আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই! এলএইচসির নামটা মনে হয় মাইকেল জ্যাকসনের মতো এতোটা নাম করেনি। সঙ্গীত যতটা মানুষকে আপন করতে পারে, পদার্থবিজ্ঞান ততটা পারে না। কিন্তু যখন হিগস আবিষ্কৃত হয় অথবা মঙ্গলে যান পাঠায় তখন বিশ্ববাসীর মতো আমরাই সবাই জামাতের সহিত গর্বিত অনুভব করি!
আজকের টপিকের নাম ইন্টান্যাশনাল লিনিয়ার কোলাইডার। এটা নিয়ে অনেক আগে টেকটিউনস আর সামুতে কিছু লিখতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আইএলসি নিয়ে লিখতে গিয়ে এলএইচসি নিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম।
পরে লেখাগুলো এলএইচসিতে ডুবে গিয়েছিলো, আই এলসি নিয়ে লেখা আর হয় নি। যাই হোক, ডিটেইল নিয়ে লিখতে গেলে অনেক বড় পোস্ট হবে। ইদানিং বড় বড় লেখা লেখতে ভালো লাগে না। তাই শর্ট কাটে:
বাজেট:
প্রাথমিক পর্যায়ে যেমন দালান কোঠা বানানো, সেইখানে বিজ্ঞানীদের ঢুকিয়ে মাথা ঠান্ডা করানো, তাদের ঠান্ডা মাথা থেকে ভাগে জোগে বিভিন্ন ডিপার্টম্যান্ট সাজানো, পরে সেই ডিপার্টমেন্টে পোলাপান নিয়োগ দিয়া খাওয়ানো পড়ানো, পরে এতো খাওয়ানো পড়ানোর পর বলা হইবো যে ডিজাইন শুরু করো। সেই ডিজাইনে ভুল ত্রুটি ধরনের জন্য বিভিন্ন প্রোটোটাইপ হাবিজাবী আরএন্ডডি ডিপার্টম্যান্টের তালবাজীর পিছনে খরচা হবে ৬.৭৫ বিলিয়ন ডলার।
পরে এই প্রজেক্ট এপ্রুভ করানো, ডিটেক্টর বানানো আর সব হাবিজাবী মিলায়ে ৭ বছর যাবে। যেই দেশ বসাবে সেই দেশকে খরচা করতে হবে ১.৮ বিলিয়ন ডলার।
তবে আসল কাজ হাত দিলে এই সংখ্যা গিয়ে দাড়াবে সর্বোমোট ২৫ বিলিয়ন ডলার।
কোথায় বসানো হবে:
২০১০ সালে একটা মিটিং করে সার্ন। তো ঐখানে ইউরোপের তিন জায়গার প্রতিনিধিরা হাত তোলেন।
জেনেভা:
তারা বলতেছে মাটির নীচে যেই টানেল আছে যেখানকার মাটি অনেকটা অচ্ছেদ্য শক্ত।
জার্মানীর হামবুর্গ:
এইখানেও একটা টানেল আছে যেইখানকার মাটিতে পানির উপস্হিতি কম কিন্তু তাগো আসল যুক্তি হলো যেহেতু তারা ইউরোপের বৈজ্ঞানিক কাজে বেশী টাকা খরচা করে সেহেতু তারাই এইটা পাইতে চায়।
রাশিয়ার ডাবনা:
রাশিয়ার জয়েন্ট এটমিক রিসার্চ ইনস্টিউট ডাবনায় আর সেইখানেও এমন টানেল আছে।
ইউরোপের বাইরে জাপান রাজী আছে। নিউট্রিনো নিয়া T2K এক্সপেরিমেন্টে সম্প্রতি বিশাল অর্থপ্রাপ্তিই এর মূল কারন।
উপরের যুক্তি হইলো এরা একটা হাইড্রোপাওয়ার প্লান্টের জন্য টানেল বানাইছে যেইটা দেখাইয়া এইটা নিতে চায় নিজেদের দেশে।
এদিকে আমেরিকা হাত উচু করে আছে কারন তাদের ফার্মিল্যাবের বাঘা বাঘা মাথার লোভ দেখানো হচ্ছে!
