বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ও বৃহত্তর খাত পোশাক শিল্প। এ শিল্প বাংলাদেশের রফতানিরও প্রধান খাত। রপ্তানি আয়ের শতকরা ৭৫ ভাগ আসে তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে। বাংলাদেশে সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত খাতও এটাই। শ্রমঘন এ শিল্পে প্রায় এক কোটি শ্রমিক কাজ করে।
বলা যায় দেশের এক কোটির অধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত। সর্বোপরি দেশের কয়েক কোটি মানুষের জীবনধারণ এ শিল্পের উপর নির্ভরশীল। এত গুরুত্বপূর্ণ পোশাক শিল্প ক্ষেত্রেই চলছে আজ চরম অস্থিরতা।
স্থানীয় আইন প্রণয়নকারী,প্রশাসক ও পোশাক শিল্পের মালিকদের মাঝে সমঝোতা ও সহযোগিতার অভাবে সরকারের নির্ধারিত অস্থিরতা ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষে পোশাক শিল্পে বিদ্যমান অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এই কমিটির ভূমিকা পালনে তাদের অভ্যন্তরীণ কিছু অব্যবস্থাপনাও রয়েছে।
যেমন তাদের প্রতি মাসেই পোশাক শিল্প নিয়ে আলোচনা বৈঠক করার কথা ছিল,যা কেবল মাত্র দেখা যায় যখন কোন অস্থিরতা দেখা যায় তখনই। এই কারণেও শ্রমিকরা ও কর্মসংস্থানগুলো নিজেরাই নিজেদের কমিটি তৈরি করেছে। ২০১০ সালে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সমস্যা নিরসনের জন্য আরও পাঁচটি ভিন্ন অঞ্চলে পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় এই ব্যবস্থাপনা কমিটি পরিচালিত হয় দেশের ‘শ্রম ও কর্মসংস্থান’ মন্ত্রি মুন্নুজান সুফিয়ান এর দ্বারা,যেখানে স্থানীয় আইন প্রণয়নকারীরা সেই কমিটিগুলোর প্রধান হিসেবে যোগ দেয়। এই পদ্ধতিটি এমন সব আঞ্চলিক কমিটিগুলোর দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়,যেগুলো জেলার ডেপুটি কমিশনারের মাধ্যমে পরিচালিত হতো এবং স্থানীয় আইন প্রণয়নকারীরা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতো।
এই পদ্ধতিকে পরে বদলে ফেলা হয় অস্থিরতাকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে।
এখন শুধু স্থানীয় আইন প্রণয়নকারীরাই এই কমিটির অংশ হননি,বরং স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা,কোম্পানির মালিক ও কোম্পানির শ্রমিকরাও এই কমিটির অংশ। যেখানে প্রতি মাসেই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল,আইন প্রণয়নকারীদের ব্যস্ততার জন্য তা আর তেমন গুরুত্বের সাথে হয়না; শুধুমাত্র তখনই বৈঠক হয় যখন কোন অস্থিরতা দেখা দেয়। কেউ কেউ এটাকে অস্বীকার করেছেন এই বলে যে শুধুমাত্র আইন প্রণেতাদের কারণেই এটা হচ্ছে না বরং অন্যেরা তাদের সময়ের সামঞ্জস্য বিধান করতে না পারায় এটা হচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্পে যখনই অস্থিরতা তৈরি হয়, তখনই মালিকপক্ষ আর সরকার পক্ষ অদৃশ্য কোন শক্তির কাঁধে দোষ চাপিয়ে বাঁচেন।
যাইহোক এই বিষয়টিকে সহজেই সমাধান করা যায় যদি পোশাক শিল্পের মালিকরা ও বিজিএমইএ এর কর্মকর্তাগণ এই কমিটিকে নিয়মিত বৈঠকে বসার জন্য সামান্য তাগিদ দেয়। পোশাক শিল্পের অস্থিরতা দূর করতে হলে শুধু মালিক ও শ্রমিকপক্ষই নয়,বরং সরকারকে অতি দ্রুত বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি দেশের পোশাক শিল্পকে রক্ষা করতে হলে সরকারকেই বিশেষ নজর দিতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ খাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে সকল পক্ষকে সাথে নিয়ে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। সরকারের অবশ্যই উচিত বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।
বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী, অভ্যন্তরীণ কুচক্রী মহল কিংবা স্বাভাবিক শ্রমিক অসন্তোষ যাই হোক না কেন সমাধান করা হোক। সরকারকে মনে রাখতে হবে এই খাতটি একবার ধ্বংস হয়ে গেল যেমন বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার্জন থেমে যাবে, তেমনি লাখ লাখ বেকার মানুষকে হতে হবে ঘর ছাড়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।