আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল । অবশ্যই আমরা মুসলমানরা রোযা রাখি আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য । কিন্তু আল্লাহর জন্য এই উপবাস থাকাতে আমাদের কিন্তু শরীরিকভাবে কোন ক্ষতি হয় না বরং বিস্ময়করভাবে অনেক উপকার হয়ে থাকে । কিছু অসুস্হ ব্যাক্তি ছাড়া রোযা রাখা সবার জন্যই উপকার বয়ে আনে ।
আর প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামের সব নিয়ম কানুনেই আল্লাহ মানুষের জন্য শান্তি ও বরকত রাখিয়াছেন । কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারি না । যারা দৃঢ় ঈমানের সাথে আল্লাহর হুকুম পালন করে তারা আল্লাহর সাহায্য পায় এবং এই দুনিয়াতে সুস্হ ও সুন্দর জীবন যাপন করে ।
নিম্নে রোযা রাখার শারীরিক উপকারী দিক গুলি আলোচনা করা হলোঃ
১. মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
এটা কোন সন্দেহ নেই যে রোযা রাখলে আপনি আপনার মনের উপর আল্লাহর রহমতে শান্তিু ও স্হিতি টের পাবেন । এছাড়াও মেডিক্যাল সায়েন্স অনুযায়ী আপনার মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে রোযা সাহায্য করে ।
আমেরিকাতে একটা পরীক্ষা চালানো হয়েছিলো তাতে দেখা গেছে রোযা রাখার দরুন মস্তিস্কের সেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যা মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । অনুরূপভাবে, এড্রিনাল গ্রন্হি যে কর্টিসল হরমোন উৎপাদন করে তা রোযার সময় কম হওয়ায় মানুষ কম ক্লান্তি অনুভব করে ।
২. বদ অভ্যাস ত্যাগে সহায়তা করেঃ
যেহেতু আপনি দিনে রোযা রাখবেন এবং দীর্ঘ সময় পানাহার ও আহার থেকে বিরত থাকবেন তাই ইহা আপনার বদঅভ্যাস ত্যাগে প্রচন্ডভাবে সহায়তা করে যদি আপনি তা পরিত্যাগ করতে চান । যেমন আপনি যদি ধূমপায়ী হন বা ভোজন রসিক হন তাহলে রোযার সময় হলে প্রকৃত সময় তা ত্যাগ করার । আপনার শরীরকে আপনি আস্তে আস্তে এই পুরো এক মাস আপনার পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে পরে খারাপ অভ্যাসগুলো সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করতে পারেন ।
আর কোন কাজ যখন অনেকের সাথে করা হয় তাতে উৎসাহ থাকে বেশী এবং সহজ হয় । যেহেতু রমজান কোন একার বিষয় নয় তাই উহা আমাদের জন্য একটা ভালো সুযোগ পরিবার পরিজনের সাথে একাত্ন হয়ে খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা ।
৩.কোলেষ্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়ঃ
আমরা সবাই জানি রোযার ফলে শরীরের ওজন কমে যায় - যার ফলে শরীরের অভ্যন্তরে রক্তে কোলেষ্টেরলের মাত্রাও কমে যায় । এটা অত্যন্তু একটা উপকারী দিক শারীরিক সুস্হতা বজায় রাখার জন্য। আরব আমিরাতের একটি হৃদপিন্ড বিষয়ক বিশেষজ্ঞগণ গবেষণা করে তার প্রমাণ পান ।
রক্তে কোলেষ্টেরলের মাত্রা কম মানে হলো সুস্হ হৃদপিন্ড - যা হার্ট ডিজিজের ঝুকি কমিয়ে দেয় , হার্ট এটাক এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয় । সুতরাং আপনি যদি চান একটু নিয়ম মেনে চললে রমজানের পরও আপনার কোলেষ্টরেলের মাত্রা কম রাখতে পারেন এবং সুন্দর ও নিশ্চিত জীবন যাপন বজায় রাখতে পারেন ।
৪. অধিক খাওয়ার ইচ্ছাকে দমন করেঃ
