অনেকদিন পর অনুবাদ করলাম আবার। নিজের কাছেই খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না, যাদের সময় আছে পড়ে দেখেন, গল্পটা কিন্তু বেশ ভাল। (মূল The Old Woman and Her Dead Son, by Austin)
ওজার্কসে এক পুরান বাড়িতে বাস করত এক বুড়ি ও তার মৃত ছেলে। প্রতি রাতে বুড়ি রান্না করত আর তারা দু’জন মিলে তা খেত। আর প্রতি রাতেই বুড়ি তার মৃত ছেলেকে জিজ্ঞেস করত, “তোর দিন কেমন গেল?”
আর তার মৃত ছেলে জবাবে তাই বলত যা বুড়ি শুনতে চাইত, “ভাল, আমি আমার জানালা দিয়ে পাখি দেখেছি।
”
শুনে বুড়ি হেসে বলত, “তুই সবসময়ই পাখি ভালবাসিস। “
তারা দু’জন সুখী ছিল, অন্তত বেশিরভাগ সময়। কারণ বুড়ির বুড়িয়ে যাওয়া মনের কোন এক গভীর কোণে সবসময়ই একটা সূক্ষ্ম সন্দেহ যেন তাকে খোঁচাত। যেন সাক্ষাত শয়তান তার কানে ফিসফিস করে বলত, তুমি পাগল হয়ে গেছ। কিংবা এরচেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু- তোমার ছেলে মরে গেছে।
মাঝে মাঝে হয়ত এর চেয়েও ভয়ঙ্কর, এর চেয়েও নোংরা কোন কথা, যেসব কথা কোন বুড়ো মহিলার কানেই কখনও যাওয়া উচিত নয়।
এভাবেই চলছিল, কিন্তু কোন এক রাতে বুড়ি তার ছেলের মুখ থেকে আর শুনতে চাইছিল না যে তার দিনটা ভাল কেটেছে। কারণ তার মনের কোণের সেই সন্দেহ তাকে বলেছে সত্যিকারের মানুষের দিন মাঝে মাঝে খারাপও যায়। বলেছে জীবিত মানুষের বন্ধু লাগে। এবং তাই সে রাতে তার ছেলে বলল, “আমি একা একা এখানে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি।
আমার একটা বউ লাগবে। “
শুনে বুড়ি রেগে গিয়ে “না, কক্ষনোই না!” বলে ঝড়ের বেগে রান্নাঘরে চলে গেল।
খাওয়ার ঘর থেকে তার মৃত ছেলে তার উদ্দেশ্যে বলল, “আমরা তোমার সাথেই থাকব, এখানেই। “
- “তুই আবার আমাকে ছেড়ে চলে যাবি। ”
- “না মা, আমি যাব না।
মা...প্লিজ! তুমি কি নাতিনাতনি চাও না?”
বুড়ির নাতিনাতনির খুব শখ ছিল, এটা ঠিক। যদিও তার মৃত ছেলে তার সাথেই থাকত, তবুও তার মাঝে মাঝেই খুব একা একা লাগত। “তুই আমাকে এখনও ভালবাসিস তো সাইমন?”, বুড়ি জিজ্ঞেস করল।
শুনে তার মৃত ছেলে হেসে উঠল, “অবশ্যই মা, কী যে বল না তুমি!”
বুড়ি খাওয়ার ঘরে ফিরে এসে তার মৃত ছেলেকে চুমু খেয়ে বলল, “আমি কালকেই শহরে যাব, দেখি কী করা যায়। ”
সাইমন তার বউ পছন্দ করল
পরের দিন বুড়ি ব্যস্ত মহাসড়কের পাশে গিয়ে বসল।
তার গাড়ির চাকা বসে গিয়েছিল আর তাকে দেখে খুব দুঃখী এবং অসহায় মনে হচ্ছিল। কিছুক্ষণের মাঝেই একটা ট্রাক তাকে দেখে থামল। চালক মাথা বের করে বুড়িকে জিজ্ঞেস করল, “আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?” কিন্তু ট্রাকের চালক ছিল একজন পুরুষ, তাকে দিয়ে চলবে না।
“না,” বুড়ি জবাব দিল। ট্রাকটি চলে গেল।
এর খানিক বাদেই একটা গাড়ি থামল, এর চালকও জানতে চাইল, “আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি কোনভাবে?”।
এবারে একটা মেয়ে। কিন্তু তার গায়ের রঙ ছিল কাল এবং তার গায়ে ছিল উল্কি আঁকা। একে দিয়েও চলবে না।
“না,” বুড়ির জবাব।
মেয়েটি চলে গেল।
অবশেষে একটা ভ্যান এসে থামল আর বুড়িকে জিজ্ঞেস করল, “আমরা কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?”
