তোমাদের পাগল বন্ধু নক্ষত্রের নগরী "ক"
কাছের মুদির দোকানটা বন্ধ হয়ে গেছে। । রিক্সা নিয়ে আরো আধ কিলোমিটার দূরের একটা বাজারে গিয়ে সুজি আর চিনি কিনে আনতে হল হামিদকে। পকেটে টাকা বেশি নেই। বাকি মাস কেমন করে চলবে কে জানে।
বেণুর ডানো দুধের টিন খালি হয়ে এসেছে প্রায়। আগে ত্রিশ টাকা ছিল পাউন্ড। এখন চল্লিশ হয়ে গেছে। হাত খালি। মিনুর কাছে জমানো কিছু টাকা থাকে সব সময়।
ওর কাছে হাত পাততে হবে মনে হচ্ছে। বেণু হওয়ার আগে দু চারটা টিউশনি ছিল মিনুর। দুজনের টাকাতে চলে যেত মাস। এখন মাসের অর্ধেক যেতে না যেতেই হাতে টান পড়ে।
রিক্সায় ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা বেজে গেল।
বাসায় এসে ঢোকার সময় হামিদের মনে হল গোসল খানার দিকে কেউ বমি করছে। শব্দ হচ্ছে। টিউবওয়েল টিপছে সাথে সাথে। মেয়েরাই কেবল বমি করতে করতে টিউবওয়েল টেপে। ছেলেরা না।
কে বমি করে এত রাতে? একবার ইচ্ছে হল গিয়ে দেখে কে ওখানে। পরে আবার চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিল। কে না কে গেছে ওখানে। ত্রিশ ফ্যামেলির ঘিঞ্জি ভাড়া বাড়ী এটা। যে কেউ যেতে পারে।
কৌতুহলটাকে প্রশ্রয় না দিয়ে নিজের বাসার দিকে গেল। কিন্তু দরজাটা হাট করে খোলা। মিনুটা দরজা খোলা রেখেছে কেন? বিরক্ত হল স্ত্রীর ওপর। কিন্তু ভেতরে ঢুকে কেবল বেণুকে বিছানায় দেখে ধাক্কার মত খেলো হামিদ। হাতের জিনিসগুলো স্টোভের পাশে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো ধীরে ধীরে।
তার মানে কি গোসল খানায় বমি করছে মিনু?
সাথে সাথে হাজারটা চিন্তা এসে ভর করলো হামিদের মাথায়। ঝট্ করে ঘুরে গোসল খানার দিকে দৌড়ে গেল। বাহিরে মিটমিটে একটা চেরাগ জ্বালিয়ে ভেতরে ঢুকেছে মিনু। দরজা খোলা। টিউবওয়েলটা ধরে বসে আছে মুখ নিচু করে।
থেকে থেকে বমি করছে, পেটে কিছু নেই। কেবল পানি বেরুচ্ছে।
হামিদ দরজায় এসে দাঁড়ানো মাত্র ফিরে তাকাল মিনু, ঘেমে গেছে সারা মুখ। চুল ভেজা। বমি ঠেকাতে মাথায় পানি দিচ্ছিল।
হামিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছলো, “কখন এলে?” গলা কাঁপছে মিনুর। দূর্বল হয়ে গেছে।
হামিদ এগিয়ে এসে ওর পাশে ঝুঁকে বসল, “বমি করছো কেন? শরীর খারাপ নাকি?”
“মাথা ঘোরাচ্ছে সকাল থেকে। বুঝতে পারছি না কিছু। ” ক্লান্ত গলায় বলল মিনু।
হামিদ ওর দু হাত ধরে রাখল শক্ত করে। কিছু বলল না। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত নীরবতা।
“হামিদ?”
“হুঁ?”
“বেণুর কি ভাই বোন আসছে?”
“হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার তোমাকে। ” শান্ত মুখে বলল হামিদ।
“আমি ঠিক আছি। ” উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে গেল মিনু। হামিদ ধরে ফেলল ঠিক সময়ে। না হলে মাথা ফাটাতো।
“তুমি হাটতে পারবে না।
” গম্ভীর কণ্ঠে বলল হামিদ।
“আমি ঠিক আছি। ” আবার বলল, “একটু বসে থাকি। ঠিক হয়ে যাবো। ”
হামিদ জবাব না দিয়ে মিনুকে পাঁজকালো করে তুলে নিলো।
মিনু লাল হয়ে গেল সাথে সাথে। বেণু হওয়ার আগে এ রকম হুট হাট করে যখন মাথা ঘুরে পড়ে যেত, হামিদ কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিত। একটু আগেও পাতিলে লাথি মেরে বেরিয়ে যাওয়া মানুষটা এখন শক্ত হাতে মিনুকে বুকের সাথে ধরে রেখে ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেখে মিনুর চোখ ভিজে এলো। কাঁঠাল গাছটায় এত মমতা কেন?
ফাহিমা পারভিন চিঠি পাঠিয়েছেন আজ সকালে। মিনুর আবার বাচ্চা হবে এ কথা জানিয়ে হামিদ চিঠি দিয়েছিল বাড়ীতে।
জবাব আসতে তিন দিন দেরী হয়েছে। নাতিদীর্ঘ একটা চিঠি দিয়েছেন ফাহিমা পারভিন।
“স্নেহের হামিদ ও বউমা,
তোমাদের পত্র পাইয়াছি আমি। দেশের অবস্থা ভাল না। তার উপর মিনু সন্তান সম্ভবা।
পত্রে লিখিয়াছো তার নাকি মাঝে মাঝেই বমি হয়, সাথে জ্বর। আমার বিশেষ ভাল লাগে নাই ব্যাপারটা।
তোমার আব্বার কাছে শুনিলাম পত্রিকায় লিখিয়াছে প্রতিদিন নাকি পাঁচ ছয় ঘন্টা করিয়া কারফিউ জারী হয় ঢাকা শহরে। প্রয়োজন মত হাসপাতালে যাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় ওইখানে তোমাদের থাকা ঠিক হবে না।
তোমাদের আব্বাকে আমি বুঝায়ে বলেছি। তিনি বউমাকে নিয়া বাড়ীতে চলে আসতে বলেছেন। পত্র পাওয়া মাত্রই তোমরা বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হইবে। ছোট বেণুকে আমার আদর ও দোয়া দিও। ভাল থাকিও এবং সাবধানে আসিবে।
তোমাদের আম্মা
ফাহিমা পারভিন। ”
চিঠিটা অফিসের ঠিকানায় এসেছে হামিদের কাছে। সকালে অফিসে গিয়েই পিয়নের কাছে পেয়েছে। রাজনৈতিক অবস্থা ভাল না। অফিস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
অনেক স্টাফই দেশের বাড়ীতে চলে গেছে। পরিস্থিতি দিন দিন ঘোলাটে হয়ে আসছে। এরশাদ সাহেব আর বেশিদিন গদি ধরে রাখতে পারবে না। সব দলগুলো জোট হয়ে চাপ দিচ্ছে। খুব শীঘ্রই সংসদীয় গণতন্ত্র আসতে পারে আবার দেশে।
দফায় দফায় আন্দোলন কর্মসূচি চলছে। রাস্তায় আর্মি আর পুলিস নামানো হয়েছে আবার। যেখানে যাকে পাচ্ছে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাসা থেকে বেরুনোই বিপদ। হামিদের পকেট প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে।
