ঈশান বসে আছে বারান্দায়, কোন এক বিকেলে। মনটা কেমন যেন উদাস উদাস, শিমুকে দেখতে মন চাচ্ছে। শিমু, ওর ভালোবাসা। সম্পর্কে ওরা কাজিন। ঈশান বলতে পারে না শিমুকে কারন ওর ধারণা এটা বলার মত বয়স নয় যেহেতু ও কলেজে পড়ে।
কিন্তু আজ খুব মনটা ছটফট করছে শিমুকে দেখার জন্য, মনে হচ্ছে সামনে দেখলে আজ ই বলে দিবে ওর অন্তরের গোপন অভিলাষ। ছোট বোনটা হঠাৎ দৌড়ে এসে বলল, “আম্মু তোকে ডাকছে ভাইয়া, শিমু আপুরা এসেছে। ” উদাস মনটা ভালোলাগায় ভরে গেল ঈশানের। বেশ কিছুক্ষণ পর শিমু ঈশানের রুমে ঢুকল। এসেই ঈশানকে বলল, “আচ্ছা তুই আর আমি তো সবসময় একসাথে থাকি, তাই না?” ঈশান উত্তর দিল, “হুম, তো কি হয়েছে?” “নাহ, কিছু না।
আমরা চাইলে বড় আপু আর মঈন ভাইয়ার মত হতে পারি............। ” ঈশান অবাক হয়ে বলল, “কেমন?” শিমু আড়ষ্ট ভাব নিয়ে বলে, “ঐ যে আপু নাকি সবসময় মঈন ভাইয়ার সাথে থাকবে, তাই ওরা নাকি বড় হয়ে বিয়ে করবে......। ”
ঈশান মনে মনে তখন আনন্দের ভেলায় ভাসছে আর মুখ দিয়ে একটাই শব্দ উচ্চারণ করল, “ও”। ঈশান শিমুকে “পরী” বলে ডাকত! তারপরের ঘটনা হল যে সব কাজিনরা জানতে পারল ধীরে ধীরে, এমনকি সব বড়রাও জানতে পারল। কিন্তু কেউ বাধা দিল না, এভাবে প্রায় ৩বছর কেটে গেল।
তারপর ২৫শে জুলাই, ২০০৯ এ একদিন ঈশানের বড় ভাইয়া কল দিয়ে জানাল যে শিমুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্কুলে গেল সকালে কিন্ত সন্ধ্যার পরও কোন খোঁজ নেই শিমুর। চারদিকে অনেক খোঁজ খবর নেয়া হল কিন্তু শিমুর কোন সংবাদ পাওয়া গেল না। ২দিন পর পাওয়া গেল, ওর বাবার অ্যান্টি পার্টির একজনের ছেলে ওকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়েছিল। ২দিন পর দিয়ে গেল।
ওদের সবার চোখে হয়ত এটা মাত্র ২দিন আর বাবা-মায়ের কান্না, টেনশনের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের সমাজের চোখে এই ২টা দিন একটা মেয়ের সারা জীবন নির্ধারক। এরপর ১ আগস্ট ঈশানের সাথে কথা হয় শিমুর। শিমু কাঁদতে কাঁদতে বলছিল যে, “বিশ্বাস কর আমি তোর সেই পরী ই আছি। আমাকে কেউ ছোঁয় নি জানিস।
”
হয়ত অন্য কেউ হলে বিশ্বাস করত কিনা বলা কঠিন কিন্তু ঈশান সহজেই বিশ্বাস করল কারণ ও জানে ওর পরী ওকে মিথ্যা বলবে না। তারপর ১ মাস কেটে গেল। ঠিক এক মাস পর ঈশান শুনল পরীর মানে শিমুর বিয়ে! তাও আবার ঐ ছেলের সাথে যে ওকে কিডন্যাপ করেছিল!! ঈশানের মনে হচ্ছিল যে পুরো পৃথিবীটা বুঝি দুলছে আর ও হল এমন বস্তু যা পৃথিবীর বুক থেকে ছিটকে পড়বে। পরে ঈশান জানতে পারে এই বিয়ের ডিসিশান ছিল শিমুর বাবার, বাকি সবাই এই বিয়ের বিপক্ষে ছিল। ঈশান সবেমাত্র কলেজে পড়ে বলে কিছুই করতে পারল না শিমুর জন্য, ওর ভালোবাসার জন্য।
ঈশানের বুকে কয়েক মন কষ্টের জন্ম দিতেই বোধহয় শিমুর বাবা ওর বিয়েটা দিলেন ঈশানের বাসাতেই! ঈশানের মনে হচ্ছিল ও মৃত আর সেই মরা লাশটাকে কেউ খোঁচা দিচ্ছে। ঈশানের মা বুঝতে পেরেছিলেন ঈশানের মানসিক অবস্থা কেমন তাই তিনি সারাদিন রাত ছেলেটাকে চোখে চোখে রাখতেন, তিনি সামনে না থাকলেও অন্য কাউকে রেখে যেতেন।
কারো চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছুই করা সম্ভব ছিল না ঈশানের পক্ষে। তবু ঈশান ৮টা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলে, আর তাতে শিমুর বিয়ের সময়টা ও হাসপাতালে কাটায়। শিমুর বিয়েটা অবশেষে হয়েই যায়।
ঈশান জানে না কি করবে এই জীবন নিয়ে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সামলে উঠে। ঈশান আর শিমুর যোগাযোগ থাকে তবুও, শিমুই ঈশানকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়। ঈশানের মনে হয় ভালোবাসা একেই বলে, না পাওয়ার কষ্ট দূর হয়ে যায় শিমুর ভালোবাসায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।