আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্যময় জলদানব

ড. রবার্ট রাইসন রহস্যময় জলদানব নিয়ে তার অভিযান চালিয়ে যেতে থাকলেন। ১৯৭২ সালে তিনি আরও সূক্ষ্ম কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে হ্রদে অভিযান চালালেন। আগস্টের আট তারিখে তার দলের সদস্যরা নৌকায় অপেক্ষা করছিল। রাত একটার দিকে পর্যবেক্ষণে এক বিচিত্র প্রাণীর অস্তিত্ব ধরা পড়ে, যার রয়েছে বিরাট আকারের ডানা। লম্বায় সেই ডানা ছয় ফুটের মতো।

ড. রাইনসের মতে, আজ থেকে সাত কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এরকম প্রাণ ছিল। জাপানের টেলিভিশনের একদল কর্মী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে পানির নিচে অভিযান চালালো। এটি ডুবোজাহাজে করে নেমেছিল। ৯৫০ ফুট নিচে একটি গভীর গুহা আবিষ্কার করলো তারা। তাদের ধারণা, ওই গৃহটি ছিল সেই জলদানবের আশ্রয়স্থল।

এর পরের বছর অভিযানে দলটি একটি প্রামাণ্য ছবি তুলল। তাতে দেখা গেল, বারো ফুট লম্বা লাল-খয়েরি রংয়ের একটি প্রাণী। তার মাথা দেখা যাচ্ছিল না। গলা ছিল ধনুকের মতো বাঁকা, আট ফুট লম্বা। অনেক প্রাণীবিজ্ঞানীর মতে, লকনেসের হ্রদের রহস্যময় প্রাণীটি হলো প্রাগৈতিহাসিক আমলের মৎস্যভোজী সরীসৃপ।

এই জাতীয় প্রাণীর অস্তিত্ব সাত কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল বলে সবার ধারণা ছিল। অনেকের মতে, ১০-১৫ হাজার বছর আগে বরফ যুগ শেষ হওয়ার সময় বরফ গলা পানির স্রোতে এই জাতীয় কিছু প্রাণী অন্য স্থান থেকে এই হ্রদে ভেসে চলে আসে। এ রহস্যময় প্রাণীটি নিয়ে অনেক রকম বর্ণনা করা হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, এটা হাতির মতো মোটা। কেউ বলেছেন, ত্রিশ ফুট লম্বা, পিঠে চারটি কুঁজ।

কেউ বলেছেন, মাথা সাপের মতো। প্রাচীন ইতিহাসে এ ধরনের কিছু জলদানবের বিবরণ পাওয়া যায়। আইসল্যান্ডের বিভিন্ন কাহিনীতে রহস্যময় সামুদ্রিক প্রাণীর কথা আছে। আগোপোগো নামের এক সামুদ্রিক প্রাণীর কথা শোনা যায়। পাথরের গায়ে রেড ইন্ডিয়ানরা এই লম্বা গলার প্রাণীটির ছবি এঁকেছে।

কানাডার ভেনকুভারের সমুদ্রবিজ্ঞানী পল লি ব্লন্ড রহস্যময় বা অজানা প্রাণীদের নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তিনি তথ্য পেয়েছেন, ১৯১২ থেকে ১৯০৩ পর্যন্ত আলাস্কা ও অরিজেনের মাঝখানের এলাকায় তেত্রিশটি অদ্ভুত প্রাণী দেখা গেছে। জলদানবের যেসব বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে তা হলো : লম্বা গলা, অনেক কুঁজ, মাছের মতো ডানা, হলুদ পেট, বাইন বা সাপ জাতীয মাছের মতো, ভোঁদড় জাতীয়, সামুদ্রিক ঘোড়ার মতো, সামুদ্রিক চতুষ্পদ সরীসৃপ যেমন কুমিরের মতো এবং কচ্ছপের পূর্বসূরীয় জাতের। অধ্যাপক পল লি ব্লন্ড আরও কিছু রহস্যময় সামুদ্রিক প্রাণীর বিবরণ সংরক্ষণ করলেন। তার এটি ছিল, একশ' ফুট উচ্চতার ধুসর সবুজ প্রাণী।

