আমি একজন অতি সাধারন মানুষ। সুন্দরের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই জলে স্থলে অন্তরীক্ষে। এই ব্লগে প্রচারিত ধারাবাহিক উপন্যাস এবং কবিতা আমার নিজ ব্লগ নীল নক্ষত্রে প্রচার করছি।
কখন যে এই সব টাকা আর জিনিষ পত্রের সম্পর্কটা টিকে গেল আর রক্তের সম্পর্কটা ম্লান হতে হতে এক সময় মুছে গেছে তা হঠাত করেই একদিন লক্ষ্য করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কিন্তু তরী তখন কুল ছেড়ে উত্তাল বাতাস আর স্রোতের টানে মাঝ গাঙ্গে চলে গেছে, আর সে তরী পাড়ে ফিরিয়ে আনার কোন উপায় নেই।
থাক তবুও আমার মা, আমার বাবা, আমারই ভাই বোন ওদের জন্যইতো সব ছেড়েছি, ওরা সুখী হলেই যথেষ্ট। সময়ের স্রোত আমাকে দূরে টেনে নিয়ে গেছে, যাক, আমিতো দূরে যেতে পারি না। আমার হৃদয়ের গভীর কুঠরীতো ওদের জন্যই পূর্ণ হয়ে আছে ওরা আমাকে আর কতদূরে ঠেলে দিবে?আবার ভাবে না তা কি করে হয়, আমি এ বাড়ির বড় ছেলে, আমার ইচ্ছা অনিচ্ছা, সিদ্ধান্ত, মতামত অনেক মূল্যবান। আবার ভাবে কিন্তু বাস্তব যে এর বিপরীত! তাহলে? নিজেকেই প্রশ্ন করে মনে মনে আহত হলেও মন কিছুতেই তা মেনে নিতে পারে না। ভাবে যাক ওরা যা খুশি করুক আমি আমার কাজ করে যাব তাতে যা হয় হবে।
মনিরাও এই মুছে যাওয়া সম্পর্কের জের টের পেয়েছে কিন্তু স্বামির কাছে প্রকাশ করার ভাষা খুজে পায়নি। এমনিই দুজনে দুজনের মত ভিন্ন ভাবে লক্ষ করে কিন্তু কেও কারো কাছে প্রকাশ করতে পারে না। মনিরা নিজেও বিশাল একান্নবর্তি পরিবার থেকে স্কুল শেষ না হতেই বালিকা বধু সেজে এ বাড়ির বড় বৌ হয়ে এসেছে। দৈনন্দিন কাজে যখন রাশেদ সাহেব বাড়িতে থাকে না তখন বাড়ির এক রূপ আবার যখন সে বাড়িতে থাকে তখন আর এক রূপ। এই দুই রূপের তারতম্য মনিরার বালিকা মাথায় কিছুতেই ঢুকতে চায় না, কোন অবস্থাতেই সে মেলাতে পারে না।
ছোট বেলা থেকে দেখে আসছে সবাইকে কিন্তু সেই আগের দেখা আর বিয়ের পর এই দেখার মধ্যে এই তফাত কেন সে কথা মনিরা তার স্বামীকে জিজ্ঞ্যেস করতে পারে না, মেনে নিতে পারেনা, সহ্য করতেও পারে না।
বিয়ের পর প্রথম দিকে মনিরার বাবা একবার মনিকে নিতে এলে শাশুরি তাকে আড়ালে ডেকে বললো তোমার বাবা যখন আমাকে তোমাকে নিয়ে যাবার কথা বলবে তখন আমি বলবো নিয়ে যান, কিন্তু তুমি বলবে না বাবা আমি আর ক’দিন পরে যাই। এই কথার কোন মানে খুজে পায় না, কেন এমন কথার কি এমন প্রয়োজন?সেইতো সরা সরি নিষেধ করে দিতে পারে। এই লুকোচুরি কেন? তার স্বামীর প্রতি উদাসীনতা, অবহেলা, অবজ্ঞ্যা, অমর্য্যাদা কেন?তার ইচ্ছার কোন মূল্যায়ন নেই, তার মতামতের কোন গুরুত্ব নেই। যে সন্তান নিজের ভবিষ্যত বিষর্যন দিয়ে সংসারের হাল ধরতে সাতার না জেনে সাগর পাড়ি দিয়েছে তার প্রতি এই মনোভাব কেন?
