আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নক্ষত্রের গোধূলি-১৩-১৪-১৫

আমি একজন অতি সাধারন মানুষ। সুন্দরের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই জলে স্থলে অন্তরীক্ষে। এই ব্লগে প্রচারিত ধারাবাহিক উপন্যাস এবং কবিতা আমার নিজ ব্লগ নীল নক্ষত্রে প্রচার করছি।

নক্ষত্রের গোধূলি-১৩ রাশেদ সাহেব রাতের ভাবনা গুলি আবার বুঝিয়ে খুলে বললো। আরও বললো যে নয়া মামার তো অনেকের সাথে জানা শোনা আছে তাদের কারো ট্রাভেল এজেন্সি আছে, তাকে বলে দেখি যদি বাকিতে বা অন্য কোন ভাবে দুইটা টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারে।

শুনে মনিরা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল টিকেট দুইটা কেন? বারে, রাতে কি বললাম আর এতক্ষণে বা কি বললাম? না, না, তা হবার নয়। তুমি এভাবে ভেবো না, এসব এই মুহুর্ত সম্ভব নয়, সবাই বলবে কি? সবার কথা বাদ দাও, আমি তো তোমাক নিয়ে হানিমুন করতে বা রং ঢং করতে যাচ্ছি না, শুধু তোমার ভিসার একটা ব্যবস্থা হয় এই জন্য। তুমি যেয়ে অন্তত এক সপ্তাহ থেকে এলেও হবে। এবার আমার সাথে গেলে যত সহজে ভিসা হবে পরে এমন সহজে আর হবে না। দেখ এক নাগার এতো দিন আমি আমার মনিকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবো না।

থাকতে কি আমিও পারবো? তাহলে আর এমন করে বলছ কেন? মনিরা অনেক বোঝাবার চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হোল না। দেখ মনি, আমি যদি এতো দিন তোমাকে ছাড়াথাকি তাহলে আর আমাকে সুস্থ ফেরত পাবে না, নিশ্চয়ই আমি পাগল হয়ে যাব। তুমি কি বাকী জীবন এক জন পাগলকে নিয়ে চলতে পারবে? শেষ পর্যন্ত মনিরাকে হার মানতেই হোল। নাশতা খেয়ে রাশেদ সাহেব বের হয়ে সোজা মামার অফিসে গিয়ে সব খুলে বললেন। শুনে মামা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন ঠিক বুদ্ধি করেছিস।

তুই তোদের ভিসার জন্য প্রসেস কর আমি টিকেটের ব্যবস্থা করে দিব, আজ রাতেই তোকে ফোনে জানাব, টিকেট নিয়ে তুই ভাবিস না। এখনই বাসায় গিয়ে ওয়েব সাইট থেকে ভিসা ফর্ম নিয়ে ফিল আপ করে কালই দিয়ে আসবি। এপ্লাই করার টাকা আছে? না। তাহলে সে কথা বলছিস না কেন?একটু অপেক্ষা কর, টাকা নিয়ে যা। একমাত্র মামাই তার যন্ত্রণা বুঝতে পারলেন।

মামা হলেও প্রায় সম বয়সি, এক সাথে বিড়ি সিগারেট খায়। মামাই পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে দেয়, নে। এ জন্যেই মামা বুঝতে পেরেছেন। মামার অফিস থেকেই ফোন করে মনিকে জানালেন। মামার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে গেল।

সবাই যখন তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখন একমাত্র এই মামাই তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিছু খাবি? না, এইতো নাশতা করে এসেছি। তা হলে একটু চা খা এই ফাকে আমি কবিরকে ব্যাংকে পাঠাই? তা করা যায়। কলিং বেল টিপে কবিরকে চা দিতে বলে ব্রিফ কেস থেকে চেক বই বের করে লিখে রাখলেন। কবির চা নিয়ে এলে তার হাতে চেকটা দিয়ে দিলেন।

