আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিছক শব্দহীন ভাবনা কিংবা কল্পনার মত বাস্তব (যখন পিছু ফিরে তাকান তখন আপনাদেরও কি এমন মনে হয়েছে কখনোও?)

যখন একা বসে ভাবি তখন সেই ভাবনাগুলোই গান হয়ে যায়। তারপর গীটারটা হাতে নেই সেই ভাবনাকে সুরের মূর্ছনায় ছড়িয়ে দিতে। এভাবেই চলছে গান, ভাবনা আর বেচে থাকা। তখন ছোট ছিলাম অনেক। বড়জোর ক্লাস ফোর কিংবা ফাইভে পড়তাম।

আমাদের একজন অংক টিচার ছিলেন। তিনি ক্লাসে এসেই আমাদের মারধোর করতেন কোন কারণ ছাড়াই, পড়া পারলেও, না পারলেও। আর বলতেন, "অংক সাবজেক্টটা কোন অবহেলার জিনিস নয়, সমগ্র জগতটাই চলে অংকের নিয়ম মেনে, এজন্যই প্রকৃ্তির কোথাও কোন বিশৃংখলা নেই। আর অংক বোঝার সাথে অংকের উত্তর মেলানোর কোন সম্পর্কও নেই। তোরা কি বুঝতে পারছিস? তোদের বোঝার কথাও না।

সারাদিন শয়তানি নিয়ে থাকলে অংকের কি বুঝবি?"। বলার সময় তিনি কপালটা কুচকে রাখতেন। আমরা তার কথা কিছুই বুঝতাম না। আমার কাছে কেন যেন বার বার মনে হত, এই লোকটা বোধহয় কোনদিন দুটাকা দিয়ে গ্যাস ভর্তি বেলুন কিনে মুক্ত আকাশে ওড়ায় নি। তাই সে জানেও না আনন্দ জিনিসটা কি।

এক টাকা দিয়ে যে লাল-সবুজ রং মিশ্রিত বিষাক্ত আইসক্রিম পাওয়া যায় সেটাও বোধহয় সে খায় নি কোনদিন। তাই তার জানাও হয়নি তুচ্ছ জিনিসের মধ্যেও কতটা অনুভুতি লুকিয়ে থাকে। স্কুল,কলেজ শেষ করে এখন আমি ভার্সিটি লাইফেরও প্রায় শেষপ্রান্তে দাড়িয়ে। ঠিক এখানে দাড়িয়ে স্যারের কিছু যান্ত্রিকতা আজ আমার মধ্যেও উপলব্দি করছি। অথচ, আমি ছোটবেলায় গ্যাস ভর্তি বেলুন অনেক উড়িয়েছি।

ওড়াতে ওড়াতে স্কুলে যাবার কথা ভুলে গেছি প্রায়ই। বেলুনটা যখন ফুটে যেত তখন মন খারাপ করে বসে বসে ভাবতাম, যদি কেউ আমাকে আরো দুটো টাকা দিত তাহলে আমি আরেকটা বেলুন কিনে ওড়াতাম। কিন্তু সেই টাকাটা যখন কেউ দিত না তখন প্রচন্ড অভিমান হত। মনে মনে ভাবতাম, বড় হয়ে আমি অনেকগুলো বেলুন কিনব একসাথে,সারাদিন ওড়াব, কেউ আমাকে তখন বাধা দিতে পারবেনা। শহীদ মিনার আর দোয়েলের ছবি দেয়া দুটাকার নোট হাতে পেলে প্রায়ই রুদ্ধশ্বাসে ছুটে যেতাম সেই রং মিশ্রিত বিষাক্ত আইসক্রিম কিনতে।

কেনার পর মনে হত পৃথিবীর সবচেয়ে মজার খাবার এখন আমার হাতে। খাওয়ার পর মনে হত, এমন আরেকটা আইসক্রিম কিনতে পারলে সত্যিই দারুন হত। এখন আমি বড় হয়েছি, আজ বেলুন ওড়ানোর ইচ্ছেটা আর নেই। রং মিশ্রিত সেই আইসক্রিমগুলো হয়তো এখনো পাওয়া যায় তবে খাওয়ার ইচ্ছেটা শেষ। এখন মনে হচ্ছে, এই আনন্দগুলো স্যারের জীবনেও ছিল একদিন।

সময় তার সব কেড়ে নিয়ে তাকে একটা জলজ্যান্ত অংকে পরিণত করেছিল। এই জীবন্ত অংকগুলোর কোন সমাধান নেই, জীবন যতদিন চলে অংকগুলোও ততদিন চলে। হঠাৎ জীবনটা থেমে যায়, অসম্ভব কঠিন সেই অংকটা সেদিন আপনা আপনি মিলে যায়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।