আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবলিকের পকেট কাটলে শাস্তি কি হওয়া উচিত?

আমার প্রশ্ন পকেটমার পকেট কাটলে জনগণ ধোলাই দেয় কিন্তু সরকার যখন পকেট কাটে তখন তার শাস্তি কি হওয়া উচিত? আমাদের জনপ্রিয় সরকার প্রথমে শেয়ার মার্কেট থেকে পাবলিকের টাকা চুরি করলো। এরপর ভাবলো যারা শেয়ার মার্কেটে যায়নি তারা কেন বাদ যাবে? তাই সিদ্ধান্ত হলো তাদের পকেটও যেন কাটা হয়। আমাদের জনগণের সরকারের বুদ্ধি বের করলো দলমত নির্বিশেষে সবার পকেট হাতাবে আর সেই মতই এবার ডিজিটাল সিস্টেমে পকেট কাটলো আর আমরা ম্যান্গো জনতা করুণ চোখে তাকিয়ে দেখলাম। এবার এই চুরির পরিমান ৪০০ কোটি টাকা মাত্র। এ টাকায় হয়তো কয়েকজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফুলে ফেঁপে উঠবে আর সরকারও শেষ বেলায় এসে একটু পিকনিক পার্টি করবে।

কেউ কেউ ব্রিফকেস হাতে বিদেশ বেড়াতে যাবে! এর আগে আমার এক পোস্টে বিদ্যুত বিল নিয়ে কারসাজির কথা উল্লেখ করেছিলাম। এবার এর পুরো প্রমান পাওয়া গেল। গতকাল প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর: বিদ্যুৎ বিলের কাঠামো (স্লাব) পরিবর্তন করায় বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহকের কাছে পাঁচ মাসে (ফেব্রুয়ারি-জুন) প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বাড়তি বিল নিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে বিলকাঠামো পরিবর্তন ও মার্চে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর কোম্পানিগুলো যে টাকা বিল হিসেবে পাওয়ার কথা, এই টাকা তার অতিরিক্ত। অর্থাৎ বিলকাঠামো পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের এই ৪০০ কোটি টাকা বেশি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাদের হিসাব অনুযায়ী, বিলকাঠামো পরিবর্তনের ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে দিলেও বিতরণ কোম্পানিগুলোর তেমন ক্ষতি হতো না। কাঠামো পরিবর্তনের পর বিদ্যুতের অস্বাভাবিক বিল আসছে গ্রাহকের কাছে। এতে সারা দেশে সব শ্রেণীর গ্রাহক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) পুনরায় বিলকাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে বিইআরসি বিতরণ কোম্পানিগুলোর রাজস্ব আয়ের ওপর বিলকাঠামো পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। জবাবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) বিইআরসিকে জানিয়েছে, তাদের অতিরিক্ত আয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) জানিয়েছে, তাদের অতিরিক্ত আয় হয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। ডেসকো, পিডিবির বিতরণ অঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হিসাবটি বিইআরসিকে জানায়নি। তবে তাদের হিসাবও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাতে ওই তিনটি কোম্পানির মোট অতিরিক্ত আয়ের পরিমাণ ২৬০ কোটি টাকার মতো বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। বিইআরসি সূত্র জানায়, তাদের বিবেচনায় এই অতিরিক্ত রাজস্ব আয় সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক।

এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য বিইআরসি বিলকাঠামো পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে তারা নয়টি স্লাব করার কথা ভেবেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা বিলকাঠামো যেমন আছে, তেমনই রাখার জন্য বিইআরসির ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। মুলা ঝুলিয়ে পকেট কাটা: কাঠামো পরিবর্তনের ফলে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সারা দেশে গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিলকাঠামো পরিবর্তন করতে হবে বলে তিনিও মনে করেন।

তবে তা করবে বিইআরসি। বিইআরসি বলে এসেছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব তাদের বিবেচনাধীন রয়েছে, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় বিলকাঠামো পরিবর্তন সম্পর্কেও ঘোষণা দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল প্রথমে জুলাই মাসে ও পরে কিছুদিন পিছিয়ে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু বিইআরসির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন ব্রাজিলের এলএনজি (তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস) শিল্প দেখতে যাওয়ায় এবং সে দেশে অসুস্থ হয়ে অনেক দিন থাকতে বাধ্য হওয়ায় এ মাসেও ওই ঘোষণা আসছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউসুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে বিলকাঠামোর পুনর্বিন্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হতে পারে।

ব্রাজিল থেকে এসে গতকালই প্রথম তিনি কার্যালয়ে আসেন। বিইআরসির অন্যান্য সূত্র জানায়, বিদ্যুতের পরবর্তী মূল্যবৃদ্ধি আগামী মাস (সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর করা হতে পারে। নতুন বিলকাঠামোও তখন থেকেই কার্যকর করা হবে। এতে অবশ্য বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কোনো অসুবিধা নেই। তারা বর্তমান বিলকাঠামোয় যে পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে, তাতে তাদের তেমন কোনো লোকসান নেই।

সমস্যা হচ্ছে গ্রাহকদের। জুলাই থেকেই নতুন বিলকাঠামো ঘোষণা করা হলে তাঁদের ওপর অতিরিক্ত বিলের চাপ কমে আসত। এখন তা আরও দুই মাস বিলম্ব হওয়ায় গ্রাহকের পকেট থেকে অনেকগুলো বাড়তি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। ওই বাড়তি টাকা পাচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নতম স্লাবের সুবিধা সব সময় ছিল।

বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় বাড়ানোর জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরও এই সুবিধা তুলে দেওয়ার কোনো দরকার ছিল না। কখনো দরকার হবেও না। তার পরও এটা করা হয়েছে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। এটা সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হয়েছে। ধনীদের জন্য সুবিধাজনক: বর্তমান বিলকাঠামোটি অপেক্ষাকৃত ধনীদের জন্য, যাঁরা অনেক বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য সুবিধাজনক।

কারণ, এই কাঠামোতে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিল বৃদ্ধির হার কম। বিইআরসি নতুন বিলকাঠামো করার জন্য একটি হিসাব করে এই চিত্র পেয়েছে। এতে দেখা যায়, যে গ্রাহক মাসে ৩২৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাঁর ক্ষেত্রে আগের বিলকাঠামোর তুলনায় বর্তমান কাঠামোয় বিল বৃদ্ধি পায় ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাশাপাশি যিনি ৪০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাঁর বিল বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। যে গ্রাহক ৪২৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাঁর বিল বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি, ৮৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।

পাশাপাশি যে গ্রাহক এক হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাঁর বিল বৃদ্ধির হার অনেক কম, ২৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। যিনি ৯০০ ইউনিট ব্যবহার করেন, তাঁর বিল বৃদ্ধির হার ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। ৮০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর বৃদ্ধির হার ৩২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। সরকারের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বর্তমান বিলকাঠামোটি এতই ত্রুটিপূর্ণ যে এর মাধ্যমে সরকারের মৌলিক নীতি পর্যন্ত রক্ষিত হচ্ছে না। সরকারের নীতি হচ্ছে বিদ্যুতের কম ব্যবহারে উৎসাহিত করা।

সে জন্য এমন একটি বিলকাঠামো করা, যাতে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিল বৃদ্ধির হারও যেন বেশি হয়। কিন্তু বর্তমান কাঠামোয় হচ্ছে তার বিপরীত। তার পরও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে এই কাঠামো বহাল রাখতে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিইআরসি সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং বিলকাঠামো পুনর্বিন্যাস করার ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। ইতিমধ্যে সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এভাবে আর কত? এর কি কোন বিচার নাই? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.