সকল প্রসংশা আল্লাহর জন্য। আমার চলমান মেইল এড্রেস ঃ shimantodhk2010@gmail.com ,
ঈদের কয়েকদিন পরে বগুড়া বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার খালা থাকেন। উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশের হিস্টোরিকেল প্লেস গুলো দেখবো আর কাজিনদের সাথে অনেক মজা করবো। যেই ভাবা সেই কাজ চলে গিয়েছিলাম বগুরাতে।
অনেক অনেক কিছু দেখা হলো, খাওয়া হলো, মজা হলো। সেখানের কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্যই অনেক দিন পর আবার ব্লগ লিখতে বসলাম।
আমার দেখা প্লেস গুলোর মধ্যে আছেঃ বেহুলা লক্ষিন্দরের বাসর ঘর বা গকুল মেধ, সুলতান বলখী(রঃ) মাহী সাওয়ারীর মাজার, রাজা পরশুরামের জিয়ত কুন্ড,মহাস্থানগড়, ভাসু বিহার, আর জাদুঘর।
৯ই সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় খালাতো ভাইকে নিয়ে রওনা দিলাম মহাস্থানগড়ের উদ্দেশ্যে। আমাদের বাহন ছিলো ১৫৩ সিসির মোটর বাইক ফেজার।
বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচল কারী তরুন প্রজন্মের মোটর বাইকের মধ্যে এটিই সেরা।
গ্রামের উপর দিয়ে পাকা রাস্তা আর চারিদিকে ধান ক্ষেত। ছবি গুলো বেহুলার বাসর ঘরে যাবার সময়ে উঠানো।
বেহুলা লক্ষিন্দরের সংক্ষিপ্ত কাহিনী ঃ
পুরো কাহিনীটি আমি পড়েছি। অনেক বড়, তাই সংক্ষেপে দিলাম।
আসলে এটা হাজার বছর পূর্বের পৌরানিক কাহিনী। তখন বাংলায় পুন্ড্র রাজধানী ছিলো। আর সমাজে এলিট শ্রেনী ছিলো রাজা ও বনিকেরা। কথিত আছে চাদ সওদাগরের পুত্র ছিলো লক্ষিন্দর। আর বেহুলা ছিলো বাসো বানিয়ার কন্যা।
দেবরাজ শীবের কন্যা পদ্মা দেবী চাদ সওদাগরকে মনসা পূজা দেবার জন্য আদেশ দেন। কিন্তু ধনী ব্যাবসায়ী চাদ সওদাগর তা প্রত্যাখান করেন। দেবী ক্ষিপ্ত হয়ে অভিশাপ দেন , যে তার সন্তান লক্ষিন্দর সাপের কামড়ে মারা যাবে। ঘটনা ক্রমে বেহুলার সাথে বিয়ে হয় লক্ষিন্দরের আর লক্ষিন্দরের বাবা চাদ সওদাগর অত্যান্ত নিখুত ভাবে তাদের জন্য বাসর ঘর তৈরি করেন যেখানে পৃথিবীর কারো পক্ষেই নিরাপত্তা ভেদ করে প্রবেশ করা সম্ভব ছিলো না। কিন্তু পদ্মা দেবীর অভিশাপ বৃথা যায় না।
সেই কঠোর নিরাপত্তার ভেতরেও ভয়ানক বিষধর সাপ লক্ষিন্দর কে ছোবল মারে। আর সে অনায়াসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পতিভক্ত বেহুলা তারা স্বামীকে বাচানোর জন্য অনেক সংগ্রাম করেন। তিনি তার স্বামীর লাশ নিয়ে বহু পথ পাড়ি দিয়ে দেবালয়ে পৌছেন। সেখানে দেবতাদের নেচে-গেয়ে তাদের কে সন্তুষ্ট করেন।