চা খেতে খেতেই কবির টাকা নিয়ে এলো। টাকা নিয়ে খুশি মনে মামার অফিস থেকে বের হয়ে সোজা বাড়িতে এসে ছোট ভাইয়ের কম্পিউটার অন করে বৃটিশ হাই কমিশনের ওয়েব সাইটে খুঁজে খুঁজে ভিসার ফর্ম বের করে প্রিন্ট করে তা পুরন করে মনিরাকে ডেকে সই স্বাক্ষর দিতে বললো। মনি ইতস্তত করছে দেখে রাশেদ সাহেব বললো নাও সই কর, ভয় কিসের তোমার সতীন আনতে যাচ্ছি না তোমাকে নিয়েই রংগ লীলা করতে যাচ্ছি ভয় পেয়ো না। আমি সে ভয় পাচ্ছি না। আমি জানি আমাকে আল্লাহর রহমতে সতীনের মুখ দেখতে হবে না, সে ব্যপারে আমার কোন ভয় নেই।

আমি ভয় পাচ্ছি অন্য কারনে। আহা সই করতো, ভয়ের কোন কারন নেই, যা হবার হোক। কাল সকালে চল এগুলি জমা দিয়ে আসি। না কাল না। তাহলে? বুধবারে চল।

মানে আজ সম বার, তুমি পরশুর কথা বলছ? হ্যা, তোমার সব শুভ কাজ বুধ বারেই হয়, এ যাবত তাই দেখে আসছি। আচ্ছা বুঝেছি, তাহলে তাই হবে পরশুই চল। রাতে মামা ফোন করে রাশেদকে চাইলেন, রাশেদ ফোন ধরতেই ও পাশ থেকে মামা বললেন হাইকমিশনে গিয়েছিলি? না। কেন? মনি রেডি ছিলনা তাই কাল যাব। আচ্ছা ঠিক আছে।

টিকেটের ব্যাপারে কথা বলেছি। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে পাওয়া যাবে কিন্তু শর্ত হচ্ছে এক মাসের মধ্যেই টাকা দিতে হবে। কি করবি, পারবি? হ্যা তা পারা যাবে। তাহলে তোরা কালই যা দেখ কি হয়, আমাকে জানাবি। [চলবে] নক্ষত্রের গোধূলি-১৪ বাড়ির কাওকে কিছু না বলে বুধবার সকাল সাড়ে সাতটায় রাশেদ সাহেব মনিরাকে নিয়ে বারিধারা বৃটিশ হাই কমিশনে গিয়ে অপেক্ষা করছিলো।

অফিস খুলতেই গেটের সাথে ভিসা এক্সপ্রেসে রাশেদ সাহেবের পাসপোর্টের সাথে মনির পাসপোর্ট, আবেদন ফি, ফর্ম জমা দেয়ার পর রাশেদ সাহেবের পাসপোর্ট একটু উল্টেপাল্টে দেখে হাতে একটা টোকেন দিয়ে বলে দিল আগামী কাল সারে এগারোটায় এসে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন। রাশেদ সাহেবের বিশ্বাস হচ্ছিল না। কোন রকম ইন্টারভিউ ছাড়াই মনির ভিসা! বিশ্বাস করবে কি করবে না এমন দুরুদুরু ভাব নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলো। পরদিন সকাল সাড়ে এগারোটায় আবার এসে ভিসা এক্সপ্রেসে ওদের টোকেন দেখানর পর খুঁজে ওদের পাসপোর্ট দিয়ে দিল। বাইরে এসে খুলে দেখে মনিরার এবং রাশেদ সাহেবের ভিসা দিয়ে দিয়েছে।

আনন্দে রাশেদ সাহেব হিতাহিত জ্ঞ্যান হারিয়ে কেঁদে ফেললেন। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এই ভাবে কোন ইন্টারভিউ ছাড়া, উৎকণ্ঠা নিয়ে ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে থাকা ছাড়া মনির ভিসা এত সহজে পাবে, এতো স্বপ্নাতীত। মনিও কেঁদে ফেললো। মনিরা কাঁদতে কাঁদতে বলল তোমার জন্য, শুধু তোমার জন্যই আমি যাচ্ছি।

