আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -৫

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -৫ --------------------------------------ডঃ রমিত আজাদ অপার রহস্যে ঘেরা আমাদের এই মহাবিশ্ব। আর তার মধ্যে রহস্যময় একটি সত্তা আমরা - 'মানুষ'। এই দু'য়ের সম্পর্কও কম রহস্যময় নয়। মহাবিশ্বের বিবর্তন বা বিকাশের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফলাফল মানুষ, সেই মানুষই আবার গভীর আগ্রহ নিয়ে অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ করছে তার চারপাশের মহাবিশ্বটিকে। কি এই মহাবিশ্ব? আমরা কারা? কি সম্পর্ক মহাবিশ্বের সাথে আমাদের অথবা আমাদের সাথে মহাবিশ্বের? কোথা থেকে এল এই মহাবিশ্ব? তারপর থেকে ক্রমাগত কি ঘটছে? এর শেষ কোথায়? এই সব প্রশ্ন অবিরাম ঘুরে ফিরে মানুষের মস্তিস্ক থেকে হৃদয় আর হৃদয় থেকে মস্তিস্ক পর্যন্ত।

এইসব চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসার যতটুকু উত্তর এ যাবতকাল আমাদের জানা হয়েছে দর্শন ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে। সেইসব উত্তর ধারাবাহিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করব আমার এই সিরিজে। প্রথম পর্বে বস্তু (matter) সম্পর্কে কিছু আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করা হয়েছে গতি (motion) নিয়ে। তৃতীয় পর্বে আলোচনা করা হয়েছে স্থান ও কাল (space and time) নিয়ে, ইতিহাসের গতিধারায় নিউটন-লেইবনিজ বিতর্ক পর্যন্ত।

চতুর্থ পর্বে আলোচনা করা হয়েছে স্থান ও কাল সংক্রান্ত আলবার্ট আইনস্টাইনের বৈপ্লবিক চিন্তাধারা নিয়ে। এবারের পর্বে আলোচনা করব স্থান-কাল সংক্রান্ত আরো কিছু দর্শন নিয়ে। প্রথম পর্বের আলোচনা নিম্নের লিংকে পাবেন Click This Link দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংক Click This Link তৃতীয় পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংকে Click This Link চতুর্থ পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংকে Click This Link স্থান-কাল সংক্রান্ত আরো কিছু দর্শন দর্শন শাস্ত্র বলে 'স্থান-কাল হলো বস্তুর অস্তিত্বের একটি রূপ' (Space-time is the form of existence of matter )। কিন্তু এর অর্থ কি? এর ব্যখ্যা প্রাথমিকভাবে উপমার দ্বারা করা যেতে পারে। আমরা সবাই ভালোবাসা, ঘৃণা, বন্ধুত্ব এই বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত।

এখন প্রশ্ন হলো একটি কলম বা একটি গোলাপের চারার মত কি ভালোবাসার স্বাধীন সত্তা আছে? অবশ্যই নয়। ভালোবাসা হলো দুই বা ততোধিক মানুষের মধ্যে আবেগগত সম্পর্ক। যেখানে মানুষ নাই বা কোন জীবন্ত সত্তা নাই সেখানে ভালোবাসাও নাই। অনুরূপভাবে সমাজের বাইরে কি অপরাধ সংঘটিত হয়? অবশ্যই নয়। অপরাধ সমাজেরই একটি বৈশিষ্ট্য।

যেখানে সমাজ নাই সেখানে অপরাধ নাই। সুতরাং দুই ধরণের বিশেষ্য আছে, এক ধরনের সুনির্দিষ্ট কিছু অবজেক্টকে বোঝায় যার স্বাধীন সত্তা আছে, আর দ্বিতীয় ধরণটির স্বাধীন সত্তা নাই সে অবজেক্টগুলোর মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক। যেমন, ভালোবাসা, শৃংখলা, শ্রদ্ধা, ইত্যাদি। স্থান ও কালের ধারণা ঐ দ্বিতীয় ধরণের মধ্যে পরে। বস্তুর অনুপস্থিতিতে স্থান ও কাল স্বাধীনভাবে টিকে থাকতে পারেনা।

যেখানে বস্তু নাই সেখানে স্থান ও কাল কোনটাই নাই। স্থান হলো কতগুলো কায়ার মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক। যেমন চার দেয়ালে ঘেরা একটি কক্ষে যদি দশটি চেয়ার থাকে। তবে সেই স্থানটি ঐ অবজেক্টগুলো দ্বারাই গঠিত। দুটি দেয়ালকে যদি পরস্পর থেকে দূরে সরিয়ে নেই, অথবা চেয়ারগুলোর সজ্জাকে যদি পরিবর্তন করি।

তাহলে স্থানও পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আমার স্ত্রী প্রায়ই আমাদের ঘরের আসবাবপত্রের সজ্জ্বা পরিবর্তন করেন। যতবারই তিনি এটা করেন ততবারই আমার মনে হয় জায়গাটি বদলে গিয়েছে। একইভাবে সময় হলো কিছু ঘটনার মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক। যেমন এক মিনিট বলতে আমরা কি বুঝি? যদি ঐ কক্ষটিতে একটি দেয়াল ঘড়ি থাকে তাহলে ঘড়িটির সেকেন্ডের কাটার ১২টার ঘরে থাকার প্রথম ঘটনা ও একবার ঘুরে এসে পুনরায় ১২টার ঘরে আসার দ্বিতীয় ঘটনা, এই দুটি ঘটনার মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্কই এক মিনিট।

