আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাকি প্রেমী ও থুতু

দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী! আশরাফ সাহেবের মনটা সকাল থেকে বড়ই চনমনে। রাতের সেহেরীর তৃপ্তিটা এখনো লেগে আছে। বেশ খুশি খুশি লাগছে। আজ ১৪ আগস্ট , তার প্রিয় ভূমির স্বাধীনতা বার্ষিকী। যদিও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ তিনি বাংলাদেশে।

গণ্ডগোলের সময় চলে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি। আজো তার মন কাঁদে কিন্তু বলতে পারেন নাহ। ৭৬ বছর বয়সে মাঝে মাঝে মগবাজারে যেতেন কিন্তু ছেলেদের নিষেধ। তাদের সাফ কথা, “বাবা আমাদের সমাজে একটা ইজ্জত আছে, তোমার এই সকল আদর্শ যেন ঘরের এক ফোটা বাহিরে না বের হয়”। তাতে অবশ্য তার ক্ষোভ নেই, হাই কমান্ড জানে তিনি কত সাচ্চা দিলের আদমি।

তাকে সম্মান করেন তারা। যদিও জালেম কাফের সরকারের কারনে কত বড় বড় আলেম জেলে। সে জন্য তো এ দেশে গজব পড়ছে। যাই হোক ইচ্ছা তো ছিল সবুজ পতাকাটা নিয়ে দৌড়ানোর নিদেন পক্ষে ছাদে টাঙ্গানোর কিন্তু সে দিন কি আর আছে। বেগম কে বললেন,” শুনো আজ ইফতারী টা কিন্তু জোসিলা হতে হবে বুঝলে।

আনন্দটা উদযাপন করতে হবে নাহ। “কিসের আনন্দ”? বলে উঠলেন আশরাফ সাহেবের বেগম। “তুমি মূর্খ মহিলা, হুকুম করছি পালন করো, জেনে কি লাভ”। বেলা গড়াচ্ছে, ইদানীং বয়সের চোটে তার পক্ষে রোযা রাখা কষ্টকর । টিভি দেখতে বসলেন, দেখা যাক পিটিভি কোন স্পেশাল কিছু দেখায় কিনা।

টিভি দেখতে দেখতে হারিয়ে গেলেন অতীতে। মনে পরে গেল জিন্না সাহেবের কথা, তার ব্যক্তিত্ব। আইয়ুব খানের দৃঢ় চেতনা। ইস কি দিন ছিল সে সব। পাকঘর থেকে ভেসে আসছে রান্নার সুগন্ধ।

বিকেল বেলায় দেখতে পেলেন সালাম ছোড়াটা কে । দারোয়ানের ছেলে, ইফতার নিতে আসছে। ছোড়াটা নাকি কোন এক স্কুলেও পড়ে, গরীবের শখ কত। ঐ সালাম এদিকে আয়। সালাম এই লোকটা কে কখনই পছন্দ করেন নাহ, কিন্তু কি করা ডাকছে যেতে হবে।

- ঐ ব্যটা রোযা আছস? - স্লামালাইকুম, জি আছি - তুই কোন ক্লাসে পড়িস - সিক্সে - বল তো আজকে ১৪ আগস্ট কি দিবস - কই আজকে তো কিছু নাহ - কিছুই পড়াই না নাকি তোদের স্কুলে, আজ পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস - তা তো জানি কিন্তু আমরা কি করব পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে - ঐ হারামজাদা পাকিস্তান কি জিনিস বুঝিস? আজ পাকিস্তান না থাকলে তুই হতি মালাউন - আপনি মিথ্যে কথা বলছেন কেন আমাকে? - চুপ এই নে ১০০ টাকা, আর মনে রাখবি আজ পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস এই খুশি তে টাকাটা দিলাম। কিছুক্ষণ চুপ থাকল সালাম, তারপর কাজটা করেই ফেলল। মুখের থুতু ছিটিয়ে দিল আশরাফ সাহেবের গায়ে। দিয়ে উল্টা দিকে দিল দৌড়। এদিকে আশরাফ চিল্লাছে ধর ফকিরনীর বাচ্চাটা কে ধর , ধর কেউ ধর।

সালাম দৌড়চ্ছে, দৌড়চ্ছে তার নিজের বাসার দিকে। সে জানে নাহ কাল থেকে তার বাপের চাকরী থাকবে নাহ, সে বুঝে নাহ এর ফলে কি ঘটবে। সে এইটুকু জানে এই দেশের উপর এক সময় নির্মম অত্যাচার করছে পাকিস্তান নামে দেশটা। যুদ্ধ করে তারা ছিনিয়ে আনছে । তার ছোট্ট মন রাজনীতি বুঝে নাহ, অর্থনীতি বুঝে নাহ।

কিন্তু এইটুকু বুঝে এই দেশের কেউ পাকিস্তান কে ভালবাসলে সে খারাপ, খুব খারাপ। ছুটে চলছে সালাম। স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া এই ছেলেটা ছুটে চলছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.