আরেকটা দেশ আছে বাংলাদেশ, যদিও তাদের যে কি আছে সেইটা নিয়া কুনো উচ্চবাচ্চ করছে না যদিও তারা অফিসিয়ালি কোনো প্রোপোজাল না দিলেও হয় বগুড়া (খালেদার জিয়ার আমল হইলে) নাইলে গোপালগন্জ্ঞে (যদি হাসিনার টাইম হয়) বসানোর চেষ্টা চলবে!
কবে বসাইবো?
এর কাজ শুরু হয়ে গেছে, তবে তা ডিজাইন সেকশনে। এর অনেক কিছুই পরে পরিবর্তন পরিবর্ধন হবে। কারন এলএইচসিকে আরো আপগ্রেড করে ২০২০ নাগাদ সুপার এলএইচসিতে পরিনত করা হবে। তখন দেখা যাবে অনেক কিছুই আবিষ্কার বা ভুল বা সঠিক প্রমানের উপর নির্ভর করছে।
তবে সম্প্রতি একটা গান্ট চার্ট প্রকাশ করা হয়েছে যেটা দেখলে বোঝা যাবে এর কাজ শুরু হতে কতদিন লাগবে। তবে এটাও পরিবর্তনীয়।
এর কাজ কি?
মনে করা হইতেছে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের বাকী কনিকাগুলার খোজ করবে। তাছাড়া এর মূল কাজ হবে:
১) হিগস কনিকার ভর, ঘূর্নন এবং এর মিথস্ক্রিয়া কিভাবে হয় সেটা দেখা
২) অতিরিক্ত মাত্রা যদি সত্যিকারার্থে থেকেই থাকে তাহলে টেরাইলেক্ট্রনভোল্টে এদের অস্তিত্বের প্রমান
৩) সুপারসিমেট্রির সবচেয়ে হালকা কনিকাগুলোর খোজ করা যেগুলার মধ্যে কোনো একটা হয়তোবা ডার্ক ম্যাটার হবে!
কনসেপ্ট:
ভবিষ্যতের এই কোলাইডারে e+এবং e- এর সংঘর্ষ ঘটানোর জন্য যে লিনিয়ার কোলাইডারের দরকার সেটা বর্তমানের সার্নের এলইপি থেকে অনেক গুন নিখুত এবং শক্তিশালী হতে হবে।
হিলিয়াম গ্যাসে ভরা কার্বন ফাইবারের তার সম্বলিত খুবই অল্প ভর অনুসরনকারী ড্রিফট চেম্বার যেটার ডিজাইন মূলত ইতালিস্হ ফ্রাস্কাটির ক্লোয়ি চেম্বার মতো করে করা হবে।
এর ক্ষমতা হবে গিগাহার্জ রেন্জ্ঞের সিগন্যাল ডিজিটাইজ করা যাতে করে প্রত্যেকটা আয়োনিত গুচ্ছ গুনতে সক্ষম। এই আইডিয়াটা দিয়েছেন ইতালির ফ্রান্কো গ্রানকাঘালো যিনি লিচ্চি INFN এর গবেষক।
দুই ভাবে পড়তে সক্ষম এমন ক্যালোরিমিটার যার কনসেপ্ট এসেছে মূল্য সার্নের ড্রিম কোলাবোরেশনের সফল এক্সপেরিমেন্ট থেকে যার মাধ্যমে খুবই নিখুত ভাবে হ্যাড্রোনিক এনার্জী রেজুলেশনের ডাটা পাওয়া যায় এবং পার্টিক্যাল গুলোকে খুব ভালোভাবে সনাক্ত করা যায়। টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির রিচার্ড উইগম্যান এই ধারনাটা দিয়েছিলেন।
লোহার তৈরী নয় এমন একটি স্বতন্ত্র চৌম্বকীয় সিস্টেম যার মধ্য দিয়ে চৌম্বকীয় বল রেখাগুলো আভ্যন্তরীন ট্রাকিং সলিনয়েড থেকে বাইরের দ্বিতীয় সলিনয়েড এবং কতগুলো কয়েলের মধ্য দিয়ে ফিরে আসে যার ফলে খুব ভালোভাবেই ঐ চৌম্বকীয় বলরেখাকে সিলিন্ডারের মধ্যে অন্তরীন রাখা যায়।
এর ফলে মিউওন ডিটেক্ট করা যাবে এবং ভিতরের সলিনয়েডে কি কি ধরা পড়ছে সেগুলো বের করা যাবে এমনকি মিউওনের চেয়েও কম ভরের কনিকাও খুজে পাওয়া যাবে। এই আইডিয়া কর্নেল ইউনির আলেক্সান্ডার মিখাইলিচেন্কোর।
এলএইচসিতে ব্যবহ্রত সিমুলেটরের উপর ভিত্তি করে আরও শক্তিশালী সিমুলেটর এবং ফিজিক্স এনালাইসিস প্যাকেজ তৈরী করা হবে যার মূল কনসেপ্ট দিয়েছেন ইতালীর লিচ্চির INFN এর গবেষক করাডো ঘেটো!