বাস ভাড়া দিয়ে যে বাড়ী যাবে সে উপায়ও নেই। ঘরে অবশ্য বাড়তি রেশন কেনা ছিল। বাড়ী যদি চলেই যায় তাহলে ওগুলো নষ্ট হবে। বেঁচে দিলে বাস ভাড়া উঠে যাওয়ার কথা। কয়দিন ধরে চাল-আটার দাম বেড়ে গেছে।
তাছাড়া তিন বছরের সংসারে মিনুকে গহনা গাটি কিছুই কিনে দিতে পারেনি হামিদ। বহু কষ্টে অল্প কিছু টাকা জমিয়ে রেখেছিল অফিসের ক্যাসিয়ারের কাছে। ওভার টাইমের। সেখান থেকে দুটো সোনার বালা বানাতে দিয়েছে হামিদ। আজকে বাসায় ফেরার পথে নিয়ে যাবে।
আম্মার চিঠি পেয়ে এখন কাজের ফর্দ লম্বা হল আরো। বাসায় ফিরে গিয়ে রেশন বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে আগে। টিকিট কিনে ফেরার পথে বালা গুলো নিয়ে আসা যাবে। অযথা অযথা পকেটে দামী জিনিস নিয়ে ঘোরার মানে হয় না।
সারাদিন হামিদের সময় কাটল ছটফট করতে করতে।
বিকেল হবার আগেই ক্যাসিয়ার মতিন সাহেবের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাসায় ছুটলো। অফিস কামাই নিয়ে ভাবনা নেই, বড় সাহেব নিজেই অফিসে আসেন না। কর্মচারী বলতে চার পাঁচজন রয়েছে কেবল। বাকিরা গায়েব। সময় হলেই উদয় হবে।
ফিরতে ফিরতে বার বার ঘড়ি দেখছে হামিদ। রেশন বেঁচে বাসের টিকেট কেটে ফেলতে হবে। রাতের বাসে উঠলে নিশ্চিন্তে বাড়ী চলে যাওয়া যাবে।
হামিদকে এত সকাল সকাল বাড়ীতে ফিরতে দেখে অবাক হল মিনু, “কি ব্যাপার? আজ এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে?” চোখ মুখ ঢুকে গেছে মিনুর। শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে অল্প কদিনেই।
“আম্মা চিঠি পাঠিয়েছে। বাড়ী যেতে বলেছে তোমাকে আর বেণুকে নিয়ে। দেশের অবস্থা ভাল না। আব্বাই নাকি বলেছে। ”
“সত্যি?” উজ্জ্বল মুখে তাকালো মিনু।
“হ্যাঁ। বাস ভাড়া নেই। বাড়ী যেহেতু চলেই যাবো রেশনগুলো বেঁচে দিয়ে যাই। তাহলে বাস ভাড়াটা উঠে যাবে। তাছাড়া পড়ে থাকলে নষ্ট হবে- কবে ফিরি না ফিরি।
এজন্যই আগে ভাগে এলাম। তুমি ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে ফেলো। আমি ভ্যান নিয়ে এসেছি। চাল, আটাগুলো বেঁচে আসি। ”
মিনু মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে পড়ল।
বেণুকে তাড়াতাড়ি গোসল করিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। ঘরের জিনিস পত্রও গুছিয়ে ফেলা দরকার। এলোমেলো ফেলে রেখে যাওয়া পছন্দ না মিনুর। দূর্বল শরীর নিয়ে কাজে লেগে গেল।
হামিদ ভ্যানের ড্রাইভারকে এনে চাল আর আটার বস্তা নিয়ে চলে গেল বেচার জন্য।
মিনু বড় একটা লাল প্লাস্টিকের গামলায় বেণুকে গোসল করাতে করাতে আদর করে বলতে লাগল, “বেণু বুড়ি জানিস কোথায় যাবো আজকে?”
