আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোনালিসার রহস্যময় হাসি

আমার দেশ, আমার অহংকার মোনালিসা - নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরা চিত্রকর্মগুলোর একটি। বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত চিত্রকর্ম মোনালিসার রহস্যময় হাসি মানুষের ভাবনার খোরাক যুগিয়েছে যুগের পর যুগ ধরে। ১৫০৩ সালে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এই অসামান্য চিত্রকর্মটি আঁকা শুরু করেন। ১৫১৯ সালে এর কাজ শেষ হয়। তবে দ্য ভিঞ্চি আদৌ এটি সমাপ্ত করেছেন কিনা এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।

বছরের পর বছর ধরে বিতর্ক আর রহস্যের মায়াজাল বুনে চলা মোনালিসার রহস্য কেবল তার হাসিতেই শেষ নয়। বিতর্ক রয়েছে মোনালিসা রহস্যময় নাকি রহস্যময়ী তা নিয়েও। দ্য ভিঞ্চি একদিকে যেমন সমকামী ছিলেন, অন্যদিকে তিনি ছিলেন নারীবাদের একজন বড় সমর্থক। তিনি বিশ্বাস করতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের মধ্যে নারী পুরুষ উভয়ের উপাদান না থাকবে, ততক্ষণ তার আত্মা আলোকিত হবে না। এ বিশ্বাসের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় মোনালিসাতেও।

মিশরীয় উর্বরতার দেবতা ছিলেন আমন, আর দেবী ছিলেন আইসিস। আইসিস এর প্রতীক হিসেবে লিখা হত লি'সা। আমন লিসা থেকেই মোনালিসা বলে মনে করেন অনেকে। আবার কারো কারো মতে, মোনালিসা মূলতঃ দ্য ভিঞ্চি তার মায়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে এঁকেছেন। তবে সবচেয়ে প্রচলিত ধারনা হল, মোনালিসা ছিলেন ফ্লোরেন্সের ধনী ব্যবসায়ী ফ্রান্সেস্কো দ্য গিয়োকন্দোর স্ত্রী।

ফ্রান্সেস্কো লিসার চিত্রকর্ম করার জন্য দ্য ভিঞ্চি কে অনুরোধ করেন। দ্য ভিঞ্চি যদিও এতে আপত্তি করেন, তবে শেষ পর্যন্ত রাজি হন। এর মাধ্যমেই ৃষ্টি হয় বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত চিত্রকর্ম। তবে অনেকেই মনে করেন, সেই চিত্রটি মোনালিসা নয়। মোনালিসাকে ডান দিক অপেক্ষা বাম দিক থেকে বড় মনে হয়।

এমনকি বাঁ দিক থেকে তার হাসিও অধিক বিস্ৃত মনে হয়। ঐতিহ্যগতভাবে ডান দিক পুরুষের আর বাম দিক নারীর বলে বিবেচনা করা হয়। তাই বাম দিককে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টি একদিকে মোনালিসাকে নারী হিসেবে তুলে ধরে, অন্যদিকে তাঁর নারীবাদী চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটায়। দ্য ভিঞ্চি মোনালিসাকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্ম বলে উল্লেখ করেছেন। জীবদ্দশায় তিনি কোথাও গেলে ছবিটি সঙ্গে নিয়ে যেতেন।

ভিঞ্চির ৃত্যুর পর তাঁর জনৈক সহকারীর নিকট ছবিটি কিছুদিন ছিল। ১৫৩০ সালে ফ্রান্সের সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস ছবিটি ৪০০০ স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে সংগ্রহ করেন। দীর্ঘদিন এটি ফ্রান্সের রাজ প্রাসাদে শোভা পায়। নেপোলিয়ন ক্ষমতায় যাওয়ার পর ছবিটি তাঁর শোবার ঘরে শোভা পায়। বর্তমানে এটি ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।

বছরে ৬০ লাখের অধিক দর্শনার্থী এটি দেখতে ভিড় জমায়। ছবিটি একটি তৈলচিত্র। তবে ঠিক কি কালি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি। ধারনা করা হয়, এর উপর নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের প্রলেপ রয়েছে। তবে এ বিষয়টিও রহস্যঘেরাই থেকে গেছে।

মোনালিসার হাসি ইঙ্গিত দেয় যে, সে নিজেও তার রহস্যময় হাসির বিষয়ে অবগত নয়। শত শত বছর ধরে মানব ৃদয়ে আলোড়ন ৃষ্টিকারী এ অপার রহস্য অধরাই থেকে গেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।