আবার এসে বললেন "ভাল করে ঘুরে দেখেন, ঘুরার অনেক জায়গা আছে" বলেই কেমন অদ্ভুত ভঙ্গীতে মাথা নেড়ে পান খাওয়া দাঁত বের করে হাসলেন। কথায় আছে 'যার মনে যা ফাল দিয়া উঠে তা' শান্তি বাহিনীর গুজবটা আবার মনে পড়ে গেল। বুকের ভেতর ধক করে উঠল। বলা যায় না হলিউডের সব ম্যুভিতেই সিরিয়াল কিলারগুলি এই রকম গোবেচারা চেহারার হয়। তাড়াতাড়ি পেটে কিছু দানাপানি দিয়ে গিয়ে উঠলাম চান্দের গাড়িতে।

আমাদের এক বন্ধুর বন্ধু (সাইফুল ভাই) আমাদের সাথে প্রথমদিন পুরোটা ভ্রমণে একসাথে ছিলেন। চান্দের গাড়ি নামক যানে এই আমার প্রথম চড়া। অদ্ভুত গোঙানির মত শব্দ করে গাড়িটি উঁচুনিচু পাহাড়ী পথে চলতে লাগল। গাড়িতে আমরা ১২ জন বসতেই গাইগুই করছিলাম এমন সময় সাইফুল ভাই বললেন এই গাড়িতেই নাকি পাহাড়ীরা ৫০-৬০ জন করে চড়ে। হঠাৎ করেই গাড়ির ভেতরটা ফাঁকাফাঁকা লাগতে শুরু করল খাগড়াছড়ি নিয়ে এমনিতেই ভয়ে ছিলাম,সেই ভয়কে কয়েক গুন বাড়িয়ে নেয়ার দায়িত্ব সাইফুল ভাই নিজ হাতে তুলে নিলেন।

গাড়ি তখন এক খাড়া রাস্তা দিয়ে উঠছে। এখান থেকে নাকি গত বছর ট্যুরিস্টদের একটা গাড়ি স্টার্ট বন্ধ হয়ে পাহাড় থেকে পড়ে যায়। পরে তাদের লাশও পাওয়া যায়নি। আমরা কয়েকজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ঢোক গিললাম। বাম্পারকারের মত ঝাকুনি আর রোলার কোস্টারের মত কখনো আকাশ কখনো পাতাল করতে করতে মনে হল ফ্যান্টাসী কিংডমে আছি।

গাড়ি থেকে নেমে আধা ঘন্টার মত পাহাড়ি রাস্তায় হাটতে হয়। অনেকটাই এবড়োথেবড়ো রাস্তা পেড়িয়ে দেখা পেলাম সেই রিসাং ঝর্নার। দেখেই চক্ষু চড়কগাছ। এতক্ষন তো ছিলাম ফ্যান্টাসীর ড্রাই পার্কে। এ তো দেখি সাক্ষাৎ ওয়াটার কিংডম ।

প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ফিট উচ্চতা থেকে পানি এসে পড়ছে ৪৫ ডিগ্রি হেলানো এক মসৃণ অতিকায় পাথরের উপর। আরে পরিধেয় বস্ত্রের বারোটা বাজিয়ে রাজ্যের পর্যটকরা সেই পিচ্ছিল পাথর থেকে পিছলে পড়ছেন নিচের এক কুয়োয়। চিন্তা করে দেখলাম নন্দন কিংবা কনকর্ড কোম্পানী এর হদিস বোধহয় এখনো পায়নি। পেলে এখানেই এক রিসোর্ট খুলে টুল নিয়ে রাইডের টিকিট বিক্রিতে বসে যেত। এই সেই "ন্যাচারাল ওয়াটার কিংডমের রাইড" এই রাইডে কয়েকবার চড়ে উপলব্দি করলাম এ জিনিস পুরোপুরি ফ্রি নয়।

আমাদের প্রত্যেকের হাফপ্যান্টের তলদেশ ততক্ষনে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে লজ্জা নিবারনের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। লক্ষ করে দেখলাম আশেপাশে পড়ে আছে অনেক পর্যটকদের পরিত্যাক্ত প্যান্ট। আমার বন্ধু লিটুর আদিনিবাস নাকি নোয়াখালী। টিউশনি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত লেংটী সদৃশ প্যান্ট এবং পিতৃপ্রদত্ত পশ্চাদ্দেশের অমুল্য চামড়া বাঁচাতে সে দ্রুত আশে পাশে থেকে গোটা চারেক পরিত্যাক্ত প্যান্ট পড়ে নিল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না।

সেই চার-চারটি প্যান্ট ছিড়ে তার প্লেবয় ব্র্যান্ডের জাঙ্গিয়াতেও নাকি পরে আচড় লেগেছে। কাজেই এই জায়গায় যদি কারো যাবার প্ল্যান থাকে তবে জগতের সবচেয়ে মোটা প্যান্ট পড়ে যাবেন । আরো বার কয়েক পানিতে ঝাপাঝাপি করে আমরা ক্ষান্ত দিলাম। ফিরে এলাম চান্দের গাড়ীতে। চান্দের গাড়ীতে ফিরে দেখি আরেক নাটক।

এক পাহাড়ী লোক কিছুতেই গাড়ি নিয়ে ফিরে যেতে দিবে না, তাকে ২০ টাকা দিতে হবে। এই ঝর্নাটা নাকি তার পৈতৃক সম্পদ এমনিতে পর্যটকদের কাছ থেকে কিছু নেয় না সে কিন্তু গাড়ী রাখলে তাকে অবশ্যই পার্কিং চার্জ দিতে হবে। এ তো দেখি কনকর্ডের পাহাড়ী ভার্সন। মনে মনে বললাম "শাবাশ ব্যাটা, এতদিনে তোরা বাংলাদেশের নাগরিক হবার মৌলিক গুনটি অর্জন করসস আর সেই গুনটি হল ভাওতাবাজী " মনে মনে যাই বলি ওই লোকের হোম গ্রাউন্ডে তার সাথে আর ঝামেলায় না যে ২০ টাকা দিয়ে গাড়ীতে উঠলাম। এবার গন্তব্য আলুটিলার রহসস্যময় প্রাকৃতিক সুরঙ্গ।

রহস্যময় এই স্থানে যেতে হয় মশাল হাতে । এটাই সেই সুরঙ্গ যেখানে পথ হারালে কেউ কখনো আর ফিরে আসে না। (চলবে)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.