শোয়াইব জিবরান
এ রকম সংবাদ প্রায় সব সময়ই পড়ি। পড়তে পড়তে হয়ত মন সয়ে গেছে এজন্য এখন আর গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনেই হয় না। কিন্তু আজ আবার মনে হচ্ছে,ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ মনে হচ্ছে। কেননা, কাল সংবাদটার বিষয়বস্তু গিয়েছে একদম নিজের উপর দিয়ে।
ঈদের কেনাকাটার কাল ছিল সর্বশেষ দিন।
সর্বশেষ বললে ভুল হবে, বলা উচিত ছিল ফিনিশিং টাচের দিন। শেষ করেছি আগের দিনই। ঔদিন ক্যাটস আই থেকে ট্রাউজার কিনেছিলাম। নিজের সাইজমত খাটো না হওয়ায় নীচের দিকে কাটতে দিয়ে এসেছিলাম। পুত্রের পাঞ্জাবির পাজামা নেয়া হয়নি।
বাসার সাহায্য বালিকা আদুরির জামার রঙ পছন্দ হয়নি, রঙ বদলে আনতে গিয়েছিলাম। আর টুকটাক। সাথে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের সহপাঠী, বর্তমানে সহমর্মি সুলতানা জেসমিন আর জুনিয়র জিবরান। উত্তরার আড়ং, র্যাক টাওয়ার, মাসকাট প্লাজা ঘুরে রাত ৮টার দিকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের বোর্ডবাজার নেমে জেসমিন একটু খানি সবজিও কিনল।
এবার একদম গৃহের উদ্দেশ্যে। ওম শান্তি! পরশু ঈদ। ঘুরাঘুরির পাকা বন্দোবস্ত করা আছে।
আমরা রিক্সা নিলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্মুখে এসেছি।
জায়গাটা নির্জন, আর অন্ধকার। একটু সামনেই আমার ছায়ানিবিড় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। জেসমিন আমার সহপাঠী বলে সারক্ষণ খুনসুটি লেগেই থাকে। তাই করছিলাম। পুত্র আমার কোলে।
ব্যাগগুলো ওর কাছে। আমরা বেশ হৈ চৈ করেই ফিরছিলাম। হঠাৎ একটি সাদা প্রাইভেট কার আমাদের পাশ দিয়ে ছুটে গেল। আমার রিক্সায় একটা ঝাকুনি লাগলো আর দেখি জেসমিন পিচের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি কীভাবে নেমেছি জানি না।
এক সময় আবিস্কার করলাম ধুলোপাথর মাখা জেসমিন আমার কোলে কাতরাচ্ছে। ও শুধু বলতে পারল,সব নিয়ে গেছে, ছেলে কোথায়? তারপর এম্বুলেন্স, বাংলাদেশ মেডিক্যাল হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, ঔষুধ এক্সরে- রাত একটা পর্যন্ত কীভাবে কাটল আমি জানি না। ঘোরের ভেতর ছিলাম। টাকা তুলতে গেছি। দেখি পাসওয়ার্ড পযন্ত মনে পড়ছে না।
সকল অর্থেই নিজেকে নিঃস্ব, রিক্ত লাগছিল। এক্সরে করার যখন টাকা চাচ্ছিল, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জিকু বলল, স্যার আমি দিচ্ছি। সব রিপোর্ট এলো। ডাক্তার বললেন, সিরিয়াস কিছু ঘটেনি। পায়ের মাংস থেতলে গেছে।
আমি ওষুধ দিয়ে দিচ্ছি, আপনি বাসায় নিয়ে যান।
বাসায় ফিরলাম গভীর রাতে। বাসায় ফেরার পর জেসমিন অনেকটা ধাতস্ত হয়ে এসেছে। বিছানায় শুয়ে বলল, ব্যাগ আদুরির লিপিস্টিক, নেইল পলিশ এগুলোও ছিল। আদুর ঝর ঝর করে কেঁদে দিল।
অংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় বলল, খালা আমার কিচ্ছু নাগবে না। আপনি যে ফিইরে এসেছেন!
‘ছিনতাই কারীর হাতে নিহত’ এ সংবাদটি এই ঈদে যাদের উপর দিয়ে যাচ্ছে, আজ সকালে তাদের পরিবারের কথা ভেবে ভীষণ কান্না পাচ্ছে।
আর হ্যাঁ জেসমিন, আদুরি ঠিকই বলেছে- আমাদের কিছুই লাগবে না। তুমি যে ফিরে এসেছো আমাদের তাতেই চলবে, ঈদ হবে। বঙ্গ জনপদের সবাইকে ঈদ মোবারক!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।