উপরন্তু সময় হলো গতির ফলাফল। উপরের ঘটনা দুটি ঘটানোর জন্য সেকেন্ডের কাটাকে গতিশীল হতে হয়েছিল। এখন ঐ কক্ষে যদি ঐ ঘড়িটি ছাড়া আর কোনই ঘড়ি না থাকে আর সেকেন্ডের কাটার বেগ যদি কম হয় (চলতি কথায় স্লো হয়), তাহলে এবার মিনিটগুলোর আকৃতি হবে বড়। উল্টোভাবে বেগ যদি বেশী হয় (চলতি কথায় ফাস্ট হয়), তাহলে মিনিটগুলোর আকৃতি হবে ছোট। পৃথিবী যখন নিজ অক্ষের চতুর্দিকে একবার ঘুরে আসে সেটাকে আমরা বলি একদিন।

আবার সুর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসলে তাকে বলি এক বৎসর। এইসব উদাহরণ থেকে স্পস্ট বোঝা যায় যে ঘটনার উপর ও গতির উপর সময় নির্ভর করে। যেখানে গতি নাই সেখানে সময়ও নাই। স্থান ও কাল হলো গতির সরাসরি ফলাফল। গতি যেমন সময়ের জন্ম দেয় তেমনি স্থান (কতগুলো কায়ার মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক)-কেও অবিরাম পরিবর্তিত করে।

স্থান ও কাল উভয়েরই একটি একক ভিত্তি (Single foundation) রয়েছে। আর তা হলো গতিশীল বস্তু (Moving matter)। তারা হলো একটি Single common basis-এর দুটি ভিন্ন manifestation। এইভাবে কেবল পদার্থবিজ্ঞান নয়, দর্শনশাস্ত্রেও ধরা হয় স্থান ও কালের একটিই মাত্র মৌলিক উৎস রয়েছে, আর সেটি হলো বস্তুর গতি (Movement of matter)। স্থান ও কালের আরো দুটি ধর্ম হলো পরমত্ব (absoluteness ) ও আপেক্ষিকতা ( relativity)।

পরমত্ব বলতে বোঝায় বস্তুর উপর স্থান ও কালের পরম নির্ভরতা, অর্থাৎ বস্তু না থাকলে স্থানও নাই কালও নাই। আর আপেক্ষিকতা বলতে বোঝায় স্থান ও কালের ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে যে বস্তুগুলো স্থান ও কালকে সৃষ্টি করছে তাদের প্রকৃতির উপর। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান তিন ধরনের স্থান ও কালকে অধ্যয়ন করে। ক্ষুদ্র (micro- ), বৃহৎ (macro- ), অতিবৃহৎ (mega-) জগৎ (world)। macro-world যেখানে আমরা বসবাস করছি সেখানে স্থান ত্রিমাত্রিক, micro- world অর্থাৎ ক্ষুদ্র কণিকার জগৎ সেখানে স্থান বহুমাত্রিক (তিন কি চারের অধিক মাত্রা আছে), অতিবৃহৎ (mega-world) জগৎ গ্রহ-নক্ষত্র-ধুমকেতু ইত্যাদির জগতে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী মিথস্ক্রিয়া (interaction) হলো মহাকর্ষ (gravitation), এই মহাকর্ষ স্থানকে বাঁকিয়ে ফেলে, যা পূর্বেই বলা হয়েছে।

আধুনিক দর্শনে আরো কিছু সময়ের ধরণের কথাও বলা হচ্ছে যেমন, Biological time, geological time, historical time, time of chemical changes ইত্যাদি। আবার সময়ের হিসাবেরও নানা উপায় আছে যেমন এই আমরাই একই সাথে সৌর ও চন্দ্র ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকি। আবার স্পেনীয়রা দক্ষিণ আমেরিকা দখলের পর দেখেছিল যে তাদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইতিমধ্যে ৪১ তম শতাব্দী চলছে। তারপর খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল যে তারা শুক্র গ্রহীয় (Venusian) ক্যালেন্ডার ব্যবহার করছে। অপেক্ষার সময় যায় ধীরে আর আনন্দের সময় যায় দ্রুত, এটা Biological time-এর একটা উদাহরণ।

আলো আঁধারীর ধোকা দি্যে মুরগীকে ২৪ ঘন্টায় ২ বার ডিম পারানো যায়। আমাদের কাছে যেটা এক দিন মুরগীর কাছে সেটা দুই দিন। এটাও Biological time-এর একটা উদাহরণ। এমন আরো অনেক কিছু। আরো একটি ইন্টারেস্টিং আলোচনা হলো বিশ্ব জুড়ে নানাবিধ সংস্কৃতি ও শিল্পের ক্যাটাগোরী হিসাবে স্থান ও কাল।

পরবর্তী পর্বে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।