আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ছায়াতেই থাকতে হচ্ছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। আর তাই তো আইএমএফকে দেওয়া সরকারের নানা শর্ত পূরণের পদক্ষেপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে।
আইএমএফ বলেছিল, বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ শতাংশের কিছু ওপরে রাখতে। প্রস্তাবিত বাজেটে তা-ই রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
আয়করের আওতা বৃদ্ধি ও একটি স্বচ্ছ কর প্রশাসনকাঠামো গড়ে তোলার কথা দেওয়া হয়েছিল আইএমএফকে। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যথাসময়েই এ শর্ত পূরণ করবে সরকার। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক আইন পাস হয়েছে, যা ২০১৫ সালের জুলাই থেকে কার্যকর হবে। আয়করের আওতা বাড়াতে ৮৫টি উপজেলায় নতুন আয়কর কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আইনি সংস্কার ও ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বাজেট বক্তৃতায়।
ব্যাংক কোম্পানি আইন প্রণয়নের শর্ত পূরণের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়া জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো, সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থা আইন প্রণয়ন, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল গঠন, নতুন বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি প্রণয়ন, পুঁজিবাজারে ডিমিউচুয়ালাইজেশন চালুর সময় নির্ধারণ ইত্যাদি ব্যাপারে আইএমএফের শর্ত রয়েছে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়ও নির্দিষ্ট সময়সীমাসহ এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ৬ জুন প্রকাশিত আইএমএফের দ্বিতীয় পর্যালোচনা ও আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব মিলিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। চলতি বছরের নভেম্বরে তৃতীয় এবং ২০১৪ সালের মে মাসে চতুর্থ পর্যালোচনা প্রকাশ করবে আইএমএফ।
এবারের পর্যালোচনা অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের নিরাপত্তা ও রাজস্ব খাতের ঝুঁকি কমাতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী হওয়া দরকার বলে মনে করে আইএমএফ।
খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, পরিচালনাগত দিক থেকে এ ব্যাংকগুলোর যেমন আরও স্বাধীনতা পাওয়া দরকার, একই সঙ্গে দরকার এগুলোর ওপর কঠোর তদারকিও। এ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের পক্ষে আইএমএফ। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ঘাটতি পূরণের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
বর্ধিত ঋণসুবিধার (ইসিএফ) আওতায় বাংলাদেশকে সাত কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা আইএমএফের।
দুই কিস্তিতে ২৮ কোটি ডলারের কিছু বেশি পাওয়া গেছে। বাকি অর্থ পাওয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
আইএমএফের দ্বিতীয় পর্যালোচনায় আরও বলা হয়েছে, নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ যথাসম্ভব ঠিক পথেই এগোচ্ছে। তবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে হবে জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিক অস্থিরতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এখনই।
সম্প্রতি দেখা গেছে সহিংস কার্যকলাপ। এগুলোর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে অর্থনীতিতে। অন্যদিকে, গত এপ্রিলে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে তৈরি পোশাকশিল্পে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের অবস্থা ততটা ভালো নয় উল্লেখ করে আইএমএফ বলেছে, এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এরই মধ্যে বেড়ে গেছে, যে কারণে ঝুঁকি বেড়ে গেছে আর্থিক ও রাজস্ব খাতে।
উল্লেখ্য, চলতি জুন মাসের মধ্যে চার ব্যাংকের ওপর একটি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করবে বলে আইএমএফকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার, যাতে ব্যাংকগুলোর সম্পদ, তারল্য ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো উঠে আসবে।
আইএমএফের পর্যালোচনায় এ বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ মে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) পাঠানো চিঠিতে জানান, যেসব শর্ত ২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পূরণ করার কথা ছিল, সেগুলোর বেশির ভাগ পূরণ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আইএমএফ এমডিকে আরও জানান, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে এ আইনের একটি খসড়া তৈরি করেছে।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি নিতান্তই মর্মান্তিক ঘটনা।
তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। তা ছাড়া তৈরি পোশাক খাতের নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয় চিহ্নিত করতে একটি মন্ত্রিসভা কমিটি করা হয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।