তার পিঠে ছিল কড মাছের মতো পাখা, যা এক ফুট মোটা। ওয়াশিংটনের জেনেরোস স্পিটে একটি রহস্যময় প্রাণী দেখা যায়। তার বিবরণে বলা হয়েছে, অদ্ভুত প্রাণীটির দেহে খয়েরি রংয়ে উজ্জ্বল কমলার মিশ্রণ রয়েছে। ছয় ফুট লম্বা গলা, পিঠে তিনটি কুঁজ এবং দীর্ঘ কেশর ছিল তার। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকৌশলী জিন থমসন মাছ ধরতে বেরিয়েছিলেন।

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ মাইল দূরে। হঠাৎ জিন দেখলেন, তার ২০০ ফুট দূরে হঠাৎ একটি প্রাণী ভেসে উঠেছে। জিন সেই প্রাণীটির বর্ণনা দিচ্ছেন, ২০ ফুট লম্বা ও দুই ফুট চওড়া হবে প্রাণীটি। সাদা তামাটে রংয়ের গলা এবং তার লম্বা লম্বা কানগুলো দোল খাচ্ছিল। লাজুক ও কৌতূহলী এই প্রাণীটি আমাকে দেখে অবাক হয়েছে বলে মনে হলো।

তারপর সে চলে যেতে চাইল। কয়েকবার মাথা ঝাঁকিয়ে সাঁতার কেটে চলে গেল ওটা। সাঁতার কাটার সময় তার দেহ মোচড় খাচ্ছিল। প্রত্যেক শতাব্দীতেই এখানে-সেখানে বিভিন্ন জলদানবের খবর পাওয়া গেছে। ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে নরওয়ের এক ধর্মপ্রচারক পালতোলা জাহাজে করে গ্রিনল্যান্ডে যাচ্ছিলেন।

তার নাম হাসন এগেড। তিনি সে সময় সমুদ্রে একটি অদ্ভুত এবং ভয়ানক জীব দেখেছিলেন। পানি থেকে উঠে প্রাণীটির গলা জাহাজে পড়েছিল। তিমি মাছের মতো ফোয়ারা তুলেছিল। দু'পাশে ছিল বড় ডানা।

১৯৩৩ সালে হিউ গ্রে নামক ব্যক্তি রবিবার গির্জা থেকে ফেরার সময় অতিকায় জলদানব নেসির দেখা পান। ছবি তোলের প্রাণীটির লেজের দিকের অংশের। ছবিসহ ঘটনা প্রকাশিত হয় ডেইলি স্কেচ ও ডেইলি রেকর্ড নামক দুটি সংবাদপত্রে। এরপর ১৯৪৭ পর্যন্ত নানা গবেষণা থেকে প্রচার হলো নেসির শরীর বিষয়ে নানা বর্ণনা। যার সারবস্তু হলো সাপের মতো লম্বা গলা, পিঠে বড়সড় কুঁজ এবং থ্যাবড়া মাথা।

তাকে নিয়ে ছবি আঁকা, কার্টুন ছড়া, গল্প, কৌতুক প্রভৃতিও হলো। এমনকি ১৮৪৮ এ নেসিকে নিয়ে পোস্টকার্ডও প্রকাশিত হলো। ১৯৫১ সালে বন বিভাগের কর্মী মি. এল স্টুয়ার্ড নেসিকে পানি ছিটাতে ছিটাতে বহুক্ষণ ভেসে থাকতে দেখেছেন। তার বর্ণনায়, লম্বা গলার উপর মাথাটা অবিকল ভেড়ার মতো। পিঠে কয়েকটি কুঁজ এবং সব মিলিয়ে লম্বা প্রায় ১৫ মিটার।

এরকম করে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য জলদানব দেখার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সময়ে নানান মানুষের দ্বারা। কে জানে হয়তো সত্যি সত্যি কোনো একদিন জলদানবের দেখা মিলবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।