একজন চরম বোরিং মানুষ, কোন এক্সসাইটমেন্ট নাই আমার মাঝে। চিল্লাপাল্লা ভালো লাগেনা। খাবার হোটেল আর ভিন্নতার জন্য ঢাকার ও চট্রগ্রাম এর ধারের কাছে না হলেও আমাদের মত যাদের বগুড়াতেই ছাত্রজীবন আবর্তিত হয় তাদের বগুড়াতেই বের করে নিতে হয় দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মত কিছু আইটেম। হোটেল আর খাবারের ভিন্নতায় অনেক জেলা শহরের চেয়ে বেশি বৈ কি কম নয় এই বগুড়ার রসনার সরবরাহকারীরা। আসুন তাহলে জেনে নেই- আপনার জিহবার তৃপ্তি মেটাতে কি রয়েছে এই বগুড়ায়ঃ
বগুড়ার দইঃ বগুড়া নামটা উচ্চারন হবার সাথে সাথে যা মুখে চলে আসে তা হল বগুড়ার দই।
সময়ের সাথে সাথে এই দই দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে তার নাম কুড়িয়েছে। বগুড়ার এই দই কে যিনি সবার সামনে প্রথমে নিয়ে আসেন তিনি হলেন গৌর গোপাল নামে একজন সর ও দুধ ব্যবসায়ী। তার মৃত্যুর পর তার ছেলের দোকান এখন সাতানী বাড়ির পাশেই রয়েছে। এছাড়াও ভালো দই আপনি পেতে পারেন আকবরিয়া, এশিয়া, মহরম আলী, আদি মহরম আলী, ঘোষাল দই ঘরে।
বগুড়ার দই এত জনের কাছে পরিচিতির বিষয় যে এ নিয়ে ফেসবুকে একটি পেজ ও আছে।
আরেকটি কথা বগুড়ার দই দয়া করে অপরিচিত দোকান থেকে খাবেন না, আবার কম দামের টা খাবেন না। দোকানে কয়েক জাতের মধ্যে আসল দই পেতে শাহী দই বেছে নিবেন। শেরপুরেও কিছু ভালো দইয়ের দোকান আছে শোনা যায়।
মিষ্টিঃ দইয়ের মত বিখ্যাত না হলেও বগুড়ার মিস্টি আশেপাশের অনেক জেলা থেকে লোকজন এসে কিনে নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে যে দোকান এর নাম বলব তা হল এশিয়া সুইটস।
বলা যায় সারাদিনই এতে ভিড় লেগে থাকে। বিশেষত স্পঞ্জ মিষ্টি আসার সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়। মিষ্টি কেনার ভালো সময় দুপুর ২ টা থেকে ৫ টা। এই সময়ে দিনের মিষ্টি গুলো আসে।
চাপঃ বগুড়ার চাপকে অনেক মোস্তাকিমের চাপের সাথে তুলনা করে থাকেন।
আমি তা না বললেও বলব বগুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের পরিচিত দোকান এই চাপের দোকান। দোকানের কোন সাইনবোর্ড ও নেই। তবে কলোনীর চাপের দোকান বললেই অনেকে চিনে। এই চাপের দোকান ঘিরে গড়ে উঠেছে আরো কয়েকটি চাপের দোকান তবে- দোকানের সামনের ভিড় দেখেই বুঝতে পারবেন আপনার দোকান কোনটি। এই দোকানের চা টাও ভালো।
এবার পৃথক হোটেল প্রসঙ্গে আসি।
প্রথমেই যে হোটেল নিয়ে কথা বলতে হয় তা হল আকবরিয়া। বগুড়ার আশে পাশের জেলায় যারা করতোয়া পেপার পড়েন। তাদের কাছে আকবরিয়া একটা মিথের মত। কেন সেটা বলি।
মোটামুটি প্রতিদিনই এই পেপারে আকবরিয়া হোটেল এর বিজ্ঞাপন থাকবে। কোন একটা হোটেল এর বিজ্ঞাপন প্রতিদিন দেখলে সেই সম্পর্কে আগ্রহ থাকবারই কথা। আকবরিয়া এর লাচ্ছা সেমাই প্রতিবার ঈদে একটা হিট আইটেম। এছাড়াও প্রতি শীতে আকবরিয়া পিঠা উৎসব করে থাকে। সেই সময় নানা স্বাদের পিঠা আপনার ভালো লাগবেই।