আমি জানি অনেক আলোচনা সমালোচনা হবে, অনেক ঝড় উঠবে, অনেক গঞ্জনা যন্ত্রণা পোহাতে হবে তবুও শুধু তোমার জন্য আমি সব মেনে নিতে প্রস্তুত। মনে মনে খোদাকে ডেকে বললেন ‘হে খোদা তোমার দরবারে শোকর জানাবার ভাষা আমার মনে আসছে না, তুমি তো সবই জান, তোমার মনিকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না, নিশ্চয়ই তুমি এটা জান বলেই আমার প্রতি এই রহমত করেছ’। একটু শান্ত হয়ে মামাকে ফোন করে জানিয়ে বাড়িতে মেয়েদের জানালেন। মামা বললেন তাহলে তোরা দেরি করবি না। একটা ঠিকানা দিয়ে বলে দিলেন এই ঠিকানায় যেয়ে আমার কথা বলে টিকেট ফাইনাল করে এক বারে বাসায় যাবি, আমি ওদেরকে বলে দিচ্ছি।

মামার কথা মত ওরা একটা স্কুটার নিয়ে মতিঝিলের একটা ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে এসে টিকেট কনফার্ম করে পাসপোর্ট দিয়ে চলে এলো। আগামী বুধ বারে রাত এগারোটায় ফ্লাইট। ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর হয়ে লন্ডন। পরশু এসে পাসপোর্ট টিকেট নিয়ে যেতে বলে দিল। বাড়িতে ফেরার পথে স্কুটারে বসে মনির মুখের দিকে চেয়ে দেখে মনির ঠোট নীল হয়ে গেছে, চেহারা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে।

কি ব্যাপার মনি তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন, কি হয়েছে? সাধে কি আর তোমাকে আমি নাদু গোপাল বলি? কেন কি হয়েছে? আমাকে তো নিচ্ছ কিন্তু যেয়ে থাকবো কোথায়?তুমি একা পুরুষ মানুষ যেখানে সেখানে থাকতে পারতে। আরে বোকা এ হচ্ছে লন্ডন এখানে কি ভেবেছ মানুষ ফুটপাথে বা রেল স্টেশনে থাকতে পারে?ওটা শীতের দেশ না?ওখানে কেউ ফুটপাথে থাকে না। আমার ভাই তার ওখানে যেতে নিষেধ করেছে বলে কি ভেবেছ আমার কোন জায়গা নেই?তুমি জান না, সারা পৃথিবীতে আমার সব বন্ধুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে?আর আমার বন্ধুদের তো জানই তারা কেমন। ওখানে কে আছে? আছে, আছে। ভেবো না।

বল না কে আছে। ওখানে ফিরোজ আছে, শাহিনের বোন আছে। ফিরোজকে আজই মেইল পাঠাবো। কোন ফিরোজ? গেলেই চিনবে, তুমি চেন, তাকে দেখেছ। ওঃ আচ্ছা সেই ফিরোজ? হ্যা।

তবুও যে আমার ভয় করছে। আরে পাগল নাকি?কি যে বল, আমি আছি না?সারা জীবন দেশের বাইরে কাটান স্বামীর স্ত্রি তুমি, আর তুমি আমার উপর এটুকু আস্থা রাখতে পারছ না? কথা বলতে বলতে বাড়িতে এসে পৌছে গেল। বাড়িতে এসে সবাইকে জানিয়ে দিল, মনিও যাচ্ছে আমার সাথে। বৌ যাচ্ছে, ভাবী যাচ্ছে শুনে সবাই অবাক। এতো টাকা পেলেন কোথায়? টাকা কি আর পাওয়া যায়, ম্যানেজ করেছি।

এই শুরু হোল সন্দেহের আর এক স্তর যা রাশেদ সাহেবের সরল মস্তিষ্কে কিছুই ঢুকল না। ঘনিষ্ঠ দুই এক জন আত্মীয় স্বজনকে জানিয়ে দিল। মনের ভিতর একটা করুন বেহাগের সুর বাজিয়ে আস্তে আস্তে বাধা ছাদার কাজ করছে। মনিরার মন থেকে অজানা আতংক কোন ভাবেই দূর হচ্ছে না। সব সময় তার মনে হচ্ছে কি জানি কখন কোথা থেকে কি হতে কি হয়ে যায়।