বেণু মাড়ি বের করে মার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়।
“দাদু বাড়ী যাবো!” মেয়ের ফোলা ফোলা গাল গুলোতে সাবানের ফ্যানা মাখিয়ে দেয় মিনু।
১৯৯০ সালে হোসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সেই সময়ের কাহিনী নিয়ে আমাদের এই গল্প। যদিও গল্পের বাকি অংশটুকু খুব সংক্ষিপ্ত। এরশাদের ছয় ডিসেম্বর পতনের পূর্ব মুহূর্তে ঢাকা সহ দেশের নানা জায়গায় কারফিউ জারী করা হয়েছিল।
মিলিটারি ছাড়াও এখানে পুলিশদের একটা বড় ভূমিকা ছিল। ঢাকা থেকে অন্যান্য শহরের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল দীর্ঘ সময়ের জন্য। রাজনৈতিক আলোচনা যদিও এ গল্পের মুখ্য বিষয় না, তবে গল্পের প্রেক্ষাপটে দু এক লাইন লেখা হয়েছে কেবল। আমরা বরং আমাদের মূল কাহিনীর বাকি অংশে ফিরে যাই।
আমাদের গল্পের নায়ক হামিদ সেদিন রেশনের চাল, আটা বিক্রি করার পর কাওরান বাজারের এক জুয়েলারী দোকান থেকে দুটো সোনার বালা কিনে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরেছিল।
ততক্ষণে পুরো নগরী জুড়ে অনির্দিষ্ট কালীন কারফিউ জারী করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন সহ বেতার কেন্দ্র থেকে বার বার নিউজ বুলেটিনে এই কারফিউ জারী করার ঘোষণা শোনানো হচ্ছিল।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় হামিদ বাসের টিকেট নিয়ে যখন ফিরেছে- ঢাকা নগরী নিরেট নিস্তব্ধতায় ডুবে গেছে। সন্ধ্যার আগেও রিক্সায় করে কারফিউ জারী করার কথা মাইকিং করা হয়েছে। হামিদ আসার সময় শুনেছে সব।
পকেটে এখন বালা দুটো ছাড়া মাত্র নব্বই টাকা আছে। আর বাসের টিকেট। টিকেটগুলো আর কাজে আসবে না এখন। বাসই চলবে না। ফেরত দিয়ে যে টাকা তুলে আনবে সে উপায়ও নেই।
সব দোকান পাট বন্ধ। ঘরে চাল আটা কিছুই নেই। হামিদের সব কিছু কেমন যেন দুঃস্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।
গেট দিয়ে ঢোকার সময় আজও বমির শব্দ শুনতে পেল হামিদ। মিনু বমি করছে।
কিন্তু এত ঘন ঘন বমি করবে কেন মেয়েটা? বেণু হওয়ার সময় তো এত করেনি। ঘরের দিকে না গিয়ে গোসল খানার দিকে এলো হামিদ। আজ কারেন্ট আছে। বাথরুমের দরজার সামান্য ওপরে চল্লিশ ওয়াটের বাল্ভ জ্বলছে।
দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই হাত পা জমে গেল হামিদের।
টিউবওয়েলটা ধরে আজও বসে আছে মিনু। কিন্তু সামনের পুরো ফ্লোর জুড়ে রক্ত! মুখেও লেগে আছে। থেকে থেকে বমি করছে মেয়েটা, দলা দলা রক্ত বেরিয়ে আসছে.....
হামিদ ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠল, “মিনু! কি হয়েছে তোমার? ব্লিডিং হচ্ছে কেন!” ছুটে গিয়ে মিনুকে জড়িয়ে ধরল। থর থর করে কাঁপছে পালকের মত হালকা মেয়েটা। হামিদের হাতেও রক্ত লেগে যাচ্ছে ওর মুখ থেকে গড়িয়ে।
“জানি না। বিকেলে তুমি যাওয়ার পর থেকেই হঠাৎ বমি শুরু হয়েছে। গায়ে জ্বর ছিল আগে থেকেই। কিন্তু বমি যে কেন শুরু হল......” নিস্তেজ হয়ে এসেছে গলাটা মিনুর।
হামিদ কোনো কথা না বলে মিনুকে কোলে তুলে নিলো।
“কোথায় নেবে? ঘরে?”
