বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই মুজিব হাই স্কুলের টিচারদের হাবভাব সব সময় ই একটু অন্য রকম থাকে। উনারা প্রাইমারি স্কুলের স্যারদের মতো এতো পিতৃ সুলভ আচরণও করেন না,আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারদের মতো এতোটা ফ্রেন্ডলিও হতে পারেন না।
উনাদের ভেতর সব সময়ই একটা অন্যরকম ভাব থাকে,যার কারনেই হয়তো এখনো হাই স্কুলের স্যার দের কেই সব চেয়ে বেশি আপন মনে হয়।
আমি ক্লাস ৫ এ এসে হাই স্কুলে ভর্তি হই। আমাদের এক স্যার ছিলেন -এনাম স্যার ।
এনাম স্যার, এনাম স্যার এর চেয়ে "রাজাকার" নামেই বেশি বিখ্যাত ছিলেন। বড় ভাইরা স্যারকে এই নামেই ডাকতো।
বড় ভাইদের কাছ থেকে আমরাও সেটা গ্রহণ করি। স্যার কোন যুদ্ধ অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু উনার খুব বেশি পাকিস্তান প্রীতি ছিলো।
স্যার আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্লাস নিয়েছেন। এমনিতে খুবই রাগি ছিলেন,বাট স্যারকে খুব সহজেই ম্যানেজ করা যেত।
আমরা যেদিন স্যারের পড়া শিখে আসতাম না,সেদিন স্যার ক্লাসে আসলেই পাকিস্তানের প্রসঙ্গ তুলে দিতাম। " স্যার কালতো আফ্রিদি একদম ফাটাই দিছে , স্যার ইনযামাম তো লাস্ট বলে সিক্স মাইরা ভারত রে একদম উড়াই দিছে। "
এই গুলা বললেই স্যারের চোখে মুখে আনন্দ ফুটে উঠতো।
স্যার পড়ার কথা ভুলে গিয়ে পাকিস্তান বন্দনায় মনোনিবেশ করতেন। স্যারের মতে পাকিস্তান পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ। স্যারের কাছ থেকেই আমরা জানতে পারি,পাকিস্তান সেনাবাহিনী পৃথিবীর সব চেয়ে উন্নত সেনাবাহিনী। :p
ক্লাস এইটে স্যার ইসলাম শিক্ষার ক্লাস নিতেন। স্যারের ক্লাসে টুপি আনা বাধ্যতামূলক ছিল।
পোলাপাইন টুপি না আনলে, মাইর খাওয়ার ভয়ে আমাদের সাথে বসে হিন্দুধর্ম শিক্ষা ক্লাস করতো। হিন্দুরা ছিল অপেক্ষাকৃত অনেক কম,কিন্তু
ইসলাম শিক্ষার চেয়ে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা ক্লাসে স্টুডেন্ট বেশি থাকতো।
স্যারকে নিয়ে আমার একটা ঘটনা না বললেই নয়। ক্লাস নাইনে স্যার আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন।
সেদিন ছিলো বেতন কালেক্ট করবার দিন।
তো স্যার সবার কাছ থেকে একে একে বেতন কালেক্ট করছিলেন। ক্লাস ক্যাপ্টেনকে বলেছেন কেউ যদি কথা বলে,তাইলে বোর্ড এ তার নাম লিখতে।
তার পরেও পোলাপাইন কথা বলেই যাচ্ছিলো। এই দিকে স্যারও বেতনের হিসাবে কোন একটা ঝামেলা লাগিয়ে ফেলেছিলেন। আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারি।
বুঝতে পেরে সবাইকে বলি যে,
" এই তোরা কথা কইছ না,দেখতেছছ না স্যারের মাথা গরম ???"
এই কথা বলে আমি স্যারের কাছ থেকে সমর্থন পাবার আশায় স্যারের দিকে তাকালাম।
দেখি স্যার ও আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন।
-এই তুই এদিকে আয়,স্যার বললেন।
আমি স্যারেরকাছে যাবো সেই জন্য ব্রেঞ্চের নীচে স্যান্ডেল খুঁজছিলাম। স্যান্ডেল পাবার পর ব্রেঞ্চ থেকে উঠে দেখি স্যার নিজেই আমার কাছে চলে এসেছেন।
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই স্যার আমায় পেটাতে শুরু করলেন। সে কি পেটানুরে ভাই......
প্রায় ১০ মিনিট স্যার আমায় কন্টিনিওয়াসলি কিল ঘুসি থাপ্পর মারলেন,আমি জেনো না জানি কি বলে ফেলছি। ১০ মিনিট পর স্যার চিল্লাইতে লাগলেন , " এই লোক,এই লোকের কতো বড়ো সাহস বলে যে আমার মাথা গরম !!
যাই হোক সেদিন আমি স্যারকে কিছুতেই বুঝাতে পারি নি যে,আমি বলতে চেয়েছি একটা স্যার বুঝেছেন আরেকটা।
আমরা যখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ার এ পড়ি,তখন এক দুপুর বেলা স্যার মারা যান।
স্যার আমায় সেদিন ঐ ভাবে মেরেছিলেন বলেই হয়তো এখনো স্যারের কথা আমার ভীষণভাবে মনে পরে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।