১৬ তারিখ। বিজয় দিবস। বন্ধের দিনেই বাস জার্নি করে বাসা থেকে চলে আসলাম স্কুল বোর্ডি-এ। ১৭ তারিখ থেকে স্কুল খোলা। রাতে ঘুম দিলাম ক্লান্তিতে।
সকালে স্কুলে যাচ্ছি। আনিসদের গ্রুপটাকে দেখলাম কন্ডুলি পাকিয়ে কী যেন করছে। কাছে যেতেই ঘিরে ধরে বললো, “স্যার শুনছেন নি হুমায়ুন স্যার আর সুভাষ স্যার গতকাল মারামারি করছে। হুমায়ুন স্যার সুভাষ স্যাররে (দুই হাত দিয়ে কিলের ইশারা করে) দিছে। ”
“সুভাষ স্যার কিছু করে নাই?”
“সুভাষ স্যার হুমায়ুন স্যারের পাও দইরা টাইননা ফালাইয়া দিছে।
”
আমি হাসিহাসি মুখ করে তাদের কথা শুনলাম। বিশেষ গুরুত্ব দিলাম না। পোলাপাইনের কথার বিশ্বাস কি। এদের সাথে আমার আবার একটু হাসাহাসি সম্পর্ক আছে।
দীর্ঘ ২১ দিনের ছুটি কাটিয়-কোরবানির ঈদের ছুটি-স্কুলে এসেছি।
প্রথমে কিছু মনে না করলেও পরে দেখলাম ঘটনা সত্যি সত্যি ঘটছে।
খবর হলো এই: বিজয় দিবসের দিন সকালে র্যালি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে স্যারেরা কুশিয়ারা বাজার পর্যন্ত গিয়ছিলো। ফেরার পথে একেবারে বাসস্ট্যান্ডের জনারণ্যে স্বনামধন্য দুই স্যার এহেন কাজ করেছেন। স্কুলের কেরানি পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন দর্শকের ভুমিকায়-তাঁর নিজের কথায়, আমি আছিলাম ধারেই চাইয়া দেখছি ধরি নাই-আর স্ট্যান্ডের রিকশা ওয়ালারা এই মারামারি শেষ পর্যন্ত ছুটিয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। প্রতিদিন এই খবর ৫০০ জন জানছে।
পঞ্চাশের কাছাকাছি হুমায়ুন স্যার দীর্ঘ দিন ধরে বি. এ পরীা দিচ্ছেন। এবারো দিবেন। পাশ করলেই তিনি সিনিয়ার টিচার হবেন এই তার আশা। বর্তমানে তিনি স্কুলের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর ক্লাশ নিচ্ছেন। স্কুলের মেয়েদের প্রতি তার বিশেষ পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।
কাশের ছেলেরা বলে, হুমায়ুন স্যার ক্লাশে ঢুকলে মেয়েদের কাছে গিয়া খালি কতা কইবো। পরীক্ষায় মাইয়াগোরে উত্তর কইয়া দিবো। মাইয়াগো টুলে গিয়া বইয়া বইয়া কতা কইব। হুমায়ুন স্যারের মোবাইলে কলের শেষ নাই। প্রায়ই ছাত্র আর দপ্তরীদের ছুটতে হয় মোবাইলের কার্ড আনতে।
সাময়িক পরীক্ষা শুরু হলে পরীক্ষার হলে ডিউটির পরিবর্তে জাম গাছটার নিচে তার কথা চলে মোবাইলে। স্যার যে কার সাথে এত কথা বেল? এমন বিস্ময় পাঠক আপনার হতে পারে তবে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী আর শিকদের মধ্যে এ বিষয়ে কোন বিস্ময় নেই।
সুভাষ স্যার চল্লিশ উর্ধ্ব, মাথায় টাক। স্কুলের ছাত্ররা যাতে তার কাছে প্রাইভেট পড়ে এ জন্য তিনি হেন কাজ নেই তিনি করেন না। যে-সব ছাত্ররা তার কাছে প্রাইভেট পড়ে না তাদের পেটাতে তিনি সিদ্ধহস্ত।
আর পরীক্ষায় স্রেফ ফেল। তাঁর এঁমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য প্রতি ব্যাচে তিনি চল্লিশ জন করে ছাত্র জোগার করতে সমর্থ হন। এখন তিনটি ব্যাচ তার আছে। তার বাসার পাশেই আমার বাসাটা হওয়াতে প্রায়ই শুনতে পাই ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলছেন, হয়তো একটু চটে গিয়েছেন, “এই কুত্তার দল ৪ নাম্বার অংকটা খাতায় লেখ....” সুভাষ স্যার আবার একটু ইনটেলেকটুয়াল আছেন। গণিত সূত্রাবলী, সহজ জ্যামিতি শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের উপর তার কয়েকটি বইও রয়েছে।
হুমায়ুন স্যার আর সুভাষ স্যারের এই লাগালাগি চলছে তাদের চাকরিতে যোগদানের অব্যবহতি পর থেকেই। মারামারি হল এই প্রথম।
মহান বিজয় দিবস অমর হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।