আর তার স্বামীর জীবন ফেরত চান। দেবরাজ অভিশাপ দানকারী পদ্মা দেবীকে দেবালয়ে ডেকে পাঠান। বেহুলার করুন কষ্টের কথা শুনে পদ্মাদেবী ও সকল দেবতাদের মন গলে যায়। শেষে লক্ষিন্দর কে পুনরায় নতুন জীবন দান করা হয়। বেহুলা তার জীবিত স্বামীকে নিয়ে তার ঘরে ফেরেন।
আর চাদ সওদাগর পদ্মা দেবীকে মনসা পূজা দিতে রাজী হন। এর কিছুদিন পরে বেহুলা আর লক্ষিন্দর রথ যাত্রায় স্বর্গে গমন করেন। তারা যাবার সময়ে বলে যান। আসলে পূরো কাহিনীই ছিলো তাদের ইশ্বরের আদেশ। মনসা পুজাকে সফল করার জন্য।
তারা ছিলো স্বর্গের নর্তক-নর্তকি। আর এই সব হয়েছে মনসা পূজাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর সবাইকে বিদায় দিয়ে তারা স্বর্গে চলে যান। সেই থেকেই হিন্দুদের মনসা পূজা চালু হয়ে আসছে।
পৌরানিক কাহিনীর সেই বেহুলার বাসর ঘরে ঢুকার সময়ের ছবি।
বেহুলার প্রাচিন কালের বাসরঘর দেখা শেষ। এবার রওনা দিলাম মহাস্থানের দিকে।
মহাস্থানগড়ের ইতিহাস।
বেহুলার বাসর ঘরেরে কয়েককিলো দুরেই রয়েছে, মহাস্থান গড়। আর সবই ছিলো তৎকালীন সমসাময়িক কালের।
মহাস্থানের পরাক্রমশালী রাজা ছিলেন পরশুরাম। কথিত আছে আগে এটা বৌদ্ধ সম্রাজ্যের অংশ ছিলো। বৌদ্ধরা পরাজিত হলে হিন্দু সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অত্যাচারিত বৌদ্ধরা শেষ টিকতে না পেরে চিরতরে চলে যায়। রাজা পরশুরাম ছিলেন ভগবানের ষষ্ঠ অবতার।
আর সেই সময়ে মহাস্থান ছিলো প্রাচিন লোকজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নগরী। আর বিভিন্ন পুজা আর মেধ যজ্ঞ হতো। অদুরেই আছে ভাসু বিহার। আরো আছে দেবালয়, যেখানে কথিত আছে দেবতাগন ভুমিতে অবতরন করতেন। তবে সেই সমাজে শ্রেনীভেদ প্রথা ভয়াবহ মারাক্তক ছিলো।
আর সেই হিন্দু সম্রাজ্যে একজন মাত্র মুসলিম ছিলেন। ( নামটা মনে আসছে না) তিনি সুদুর আরব দেশ হতে বানিজ্যের জন্য এই সমৃদ্ধ নগরীতে আগমন করেছিলেন আর স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান।
অনেক বছর পরে তার সন্তান হলে তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে গরু কোরবানী করেন। আর নিজের প্রয়োজনীয় মাংস নিয়ে বাকিটা জঙ্গলে পুতে ফেলেন।
দুর্ভাগ্য ক্রমে শিয়াল মরা গরুকে টেনে উপরে তুলে ফেলে, আর চিল কোনো ভাবে একটুকরো মাংস নিয়ে আকাশে উড়ার সময়ে রাজ দরবারের সামনে গিয়ে পড়ে। হিন্দু সম্রাজ্যে গো-হত্যার জন্য রাজা পরশুরাম ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। শেষে খুজে বের করেন সেই মুসলিম নাগরিক কে। তিনি গো-হত্যার জন্য অসহায় মুসলিম কে কঠিন সাজা প্রদান করেন। তার দুই হাত কেটে দেয়া হয়।
