আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাউয়াছড়ায় গাড়ী চাপায় বছরে ১৫০০ সাপের অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে আইনের সংস্কার ও বাস্তবায়নের জোর দাবী

দুনীতির বিরুদ্ধে আজীবন কাজ করে ষাব দেশের বন্যপ্রানীর অন্যতম অভয়ারন্য ও প্রাকৃতিক বনরাজ্য মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ায় বছরে প্রায় ১৫০০ সাপ মারা যায় শুধু মাত্র গাড়ি চাপায়। আর এই মৃত সাপ গুলির মধ্যে অধিকাংশ সময় মারা পড়ছে বিলুপ্ত প্রজাতির সাপ। এভাবে চলতে থাকলে একসময় হারিয়ে যাবে দেশের ঐতিহ্যবাহী লাউয়াছড়া বনের বিরল প্রজাতি সহ প্রায় ৩২ প্রজাতির সাপের বংশ। স¤প্রতি পরিচালিত সাপ গবেষনার এক জরিপে এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জরিপে দেখা গেছে, প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত অবদি শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের লাউয়াছড়া অংশে ৪/৫টি মৃত সাপ দেখতে পাওয়া যায়।

এ হিসেবে মাসে গড়ে ১২০ থেকে ১৫০টি বিভিন্ন প্রজাতির সাপের অকাল মৃত্যু ঘটে। আর এই হিসাব অনুযায়ী বছরে দুর্ঘটনায় মৃত সাপের সংখ্যা দাড়ায় আনুমানিক ১৫০০টির মত। স¤প্রতি লাউয়াছড়ায় সাপ নিয়ে গবেষনা করতে এসে বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করে সাংবাদিকদের এ তথ্যদেন তরুন সাপ গবেষক শাহরিয়ার সিজার মাহমুদ। সিজার আরও জানান, এ পর্যন্ত তার দেখা মেলা ৩৫ প্রজাতির মধ্যে ১৪ প্রজাতির সাপই তিনি গাড়ি চাপায় মৃত অবস্থায় সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিদিন লাউয়াছড়ায় গাড়ির চাপায় ও বনতস্করদের হাতে ৫/৬টি করে সাপ মারা যাচ্ছে।

যার হিসেব কষে দেখা যায় বছর শেষে এ সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সিজারের গবেষনায় সনাক্তকৃত বাংলাদেশে প্রথম আবিস্কৃত বেন্ডেড টিংকেট ও ইরিডিসেন্ট সাপ দুটিও মৃতবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল । বাংলাদেশে প্রথম আবিস্কৃত এ সাপ দুটির একটি পাওয়া যায় লাউয়াছড়ার পাশ্ববর্তী বন জানকীছড়ায় এবং অন্যটি পাওয়া যায় লাউয়াছড়া প্রবেশ পথের কাছাকাছি শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে স্পীড বেকারের পাশে। এছাড়াও কয়েকদিনে গাড়িচাপায় মারা যাওয়া অনান্য সাপ গুলো হলো স্টিপেড কিলবেক (বাংলায় একে বলে চিনু সাপ), মক ভিপার( বাংলায় বলে পাহারী সাপ), কপার হেডেড টিংকেট (বাংলায় দুধ রাজ নামে পরিচিত), কমন ওলফ (বাংলায় ঘরগিনি সাপ), বেন্ডেড ক্রেউটি, হিমালয়ান কিল বেক (বাংলায় হিমালয়ান ধোরা নামে পরিচিত), হোয়াইট লিপপেড পিট ভিপার (বাংলায় টিয়া বোড়া সাপ), টনি কেট, স্পট টায়েলড কুকরী, কন্টরস কুকরী, ব্রাহমিনি ব্লাইন্ড(ইৎধযসরহু নষরহফ ংহধশব),সায়ামিস কেট ও ইয়েলো স্পিকেলড (ুবষষড়ি ংঢ়ববশষবফ ংহধশব) । এভাবে চলতে থাকলে একসময় লাউয়াছড়ার সাপ গুলো হারিয়ে যাবে।

ফলে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে আমাদের পরিবেশ । তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরনের পথ হিসেবে গবেষকরা বলেছেন, লাউয়াছড়া পাকা রাস্তার দিয়ে চলাচল কারী প্রত্যেকটি যানবাহনকে সর্তক হয়ে গাড়ি চালাতে হবে । কোন অবস্থায় লাউয়াছড়ার ভিতরে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারের বেশি বেগে গাড়ি চালাতে না দেয়ার সিন্ধান্ত নিতে হবে। সাপ কিংবা বন্য প্রাণী দেখলে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ী থামিয়ে আগে তাকে যেতে দিতে হবে এর পর যানবাহন চলাচল করবে। এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বন সংরক্ষক (বন্য প্রাণী) মাহাবুর রহমান বলেন এটা রোধ করা কঠিন, লাউয়াছড়ায় সাইনবোর্ড দিয়ে গাড়ী ধীরে চালানোর জন্য ইতিমধ্যে সর্তকবানী দিয়ে রেখেছেন।

তবে বন্য-প্রাণীর নিরাপদের জন্য এ রাস্তাটি পরিবর্তন করে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ককে যানবাহনের আওতা মুক্ত রাখাই সর্বোত্তম। এ বিষয়ে লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, এ সড়কের যানবাহনগুলো আস্তে আস্তে চললে বনের জীবজন্তু নিরাপদ থাকবে। কিন্তু আমাদের লোকবল কম থাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভবপর নয়। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রনী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব বলেন, শক্ত আইন হলে তা রোধ করা সম্ভব । দেশের গুরত্বপূর্ণ ইসুতে যে ভাবে হাই কোট জোরালো ভূমিকা রেখে থাকেন এ ক্ষেত্রেও পশুপাখি, জীবজšত্ত ও সরিসৃপ রক্ষায় রাস্তা পরিবর্তন ও পার্কের ভিতরে যানবাহনের গতি কমানোতে মহামান্য হাই কোর্টের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।