এই এত গুলি চেপে রাখা কেন তার বুকের ভিতর বাসা বাধতে থাকে, ক্ষত বিক্ষত হয়ে অসহ্য যন্ত্রনার কামড়ে সে দগ্ধ হতে থাকে।
কেমন যেন একটা শুন্যতা, একটা বিষাদ, একটা হাহাকার, কিছু অব্যক্ত বেদনায় দগ্ধ মনিরা নিজেকে স্বামীর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। কি জানি আবার কখনো যদি ভুল করে এর কিছু স্বামীর কাছে বলে ফেলে তা হলে যে সে মনে ব্যাথা পাবে, আঘাত পাবে এই মনে করে, এ কি মনি! আমার মা, বাবা, ভাই বোনদের সম্পর্কে এই ধারনা পোষন কর?তখন সে কি জবাব দিবে, সে নিজেইত এর কোন ব্যাক্ষা খূজে পায় না।
কাছের রাশেদ আর দূরের রাশেদের মদ্ধ্যে এই পার্থক্যের বোঝা সব গিয়ে পরে মনিরার মাথায়। যে স্বামীর জন্য জীবনের সঞ্চিত সমস্ত শ্রদ্ধা, ভালবাসা, সমস্ত মমতা উজার করে দিয়েছে তার প্রতি এই আচড়ন কি করে মেনে নিতে পারে, কিছু না বুঝে ক্রমান্বয়ে তার বুকে চাপা পাথর জমে জমে এখন শ্বাস নিতেও কষ্ট বোধ করে। তবুও তার প্রিয় স্বামীকে কিছু বুঝতে দিতে চায় না।
সমস্ত যন্ত্রনা তার একার উপর দিয়েই যাক। যে তার সংসারের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা নিয়ে বিভোর রয়েছে সে থাকুক তার আপন মনে, যা হবার আমারই হোক। আভাসে ইঙ্গিতেও যাকে বোঝানো যায় না, বুঝতে চায়না সে তার ধারনা নিয়ে সুখে থাক।
একদিন যেদিন প্রথম মনিরার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তখন স্বামীকে বলল আমার এমন লাগছে কেন?
কি হয়েছে মনি?
আমি যে শ্বাস নিতে পারছিনা।
বল কি?
রাশেদ সাহেব তারাতারি মাকে ডেকে এনে দেখাল,
আম্মা দেখেন মনি এমন করছে কেন?
কি হয়েছে?
ইশারায় দেখাল শ্বাস নিতে পারছি না।
আম্মা ডাক্তার ডাকবো?
না থাক এমনিই শুয়ে থাক ঠিক হয়ে যাবে।
থাকবে কেন?তুমি থাক, আমি আসছি।
বলেই শার্টটা কোন মতে গায়ে দিয়ে বের হয়ে গেল ডাক্তারের সন্ধানে। বাড়ির কাছে তাদের চেনা ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে ডাক্তারকে পেয়ে সাথে সাথে ধরে নিয়ে আসার মত করে নিয়ে এলো।
ডাক্তার রুগী দেখে জানালো অনেক দিন থেকেই এমন চলছে মনে হচ্ছে, প্রচন্ড মানসিক চাপ থেকে এমন হয়।
রাশেদ সাহেব মেনে নিতে চাইলেন না।
না, ওর কেন মানসিক চাপ থাকবে?
তুমি পুরুষ মানুষ তুমি কি বুঝবে, মেয়েদের অনেক কারনে মানসিক চাপ হতে পারে।
প্রেসক্রিপশন লিখে দিল আর বলে দিল মানসিক চাপ কমাতে হবে, না হলে এ রোগ কিন্তু জটিল আকার ধারন করতে পারে। শোন তোমার স্ত্রির এই অবস্থা তুমি কিছু জান না এটা কিন্তু মেনে নেয়া যায় না বাবা। ওষুধ গুলি এনে সময় মত খাওয়াবে আর কোন মানসিক চাপের কারন হয় এমন কিছু করবে না।
এ কথা শুনে রাশেদ কিছু বলতে পারলোনা মাথা নিচু করে ভাবতে লাগলেন কি হলো?
ডাক্তারের সাথে রাশেদ সাহেব বের হলেন ওষুধ আনার জন্য। ওষুধ এনে মনিকে খাইয়ে দিয়ে জিজ্ঞ্যেস করলেন
মনি বলতো তোমার কি এমন চাপ, প্রায়ই লক্ষ করি তুমি যেন কোথায় হারিয়ে যাও। আমার পাশে শুয়ে থাক তবুও মনে হয় তুমি আমার নাগালের বাইরে। কি এমন ব্যাপার বলতো মনি।
মনি নিরুত্তর।
কি হলো কথা বলছ না যে!
না কিছু না।
কিছু না আবার কি?তাহলে এমন হয় কেন?বল আজ তোমাকে বলতেই হবে, ডাক্তার কি এমনি এমনিই বলেছে?কি হয়েছে তোমার বল।
মনি নিরুত্তর।
কথা বলছ না কেন?
কি বলবো, বললাম না কিছু না।
তাহলে আমার এমন মনে হয় কেন?
কিছু হয়েছে তা বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই, আর তুমি তা চেষ্টাও করনি কখনো।
হ্যা তোমার একথা আমি মেনে নিচ্ছি, আমিতো তোমাকেই সব ভার দিয়ে দিয়েছি কাজেই আমাকে আলাদা করে কিছু ভাবতে হবে তা কি আমাকে বলেছ কখনো? না কি আমি সে ভাবে ভেবেছি?আমি জানি আমার মনি আছে, ব্যাস আর কি?(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।