গঠনপ্রনালী:
দুইটা লিনিয়ার এক্সিলারেটর মুখোমুখি লাগানো থাকবে। আইএলসি প্রায় ১০ বিলিয়ন ইলেক্ট্রন আর পজিট্রন কনিকা মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটাবে।
চিত্রটি টেসলার ৯টা প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট ১.৩ গিগাহার্জের অতিপরিবাহী নুবিয়ামের ক্যাভিটি।
তবে এই সংঘর্ষের সময় এদের গতি থাকবে যথারীতি আলোর কাছে, এইসব এক্সিলারেটর হবে অতিপরিবাহী আর তাপমাত্রা হবে শূন্যের কাছাকাছি (লেজার বীমের ব্যাবহার হবে) এবং এগুলারে এক্সিলারেটরের ভিতর ঘুরাইতে ঘুরাইতে এমুন শক্তিতে সংঘর্ষ লাগাবে যেইখানে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের একেবারের মৌলিকা কনিকাগুলো সজ্জার মতো করে তৈরী হবে।
৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই কোলাইডারে সেকেন্ডে ১৪০০০ বার সংঘর্ষ ঘটবে ৫০০ বিলিয়ন ইলেক্ট্রন ভোল্টে। এর দ্বিতীয় পর্যায়ের আপগ্রেডে এর দৈর্ঘ্য করা হবে ৫০ কিলোমিটার এবং সংঘর্ষের ক্ষমতা হবে ১ ট্রিলিয়ন ইলেক্ট্রন ভোল্ট!
প্রত্যেকটা সংঘর্ষকে ন্যানোমিটার স্কেলে পর্যবেক্ষন করা হবে এবং এগুলোকে আরো নিখুতভাবে দেখার জন্য এর সাথে লাগানো অন্যান্য কোলাইডারের ভিতর আর সংঘর্ষ ঘটিয়ে একেবারে ভ্যাকুয়াম লেভেলে নিয়ে কাজ করা হবে।
মানবজাতীর জন্য কি লাভ হবে সেই মূলা:
চিকিৎসাবিজ্ঞান:
এটা হলো প্রথম মূলা। পজিট্রন এমিশন টমোগ্রাফি, প্রোটন থেরাপী, রেডিয়েশন থেরাপীকে আর নিখুত এবং স হজলভ্য করা।
মনোক্রোমাটিক এক্সরে দিয়ে টিস্যু কালচার শুরু করা।
কম্পিউটার:
দ্বিতীয় মুলা হিসেবে বলা যায় ডাটা ট্রান্সফার রেট অভাবনীয় পর্যায়ে নেয়া আর ম্যামোগ্রাম ডাটাবেজের মাধ্যমে আরও উন্নততর কম্পিউটিং সিস্টেম ডেভেলপ করা।
পরিবেশ:
অতিপরিবাহী টেকনোলজী নিউক্লিয়ার বর্জ্যকে পরিশোধন করটে সাহায্য করবে। এর জন্য হাই ইনটেনসিটি নিউট্রন বীমের কাজ করা হবে। রেডিওফ্রিকায়েন্সি পাওয়ার সিস্টেমের মাধ্যমে দূরবর্তী জায়গার রাসায়নিক বর্জ্যের ব্যাবস্হাপনা নিয়ন্ত্রন করা যাবে।
ইলেক্ট্রনিক্স তথা পার্টিক্যাল ফিজিক্স:
ধরেন এই মূলাতে আছে এইখানে যেইসব পার্টিক্যাল ব্যাব হার করা হবে সেগুলার প্রতিটা মুহুর্ত মনিটরিং করতে হইবো, পজিশনিং খুবই নিখুত থেকে নিখুততর। ফলে ইলেক্ট্রনিক্সের আইসি ডিজাইনে এগুলার আরো বেশী নিখুত ভাবে যে জায়গায় কয়েক কোটি ট্রানজিস্টর বসানো যায় পরে দেখা গেলো টেকনোলজীর উন্নয়নের সাথে সাথে সেইখানে কয়েক ট্রিলিয়ন আইসি বসানো যাবে। এখন যেমন ন্যানোটেকনোলজির নাম শুনছেন পরে পিকোর থেকেও ক্ষুদ্রতর স্কেলে এসবআইসির উন্নয়ন সাধিত হবে। কম্পিউটার থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ এমনকি বিস্ফোরকম ডিটেক্টর আর বিভিন্ন প্রকারের সেন্সরের অভূতপুর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে।