“হাসপাতালে। ” গলার স্বর শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে হামিদ। কিন্তু উদ্বেগটা ঢাকতে পারছে না।
“বাহিরে তো রিক্সাও নেই মনে হয়। ” একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল মিনু।
“লাগবে না। ” হঠাৎ অদ্ভুত দৃঢ় গলায় বলে উঠল হামিদ। মিনুকে নিয়ে বেরিয়ে এলো তারা জ্বলা আকাশের নিচে। চাঁদ নেই, মিট মিট করে অসংখ্য তারা জ্বলছে।
“বেণু তো একা থাকবে!” মিনু প্রায় কান্না আটকে বলল কথাটা।
থমকে গেল হামিদ, “ওকে বেল্ট দিয়ে বেঁধে রেখে এসেছো না?” ঘরের দরজার দিকে তাকালো একবার হামিদ। অনিশ্চিত একটা দৃষ্টি।
“না। পাশের বাসার সুফিয়া ভাবীর কাছে রেখে এসেছি। সন্ধ্যা থেকেই তো এখানে আছি।
” ক্লান্ত, অবসন্ন গলায় বলল মিনু।
“তাহলে ভাবতে হবে না। তাড়াতাড়িই ফিরবো। ” মিনুকে কোলে নিয়ে হাটতে লাগল হামিদ।
নিস্তব্ধ নগরীর রাস্তায় লাইট পোস্টের আলোয় দু একটা ছন্ন ছাড়া কুকুরের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে হামিদ।
মিনু এখনো বমি করছে। আশে পাশে কোথাও কোনো রিক্সা কিম্বা বেবি টেক্সি নেই। হামিদের হাত ব্যথা করছে খুব। কাছা কাছি হাসপাতালটা পাঁচ মাইলের মত দূরে। যেতে পারবে তো?
পকেটের বালা দুটোর কথা মনে আসছে না হামিদের।
তার মনে পড়ছে কপালে সূর্যের মত বিশাল একটা লাল টিপ দেয়া ছিপছিপে এক তরুণী আইসক্রিম হাতে ভর দুপুরে রোদের মাঝে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুই চোখে তীব্র মমতা তার জন্য।
মিনু শক্ত করে হামিদের বুকের কাছটায় শার্ট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে। টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে চোখ থেকে। সে জানে এই মানুষটা তাকে কিছুতেই মরতে দেবে না।
পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের ছোঁয়া মাত্র মনে হয় এরা বাঁচিয়ে রাখার অলৌকিক শক্তি নিয়ে জন্মেছে। হামিদ তাদেরই একজন।
নিঃশব্দের কোলাহলে ছাওয়া শহরটার রাস্তায় কালো তারা জ্বলা আকাশটা কাঁচের আয়নার মত ফুটে রয়েছে। তারা গুলোতে পা রেখে ছুটে চলেছে হামিদ মিনুকে নিয়ে। পকেটের বালা দুটো মৃদু স্বরে কথা বলছে।
হামিদ কিম্বা মিনু কেউ শুনতে পাচ্ছে না সেটা।
হামিদের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানির ফোঁটা মিনুর কপালে পড়তেই মিনু চোখ মেলে তাকালো। অবাক হয়ে দেখলো তাকে নিয়ে ছুটতে থাকা মানুষটা কাঁদছে ছোট একটা বাচ্চার মত। শত চেষ্টা করেও মুখ শক্ত করে রাখতে পারছে না।
মিনুর কপালে সূর্যের মত বড় টিপ চক চক করছে হামিদের চোখের পানিতে।
মিনু আরো শক্ত করে হামিদের শার্ট খামচে ধরল।
এত মমতা একটা মানুষ বুকে ধরে কেমন করে?
(সমাপ্ত)
উৎসর্গঃ
ইয়াসিন খান সিয়াম ও মেঘলা তাসনিম।
দুই কাকাতুয়া ও শালিক পাখির সংসারে সমস্ত পৃথিবীর নিষ্পাপ ভালোবাসা জোছনা হয়ে নেমে আসুক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।