একজন ফুরিয়ে যাওয়া ব্লগার
দুই বন্ধুর রাতের খাবার প্রায় শেষ হয়ে এসেছিলো ততক্ষণে। রেস্তোরাঁর কাঁচের জানালা দিয়ে তারা দেখতে পাচ্ছিলো বাইরের রাস্তা, জনসমাগম। প্যারিস শহরের কোনও এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যার মৃদুমন্দ বাতাস এসে আলতো পরশ বোলাচ্ছিলো তাদের গায়। এমন সন্ধ্যায় ঘরে বসে থাকতে মন চায় না। ইচ্ছের ডানাগুলো মেলে দিয়ে ঘুরতে মন চায়, গাছের তলায় কিংবা নদীতীরে জোছনার আলোয় বসে ঘাসপোকা আর লার্ক পাখির সাথে সময় কাটাতে সাধ জাগে।
সেই দুই বন্ধুর একজন, হেনরী সিমন, গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো--- "নাহ... বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। আগেকার দিনে এমন সন্ধ্যায় নিজেকে আমার কত পরিপূর্ণ, কত প্রাণবন্ত মনে হতো, অথচ এখন, কেন যেন বড় অনুতাপ হয়। ... জীবনটা আসলেই কত ছোট!"
বছর পঁয়তাল্লিশেক বয়স , বেশ একমাথা টাক এবং ভারী স্বাস্থ্য ছিলো তার।
অপর বন্ধুটি- পিয়েরে গার্নিয়ার, সে ছিলো বয়সে কিছু বড় কিন্তু অনেকটা হালকা পাতলা , এবং তুলনামূলক ঝকঝকে চেহারার।
সে জবাব দিলোঃ
"দ্যাখো বাপু, আমারও বয়স হয়েছে কিন্তু নিজে সেটা বুঝতেই পারিনি। আমি চিরকাল হাসিখুশি, স্বাস্থ্যবান, প্রাণচঞ্চল ছিলাম। মানুষ প্রত্যেক দিন নিজেকে আয়নায় দ্যাখে তো, তাই নিজের মধ্যেকার পরিবর্তনটা সে চট করে ধরতে পারে না--- ধরতে পারে না কারণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটা খুব ধীর কিন্তু নিয়মিত, এবং এই প্রক্রিয়াটা মানুষের বাহ্যিক রূপটাকে এমনভাবে বদলে দেয় যে মানুষ পুরো ব্যাপারটা টেরও পায় না! যদি নেহাতই কেউ টের পেতে চায় তাহলে তাকে যা করতে হবে তা হলো, ৬ মাস আয়নার দিকে তাকানোই যাবে না। তারপর ঠিক ছয়মাস পর যেদিন আয়নার সামনে দাঁড়াবে সেদিন... ওহ, সে এক রামধাক্কা বটে!
মেয়েদের কথাই ভাবো একবার। কি করুণ অবস্থা এদের! এদের সব আনন্দ, ক্ষমতা এবং মনোযোগের উৎস হলো তাদের রূপ, সারাটা জীবন এদের শুধু কাটে নিজের রূপের চিন্তা করে, অথচ তাদের রূপ সারাজীবনে সাকূল্যে টেকে কতদিন? বড়জোর ১০ বছর, নাকি?