প্রায়োগিক পদার্থবিদ্যা:
অতিপরিবাহী প্রযুক্তির জন্য এনার্জী রিকভারী লাইনাকসের আকার এবং মূল্য দুটোরই সাশ্রয় ঘটবে।
নিউক্লিয়ার সায়েন্স, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, রসায়ন, স্ট্রাকচারাল বায়োলজী, সিন্হেটিক লাইফ এবং পরিবেশ বিদ্যায় অতি সংবেদনশীল যন্ত্রগুলোকে কাজে লাগানো যাবে। এই আইএলসির জন্য প্রথম সারির দেশ গুলো ফ্রি ইলেক্ট্রন লেজার তৈরী করা হচ্ছে। এর কার্যকরীতা মানুষ সম্প্রতি ভোগ করাও শুরু করছে। এভিয়ান ফ্লু ভাইরাসের এন্টিডোট খুজবার জন্য এডভান্স লাইট সোর্সের ব্যাব হার করে মানুষের শরীরে এর রিসেপ্টর সনাক্ত করা গেছে।
মানব সভ্যতার জ্ঞান:
এই মূলার উপর কিছু নাই।
মানুষের জাননের আকাঙ্খার শেষ নাই। ফিজিক্সের অমীমাংসিত র হস্য থেকে শুরু গ্রান্ড ইউনিফাইড থিওরেমের জন্য প্লাংকের সময়ে কি ঘটেছিলো আশা করা যায় এই এক্সপেরিমেন্ট তার কিছু দিক দেখতে পারবো। যদিও আশা করা যায় না যে এখানে কোনো ব্লাক হোল তৈরী হবে কিন্তু যদি তৈরী করাও যায় তার আগে বিস্তর গবেষনা করা হবে কি করে এটাকে নিয়ন্ত্রন করা যায়। যদিও ব্লাক হোল বানানোর মতো কন্ডিশন এখানে তৈরী করাটা বেশ দুরূহ।
যে যে প্রতিষ্ঠান এর গঠনে যুক্ত এবং এই লেখার রেফারেন্স:
রেফারেন্স এক: উইকি
রেফারেন্স দুই: খোদ আইএলসি
প্রতিষ্ঠান সমূহ:
ACFA: Asian Committee for Future Accelerators
ALCPG:American Linear Collider Physics Group
ATF:Accelerator Test Facility২
ATF:Accelerator Test Facility
CALICE:Calorimeter for the Linear Collider Experiment
CERN:European Organization for Nuclear Research
CLIC:Compact Linear Collider Study
DESYeutsches Elektronen-Synchrotron
DOEepartment of Energy
ECFA:European Committee for Future Accelerators
ESGARD:European Steering Group on Accelerator R&D
EUDET: European Detector R&D towards the International Linear Collider
Fermilab / FNAL:Fermi National Accelerator Laboratory
GEANT4: GEometry ANd Tracking
ICFA:International Committee for Future Accelerators
ILC-PES:ILC Polarised Electron Source
ILCTA:International Linear Collider Test Area at Fermilab
ITRP: International Technology Recommendation Panel
JHEPC:Japan High Energy Physics Committee
TTF:TESLA Test Facility
WWS:Worldwide Study of the Physics and Detectors for Future Linear e+e- Colliders
XFEL:X-Ray Free Electron Laser
আরো অনেকপ্রতিষ্ঠানের নাম আছে যেগুলো আর দিতে ইচ্ছে করলো না।
তবে বাংলাদেশের ধোলাই খাল থেকে কিছু মাল যাবে কিন্তু সমস্যা হলো বাংলাদেশের ধোলাইখালের কোনো লিংক ইন্টারনেটে নাই! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।