যদিও এই গাড়িরও চালকের আসনে একটা লোক, কিন্তু পেছনের আসনে বসা ছিল পাঁচ তরুণ-তরুণী। দুটো ছেলে আর তিনটি আকর্ষণীয় মেয়ে। সাইমন একজনকে পছন্দ করে নিতেই পারবে, বুড়ি ভাবল।
“হ্যাঁ,” বলল সে।
যখন ছেলেমেয়েগুলো বুড়ির গাড়ির টায়ার বদলে দিচ্ছিল তখন চালকের সাথে বুড়ির পরিচয়পর্ব সমাপ্ত হল। চালকের নাম টমি। “আমি রেড ওকস খ্রিষ্টান চার্চের কনিষ্ঠ যাজক। এটা আমাদের যুবদল- কার্স্টেন, মনিকা, আন্দ্রিয়া, ক্রিস এবং অ্যারন। এই ছেলেমেয়েগুলো সত্যিই অসাধারণ।
”
“আসলেই তাই,” বুড়ি একমত হল। “আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ,” কার্স্টেন সবচেয়ে সুন্দরী...ভাবতে ভাবতে বলল সে। “সাহায্য করতে পেরে আমরাও ধন্য,” টমির জবাব।
- “আমার বাড়িতে আসুন আপনারা, আমি আপনাদের জন্য রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা করব। ”
- “না না, তার দরকার হবে না।
”
- “প্লিজ, আমি খুবই খুশি হব যদি আপনারা আমার দাওয়াতটা গ্রহণ করেন। ”
- “আসলে, আমার মনে হয় আমাদের অন্য পথে যাওয়া উচিত হবে না। আমরা একটা মিশনে বের হয়েছি, যার নাম দিয়েছি ‘অজানার পথে যাত্রা’।
আমরা একটা হ্যাট থেকে লটারি করে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ঠিক করি, সেখানে যাই, আর গিয়ে দেখি সেখানে ঈশ্বর কোন কাজে আমরা লাগতে পারি। ”
আহা, কতই না মহৎ! ভাবল বুড়ি।
বহুদিন হল বুড়ি চার্চে যায় না, কিন্তু সে ঈশ্বর এবং স্বর্গ সম্পর্কে ভালি জানত, এও জানত যে মৃত্যুর পর স্বর্গে গিয়ে মানুষ চিরকাল ধরে ঈশ্বরের গুণগান গায়!
- “সবার মাঝে ঈশ্বরের ভালবাসা ছড়িয়ে দেয়ার সামান্য চেষ্টা আমাদের,” বলে চলল টমি।
- “ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন। আমি ভাবছিলাম যে...না থাক। ”
- “কী? বলুন?”
- “আমার উঠোনটার অবস্থা খুবই খারাপ। আমার ছেলে এখন আর কোন ঘরের কোন কাজেই আমাকে সাহায্য করে না।
”
- “আমরা আপনার উঠোনের কাজ করে দেব, মানুষকে সাহায্য করাই তো আমাদের কাজ। ”
এটা শুনে বুড়ির মুখে হাসি ফুটে উঠল।
***
কিছুক্ষণ বাদেই টমি ও তার যুবদলকে দেখা গেল বুড়ির উঠোনে কঠোর পরিশ্রম করতে, মাটি আলগা করে আগাছা পরিষ্কার করা, আগাছা পরিষ্কার করে মাটি আলগা করা। ওদিকে বুড়ি ব্যস্ত লেমনেড বানাতে, লেমনেড বানিয়ে তাতে বিষ দিতে। তার মৃত ছেলে রুমেই বসে ছিল, জানালা দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকের দলটিকে দেখছিল।
আমি নিশ্চিত সে কার্স্টেনকেই পছন্দ করবে, বুড়ি ভাবল, এটাই করা উচিত তার...।
“সবাই আসুন,” ডাকল বুড়ি, হাতে করে লেমনেড আর কাপভর্তি একটা ট্রে নিয়ে বাইরে এসে। ছেলেমেয়েগুলো তৃষ্ণার্ত ছিল, তাই তারা দ্রুত এগিয়ে আসল। শুধু টমিই আসল না, সে আগাছা পরিষ্কারেই ব্যস্ত। “টমি, আপনিও।
”
“আমি খেতে পারবনা, আমার আসলে ডায়াবেটিস আছে। ”, জানাল টমি।
বুড়ির ভুরু কুঁচকে গেল। এটা মোটেও ভাল সংবাদ না। একদম না।
তাকে দ্রুত কাজ সারতে হবে। সে তাড়াতাড়ি ভিতর থেকে একটা চাকু আনতে গেল। কিন্তু টমি তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, তাকে কীভাবে বুড়ি কাবু করবে? “সাইমন,” বুড়ি ডেকে উঠল। কিন্তু তার মৃত ছেলে তার ঘর ছেড়ে বের হল না।