আকবরিয়া হোটেল এর পক্ষ থেকে প্রতি রমজান মাসে রাতে অসহায় মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। যা অনুপ্রেরনীয়।
আকবরিয়ার কয়েকটি শাখা বগুড়া জুড়ে আছে। আকবরিয়া মিষ্টি মেলা, আকবরিয়া ক্যাফে(কোর্টের সামনে), আকবরিয়া ক্যাফেটারিয়া (মেডিকেল কলেজে)।
কম খরচে আকবরিয়ার স্বাদ পেতে চাইলে মেডিকেল ক্যাফেটারিয়া তে যেতে পারেন।
তবে মুল শাখার থেকে একটু মনে হয় স্বাদ কম থাকে।
সেলিম হোটেলঃ বগুড়ার যারা পুরাতন অধিবাসী তারা জানেন এই হোটেলের কথা। অনেক আগে থেকেই এই হোটেল বগুড়া বাসীর রসনা মিটিয়ে আসছে। বিশেষত ভর্তা দিয়ে যদি ভাত খেতে চান তবে এই হোটেলে যেতেই হবে। নানা পদের ভর্তা পাওয়া যায় এতে।
রোযার মাসে ইফতারী কম দামে পেতে চাইলে সেলিম হোটেল বেছে নিতে পারেন।
আরো যেসব হোটেলের নাম বলতে হয় তার মাঝে শ্যামলীর হালিম, কোয়ালিটির বিরিয়ানী,চা, স্পেশাল খাসির মোগলাই, এর নাম বেশ শোনা যায়।
নতুন গড়ে উঠা দোকানের মাঝে- লা বাম্বা(জেল রোডের পাশে) এর চিকেন ঝাল ফ্রাই, বি এফ সি এর চিকেন ফ্রাই বা শিক, মা ক্যাফে(ডলফিন টাওয়ার এর পাশে) এর মাটন বিরিয়ানী-থাই সুপ বেশ চলছে।
ফাস্ট ফুডের দোকানের মাঝে জলেশ্বরী তলায় রয়েছে-ফুড পার্ক যাদের চিকেন গ্রীল, নতুন আসা ড্রিঙ্কস অনেকের কাছে বেশ পছন্দ। পদ্মা ফুডস এর কেক এর সুনাম করতেই হয়।
বেশ ভালো কেক বানায় এরা। এদের পিজ্জাও অনেক ভালো। ফাস্ট ফুডের সব আইটেম ই এরা মোটামুটি ভালো বানায়।
গরুর শিক বা খাসির শিক বা বট খাবার জন্য আপনি যেতে পারেন বগুড়া জিলা স্কুলের সামনে। পাশাপাশি কয়েকজন মামা এখানে বসেন।
আমার কাছে ভালো লেগেছে একটা বিহারী মামা রয়েছে তার টা। খাসির শিক আপনি ভালো পাবেন জাসদ অফিস পেরিয়ে যেখানে কাঠের জিনিসপত্র বিক্রি হয় তার পাশেই। এখানকার তন্দু বানানোর প্রক্রিয়া আপনার ভালো লাগতে পারে।
এছাড়াও বোনাস হিসেবে পেতে পারেন কলোনীর চিটাগাং হোটেল-যাদের সকালের নাস্তা ও হালিম ভালো, চারমাথা মোড়ের মাহাথির হোটেল যাদের কমদামের বিরিয়ানী বেশ ভালো। আরো একজনের কাছ থেকে চারমাথার সেঞ্চুরী হোটেলের গরু ভুনার কথা শোনা গেল।
চটপটি ফুসকা চা এগুলো সবার আলাদা স্বাদের ব্যাপার। তবে একটানা চটপটি ফুসকা পাবেন আপনি সাতমাথাতেই জিলা স্কুলের সামনেই। আলী প্যালেস এর পাশে ভাই ভাই চটপটি অনেকের কাছে পছন্দের। চা এর জন্য পুরা বগুড়া জুড়েই রয়েছে অসংখ্য টঙ্গের দোকান। তবে জাসদ অফিসের সামনে লেবু চা এর বেশ সুনাম পাওয়া যায়।
চাইনিজ খেতে বগুড়ার কজি ক্যাফে রেড চিলিস বা লেজিস এ যেতে পারেন। আর থাকবার জন্য রয়েছে নাজ গার্ডেন আর হোটেল সিয়েস্তা।
সর্বশেষ সংযোজনঃ ফতেহ আলী বাজারের পাশে মুসলিম হোটেল এর নান রুটি ও শিক এর সুনাম একজন করেছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।