আর যেই সন্তানের জন্য গরু কোরবানী করা হয়েছিলো সেই সন্তান কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয় দেবতার তুষ্টির উদ্দেশ্যে। অসহায় মজলুম মুসলিম আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে ফরিয়াদ জানান।
তার এই ঘটনা আধ্যাতিক নেতা শাহ সুলতান বলখী মাহী সাওয়ারী(রঃ) স্বপ্নে দেখতে পান। তিনি অসহায় মোমিন বান্দা কে সাহায্য করার জন্য মাছের পিঠে করে আরব দেশ থেকে এই বঙ্গে আগমন করেন। তিনি মাছের পিঠে করে এসেছিলেন বলে তাকে মাহী সাওয়ারী বলা হয়।
তার সাথে এসেছিলো হাজার হাজার দুধর্ষ মুসলিম যোদ্ধা। সুলতান মাহী সাওয়ারী রাজা পরশুরামকে তার কৃত কর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আদেশ দেন আর নির্যাতিত মুসলিমকে ক্ষতিপুরনের আদেশ দেন। হিন্দুরাজা পরশুরাম প্রত্যাখ্যান করেন আর আর মুসলিম সেনারদের উপরে আক্রম করেন। মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর সু-গঠিত আক্রমনে পরশুরামের সৈনিকেরা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে থাকে। আধ্যাতিক বাবা মাহীসাওয়ারী(রঃ) খেয়াল করলেন।
রাজা পরশুরামের সৈন্য সংখ্যা কোনো ভাবেই কমছে না। যাদেরকে মারা হচ্ছে তারা আবারো যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসছে। তিনি আধ্যাতিক শক্তির বলে দেখতে পান যে রাজা পরশুরামের নিহত সৈন্যদের কে জিয়ত কুন্ডের পানি দিয়ে গোসল করালেই তারা আবার জিন্দা হয়ে যাচ্ছে। তিনি তার ঐশ্বরিক ক্ষমতার বলে চিলের মাধ্যমে ওই কুপে গরুর মাংস নিক্ষেপ করেন। কুয়ার অলৌকিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
ফলে পরশুরামের সৈন্যদল মুসলিম যোদ্ধাদের হাতে কচুকাটা হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। রাজা পরশুরাম স্ব-বংশে নিহত হন। আর সমস্ত মহাস্থানগড় মুসলিম বাহিনীর হাতে চলে আসে। শুরু হয় মুসলিম শাসন। এক আধুনিক আর আলোকিত শাসন ব্যাবস্থা।
মুসলিম শাসনামলে সেই এলাকার মানুষেরা উন্নতির স্বর্ন শিখরে পৌছে গিয়েছিলো। আধুনিক সমাজ ব্যাবস্থার গোড়াপত্তন সেখান থেকেই শুরু হয়।
আধ্যাতিক বাবা মাহিসাওয়ারীর মাজার।
প্রাচিন নগরী মহাস্থানগড়ের প্রবেশ পথ।
রাজা পরশুরামের সেই অলৌকিক জিয়ৎকুন্ড।
কুয়ার উপরে দাঁড়িয়ে আমার পায়ের ছবি দেখা যাচ্ছে।
মহাস্থান নগরী থেকে বেড়িয়ে এর পরে গেলাম জাদুঘরে।
টিকেটের ছবি।
জাদু ঘরের ভেতরের ছবি।
ঘুরতে ঘুরতে কখন যে সময় পেড়িয়ে চলে গেছে সেই হিসেবই নাই।
সময় নাই সময় নাই। বড়ই ক্ষুদ্র সময় ঘড়ি। যেতে হবে যেতে হবে বহুদুর।
ফেরার পথের ছবি।
ফেরার পথে চালু বাইক থেকে তোলা ছবি।
** পরের পর্বে পাহাড়পুর বৌদ্ধ সম্রাজ্যের কাহিনী নিয়েই লেখবো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।