রাশেদ সাহেব তাকে অভয় দিয়ে বুঝিয়ে যাচ্ছেন আর যা যা নিয়ে যেতে হবে তা সংগ্রহ করছেন। দু এক জন আত্মীয় এসে দেখা করে তাদের মত করে কিছু পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এক দিন বিকেলে মনিরার বড় বোন আর দুলাভাই এলেন। তারাও মনিরাকে বোঝালেন। এ তো ভালোর জন্যই হয়েছে।

তুমি ওকে হতাশ করে দিও না। ও যা বলে সেই ভাবে চল। মনে সাহস সঞ্চয় কর। যে যাই বলে বলুক এখন তোমার সেদিকে মন দিলে চলবে না। তুমি শুধু রাশেদের কথা ভাব।

বাসায় মেয়েদের জন্য চিন্তা করো না। ওদের চাচী থাকছে তাছাড়া ফুফু, নানি, খালা যে যখন পারে এসে থাকবে। মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যাপার। তুমি তো আবার চলেই আসবে। সামনে আর মাত্র দুই দিন বাকী আছে।

বিকেলে মামিকে নিয়ে মামা এলেন। মামা মামি দুজনেই বোঝালেন। মনে কর ও যাবার পর কোন অসুখে পরলে তখন কি হবে, অন্তত তুমি যদি ওর পাশে গিয়ে দাড়াতে পার তাহলে কেমন হবে আর যদি কেউ কাউকে দেখতে না পার তাহলে কেমন হবে মন স্থির কর ওখানে তোমাকে কাছে পেলে ওর শক্তি সাহস বেড়ে যাবে কয়েক গুন। ওর শরীর চেহারা কেমন হয়েছে দেখছ না। এরকম অবস্থায় তোমাকেই সব চেয়ে বেশি দরকার।

তুমিই পার ওকে আগের সেই অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। কাজেই মন খারাপ না করে কে কি ভাবল তা চিন্তা না করে ওর সাথে যাওয়াই মঙ্গল। লোক লজ্জা নিন্দা যা আসে তা আমি দেখবো। এসব নিয়ে তুমি ভেবো না। এই মামাই রাশেদ সাহেবের সুখ দুঃখের খবরা খবর রাখেন, বিপদ আপদে সাহায্য সহযোগিতা করেন, পরামর্শ দেন।

তার কথা মনি ফেলতে পারলো না। মনে মনে প্রস্তুত হোল, মুখে কিছুটা হলেও শ্রাবণ আকাশের বৃষ্টির পর মেঘের ফাকে যেমন একটু খানি রোদের ঝিলিক দেখা যায় তেমনি একটু হাসি ফুটে বের হোল, বিশেষ করে মামার অনুরোধ বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করল। তবুও পদ্ম পাতার পানি যেমন টলমল করে তার মনের তেমন দোদুল্যমান ভাবটা কিছুটা হলেও রয়ে গেল। মামাতো ঠিকই বলেছেন। ওখানে যাবার পর যদি আমার পাগলের কিছু হয়েই যায় তখন কি উপায় হবে?তার চেয়ে ওর সাথে এক বার যেয়ে আমার যাতায়াতের পথটা খুলে দেয়াই ভাল।

রাতের খাবার খেয়ে মেহমানরা সবাই চলে গেলে মনি রাশেদকে নিয়ে ছাদে গিয়ে বসল আলাপ করার জন্য। রাশেদ মনির এই পরিবর্তন দেখে মহা খুশি। মনের আনন্দে মনির হাত ধরে গেয়ে উঠলো ‘তরে লইয়া যাইমু আমি লন্ডনে, ভিসা করছি টিকেট করছি উইরা যাইমু পেলেনে’। শুনে মনিরা হেসে উঠলো। সে হাসিতে যে একটু অবাক মাখানো চমক ছিল তা এক মাত্র রাশেদ সাহেবই টের পেলেন।

আজ কতদিন পর যেন মনির হারিয়ে যাওয়া সেই ছোট বেলার হাসিটা দেখতে পেলেন। দুজন দুজনকে ছুঁয়ে হাসনা হেনার টবের পাশে বেঞ্চে বসে রইলেন। অনেকক্ষণ কারো মুখে কোন কথা নেই উভয়েই উভয়ের উ্ষ্ণ স্পর্শে কত দিন পর যেন সেই ঝর্ণা ধারায় স্নান করছিলেন। সে রাত আর রাত রইলো না হয়ে গেল মধু যামিনী। কতক্ষণ এভাবে বসে ছিল সেদিকে কোন খেয়াল ছিল না।

