এখন আরও চাপা স্বভাবের হয়ে গেসে... বরাবর ই ক্লাস এর লাস্ট বয়। টিচার দের ঝারি , আর বেতের বাড়ি খেতে খেতে ই অস্থির। বাসায় গেলে বাবার অগ্নিমূর্তি চেহারা। পড়া লেখায় খারাপ হাওয়ার জন্য নিত্ত গালাগালি শুনতে হয় বাবার কাছে। দিন ২-৩ পর পর মাইর।
নিজেকে নিজের মধ্যে ই লুকিয়ে ফেলতেসে ছেলেটা।
ছেলেটা এবার অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরিক্ষা দিবে। যদিও কিছুই তার মনে থাকে না, তবু ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম করে যাচ্ছে , যাতে সব বিষয় এ মোটামুটি ভাল ভাবে পাশ করতে পারে। ছেলের এই পরিশ্রম বাবার কাছে অভিনয় বলে ই মনে হচ্ছে, মা একটু মায়ার দৃষ্টি নিয়ে দেখে......... ভাই – বোন মাঝে মাঝে উকি দিয়ে দেখে, আর বলে ,’ আমাদের ভাই বিদ্যার জাহাজ হয়ে যাচ্ছে ‘ । তবু ও ছেলেটার ভ্রুক্ষেপ নেই.................. ভালভাবে পাশ করতে ই হবে......
ছেলেটার খাওয়া-দাওয়ার ও আর ঠিক নাই এখন।
ভালভাবে পাশ করতে ই হবে......। মাঝে মাঝে ই খেতে ভুলে যায়। পড়তে পড়তে চোখ ঝাপ্ শা হয়ে আসে, মনে হয় ঘুম এ... চোখে একটু পানি দিয়ে আসে , আবার পড়তে বসে ছেলেটা.........
পরীক্ষার আর বেশি দিন বাকি নেই, ৫ দিন হাতে। চোখের নিচে কালি পরে যাচ্ছে। ভাই – বোন এখন একটু সমীহ করে চলে, বাবার দৃষ্টি একটু নরম হচ্ছে এখন, মা এসে মাঝে মাঝে পাশে বসে থাকে ।
ছেলেটা নিশ্চুপ, দৃষ্টি বই এর লেখাতে। অবশ্যই পাশ করতে হবে, ভালভাবে.........
আর মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টা, পরিক্ষা শুরু হতে। কাগজ এর পর কাগজ উল্টে যাচ্ছে। এবার আর কেউ কিছু বলতে পারবে না। টিচার রা বলতে পারবে না , গরু কোথাকার।
বাবার হারামজাদা , ছাগলের বাচ্চা গালি থেকে রেহায় পেতে হবে। পাশ করতে ই হবে। তারপর মা এর পাশে শুয়ে দীর্ঘ একটা শান্তির ঘুম দিতে হবে। মা অবশ্য এখন প্রায় ই পাশে এসে বসে থাকে, আর মাঝে মাঝে চোখ মুছে। বাবা , দরজার বাহিরে থেকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।
বাবার চোখ ও ঝাপ্শা হয়ে আসে, তারাতারি চলে যান। যাতে কেউ না দেখে। ছেলেটা কে কত গালি দিয়েছি, মাঝে মাঝে ই মনে করেন বাবা।
কালকে পরিক্ষা। প্রথম দিন ইংলিশ।
প্রস্তুতি বেশ ভাল, আস্তে আস্তে সব মনে পরছে। মনে হচ্ছে পাশ করতে কোন সমস্যা হবে না। একটু ভাল হলে হয়ত ভাল ছেলেদের মত নাম্বার ও পাওয়া যেতে পারে। আগে পাশ মার্ক এর চিন্তা, পরে ভাল ছাত্রদের মত হাওয়ার কথা ভাবা যাবে...... যদিও চোখ মাঝে মাঝে ই ঝাপ্ শা লাগে্...... মনে হয় ঘুম কম হাওয়ার কারনে......... এটা এমন কোন সমস্যা না। চোখে একটু পানি দিলে ই তো ঠিক হয়ে যায়...
আজ ছেলেটা অনেক সকাল এ উঠেছে।
ফজর নামাজ পরে , দীর্ঘ সময় জায়নামাজ এ বসে ছিল...... এত দিন এর পরিশ্রম যেন বৃথা না যায়, হয়ত মনে মনে এই দোয়া ও করেছে। মনে মনে একটু ভয় ও লাগে...... যদি ঠিক মত লিখতে না পারে? না...। এখন ভয় পাওয়া যাবে না.........
