আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিমির জন্যে সকল গোলাপ।

http://rmpalash.blogspot.com/ অনেক বছর আগে জীবনের প্রথম কৈশোরের কালে একটা উপন্যাস পড়েছিল রাসেল। সাহিত্য কর্মটি বা তার রচয়িতা উভয়ের কারো নাম আজ তার মনে নেই। সেই বইয়ের শেষ দৃশ্যে নায়িকার প্রানশুন্য দেহের দিকে তাকিয়ে নায়ক বলেছিল তোমার জন্যে সকল গোলাপ। শুধু এটুকুই, আর কিছুই নয়। উপন্যাসের শখানেক পৃষ্ঠা।

এত গুলো পাতার বিনিময়েও নায়ক সমগ্র উপন্যাসে একবারের জন্যেও নায়িকার সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেনি। বিভিন্ন উপলক্ষে সে গোলাপ কিনেছে। পহেলা বৈশাখ, ভালবাসা দিবস, জন্মদিন। সেই গোলাপের দল কখনই কাংক্ষিত স্থানে পৌছতে পারেনি। দিনের পর দিন প্যাকেটের ভেতরেই শুকিয়ে রসহীণ হয়েছে।

কিন্তু অভাগা কোনদিনই বাড়িয়ে দিতে পারেনি একটি টকটকে লাল গোলাপ। বলতে পারেনি ভালবাসার কথা। আজ নায়িকার প্রানহীন দেহের সামনে দাঁড়িয়ে সে অবলীলায় তার সকল গোলাপ উপহার দিয়ে দিল। প্রতারিত ভালবাসার ফাদে পড়ে আত্মহত্যা করা নায়িকার নিষ্পন্দ হৃদয়ে এত সকল গোলাপ সেদিন কোন আলোড়ন তুলতে পারেনি। তাই রাসেলের কাছে মনে হয়েছিল এত গুলো গোলাপ তার সকল রক্তিম আভা আর সৌন্দর্য্য নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ গোলাপ আর দুর্ভাগা সেই নায়ক তার মন অনেকদিন খারাপ করে রেখেছে। কিশোর বেলার মন। উর্বর ভুমি, হালকা পলির আবরন, পর্যাপ্ত আর্দ্র। অল্পতেই গভীর দাগ কেটে যায়। সবকিছুকে সে লাভের দানে হিসেব করে।

লাভ ক্ষতির বাইরে কোন কিছুর উপস্থিতি সে খুজে পায়না। সকল প্রেমের সফলতার মানদন্ড হিসেবে সে শুধুই মিলনকেই বিচার করে। যে প্রেমে মিলন নেই সে প্রেমের ব্যর্থতায় সে কষ্ট পায়। আস্তে আস্তে রাসেল শিখেছে ভালবাসার বিভিন্ন রুপ। সুখি ভালবাসা।

ভালবাসার সুখ। ভালবাসা পাওয়ায় সুখ আছে, ভালবাসতে পারায় সুখ আছে। ভালবেসে ব্যর্থ হবার মাঝেও সুখ আছে। গভীর মমতায় কাউকে জড়িয়ে রাখার মাঝে ও সুখ আছে। কখনো কখনো মাঝরাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়, কারো কথা ভেবে কষ্ট লাগে, বুকের ভেতরে চিনচিনে ব্যাথা বোধ হয় তাহলে বুঝতে হবে এটাও একটা ভালবাসামিশ্রিত সুখের আরেকটা রুপ।

সব পেলে নষ্ট জীবন। জীবন যাতে নষ্ট না হয় সে জন্যে সব পেতে নেই। কিছু জিনিস না পাওয়াও আরেকটা সুখ। বিরহের অনুভবের গভীরতা অনেক বেশি। স্থায়িত্ব দীর্ঘ সময়ের।

মিলন ক্ষনস্থায়ী। অল্পতেই মিলিয়ে যায়। আজ তাই আট বছর পরের এক শরৎকালে রাসেলের মনে হয় নায়ক আসলে ব্যর্থ হয়নি, গোলাপগুলোও বৃথা যায়নি। সে ভালবাসতে চেয়েছে। ভালবাসা পেতে চায়নি।

ভালবেসে সে সফল। তার গোলাপেরাও সফল। সে ভালবাসা না পেয়ে দুঃখী নয়। ভালবাসতে পেরে সুখি। রিমির সাথে রাসেলের যেদিন পরিচয় হয় সেদিন মনের অজান্তে রাসেলের মনে এক ছোট্ট গোলাপ গাছের জন্ম হয়।

এরপরে সে যত রিমির কাছাকাছি গিয়েছে, তার কথা ভেবেছে, তার স্বপ্নে বিভোর হয়েছে গোলাপ গাছটি ফুলে, কাটায়, শাখা-প্রশাখায় সমৃদ্ব হয়েছে। সেই সব লালগোলাপ তার মনে নিরন্তর সুরভী ছড়ায়, মনকে আদ্র করে রাখে। এই গোলাপ রিমির জন্যে রাসেলের গোপন ঐশ্বর্য্য, যার খোজ সে হয়তো কোনদিনই পাবেনা। গভীর রাতে ছাদের শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারার মেলা দেখে রাসেল। একটা তারার নাম দিয়েছে রিমি।

তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই রিমি ভালবাসা বুঝতে পারে। প্রতিদিন সে রাসেলের অপেক্ষায় থাকে। দেখা দেয়। মন খারাপ করা জোসনায় তারার পানে তাকিয়ে ঘোর লাগা স্বরে রাসেল বিড়বিড় করে।

তোমার জন্যে সকল গোলাপ। শুধু গোলাপ নয় সমগ্র গাছটাই সে রিমিকে দিয়ে দিয়েছে। বিনিময় ছাড়াই। সে ভালবাসা পেয়ে সুখে থাকার লোভে আকুল নয়। ভালবাসতে পারাটাই তার আনন্দ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।