প্রতিদিন পত্রিকার পাতাজুড়ে থাকা খবরগুলো পড়লে আপনার মনে হতে পারে দেশে কোন ভাল মানুষ নেই, দেশে কোন ভাল কাজ কেউ করেনা, দেশে শুধু খারাপ কাজ করার প্রতিযোগিতায় মত্ত জনতা, রাজনীতির মঞ্চে খারাপ মানুষেরাই বক্তব্য দিচ্ছে, সমাজসেবীদের পক্ষপাতিত্বের কোন সুযোগ নেই, আমলাদের দূর্নীতি করা ছাড়া যেন কোন কাজ নেই, চোর-ডাকাতর দেশ বাংলাদেশ, ছিনতাই হচ্ছে সর্বত্র, ধান্দাবাজ-ভন্ডে ভরে গেছে এই দেশ। আরও নানা মুখী কথাবার্তা প্রচারিত হচ্ছে দেশের টিভি পত্রিকাগুলোতে, সমাজের যত অন্যায়, নেগেটিভ নিউজ প্রচারে মত্ত টিভি চ্যানেলগুলো, মারামারির সরাসরি সম্প্রচার মানুষ প্রাণ ভরে দেখছে আর গালিগালাজ করছে যেন এটাই আমাদের রুটিন ওয়ার্ক।
এই খবরাখবর গুলোর সাথে আরো নতুন আরেকটি মাত্রা যোগ হয়েছে আর তা হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, ঐতিহ্যমন্ডিত, বাংলাভাষার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন তথা জাতির ক্রান্তিলগ্নের উদ্ধার কর্তা এই প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণ্ন করতে উঠে পরে লেগেছে এক কুচক্রিমহল। তারা প্রায়সই ফেইসবুক, ব্লগ, রাস্তাঘাটে, বাসে, রিক্সায়, হোটেলে গালি সহ দোষারোপ করে যাচ্ছে। "যত দোষ নন্দঘোষের" এই ধরনের কথাবার্তা শুনতে হচ্ছে।
সব দোষ যেন ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রিদের।
গত ২৮অগাস্ট শাহবাগ মোড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে মারা গেল তৌহিদ, তার আগে মারা গেল চঞ্চল, অতীতে আরো অনেকেই এই অপমৃত্যুর শিকার হয়েছে, আহত হচ্ছে প্রতিদিন খোঁজের আড়ালে থাকা অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালকের ভুলের শিকার। এমন শত শত ঘটনা ঘটে যে ক্যাম্পাসের মাঝেও বহিরাগতদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে শিক্ষাত্রীরা। তাদের টিজিংএর শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, বহু বহিরাগত অমানুষের কুকর্মের ফল ভোগ করতে হয় ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
আজ যদি আমাদের কোন ভাই-বোনের মৃত্যু, কিংবা তার আহত হওয়ার প্রতিবাদে কিছু করি তা অন্যায় হিসেবে বলে বেড়াচ্ছে। কেন এই অপপ্রচার? আপনারা যারা বাবার টাকায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন কিংবা, বিদেশে পড়ালেখা করে এসে দেশে বেশি বেতনের চাকরি করছেন, দামি দামি গাড়িতে চড়েন তারা ফেইসবুকে স্টেটাস দিচ্ছেন, গালিগালাজ করছেন আপনাদের কি অধিকার আছে তা করার? আপনারা রাত-বিরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রেস খেলার রাস্তা বানিয়ে ঘুরে বেড়ান, দিনের বেলায় স্পিডে গাড়ি চালিয়ে চলে যান। একবারো কি চিন্তা করেছেন এখানে মানুষ থাকে, এভাবে পাবলিক প্লেসে গাড়ি চালাতে হয়না।
এখানকার শিক্ষার্থিদের ছোট করার অপপ্রয়াস চালায় অথচ এত মৃত্যুর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বদান্যতার সুযোগকে দুর্বলতা ভাবছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরকার রাস্তা ট্রানিজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন অনায়াসেই কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন এই রাস্তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবহারের জন্য আম-পাবলিকের জন্য নয়।
কোন দেশেই এই রকম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝখানে শহরের প্রধান রাস্তা থাকার নজির নেই। আজ ঢাকা ভাগ হয়েছে উত্তর দক্ষিণে কিন্তু এই রাস্তা গুলো বন্ধ করে দিলে পূর্ব-পশ্চিমেও ঢাকা ভাগ হয়ে যাবে । এভাবে নোংরামি করবেন না, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই বিনা খরচে পূর্ব-পশ্চিমে ঢাকাকে ভাগ করে দিবে।
আবার চিন্তা করেন আপনি ইফতার করবেন বন্ধুরা মিলে কিন্তু কোথায় করবেন? সেটাও হবে টিএস সি, বিজয় দিবসে ঘুরতে যাবেন কোথায়, ২১ফেব্রুয়ারীতে সারারাত থাকবেন কোথায়? বাংলাদেশ দল খেলায় জিতলে কোথায় যাবেন? ভালবাসা দিবসে বেড়াতে কোথায় যাবেন? বন্ধু দিবসে প্রোগ্রাম দেখবেন কোথায় যাবেন? সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবেন কোথায় যাবেন? পহেলা বৈশাখ বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই যাবেন তাইনা? নবান্নের উৎসব যাবেন কোথায়?
সবগুলোর উত্তর কিন্তু একটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই, হয় টিএসসি, চারুকলা, মলচত্তর, কার্জনহল এর বাইরে কিন্তু চিন্তা করতে পারবেন না। আবার আমাদেরকে গালি দিতে এতটুকু বাধেনা আপনাদের? আপনাদেরও ক্যাম্পাস বিহীন ইউনিভার্সিটি আছে কিংবা যতসামান্য যাও আছে সেখানেতো গলায় চিহ্নযুক্ত বেল্ট ছাড়া কেউ ঢুকতে পারেনা।
ভেবে দেখেছেন কি জন প্রতি একটাকা করেও চাঁদা নিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সবথেকে ধনীবিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় এক নম্বর থাকত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি বিধায় অনেকেই নানা কু-মন্তব্য করেন। আপনাদের সাথে আমাদের তফাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ই গড়ে দেয় কেননা আমরা এই ইমোশনের জোরেই ছাত্রাবাসের দুই বেলা অখাদ্য খেয়ে হলেও, সারাদিন বিনা পয়সায় অজানা অচেনা মানুষদের আমরা রক্ত দিয়া বেড়াই... এই ইমোশনের জোরেই '৫২, '৬৯, '৭১ এ আমরা রাস্তায় নেমে গুলি খেয়েছি... স্বাধীন বাংলাদেশের সবগুলা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও ব্যাক্কলের মত আমরাই রাস্তায় ছিলাম... এবং ভবিষ্যতেও যখন প্রয়োজনের মুহূর্তে আপনারা বিলাশবহুল ফ্ল্যাটে বসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবেন, তখনও আমরাই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রাস্তায় থাকব... এটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় !! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।