তো যেমনটি বললাম, আমি বুড়ো হয়েছি নিজেও বুঝতে পারিনি, ৫০বছর বয়েসেও আমি সত্যিই নিজেকে যুবক ভাবতাম।
শারীরিকভাবে নিজেকে একটুও দুর্বল মনে হতো না, খুব সুখী এবং পরিতৃপ্ত মনে হতো।
কিন্তু সত্যি যখন বুড়ো হয়ে যাওয়ার উপলব্ধিটা হলো, এত অদ্ভুতভাবে হঠাৎ করে অনুভূতিটার সাথে আমার পরিচয় হলো যে আমি প্রায় ৬ মাস সেই ভয়ঙ্কর বোধটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমার যে সময় ফুরিয়ে এসেছে সেই বোধের তীব্রতাটা আমাকে একেবারে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো।
আর দশটা পুরুষ মানুষের মত আমিও প্রেমে পড়েছি। সত্যি বলতে কি, পড়েছি অনেকবারই কিন্তু তার মধ্যে একটা ছিলো সবগুলোর চেয়ে আলাদা।
তার সাথে আমার প্রথম দেখা হিয়েছিলো ইত্রেতাত নামক এক সমুদ্রতীরে। সে প্রায় ১২ বছর আগের কথা, যুদ্ধের ঠিক পরপরই ছিলো সময়টা। সকালে স্নান করার সময়টায় ঐ জায়গাটা বড় অদ্ভুত সুন্দর লাগতো। জায়গাটা ছোটখাট, আকারে খানিকটা ঘোড়ার খুরের মত, চারদিকে পাহাড় ঘেরা, পাহাড়গুলোয় রহস্যময় সব গর্ত থাকতো। দু'টো পাহাড় ছিলো সেখানে, তার মধ্যে একটা অনেকখানি লম্বা হয়ে সমুদ্রের ভেতরে চলে এসেছিলো দৈত্যর পায়ের মত, আরেকটা ছিলো অনেক নিরেট ধরণের কিন্তু আকারে ছোট।
মহিলারা বড় বড় উঁচু উঁচু পাথরের খাঁজে বালুবেলায় এসে জড়ো হতো, সেখানে তারা তাদের স্নানের পোশাকগুলো বাগানের মত করে সাজিয়ে রাখতো। যখন প্রখর রোদ এসে সমুদ্রের নীল-সবুজ জলে, একপাশে বিশ্রামের জন্য রাখা বড় বড় রং-বেরংয়ের ছাতাগুলোর ওপর পড়তো তখন চারপাশটা ভারি মায়াময় আর মনোরম লাগতো। প্রকৃতি যেন হেসে উঠতো আপনমনে। জলের ধারে বসে আপনমনে স্নানরতাদের দেখতে ভালো লাগতো। স্নানের রোব পরে মেয়েরা একে একে আসতো, তারপর জলে নেমে ঠিক ঢেউয়ের ফেনার কাছাকাছি এসে আলতো করে সেটা খুলে ছুঁড়ে দিতো... তারপর ছোট ছোট পা ফেলে খানিকটা দৌড়ে যেতো আরও গভীরে।
কিছুক্ষণ জলের সাথে খেলা করে তারপর ফিরে আসতো হাঁপাতে হাঁপাতে।
খুব কম মেয়েই সত্যিকারভাবে স্নান করার আনন্দটা নিতে পারতো। সমুদ্রস্নান ব্যাপারটাকে অনেকটা পরীক্ষার মত বলা যায় কারণ সবার শরীর এই ব্যাপারটা নিতে পারে না, কাজেই এই একটা জায়গায় এসে মোটামুটি পায়ের গোড়ালি থেকে গলা পর্যন্ত একটা টেস্ট হয়ে যেতো। যদিও সমুদ্রস্নান নাজুক ত্বকের জন্য খুব উপকারী ছিলোতবু অনেকেরই পানি থেকে উঠে আসার পর অনেক ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতো।
প্রথম যখন সেই সুযৌবনা মেয়েটিকে আমি জলের মধ্যে দেখলাম, আমার এত তীব্র একটা ভালোলাগার, আনন্দের অনুভূতি হলো... স্নান নামক সেই পরীক্ষায় মেয়েটি খুব ভালোভাবে উতরে গিয়েছিলো।