বুড়ি দ্রুত আবার বের হয়ে এল।
ছেলেমেয়েদের মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। কার্স্টেন কাশছিল। সৌভাগ্যক্রমে, টমি অপরদিকে ফিরে ছিল, আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত। বুড়ির পক্ষে যত দ্রুত সম্ভব সে তত দ্রুতই হেঁটে টমির কাছে যাবার চেষ্টা করল। কার্স্টেন টমিকে সতর্ক করার চেষ্টা করল, কিন্তু সে কাশিই থামাতে পারছিল না।
কোন রকমে লেমনেডের ট্রেটা তুলে বুড়ির বাড়ির দেয়ালে ছুঁড়ে মারল সে। জোরে শব্দ করে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হল সেটা। এতে কাজ হল, টমি ফিরে চাইল।
ঘুরেই সে বুড়িকে দেখতে পেল, তার পিছনে চাকু হাতে দাঁড়িয়ে।
টমির চেহারায় ভয়ে ছাপ দেখা দিল।
বুড়ি তাকে লক্ষ করে চাকু চালাল। টমির কাঁধে গভীর একটা ক্ষতের সৃষ্টি করল সেটা। সে কোনমতে দাঁড়িয়ে বুড়ির থেকে দূরে দৌড়াল, ছেলেমেয়েগুলোর দিকে।
“সাইমন!” বুড়ি চেঁচিয়ে উঠল।
টমি ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তাকাল, সবাই মাটিতে পড়ে আছে, সে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল।
“সাইমন!”
টমি তার সেলফোন টেনে বের করল পকেট থেকে, নেটওয়ার্ক নেই! সে বাড়ির অপর প্রান্তে ছুটে গেল, আর বুড়ির মৃত ছেলেকে তার শোবার ঘরের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থামল। “প্লিজ, আমাদের সাহায্য করুন,” টমির কণ্ঠে অনুনয় ঝরে পড়ল।
তার খুব বেশি রক্তপাত হচ্ছিল। বুড়ি তার একটা ধমনী কেটে দিয়েছে। টমি টলমলে পায়ে বুড়ির মৃত ছেলের দিকে এগিয়ে গেল।
“প্লিজ সাইমন!” টমি সাইমনের হাত ধরে বলল। কোন প্রতিক্রিয়া হল না। টমি মৃত ছেলেটার মাথা ছুঁল। এবারও কোন প্রতিক্রিয়া হল না। সে এবার মৃত ছেলেটাকে তার দিকে ঘুরিয়ে মুখোমুখি হল।
মৃত ছেলেটার চেহারা সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন। তার পলকহীন চোখ টমির দিকে চেয়ে থাকল। টমি ঢলে পড়ল, তার শরীর রক্তশুন্য।
বুড়ি প্রবেশ করল ঘরে। “ধন্যবাদ সাইমন,” বলল সে।
***
এক এক করে, পাঁচ তরুণ-তরুণী জেগে উঠল। তারা বেজমেন্টে সারিবদ্ধভাবে শুয়ে ছিল, তাদের হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। পা ও বাঁধা। বুড়ি ও তার মৃত ছেলে তাদের দিকে চেয়ে ছিল। “কাকে পছন্দ হয় তোমার?” বুড়ি জিজ্ঞেস করল তার মৃত ছেলেকে।
“ওকে,” তার মৃত ছেলে জবাব দিল, কার্স্টেনের দিকে নির্দেশ করে।
“আমি জানতাম। সেই সবচেয়ে সুন্দরি। ”
অন্য ছেলেমেয়েগুলো কার্স্টেনের দিকে ফিরে তাকাল, সে ততক্ষণে ফোঁপাতে শুরু করেছে। “চিন্তা করিস না বাছা, সাইমনকে তোর খুব পছন্দ হবে।
”
কিন্তু কার্স্টেনের কান্না তাতে থামল না। চলল বুড়ি চাকু দিয়ে তার গলা দু’ভাগ করে দেয়ার আগ পর্যন্ত।
***
কিছু বাদেই কার্স্টেনের নগ্ন শরীরটাকে বুড়ির বেঞ্চে শুয়ে থাকতে দেখা দেল। এখন অপর ছেলেমেয়েগুলো কাঁদছে। তারা কাঁদতে থাকল যখন বুড়ি কার্স্টেনের নাড়িভুঁড়ি বের করল।
তারা কাঁদতে থাকল যখন বুড়ি কার্স্টেনের হাড়ের সাথে মাটির তৈরি নকল পেশী জুড়ল। তাঁরা কাঁদতে থাকল যখন বুড়ি কার্স্টেনের হাড়গুলো তার দিয়ে আবার জোড়া দিল। তারা কাঁদতে থাকল যখন বুড়ি কার্স্টেনের গায়ে আবার নকল মাংস জুড়ল। এবং তারা কেঁদেই চলল যখন বুড়ি কার্স্টেনকে নতুন, চকচকে একজোড়া চোখ দিল, কাচের।