হঠাৎ করেই একটু একটু বৃষ্টি নামছে দেখে মনি উঠে রাশেদের হাত ধরে নিয়ে নিচে নেমে শুয়ে পরলো। মধু মাখা এই রাতটা যে কোথা দিয়ে কেটে গেল দুজনের কেউই টের পায় নি। ভোর হতে পাশের মসজিদ থেকে আজান ভেসে এলো। চল মনি গোসল করে আসি, ভীষন ক্ষুধা লেগেছে। চল।

গোসল করে এসে নামাজ পরে মনি চলে গেল রান্না ঘরে। নাশতা খাবার পর রাতের এই ক্ষণিকের মধু মাখা বসন্তের আমেজ বেশিক্ষণ রইলো না। পৃথিবীর সব অনর্থের মূল এই অর্থ। অভাবের গ্লানি আর দুঃশ্চিন্তার ছায়া যার চারিদিকে তার কিইবা করার আছে। মধু বসন্ত সারা জীবনের জন্য আসেনি, এসেছিল ক্ষণিকের জন্য।

চোখের পলকেই যেন আবার কোথায় হারিয়ে গেল, মিলিয়ে গেল দূর দূরান্তের স্বপ্নে দেখা গভীর প্রশান্তির অতলে। সেখানে জায়গা করে নিল্ ঘন কুয়াশা ঢাকা অনিশ্চিত ভবিষ্যত। কি হবে কি হবে না তাই ভেবে রান্না ঘরের জানালা দিয়ে নারকেল গাছের মাথায় যে সিনেমা দেখেছিল সেই কথা মনে এসে ভীড় করলো আবার। [চলবে] নক্ষত্রের গোধূলি-১৫ লন্ডন যাবার প্রস্তুতি শেষ। নেহায়েত যা একান্ত দরকার তাই কেনা কাটা করা বা পাসপোর্টে পাউন্ড এন্ডোর্স করা সবই করে ফেলেছে।

যাবার দুদিন আগে যাতে কোথাও বের হতে না হয়। আজ মেয়েরা কেউ স্কুল কলেজে যায়নি। মেয়েরা সবাই উঠে নাশতা সেরে বাবা মাকে নিয়ে বসল। এ গল্প সে গল্প, আশা আকাঙ্ক্ষা কত কি এলো মেলো কথা হোল। আড্ডা জমে উঠে এতো দিনের গুমোট বাধা ভাবটা কেটে গিয়ে যেন বাড়িটা আবার প্রান চঞ্চলে ভরে উঠলো।

বাড়িটা হাসি খুশিতে ভরে গেল। মেয়েরা সবাই বায়না ধরল মা আজ খিচুড়ি রান্না কর, বাবা পছন্দ করে সবাই মিলে এক সাথে খাব। বড় মেয়ে বললো না মা তুমি থাক আজ আমি রান্না করি। দুপুরে ডিম ভাজি দিয়ে খিচুড়ি খেতে বসে মেঝ মেয়ে বললো মাংশ হলে ভাল হতো। ছোট মেয়ে বলে উঠলো যা হয়েছে তাই যথেষ্ট হয়েছে।

শুনে মেঝ মেয়ে আবার বললো হ্যা তাই, ভাগ্যে থাকলে আবার হবে ইনশাল্লাহ। মেয়েদের এই সব বিচক্ষণতা দেখে রাশেদ সাহেব মনির মুখের দিকে তাকালেন, মেয়ে গুলি হয়েছে একেবারে মায়ের মত। কোন বায়না নেই, কোন চাহিদা নেই, কোন চাওয়া নেই, কোন দাবী নেই। যা পাচ্ছে তাতেই খুশী না পেলেও কোন আপসোস নেই। খাবার পর মেয়েদের নিয়ে আবার বসলেন।

