দেশে প্রায় ছয় লাখ নারী ক্যান্সার রোগীর মধ্যে ২৭ থেকে ২৮ শতাংশই ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। আর যে ক’টি কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়, তার অন্যতম একটি কারণ ব্রেস্ট ফিডিং না করানো, অর্থাৎ শিশুকে বুকের দুধ না দেওয়া।
শুধু তাই না, মা তার শিশুকে বুকের দুধ না পান করানোর কারণে নিজে যেমন স্তন (ব্রেস্ট) ক্যান্সারের ঝুঁকি নিচ্ছেন, তেমনি রোগ প্রতিরোধসহ নানা ধরণের জটিল রোগ সংক্রমণের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তার প্রিয় সন্তানকেও।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক মা ভুল ধারণা থেকে শিশুকে বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত করেন। এতে মা নিজেও ঝুঁকিতে পড়েন এবং শিশুটিকেও ক্ষতির দিকে ঠেলে দেন।
মহাখালী জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, “শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে মেয়েদের বক্ষ সৌন্দর্য নষ্ট হয় না; বরং না খাওয়ালে বেস্ট্র ক্যান্সার ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। ”
আধুনিকতার নামে অনেক মা তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান না। এ প্রসঙ্গে হাবিবুল্লাহ বলেন, “অতি ফ্যাশন সচেতনতা, অসচেনতা স্বাস্থ্যগত প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে বক্ষ সৌন্দর্য। বংশগতি ও হরমোনের প্রভাবে বক্ষ সৌন্দর্যে ভিন্নতা আসতে পারে, নষ্টও হতে পারে। কিন্তু শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে বক্ষ সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে, এটি ভুল ধারণা।
”
দেশে ব্রস্ট ক্যান্সার পরিস্থিতি
হাবিবুল্লাহ আরো বলেন, “সরকারি হিসাবে দেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ হলেও প্রকৃত সংখ্যা ১২ থেকে ১৪ লাখ। দেশের ক্যান্সার রোগীর প্রায় অর্ধেকই নারী। যার সংখ্যা ছয় লাখের বেশি। এর মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগী দেড় লাখের মতো। ”
যে কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার
ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ প্রসঙ্গে হাবিবুল্লাহ জানান, বংশগত দিক থেকে অর্থাৎ মাতৃকূলে ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে যে কোনো নারীর ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো ব্রেস্ট ক্যন্সারের অন্যতম একটি কারণ।
বিয়ে হয়নি অথবা বাচ্চা হয় না, অতিরিক্ত প্রাণীজ আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা, কায়িক পরিশ্রম না করা, দেরিতে বিয়ে করা, দেরিতে বাচ্চা নেওয়া, অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া এবং মাসিক বন্ধের পর প্রদাহ কমাতে হরমোন থেরাপি নেওয়ার কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে অধিক পিল খাওয়ার কারণে জরায়ুতে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকলেও ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার কারণ হিসেবে তেমনটি বলা যায় না।
শালদুধ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হাবিবুল্লাহ আরো বলেন, “মায়ের দুধে ‘হ্যামলেট’ নামের একটি উপাদান থাকে, যা টিউমার কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এছাড়া মানুষের ত্বকের এবং মূত্রথলির ক্যান্সার সারাতে সক্ষম শালদুধ।
এ কারণে শিশুকে শালদুধসহ বুকের দুধ খাওয়তো হবে। শালদুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে যে ভূমিকা রাখতে পারে, তার কোনো বিকল্প হয় না। ”
‘৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে ঠিকমত বুকের দুধ খাওয়ালে ওই শিশুর জন্য এক ফোঁটা পানি খাওয়ানোরও প্রয়োজন নেই’ বলে উল্লেখ করেন হাবিবুল্লাহ। তিনি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়নোর পরামর্শ দিয়েছেন।
মায়ের দুধে শিশু মৃত্য হার কমায়
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এস কে রায় তার একটি গবেষণামূলক লেখায় উল্লেখ করেছেন, ‘জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শালদুধসহ মায়ের দুধ খাওয়ালে নবজাতকের মৃত্যু হার ৩১ শতাংশ কমে যায়।
’ ৬ মাস বয়সের পর মায়ের দুধ খাওয়ালে শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি কমে আরো ১৩ শতাংশ। ’
শিশুর বুদ্ধি বিকাশে মায়ের দুধ
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের সদস্য ডা. নাজনীন আক্তার বানু তার গবেষণামূলক একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন, মায়ের দুধ খাওয়ানো শিশুর বুদ্ধিমত্তা (আইকিউ) না খাওয়ানো শিশুর চেয়ে ৩ দশমিক ১৬ মাত্রায় বেশি। আর অপরিণত শিশুদের ক্ষেত্রে এ মাত্রা ৫ দশমিক ১৮ পর্যন্ত হয়ে থাকে। মায়ের দুধে ডকোসাহেক্সনয়িক এসিড (ডিএইচএ) এবং ল্যাকটোজ-ই শিশুর মস্তিস্ক বিকাশে সহায়তা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতো কিছুর পরেও অধুনিকতার নামে অজ্ঞতার কারণে কোনো মা যদি বুকের দুধ না খাওয়ান, তাহলে নিজেরা ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন এবং শিশুদেরও মারাত্মক ক্ষতি করবেন।
এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।