“আমরা অনেক সুখী হব,” মৃত ছেলেটি বুড়িকে বলল।
সাইমনের বিয়ে হল
প্রতি রাতে বুড়ি বেজমেন্টে যেত চার তরুণ-তরুণীকে এক থালা নুডলস আর এক জগ পানি দিতে। এরপর সে রান্না করত আর তার মৃত ছেলে এবং তার মৃত বউয়ের সাথে রাতের খাবার খেত। আর প্রতি রাতেই বুড়ি তাদেরকে জিজ্ঞেস করত, “তোদের দিন কেমন গেল?”
আর তারা জবাবে ঠিক তাই বলত যা বুড়ি শুনতে চাইত, “খুব ভাল, তুমি খুব শীঘ্রই নাতিনাতনির আশা করা শুরু করতে পারবে। ”
আর তারা সুখী ছিল। অন্তত বেশিরভাগ সময়।
কারণ বুড়ির বুড়িয়ে যাওয়া মনের কোন এক গভীর কোণে সবসময়ই একটা সূক্ষ্ম সন্দেহ যেন তাকে খোঁচাত। যেন সাক্ষাত শয়তান তার কানে ফিসফিস করে বলত, সে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে...।
কখনওবা বলত- সত্যিকারের দম্পতি কখনও তাদের মা-শাশুড়ির সাথে থাকতে চায় না। জীবিত দম্পতির আলাদা স্থানের দরকার হয়...।
এখন, যেন আগের চেয়েও ঘনঘন, এরচেয়েও ভয়ঙ্কর ও নোংরা কথা ফিসফিসিয়ে বাজত বুড়ির কানে।
এরকমটা আগেও ঘটেছিল।
এভাবেই চলছিল, কিন্তু এক রাতে বুড়ির মৃত ছেলে বলল, “মা, তোমার সাথে কিছু কথা আছে। ” বুড়ি খুব ভয় পেল।
এরকমটা আগেও ঘটেছিল।
“কার্স্টেন আর আমি মনে করি যে আমাদের ছেলেমেয়ে আর একটু শহুরে এলাকায় বড় হলে ভাল হবে।
যেখানে অন্য ছেলেমেয়ে থাকবে তাদের সাথে খেলাধুলা করার জন্য। ”
সে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে। সে তোমাকে ছেড়ে আবার চলে যাবে।
“কী বলতে চাচ্ছিস তুই?” বুড়ি কণ্ঠটাকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল।
সে একটা নতুন মেয়ে পেয়েছে, সে তোমাকে আর ভালবাসে না, সে তোমাকে ছেড়ে আবার চলে যাবে।
“আমরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি,” বুড়ির মৃত ছেলে বলল।
তুমি আবার একা হয়ে যাবে।
“না,” বুড়ি বলল, “তুই বলেছিলি তোরা এখানে থাকবি, আমার সাথে। ”
এরকমটা আগেও ঘটেছিল। তুমি এখন একা।
“তোমার যখন মন চাবে তুমি আমাদের বাসায় বেড়াতে আসতে পারবে,” মৃত ছেলেটি বলল।
মিথ্যা বলছে, সে মিথ্যা বলছে।
“তুই আমাকে মিথ্যা বলেছিলি!” বুড়ি চিৎকার করল।
তুমি ভাল করেই জান তোমাকে কি করতে হবে।
বুড়ি দ্রুত রান্নাঘরে গিয়ে তার চাকুটা হাতে নিল।
তুমি এটা আগেও করেছ।
“মা,” মৃত ছেলেটি বলে উঠল, ভীতকণ্ঠে।
তুমি তাকে খুন করেছিলে।
“আপনি কী করছেন?” এবার কার্স্টেন জিজ্ঞেস করল, ভীতকণ্ঠে।
তুমি তোমার নিজের ছেলেকে খুন করেছিলে।
“তোরা আমাকে ছেড়ে যেতে পারবি না!” চিৎকার করে বুড়ি বলল। সেতার মৃত ছেলের গায়ে হাতের চাকুটা গেঁথে দিল। কিন্তু তার কোন প্রতিক্রিয়াই হল। যেন সে-
তোমার ছেলে মারা গেছে।
বুড়ি আবার তার গায়ে চাকু মারল।
কিন্তু তার শরীর খুব বেশি শক্ত মনে হল বুড়ির কাছে। সেটা মাটিতে পড়ে গেল।
তোমার ছেলে মারা গেছে। তুমি তাকে খুন করেছিলে।
বুড়ি তার মৃত ছেলের বউয়ের গায়েও চাকু চালাল।
তার শরীরটাও মাটিতে পরে গেল। এরপর বুড়ি নিচু হয়ে তার মৃত ছেলের শরীরে বার বার চাকু দিয়ে আঘাত করতে লাগল-
তোমার ছেলে মারা গেছে। তুমি তাকে খুন করেছিলে। এখন তুমি একা।
- বার বার!