কিছু কিছু মানুষের মুখ আছে প্রথম দর্শনেই অদ্ভুত ভালো লেগে যায়, মনে হয়- হ্যাঁ, এই মেয়েটিকে ভালোবাসার জন্যই তো আমি পৃথিবীতে এসেছি! আমারও ঠিক সেরকমই মনে হয়েছিলো, আমি একেবারে বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম।
তারপর একসময় তার সাথে আমার পরিচয় হলো, আর পরিচয় হওয়ার পরেই আমার এমন বেহাল দশা হলো যা আর কখনও হয়নি! আমার মনটা তার জন্য বড় ছটফট করতো। এভাবে কায়মনোবাক্যে একজন রমণীর বশ্যতা স্বীকার করার অনুভূতিটা খুব আনন্দের হলেও একই সাথে খুব তীব্র যন্ত্রণারও বটে। অনুভূতিটাকে প্রায় টর্চারের পর্যায়ে ফেলা যায়, আবার ভালোও লাগে। তার চেহারা, তার হাসি, তার হাওয়ায় ওড়া চুল, তার মুখের ছোট ছোট রেখাগুলো, তার শরীরের সামান্যতমও আন্দোলনও আমাকে আনন্দ দিতো-কষ্ট দিতো- আমাকে পাগল করতো, আমার ভেতরটা ছেয়ে ফেলতো।
তার অঙ্গভঙ্গী, তার স্বভাব (এমনকি তার পোশাকগুলোও, মনে হতো যেন সে ঐ পোশাকগুলো পরে থাকলে সেগুলো থেকে অন্যরকম এক সৌন্দর্য বিচ্ছুরিত হয়!) সবকিছু আমাকে প্রায় আচ্ছন্ন করে ফেলছিলো। ঘরের কোনও আসবাবে তার মাথার স্কার্ফের ছায়া পড়লেও বা সে তার হাতের গ্লাভসগুলো খুলে চেয়ারের ওপর রাখলেও আমার মনটা দুর্বল হয়ে যেতো। তার গাউনগুলো আমার কাছে অতুলনীয় ছিলো। তার মাথার টুপিটারও আমার কাছে জুড়ি মেলা ভার ছিলো।
সে বিবাহিতা ছিলো, তবে তার স্বামী শুধুমাত্র শনিবারে আসতো আবার সোমবারেই চলে যেতো।
জানি না কেন লোকটার প্রতি আমার কোনওরকম ঈর্ষাই হতো না। কোন সৃষ্টিই কখনো আমার কাছে তুচ্ছ মনে হয় নি এই জীবনে, কিন্তু এই মানুষটার মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নিজেকে নিজের কাছে ওদের চেয়েও ছোট মনে হতো।
আর সেই মেয়েটি... আমি তাকে কি পাগলের মত ভালোই না বাসতাম! কি অদ্ভুত সুন্দর, মায়াবী আর তারুণ্যে ভরপুর ছিলো সে। সে যেন আমার কাছে ঠিক সৌন্দর্য সৌম্যতা আর সজীবতার সংজ্ঞা ছিলো। এর আগে যেন কোনও মানবীর রূপ-রঙ-মেধা-সৌকর্য-লাবণ্য- কমনীয়তা একই সাথে এত তীব্রভাবে এসে আমার চোখে এসে ধরা দেয়নি! এর আগে কখনও কারও গালের খাঁজ, কারও ঠোঁটের ওঠানামা, কারও কানের গোলাপি আভা, কারও নাকের মত এত সামান্য একটা অঙ্গের ভাঁজ আমাকে এমন মাতাল করে দেয়নি।
এমনি ভাবে তিন মাস কেটে গেলো। তারপর একদিন তীব্র বিষাদাক্রান্ত হয়ে আমাকে পাড়ি দিতে হলো আমেরিকার উদ্দেশ্যে। চলে এলাম ঠিকই কিন্তু তার স্মৃতি আমার মস্তিষ্কে পালাপাকিভাবে স্থায়ী হয়ে গেলো। অতদূরে থেকেও আমি তার জন্য ঠিক ততখানিই পাগল ছিলাম যতখানি তার কাছাকাছি থাকার সময়ে ছিলাম। বছরের পর বছর কেটে গেলো, তবু আমি তাকে একটুও ভুলতে পারলাম না।