ওরা যাবার পর মেয়েরা কি ভাবে চলবে সে ব্যবস্থা মোটামুটি করে রেখেছিলেন। বড় মেয়ের হাতে সব বুঝিয়ে দিয়ে বলে দিল এর পরেও যদি কিছুর প্রয়োজন হয় তাহলে মামা অর্থাৎ তোমাদের দাদাকে ফোন করে জানাবে। আমি মামাকে বলেছি, উনি দেখবেন। ছোট মেয়ে জানতে চাইল আব্বু তোমরা এয়ারপোর্টে যাবে কি ভাবে? আমি তো ভেবে রেখেছি আমি আর তোমার মা একটা স্কুটার নিয়ে চলে যাব। তুমি কি কিছু বলতে চাও? মনিরা বললো তা কি করে হয়? তাহলে কি করতে চাও?মনি একটু দ্বিধার সাথে বললো ওদের বাবা মা দুজনেই চলে যাচ্ছে ওরা যদি একটু এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এগিয়ে বিদায় দিয়ে আসতে পারে তাহলে মনে ওদের ভাল লাগবে।

কিন্তু সে রকম গাড়ি ভাড়া করার মত টাকা কোথায়?আগে বললে হয়ত কিছু খরচ কমিয়ে ব্যবস্থা করতে পারতাম। আচ্ছা সে আমি ব্যবস্থা করছি তুমি ভেবো না। দেখ যদি পার কর। আমারও তো মনে হয় যাবার আগে সবার মুখে একটু হাসি দেখে যেতে পারলে ভালো লাগতো। দেখ যদি পার কর সবার হাসি মুখ দেখে যাই।

আবার কবে ফিরে আসি না আসি তা কি বলা যায়?রাশেদ সাহেব কোন বাধা দিলেন না। মনিরা তার হাতের শেষ সম্বল ভেঙ্গে সেঝ দেবরকে দিয়ে এয়ারপোর্টে যাবার জন্য একটা মাইক্রো বাস ভাড়া করে রেখেছে। যাবার সন্ধ্যায় সব কিছু রেডি। গাড়ি এসে অপেক্ষা করছে। মনির মা, বড় বোন, ছোট বোন এসেছে।

তারাও এয়ারপোর্টে যাবে। রাশেদ সাহেবের সেঝ ভাই ছোট ভাই আর মেয়েরা সবাই যাবে। মালামাল গাড়িতে তোলা হয়েছে। বাড়ি থেকে বের হবার আগে বাবাকে সালাম করে বিদায় নিতে এলেন। আব্বা এর আগেও আমি অনেক বার এরকম যাত্রা করেছি কিন্তু সে সব যাত্রা আর আজকের এই যাত্রার মধ্যে অনেক পার্থক্য।

জানি না এটাই আমার শেষ যাত্রা কিনা। ভুল ভ্রান্তি অনেক করেছি, অনেক বেয়াদবিও হয়ে গেছে মাফ করার যোগ্য মনে হলে মাফ করে দিবেন। আমি তো বাড়ি ছাড়া, দেশ ছাড়া হলাম আমার মেয়েরা রইলো। মনে মনে ভাবলেন বাবা আপনাকে আবার দেখতে পাব কিনা জানি না। এই বলেই ভেজা চোখে বেড় হয়ে গাড়িতে উঠলেন।

এয়ারপোর্টে পৌছে সবার কাছ থেকে একে একে বিদায় নিলো। শাশুড়ি, বড় আপা, ছোট শ্যালিকা, শ্যালিকার গাল টেনে একটু রসিকতা করলেন, ছোট ভাই, সেঝ ভাই, সবার শেষে মেয়েদের কাছে। মনি মেয়েদের বোঝাচ্ছে কাদেনা মা আমি তো কদিন পরেই আসছি। মেয়েদের একে একে সবাইকে বুকে নিয়ে মন শক্ত করার কথা বলে মনিকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলেন। এয়ারলাইনসের চেক ইন কাউন্টারে এসেই কায়সার বেয়াইর সাথে দেখা।

আরে বেয়াই আপনি এখানে? লন্ডন যাচ্ছি। আপনারা? আমরাও তো ওখানেই যাচ্ছি। যাক ভালোই হোল। [চলবে]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।