অনেকেরই ওজন কম করার পরও তা ঠিক রাখতে পারেনা অধিক খাওয়া দাওয়া করার ইচ্ছাকে দমন করতে না পারার কারণে । রমজানে এরূপ হয় না । যেহেতু আপনি সারাদিন না খেয়ে থাকেন সেহেতু আপনার পাকস্হলী একটু চেপে যায় ।
যার মানে হলো আপনি অল্প খেয়েই পেট ভরতে পারবেন এবং মনের ইচ্ছাকে সহজেই দমন করতে পারবেন । সুতরাং রমজান হলো প্রকৃত সময় আপনার মনের ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখার এবং তা কার্যকর করার ।
৫. শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান সমূহ বের করে দেয়ঃ
রোযা যেমন আপনার ঈমান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে তেমনি তা আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকর উপদান সমূহ বের হয়ে যেতে সহায়তা করে । যেহেতু রোযার সময় আপনি সারাদিন কোন খাবার গ্রহণ করছেন না তাই কোন হজম বিষয় প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় না । তাই এই মাসে হজম এর সাথে যুক্ত শক্তিশালী ক্যামিক্যলের কম ব্যবহার হয় এবং জমাকৃত অবশিষ্ট ক্ষতিকর উপাদান সমূহ বের হয়ে যায় ।
এছাড়া আপনার শরীরের জমাকৃত মেদ এসময় শরীর ব্যবহার করে এবং তার মধ্যকার ক্ষতিকারক উপাদান সমূহ পুড়িয়ে ফেলে । যার ফলে রমজানের শেষে আপনি একটি ক্ষতিকারক মুক্ত ঝরঝরা শরীর উপহার পান - যা আপনি কিছু নিয়ম মেনে চললে সারা বছর বজায় রাখতে পারেন ।
৬. বেশী পরিমাণে পুস্টি উপাদান গ্রহণে সহায়তা করেঃ
রোযার সময় সারাদিন কিছুই খাবার গ্রহণ না করার ফলে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় - অর্থাৎ খাদ্য থেকে বেশী পরিমাণে পুষ্টি আহরণ করার ক্ষমতা । রোযা এবং ভোর রাতে খাওয়ার দরুন adiponectin নামের একটি হরমোনের বৃদ্ধি পাওয়াতে এরূপ হয়ে থাকে । এর ফলে আপনার মাংসপেশী বেশী পরিমাণে পুষ্টি পেয়ে থাকে ।
সামগ্রিকভাবে আপনার সমস্ত শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে এবং পুরো শরীর এতে করে উপকৃত হয় ।
৭. খেজুর - আশযুক্ত খাবারঃ
আমরা খেজুর দিয়ে রোযা ভাঙতে পছন্দ করি কারণ তা হলো সুন্নত । আর মহানবী (সাঃ) যে কোন সুন্নত পালনই আমাদের জন্য অনেক কল্যাণ বয়ে আনে আর অসীম সওয়াব তো আছেই । খেজুর এর খাওয়ার অনেক শরীরিক উপকারিতা রয়েছে । সারাদির রোযা রাখার পর আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পুষ্টি প্রদান করা জরুরী ।
একটি গড় ওজনের খেজুরে থাকে ৩১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট - যা হলো সত্যিকারের খাদ্য আপনার শরীরকে চাঙ্গা করার জন্য । খেজুরে রয়েছে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ যা আপনার খাবারকে হজম করতে সহায়তা করে এবং হজমের উন্নতি ঘটায় । এছাড়াও খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি । সে হিসেবে খেজুর একটি খুবই পুষ্টিকর খাদ্য - যা শুধু রমজান নয় সব সময়ের জন্য উপকারী ।
সবশেষে আসুন রোযা রাখি এবং আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি যিনি আমাদের রোযা রাখার তওফিক দান করেছেন ।
এই রোযা আমাদের পরকালে আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম এবং ইহকালে শরীরিক সুস্হতা নিয়ে আসে ।
সূত্রঃ Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।