আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড়ই লুলীয় ঘটনা ~ "বউ দখলের লড়াই থামাতে ঢাবিতে ২০০ পুলিশ!"

আমি বিধাতার রঙ্গে আঁকা এক অস্পষ্ট ছবি। গ্রিক মহাকবি হোমার ‘ইলিয়াড’ মহাকাব্যে দেখিয়েছেন হেলেনকে কেন্দ্র করে হয়েছে ট্রয়ের যুদ্ধ। বাস্তবের আরেক হেলেনকে পাওয়া গেলো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এই হেলেনকে ওয়ারীর ফটোমেশিনের দোকানদার টুটুল দাবি করেছেন বউ হিসেবে। আর রাজধানীর তিতুমীর কলেজের ছাত্র রেদোয়ান ওরফে রিফাত দাবি করেছেন প্রেমিকা হিসেবে।

এ নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হলে। সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও কবি জসীমউদদীন হলের ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে ইতিমধ্যে দুই দফা সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে ২ জন হয়েছেন রক্তাক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যুদ্ধাবস্থা।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে দুই শতাধিক পুলিশ। বউ ও প্রেমিকা দখলের লড়াইয়ের যুদ্ধে আহত হয়ে একজন কাতরাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মেডিকেল সেন্টারে। তার নাম ফজলুল করিম রিয়াদ। তিনি জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী। শ্যামল নামের আরেকজন হাত-পা ভেঙে অপারেশন থিয়েটারে আছেন রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে।

তিনি কবি জসীমউদদীন হলের ছাত্র। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা আলিয়া মাদরাসার সাবেক ছাত্র (বর্তমানে তিতুমীর কলেজের অনার্সের ছাত্র) রেদোয়ান ওরফে রিফাত তার সাবেক প্রেমিকা তন্বীকে (ছদ্মনাম) অর্থাৎ ব্যবসায়ী টুটুলের বউকে নিয়ে ডেটিং করছিল। টুটুল বাসায় বউকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখেন তার বউ প্রেমিক রেদোয়ানের সঙ্গে ডেটিং করছে। অবস্থা দেখে তার মাথা গরম।

টুটুলের গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা এবং তন্বীর গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। আর প্রেমিক রেদোয়ানের বাড়ি পটুয়াখালী। টুটুল তার বউকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদদীন হলের তার এলাকার কয়েকজন পরিচিত ছাত্রলীগের নেতাদের ফোনে জানান। তারা গিয়ে রেদেয়ানানকে হাতেনাতে ধরে উত্তম মধ্যম দেন এবং তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও মানিবেগ ছিনিয়ে নেন। এরই মধ্যে বিষয়টি জেনে যায় রেদোয়ানের এলাকার ছাত্রলীগের নেতারা।

ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম একজন নেতা তার আত্মীয়। তার দলবল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে উদ্যানের গেটে (পার্কের গেইটে) সালিশ বসে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মামুনুর রশিদ সালিশে নেতৃত্ব দেন। সালিশে দুই পক্ষের বক্তব্য নেয়া হয়। এতে টুটুলের স্ত্রী তন্বী বলেন, রেদোয়ান তাকে নিয়মিত ডিস্টার্ব করে।

প্রায়ই ফোন দেয়। বারবার না করলেও সে ফোন করে। এ সময় সালিশে সবাই হাসাহাসি শুরু করেন। সালিশে তাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনাকে ডিস্টার্ব করলে আপনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন এলেন? এ সময় তন্বী চুপ থাকেন। এরপর রেদোয়ানের বক্তব্য নেয়া হয়।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তার পড়ালেখাসহ সব খরচ আমি বহন করেছি। সম্প্রতি তার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরিতেও আমি সহযোগিতা করি। কিন্তু কিছু দিনের জন্য আমি বিদেশ গেলে সে আমাকে না জানিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে ফেলে। বিয়ের পরও আমাদের প্রেমের সম্পর্ক অব্যাহত থাকে।

প্রতিদিনই আমাদের মধ্যে ফোনে কথা হয়। গতকাল রাতও দীর্ঘ সময় ফোনে কথা হয়েছে। তাকে ডিস্টার্ব করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ সময় টুটুলের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ছেলে মাঝেমধ্যেই তার বউকে উত্ত্যক্ত করে। আমি বারবার তাকে নিষেধ করলেও সে মানেনি।

রেদোয়ানকে মারধরের অভিযোগে সালিশে টুটুলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তিনি সালিশে রেদোয়ানের কাছে ক্ষমা চান ও তার মোবাইল ও মানিব্যাগ ফিরিয়ে দেন। এ বিষয়ে মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পরে দেখি একটা মেয়েকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল হচ্ছে। আমরা বিষয়টা মিটমাট করে দিই।

কিন্তু সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবি জসীমউদদীন ও জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে উদ্যানেই সামান্য মারামারির ঘটনা ঘটে। বিকালে কবি জসীমউদদীন হলের শ্যামল, সৈকত ও তাজের নেতৃত্বে জহুরুল হক হলের ফজলুল করিম রিয়াদকে ডাকসু ভবনের সামনে হামলা চালিয়ে আহত করে। বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি জহুরুল হক হলের ছাত্ররা।

এই ঘটনার জের ধরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহের হোসেন ভবনের সামনে জহুরুল হক হলের বরিশাল গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মীরা জসীমউদদীন হলের শ্যামলের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। হামলায় শ্যামলের হাতের আঙুল ও হাঁটুর হাড়ে আঘাত লাগে। গুরুতর আহত শ্যামলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়। শ্যামলের অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে ঢাকা মেডিকলে কলেজে থেকে পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। তিনি পঙ্গু হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি আছেন।

শ্যামল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অপর দিকে ফজলুল করিম রিয়াদ ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, জহুরুল হক হল, জসীমউদদীন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জগন্নাথ হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সংঘর্ষ।

বহিষ্কার করা হয়েছে ৭ জনকে। এরা হলেন- জসীমউদদীন হলের সৈকত, তাজ, জহুরুল হক হলের ছোট শরীফ ও জয়, জগন্নাথ হলের সঞ্জয়, মুহসীন হান্নান ও বঙ্গবন্ধু হলের মেহেদী। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আমজাদ আলী বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের একাডেমিক শাস্তি প্রদান করা হবে। আর ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে কি করবে তা তারাই জানে। তিনি বলেন, বাইরের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতি হবে তা কল্পনাও করা যায় না।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সূত্রঃ বিডি নিউজ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।