ছেলেটার মা আজ , সকাল এ উঠে কুরআন শরিফ পরতেসেন, মাবূদ , ছেলেটার পরিক্ষা যেন ভাল হয়...............বাবার আজ অনেক ইচ্ছা করছে ছেলেটাকে পরীক্ষার হল এ দিয়ে আসতে... কিন্তু লজ্জা লাগছে......দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার লজ্জা.........তবু ও অনেক সাহস করে বাবা বললেন, আজাদ,” চল তোকে পরীক্ষার হল এ নিয়ে যাই...। । “
আজাদ নির্বাক, বাবার একটু অস্বস্তি লাগছে.........।
“আচ্ছা ঠিক আছে.........। । “ ছেলেটার চোখে পানি এসে গেলো... ইচ্ছা করছে বাবা কে জড়িয়ে ধরে থাকতে......... কিন্তু ......না.........। । এখন ই না...।
সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে ছেলেটা বাবার সাথে বের হল.........আজ বাবার কেন জানি খুব আনন্দ হচ্ছে.........বিচিত্র এক আনন্দ.........। বাবা......আলতো করে ছেলেটার বাঁ হাত টা ধরলেন.........। । নিএ জাচ্ছেন সাবধানে.........। ।
আজ মনে হচ্ছে ছেলেটা আসলে ই অনেক লক্ষ্মী.........। । এরকম ছেলে থাকা ভাগ্যের বেপার.........
দু জন এখন রিকশায়, বাবা দেখছেন, ছেলে চোখ বন্ধ করে আছে......মনে হয় পড়া মনে করছে.........বাবা , পরম মমতায় বাঁ হাত দিয়ে ছেলেকে ধরলেন.........অদ্ভুত ছেলে......। একবার চোখ টা খুললোনা......। ।
ছেলেটা বির বির করে কি যেন পড়ছে...। পড়ুক......।
রিকশা টা ডান দিকে বাঁক নিচ্ছে, বাবা, ছেলেকে শক্ত করে ধরলেন, যাতে পরে না যায়...। ।
হটাত, একটা পাজের জীপ সামনে থেকে এসে ধাক্কা দিলো......... রিকশার সামনের চাকা দুমড়ে গেল.........ঝাকি তে বাবার হাত টা ছুটে গেলো......... ছেলেটা নিচে পরে গেলো............
না...।
। ছেলেটার কোথাও কাটে নি...। । বাবা, খুব ই ভয় পেয়েছেন। যাক...ছেলটার কোথাও কাটেনি নি...... ছেলেটা কোন কথা বলছে না কেন??
বাবা?? আজাদ??? এই......... না ছেলেটা কথা বলছে না............ বাবা ছুটাছুটি শুরু করে দিলেন.........পানির জন্য.........।
১৫ টাকা দিয়ে এক বোতল পানি কিনলেন...............। মুখে ছিটিয়ে দিলেন......মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন......। ছেলেটার গেয়ান ফিরেছে্......... কিন্তু ছেলেটার চোখের মনি কেমন জানি অস্থির......। বাবা...পরিক্ষা শুরু হয়ে গেসে?
-না বাবা......। ।
এখন ও অনেক সময় বাকি...।
দুজন এ আর একটা রিকশায় উথলেন......এবার বাবা অনেক জোরে ছেলেকে চেপে ধরে রেখেছেন......। না...আর পরতে দিবনা............।
ছেলেটার বমি আসছে.........মাথা ঘুরাচ্ছে......। ।
ছেলেটা ,... বাবার কোলে বমি করে দিলো..................
-আজাদ...। কি হয়েছে...। আই আজাদ.........। বাবা...। শরির খারাপ লাগছে?? পরিক্ষা দেওয়া লাগবে না...চল বাসায় নিয়ে যাই তোমাকে............।
-পরিক্ষা দিব...। । পাশ করতে হবে.........
ছেলেটা অজ্ঞান হয়ে গেলো...............। ।
বাবা ছেলেটা কে হাসপাতাল নিয়ে গেলেন......পথে ছেলেটা আরও ২ বার বমি করল.........।
। আর বলল ,” পরীক্ষা দিব..................। । পরিক্ষা............ vocabulary সব পারি......। ।
rearrangement ২৫ টা পরছি...... letter ১৮ টা.........। । আমি খুব ভাল মতো পাশ করবো............... সত্যি............। এটা ই ছেলেটার শেষ কথা............। ।
ছেলেটার পরিক্ষা শেষ হয়ে গেছে.........
মা চিতকার দিয়ে কাঁদছেন............ ভাইবোন ......... হা করে তাকিয়ে আছেন.........। । ছেলেটা মা এর পাশে ই শান্তিতে শুয়ে আছে......। । পরিক্ষা শেষ তো.........
পরিশেষ : বাবা, এখন একদম চুপ... মাঝে মাঝে accident এর জায়গা টা তে চলে যান.........।
।
পাটি নিয়ে .........। মাঝে মাঝে ১, ২ দিন ও বসে থাকেন..................আর্ মা???????????????????
--ইমরান হোসেন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।