প্রচন্ড শব্দে কেঁপে উঠল বাসটি। ঋহান বাড়ি যাচ্ছে, অনেকদিন পর, পূজার ছুটির বন্ধে। সারা বাসে হুড়োহুড়ি। কে কার আগে নামবে; সবার আগে কে বাস থেকে নেমেছে তা ওর মনে নেই কিন্তু ওর মনে আছে এক ত্রিশ-বত্রিশ বয়স বছরের এক লোককে অন্য পাশের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়তে। তার স্ত্রী তখনো বাসে।
স্ত্রীর কোলে তার তিন-চার বছরের মেয়ে, মেয়ের হাতে একটা সাদা ভাল্লুক। মা তার মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে মেয়ে জড়িয়ে আছে তার ভাল্লুকটাকে। আর মেয়ের বাবা বাস থেকে নেমে অনেক দূরে। মা খুব জোরে চিৎকার করছে কিন্তু মেয়ে... একদম চুপ। ঋহান ভেবেছিল মেয়েটি কথা বলতে পারে না।
কিন্তু নামার ঠিক আগে মেয়েটি বলেছিল “মা! বাবা কোথায়?” মা এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলেছিল ঋহান শুনতে পারেনি। তখনো বাস ভর্তি লোক। গ্যাস লিক হওয়ার শব্দ।
বাস প্রায় খালি হয়ে আসছে ঋহান তবুও তার সিটেই বসে আছে। ও জানত তারও বাস থেকে নামা উচিত।
যদি নামতে চাইত তাহলে অনেক আগেই জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়তে পারত। বাসে ১০টা জানালা। ওর পাশেই একটা জানালা, ওটাতে কাঁচও নেই। কিন্তু ওর নামতে ইচ্ছে করছিল না। এমন না যা ঋহান খুব আত্মহত্যাপ্রবণ।
ওর বাঁচতে খুব ভাল লাগে। তখনও বাঁচতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু বাস থেকে নামতে ইচ্ছে করছিল না। কোন এক জায়গায় সে পড়েছিল যে মানুষের জীবনে কিছু মুহুর্ত আসে যে সময় জীবনের পুরোটার ফ্ল্যাশব্যাক দেখা যায়। মরে যাওয়ার ঠিক আগের মুহুর্তটি এইরকম একটি মুহুর্ত। ঋহান আজ জানে যে কথাটা ঠিক না।
এই মুহুর্তগুলোতে খুব বেশি মানুষের কথা মনে পড়ে না। অল্পকিছু মানুষ, খুব অল্প; তাদের কথাই মনে পড়ে। আর মনে পড়ে জীবনে পেলেও পেতে পারত এমন কিছু না পাওয়া সম্ভাবনার কথা। বাসে আর কেউ নেই ঋহান ছাড়া, বাসের আশে পাশেও কেউ নেই।
শব্দটাতে একটা ছন্দ আছে।
ঐ ছন্দের টানেই হয়তো ঋহান বসে আছে অথবা ওর অজান্তেই ওর মধ্যে সব কিছু ছেড়ে চলে যাওয়ার একটা ইচ্ছা দানা বেঁধেছিল।
ঋহান বাস থেকে নামে নি। নেমেছিল অন্য কেউ। সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করবে বলে। যাদের কথা মনে পড়ছিল তাদের সাথে যখন সে কথা বলছিল তাদের স্বরে সেই আগের মতই আন্তরিকতা, নির্লিপ্ততা, ঘৃণা।
চাইলেই কি সবকিছু নতুন করে শুরু করা যায়? সব কিছু নতুন করে শুরু করা উচিত?
বিঃদ্রঃ চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবোঝাই গাউছিয়াগামী বাসের গ্যাস সিলিন্ডার ছুটে গিয়ে ব্যাপক ভীতির সৃষ্টি। কোন হতাহত হয়নি।
পুনঃ বিঃ দ্রঃ ঋহান আর আমি একই ব্যক্তি। নিজের নামে এইসব লিখতে ইচ্ছা করে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।