আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিমির বিজয় হবে, কিন্তু তাজের প্রতিবাদের পরাজয়

খবরটা প্রথম শুনে যুগপৎ আশ্চর্য এবং অবিশ্বাস্য ঠেকেছিল। এই মাত্র ক’দিন আগে সরকারের প্রতি নানা অভিযোগ তুলে রাগে-অভিমানে সোহেল তাজ মন্ত্রীত্ব এবং এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বেশ কয়েক মাস আগে কথিত আছে তাজ পরিবারের সন্তান পরিচয় পেয়ে প্রকাশ্য রাজপথে বিনা অপরাধে রিমির ছেলে রাকিবকে ধরে পুলিশ পেটায়। এদেরই একজনের বোন এবং আরেকজনের মা হয়ে এতো তাড়াতাড়ি সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেল? আরো আশ্চর্য হলাম আম জনতার উল্লাস দেখে। রিমি প্রার্থী হচ্ছেন দেখে কাপাসিয়ার জনগণের দলীয় অংশ ভীষন রকম খুশি।

একবারও মনে হলো না যে, পরিবার থেকে ক’দিন আগে একজন পদত্যাগ করল ‘সম্মান রক্ষার’ অভিযোগ তুলে। সেই পরিবারেরই আরেক সদস্য একই দলের হয়ে নির্বাচনে লড়ে ভাইয়ের সম্মান কিভাবে রক্ষা করতে যাচ্ছেন। জনগণ উল্লাস প্রকাশের আগে একবারও ভাবেনি, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার পিছনে যে অগুনতি টাকা ব্যবহার হতে যাচ্ছে, সেটা এই খেটে খাওয়া জনগণেরই টাকা। ভাইয়ের তোলা অভিযোগ এবং সেই জেরে পদত্যাগের স্বল্প সময়ের ভিতরে একই পরিবারের আরেকজন সদস্যের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াতে নৈতিকতার প্রশ্ন জোরালভাবে সামনে চলে আসে। এভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় করা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

আমি বলছি না যে, শুণ্য হওয়া পদ আগামী নির্বাচন পর্যন্ত স্থগিত থাকতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী সেটার সম্ভাবনা নেই। প্রশ্ন উঠতো না যদি এই পরিবারের বাইরে থেকে দলের অন্য কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতো। ওদিকে কাপাসিয়ার জনগণের উল্লাস দেশের বাকী অংশের জনগণকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেবে নিশ্চয়ই। এই উল্লাস কিসের জন্য? জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের মতো স্থানীয় পর্যায়েও পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার আনন্দ? নাকি সোহেল তাজের পরিবর্তে উত্তারাধিকার রাজনীতিতে রিমির উত্থানের জন্য আনন্দ? নাকি এমনিতেই আনন্দ? আরো কিছু মৌলিক প্রশ্ন আছে।

এই আনন্দ প্রকাশের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন কার প্রতি গেল? প্রতিবাদী সোহেল তাজের দিকে নাকি আপষকামী রিমির প্রতি? সচেতন মানুষের যে কোন দলের প্রতি আনুগত্য কিংবা সমর্থন থাকাটা স্বাভাবিক। তাই বলে জনগণের বৃহৎ অংশের মধ্যে যদি অন্ধ আনুগত্য কাজ করে তবে কোন রাজনৈতিক দলই নিজেদের সংশোধনের চেষ্টা করবে না। শুধু বর্তমান সরকারী দলের বেলাতেই নয়। প্রায় প্রতিটা দলের সমর্থকরা নিজ নিজ পছন্দের দলের কাজকে ভাল মন্দ বিবেচনা না করে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে যায়। এভাবেই কোন দলকেই আমরা শুধরানোর সুযোগ দেই না।

রিমির এই অবস্থানের ফলে ভবিশ্যতে এই পরিবারের ইমেজ মারাত্মক সংকটে পড়তে পারে। ইতিমধ্যেই চাচা ভাতিজির সাথে দ্বন্দ্বের কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এখনো জানি না বোনের এই সিদ্ধান্তের কারণে ভাই সোহেল তাজের প্রতিক্রিয়া কি? হয়তো বোন হওয়াতে সে কখনো কিছু প্রকাশ্যে বলবে না। কিংবা দলীয় চাপে চাচা আফছার উদ্দিনও প্রকাশ্যে ভাতীজিকে সমর্থন দিবে। কিন্তু পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে যে অবিশ্বাস এবং সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, সেটা কি কখনো দূর হবে? প্রশ্ন উঠবে সোহেল তাজের করা দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে।

কালিমা লিপ্ত হবে সোহেল তাজের প্রতিবাদী চরিত্র। শেখ পরিবারের সাথে তাজ পরিবারের স্বাধীনতার পর থেকে নেতৃত্ব নিয়ে টানা পোড়নের বিষয়ে বরাবরই কানাঘুষা আছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যে ব্যাক্তিটি বুদ্ধিমত্তা এবং সাংগঠনিক ক্ষমতা দিয়ে চলমান মুক্তিযুদ্ধকে পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন, দেশ স্বাধীন হবার পর সেই তাজউদ্দিন হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের বিরাগভাজন। এমনকি জেল হত্যার বিচারেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তেমন গা নেই। একই সময়ে শেখ হাসিনা তার পিতার হত্যার বিচার করে প্রশংসিত হয়েছেন।