তার সেই অসাধারণ রূপের ছটা যেন আমার চোখের এবং মনের আয়নায় বিজয়ীর মত আসন করে নিয়েছিলো। তার প্রতি আমার ভালোবাসাটা তখনও সত্যি ছিলো, ঠিক যেমন মানুষের তার নিজের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর এবং আনন্দময় মুহূর্তগুলির প্রতি এক ধরণের কোমল ভালোবাসা থাকে, ঠিক তেমন।
সমগ্র জীবনের সাথে তুলনা করলে ১২ বছর মোটেও এমন কোনও দীর্ঘ সময় নয়। মানুষ সহসা বুঝতেও পারে না যে কোথা দিয়ে এতটা সময় চলে গেলো। একটার পর একটা বছর চলে যায়, কখনও মনে হয় ধীরে যাচ্ছে, আবার কখনও মনে হয় জোর গতিতে যাচ্ছে।
প্রতিটা বছরই লম্বা মনে হয় আবার যেন খুব দ্রুত ফুরিয়েও গেলো মনে হয়। কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে যেতে যে ছাপটুকু সময় রেখে যায় তা খুবই সামান্য, কয়েক বছর পর একসময় পেছন ফিরে তাকালে একজন মানুষের কিছুই চোখে পড়ে না, এবং সে কতটা বুড়ো হয়েছে সেটাও বুঝতে পারে না। সত্যিই আমার একেকসময় মনে হতো যেন ১২বছর নয়, ইত্রেতাত এর সেই মায়াবী বালুকাবেলা যেন আমি ছেড়ে এসেছি মাত্র কয়েক মাস হলো।
গেলো বসন্তে আমার একদিন কিছু বন্ধুবান্ধবের সাথে মেজোঁ-লাফিত এ খাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো।
ঠিক ট্রেনটা ছাড়ার মুহূর্তে একজন মোটাসোটা বিশাল বপুধারী মহিলা চারটা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে আমার বগিতে ঢুকলো।
আমি মহিলার মুখের দিকে একবার তাকালাম, ইয়া বড় চাঁদের মত গোল একটা মুখ, বহু কষ্টে একটা রিবনওয়ালা টুপির মধ্যে সেটাকে আঁটানো হয়েছে।
বেচারী হাসফাঁস করে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো, তাড়াহুড়ো করে ট্রেনে উঠতে গিয়ে তার প্রায় দমবন্ধ হয়ে আসার মত অবস্থা। বাচ্চাগুলো কথা বলতে শুরু করলো। আমি খবরের কাগজটা খুলে পড়তে লাগলাম।
অ্যাসনিয়েরেস পার হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ আমার সেই প্রতিবেশিনী আমার দিকে ফিরে বললো, "যদি কিছু মনে না করেন... আপনি... মঁসিয়ে গার্নিয়ের নন?"
"হ্যাঁ, আমিই।
"
আমার কথা শুনে সে হাসতে লাগলো। সেটা একজন হাসিখুশি মহিলার আনন্দের হাসি নিশ্চয়ই কিন্তু তার মাঝেও কোথাও যেন একটা কষ্ট মাখা ছিলো।
"তুমি বোধহয় আমাকে চিনতে পারোনি!" ...
আমার একটু সংকোচ হচ্ছিলো। মুখটা খানিকটা চেনা চেনা মনে হচ্ছিলো কিন্তু কবে দেখেছি বা কোথায় দেখেছি কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। তাই উত্তর দিলামঃ
"হ্যাঁ, মানে... না... আমি আপনাকে দেখেছি নিশ্চয়ই... কিন্তু নামটা ঠিক... মনে করতে পারছি না।
"
সে একটু লজ্জা পেয়ে বললো "আমি মিসেস জুলি লেফেরে!"
