বসে আছি পথ চেয়ে.... এই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত কত রকম গোলমেলে ঘটনা ঘটছে, কত মানুষ কত রকম গোলমেলে উক্তি করছে, সেসব শুনলে আমরা মজা পাই। সংশ্লিষ্ট পাত্রপাত্রীকে নিয়ে হাসাহাসি করি। অনেক সময় নিজেরা টের পাই না যে আমাদের অনুরূপ কথাবার্তা-কাজকর্মের জন্য অন্যেরা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করে। অবশ্য টের পেলেও খুব একটা লাভ নেই। আমরা অন্যের ব্যাপার নিয়ে অর্থাৎ পরচর্চায় যতটা উৎসাহী ও বেপরোয়া, নিজের ব্যাপারে বা আত্মচর্চায় ততটাই উদাসীন ও নিরুৎসাহী।
কে কী বলল, কে কী করল এসব নিয়ে এত বেশি মশগুল থাকি যে নিজের ব্যাপারে নিয়ে মাথা ঘামানোর আর সময় পাই না। এই যে আমাদের পরচর্চার অপ্রতিরোধ্য আসক্তিÑএটিই সম্ভবত দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গোলমেলে ব্যাপার।
কথা না বাড়িয়ে আমরা বরং সরাসরি দুয়েকটা গোলমেলে ব্যাপার সম্পর্কে আলোচনা করি।
এখন ক্যামন বোধ করছেন-এ প্রশ্নের জবাবে এক ডাক্তার সাহেবকে রোগি জানিয়েছিলেন, এমনিতে কোনো কষ্ট আর নেই। শুধু নিশ্বাসের সময় বড় কষ্ট পাচ্ছি।
এর জবাবে ডাক্তার সাহেব বলেছিলেন, এ নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। ও আমি শিগগির বন্ধ করে দেব।
এই গোলমেলে প্রবোধ বাক্যে রোগি কতটা নিশ্চিত হয়েছিলেন, বলা কঠিন। শিগগিরই নিশ্বাসের কষ্ট বন্ধ হয়ে যাবে-এ আশ্বাসে তিনি নিশ্চয়ই ভাবিত হয়েছিলেন। আসলে কার কোন কথা বা কোন ঘটনা যে রসিকতার খোরাক হবে তা আগেই বলা যায় না।
আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত অনেক ঘটনাই ঘটে, যা রসিকতার খোরাক হয়। কিন্তু সবাই সব সময় তা টের পায় না। এজন্য অবশ্য রসিক মন বা রসিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। জিনিসপত্রের দামের কথাই ধরা যাক। এই দাম বাড়ার ফলে আমাদের যে শুধু দুর্ভোগ-দুর্দশাই বাড়ছে তা কিন্তু নয়।
আমাদের অনেক উপকারও হচ্ছে। কিন্তু সে উপকারের খবর আর কে রাখে?
মধ্যবিত্তরা জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যের কারণে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে। অনেককে বড়লোকি ও ঠাঁট বজায় রাখতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে-এসবই সত্যি কথা। কিন্তু এর মধ্যেও যে কল্যাণ আছে তা আমরা কেউ তলিয়ে দেখছি না। মজার ব্যাপার হলো, এতে অনেকেরই ‘বিপরীতে হিত’ (হিতে বিপরীত নয়) হচ্ছে।
ব্যাপারটা একটু খোলাসা করে বলা যাক।
এক রোগী তার রক্তে অধিক কোলস্টেরল সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। বেশ কিছুকাল চিকিৎসার পর রোগির রক্তে কোলস্টেরল কমে যায়। রোগি অতঃপর ডাক্তার সাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। জবাবে ডাক্তার সাহেব বলেছিলেন, আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাভ নেই।
এ ব্যাপারে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই। আপনি বরং সরকার বাহাদুরকে ধন্যবাদ দিন। সদাশয় সরকারের কৃপায় জিনিসপত্রের দাম আগুণ হয়েছে। এ অগ্নিমূল্যের জন্য আপনি আগের মতো তেল, ঘি, মাখন, মাছ, মাংস, ডিম বেশি বেশি কিনে খেতে পারছেন না। তাই স্বাভাবিকভাবেই আপনার শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা কমে গেছে।
অগ্নিমূল্যের সূত্রে এবার একটি গোলমেলে বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
বর্তমান যুগ হচ্ছে বিজ্ঞাপনের যুগ, প্রচারেই প্রসারের যুগ। বর্তমানে অভিনব ভাষায় বিচিত্রসব বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এক দোকানের বাইরের সাইনবোর্ডে নিম্নোক্ত বিজ্ঞাপনটি দেয়া ছিল-‘তুলনামূলকভাবে কম দামে জিনিসপত্র কিনুন। ’
সাধারণত এ ধরনের বিজ্ঞাপন নিয়ে বিশেষ কেউ মাথা ঘামায় না।
অত সময়ই বা কার আছে? কিন্তু দুনিয়ায় চিন্তাশীল ভাবুক লোক এখনও একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। তেমনি একজন চিন্তাশীল খদ্দের জানতে চেয়েছিলেন, ‘কিসের সঙ্গে তুলনামূলক কম দাম?’ চতুর দোকানদার অত্যন্ত গম্ভীরভাবে জবাব দিয়েছিলেন, আগামী সপ্তাহের দামের সঙ্গে।
বাজার দর প্রতিদিন যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাতে প্রত্যেক জিনিসের দাম আগামীকালের চেয়ে বা আগামী সপ্তাহের চেয়ে আজকে সস্তা বৈকি!
এ ধরনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ সম্প্রতি আরও এক ব্যক্তির মুখে শুনেছি। সব সময় সিরিয়াস এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে সেদিন কেমন আছেন জিজ্ঞেস করাতে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, খুব ভাল আছি। তার এ দৃঢ়তাপূর্ণ জবাব শোনার পর শুধিয়েছিলাম- চারদিকের যা পরিস্থিতি, তাতে এত ভাল থাকেন কী করে? তিনি আমাকে বিস্মিত করে জবাব দিয়েছিলেন, বলতে পারেন তুলনামূলকভাবে।
আমি বাধ্য হয়ে বলেছিলাম, মানে? ভদ্রলোকের জবাব, গতকালের তুলনায় অবশ্যই খারাপ আছি, কিন্তু ভাল আছি আগামীকালের তুলনায়। দিন দিন সত্যি সময় খারাপ হচ্ছে, আগামীকালের তুলনায় আমরা সবাই ভাল আছি। কথাটা একটু গোলমেলে হলেও সত্য। ভবিষ্যতের শঙ্কা আমাদের দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা সবাই যে বর্তমান মহাজোট সরকারের শাসনে আগামীকালের তুলনায় আজ তুলনামূলকভাবে ভাল আছি- তা অস্বীকার করার উপায় কি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।