আজ চল্লিশ বছর পরে আবারো শেখ পরিবারের কাছে তাজউদ্দিন পরিবারের আরেকটি রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক পরাজয় হলো। এবার একটু পিছনে ফিরে দেখি। সোহেল তাজ পদত্যাগের সময় বলেছিলেন, সম্মান রক্ষায় এছাড়া আর পথ ছিল না। তো, রিমি, আপনার এই স্বিদ্ধান্তে সোহেল তাজ বা তাজ পরিবার কি সম্মান ফিরে পেয়েছে? পুলিশ কর্তৃক পুত্র নির্যাতনের শিকার হলে রিমি আদালতের কাছে তিনটি প্রশ্ন রেখেছিলেন, নাগরিক নিরাপত্তা এবং পুলিশের নির্মমতা নিয়ে এবং তাদের দায়িত্ব নিয়ে। তো, রিমি আপনি কি সেই তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুজেঁ পেয়েছেন? আমরা জনগণ এখনো সেটা পাইনি।

এইতো সেদিন ঈদের রাতেই লিমনকে আবার কথিত র‌্যাবের সোর্স কর্তৃক আক্রমণের শিকার হতে হলো। গুলিতে একটা তরতাজা যুবক পঙ্গু হয়ে গেল। কিন্তু আদালত সেখানে র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতা খুজেঁ পায়নি। এখনো প্রত্যহ রাস্তা ঘাটে সর্বত্র কারণে অকারণে নিরীহ মানুষ আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এমনকি আদালত চত্ত্বরে বিচারপ্রার্থী তরুণী পুলিশ কর্তৃক শ্লীতাহানির শিকার হয়েছে।

উপহার হিসেবে সেই পুলিশ অফিসারকে মিরপুর মডেল থানায় বদলী করা হয়। আসলে আপনি প্রশ্নের ভিতরে ‘নাগরিক’ এবং তাদের অধিকার বিষয়ে যে জোরাল প্রশ্নগুলো রেখেছিলেন, সেই নাগরিকের সংজ্ঞা কি ছিল? শুধু নিজের পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন? কিন্তু যারা আপনাদের প্রতিবার নির্বাচনে ভোট দিয়ে জিতিয়ে আনে, সেই জনগণ কবে রাজনীতিবিদদের সংজ্ঞায় ‘নাগরিক’ হবে? তাদের জীবনের নিরাপত্তা ফিরে পাবে? ভাবুন, আপনার পিতার কথা। যিনি পুরো বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য জীবনবাজি ধরে লড়েছিলেন। নিজের পরিবারকে চরম অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তার ঝুঁকির মধ্যে রেখে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুদ্ধ করেছিলেন। ছেলেকে নির্যাতনের পরে আপনার স্বামী মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘আমি থানায় গেলে এসি আজিম সবাইকে হাজতে ঢোকানোর কথা বলেছেন।

তিনি আমাকে এমন গালিগালাজ করেছেন শুধুমাত্র গায়ে হাত তোলা বাকি ছিল। আমার ৫৩ বছরের জীবনে এমন পরিস্থিতিতে আর পড়িনি’। (সূত্র : ২৪ বাংলা নিউজ) এখন থানায় গেলে পুলিশ অফিসাররা কি আপনার স্বামী এবং আপনাদেরকে চা নাস্তা খেতে দেয়? যতোদূর জানি সেই পুলিশ অফিসারের সাজা হয়েছিল সারা দেশবাসীর প্রতিবাদের মুখে। এর বাইরে সরকারের পক্ষ হয়ে লাঠি ধরা পুলিশ অফিসারা কিন্তু পুরষ্কৃত হয়েছেন সবাই। জনগণ আপনাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠায়।

তার প্রতিদান হিসেবে আমাদের নেতানেত্রীরা প্রতিবার নিজের পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনের নিরাপত্তা এবং স্বার্থটাকেই দেখেন। আপনি ঠিকই বলেছেন, রাজনীতি আছে বলেই আপনারা আছেন। জনগণ যেদিন রাজনীতি শিখে যাবে সেদিন হয় আপনাদের পাল্টাতে হবে, না হয় আপনাদের বিদায় নিতে হবে। এতো নাটকের পরে রিমির কাছে জনগণের মাত্র একটা প্রশ্ন, সোহেল তাজের প্রতিবাদ যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে মধ্যিখানে নির্বাচনের নামে আপনারা জনগণের এতোগুলো টাকা পানিতে ফেললেন কেন? কিংবা সোহেল তাজ কি আরেকটি ঘোষণা দিয়ে জাতির কাছে বড় হবেন? আপনি কি বলবেন যে, বোনের এই সিদ্ধান্তের সাথে আপনি নেই? তাহলে তাজ পরিবারের সম্মানটা অন্তত: রক্ষা হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।