এতবড় ধাক্কা আমি জীবনেও খাইনি! মনে হলো যেন আমার চোখের ওপর কেউ খুব নির্দয়ভাবে একটা পর্দা টেনে ছিঁড়ে ফেললো। এমন একটা হৃদয়বিদারক সত্য উদ্ঘাটনের মত শক্তি আমার মনের একেবারেই ছিলো না।
আর এই কিনা সে! এই মোটা, ঢাউস দেহধারী... সে! শেষবার যখন আমি তাকে দেখি তারপর সে এই ৪ সন্তানের মা হয়েছে। তার মত তার বাচ্চাগুলোকে দেখেও আমি খুবই অবাক হলাম। সেই ৪টি মেয়ে এই মহিলারই সন্তান, এই মহিলারই অংশ।
বেশ বড় হয়ে গেছে তারা ততদিনে। আর তার সেই অদ্ভুত কোমল সৌন্দর্য আর কমনীয়তার ছিঁটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই তখন। আমার শুধু মনে হচ্ছিলো যেন এই তো গতকালই আমি তাকে দেখেছি আর আজ আবার দেখছি, অথচ এত পার্থক্য! এও কি সম্ভব! তীব্র দুঃখে আমার মনটা ছেয়ে গেলো... সেই সাথে প্রকৃতির এহেন বিরূপ আচরণ দেখে অসম্ভব রাগও হতে লাগলো, কেমন যেন এক অক্ষম আক্রোশে আমার ভেতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে লাগলো।
হতবিহবল হয়ে আমি আবার তাকালাম তার দিকে। তারপর একবার আমার চোখ পড়লো তার হাতের দিকে, একবার আমার হাতের দিকে।
নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে এলো আমার। তার সেই হারিয়ে যাওয়া যৌবনের জন্য কাঁদছিলাম আমি। আমার শুধু মনে হচ্ছিলো এই বিশালদেহী মহিলাটিকে আমি চিনি না।
সেও অনেক উচ্ছসিত ছিলো। একটু থেমে থেমে বললোঃ
"আমি একেবারে বদলে গেছি, না? কিছু তো বলার নেই... সবকিছুরই একটা সময় থাকে, তাই না বলো? দ্যাখো, আমি মা হয়েছি... আর কিছু নয়, শুধু একজন ভালো মা! আর যা কিছু ছিলো আমার জীবনে সবকিছুকে বিদায় জানিয়েছি।
ওহ... আমি আশাও করিনি যে এতবছর পর তুমি আমাকে দেখলে চিনতে পারবে। তুমিও তো অনেক বদলে গেছো। এটা সত্যিই তুমি কিনা, আমার কোনও ভুল হচ্ছে কিনা সেটা ধরতেই আমার অনেক সময় লেগে গেছে। তোমার চুলও তো সব পেকে গেছে! ১২ বছর কেটে গেছে... ভেবে দ্যাখো, ১২ বছর! আমার বড় মেয়েটার বয়সই এখন ১০!"
আমি তার বড় মেয়েটার দিকে তাকালাম। তার মধ্যে আমি তার মায়ের সেই সৌন্দর্যের কিছু ছোঁয়া খুঁজে পেলাম কিন্তু তখনও সেই সৌন্দর্যের মধ্যে খানিকটা অপূর্ণতা ছিলো, অদূর ভবিষ্যতেই যার পূর্ণতার আশা দেখা যাচ্ছিলো।
জীবনটা আমার কাছে জোর গতিতে ছুটে চলা একটা ট্রেনের মতই মনে হচ্ছিলো তখন।
ততক্ষণে আমরা মেজোঁ-লাফিত এ পৌঁছে গেছি। আমি আমার সেই পুরনো বান্ধবীটির হাতে চুমু খেলাম আলতো করে। আমার অনুভূতিগুলো এত নির্মমভাবে আহত হয়েছিলো যে আমি কথা বলার শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম।
তারপর অনেক রাতে, নিজের ঘরে ফিরে, বহু বছর পর আমি আয়নার সামনে দাঁড়ালাম।
তখন আমার মনে পড়লো আমি আগে কেমন ছিলাম, আমি যেন মনের আয়নায় দেখতে পেলাম কেমন ছিলো আমার সেই কালো চুল আর খয়েরি গোঁফ। এবং সত্যিই আমি তখন আবিষ্কার করলাম আমি ঠিক কতটা বদলে গেছি, বুড়ো হয়ে গেছি।
সময় আমাকে বিদায় জানিয়েছে। "
... ... ...
মূল নামঃ গী দ্য মোপাসাঁ
ছদ্ম নামঃ জোসেফ প্রুনিয়ের, গী দ্য ভলম্যান্ট, মফ্রিনিউস ইত্যাদি।
জন্মঃ ৫ই অগাস্ট ১৮৫০, শাতো দে মেরোমেসনিল, ফ্রান্স
লিখেছেনঃ ছোট গল্প, উপন্যাস ও কবিতা
কাজ করেছেন প্রকৃতি ও বাস্তবতা (Naturalism & Realism) নিয়ে
প্রতিভাবান এই লেখক ৬ই জুলাই ১৮৯৩ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে প্যাসি, ফ্রান্সে আত্মহত্যা করেন।
মূল লেখার লিঙ্ক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।