বুড়ির নাতিনাতনি হল
বুড়ি কাঁদতে কাঁদতে টালমাটাল পায়ে বেজমেন্টে নেমে এল।
হাতে চাকু। সে ছেলেমেয়েগুলোর একজনকে ধরে তার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল। ছেলেমেয়েগুলো বিভ্রান্ত হয়ে গেল। তারা কিছুই বুঝতে পারছিল না যে কি হচ্ছে।
“আমি একা,” বুড়ি বলল, “একদম একা।
”
“আপনি যদি আমাদের ছেড়ে দেন তাহলে আমরা আপনার সাথে থাকব,” ছেলেমেয়েদের একজন বলল।
বুড়ি মুহূর্তের জন্য কান্না থামাল। মনে মনে ভাবল, এরা আমার নাতিনাতনি হবে। এটা ভেবে তার মন ভাল হয়ে গেল। কিন্তু তার মনের সূক্ষ্ম সন্দেহটা আবার ফিসফিস করে উঠল-
তারা তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে, ঠিক যেভাবে সাইমন গিয়েছিল।
“তোরা কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবি?” বুড়ি জিজ্ঞেস করল।
“না,” সবাই একসাথে বলে উঠল।
মিথ্যা বলছে, তারা মিথ্যা বলছে।
“হ্যাঁ, তোরা ঠিকই যাবি,” বুড়ি বলে উঠল। সে প্রথম তরুণের গলায় চাকুটা ধরল, তার মুখ ভয়ে সাদা হয়ে গেল।
“আমাকে মারবেন না,” তার কণ্ঠে অনুনয় ঝরে পড়ল।
মেরে ফেল।
বুড়ি একটু দ্বিধা করল। ছেলেটা চোখ বুঁজে ফেলল। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে করতে সে একটা ধর্মীয় গান গাইতে শুরু করল, “আমার পাপগুলোকে কী ধুয়ে দেবে?”
মেরে ফেল।
ধীরে ধীরে অন্য ছেলেমেয়েগুলোও গলা মেলাল- “যীশুর রক্ত ছাড়া কিছুই না। ”
মেরে ফেল।
বুড়ি প্রথমজনের গলায় চাকু চালাল। কিন্তু বাকীরা গেয়েই চলল, “কী আমাকে পূর্ণতা দেবে?”
বুড়ি দ্বিতীয়জনের গলায় চাকু চালাল। কিন্তু বাকীরা গেয়েই চলল, “যীশুর রক্ত ছাড়া কিছুই না।
”
বুড়ি তৃতীয়জনের গলায় চাকু চালাল। কিন্তু বাকীজন গেয়েই চলল, “ওহ সে স্রোতা কতই না মূল্যবান...”
বুড়ি শেষজনের গলায় চাকু চালাল।
***
ওজার্কসে এক পুরান বাড়িতে বাস করত এক বুড়ি ও তার মৃত নাতিনাতনি। প্রতি রাতে খাবারের পর তারা ধর্মীয় গান গাইত।
“কী আমাদেরকে মুক্তি দেবে? যীশুর রক্ত ছাড়া কিছুই না।
”
চিরকাল ধরে, চিরকাল ধরে।
“কী আমাদেরকে স্বর্গে নেবে? যীশুর রক্ত ছাড়া কিছুই না। ”
তারা খুব সুখী ছিল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।