আমি সত্য জানতে চাই
সত্য সুন্দর। সত্য কল্যাণকর। 'সত্য মানুষকে মুক্তি প্রদান করে আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে'। চিরন্তন এই বাণীটি জানেন না এমন মানুষ হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই বাণীটিকে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে অনুসরণ করেন এমন মানুষের সংখ্যা খবুই কম।
সত্য কথা বলা, সত্যের সঙ্গে থাকা এবং মিথ্যার পরিবর্তে সত্যকে গ্রহণ করাই সত্যবাদিতা। সত্য মানুষকে মুক্তি প্রদান করে, পক্ষান্তরে মিথ্যা বিভ্রান্তিসহ নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। সত্যবাদিতা কেবল একজন মানুষের ধর্মীয় জীবনের ক্ষেত্রে নয়, ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক পরিমণ্ডল, সামাজিক পরিণ্ডল; এমনকি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। সত্যবাদিতা কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, জাগতিক যেকোনো মানদণ্ডের বিচারে এটি একটি ভালো গুণ। সত্যবাদী মানুষকে সবাই ভালোবাসে, চাই তিনি মুসলমান হোন কিংবা অন্য ধর্মাবলম্বী।
কালো হোন কিংবা সাদা। হোন তিনি উঁচু বংশীয় কিংবা সাধারণ কোনো বংশের সদস্য। আলোকিত একজন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা প্রথম ও প্রধান গুণ হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সত্য কথা বলা, সত্যের পক্ষে অবস্থান করা এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হওয়ার ব্যাপারে অসংখ্য নির্দেশ এসেছে। আল্লাহ মহান পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে ও নবীজি (সা.) বাণীর মাধ্যমে যেসব ভালো গুণাবলিকে আয়ত্ত করতে জোর নির্দেশ প্রদান করেছেন, তার মধ্যে প্রথম সারির গুণ হলো 'সত্যবাদিতা'।
সত্যবাদিতাকে তুচ্ছ করে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন- এমন ইতিহাস পৃথিবীতে আগে ছিল না, বর্তমানে নেই এবং ভবিষ্যতেও সৃষ্টি হবে না; হতে পারে না। কারণ সত্য সব ভালো স্বভাব বা সব শুভ্রতার 'মা'। মদিনার কাফিররা মুহাম্মাদ (সা.) আনীত ধর্মকে মানতো না ঠিকই; কিন্তু সত্যবাদী একজন মানুষ হিসেবে তাঁর স্থান ছিল তাদের সবার হৃদয়ের গভীরে। সত্যবাদী মানুষ হিসেবে সবাই ভালোবাসত তাঁকে। নবীজির (সা.) সত্যবাদিতা এবং ন্যায়পরায়ণতায় মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন আরবের মুসলিম-কাফির নির্বিশেষে 'আল-আমিন' উপাধিতে ভূষিত করেছিল তাঁকে।
তিনি ছিলেন সত্যবাদী একজন আদর্শ মানুষ। নবীজির (সা.) সত্যবাদিতাকে তৎকালীন কাফির-মুশরিকরাও স্বীকৃতি প্রদান করেছিল।
একজন সত্যবাদী মানুষের সংস্পর্শ ধীরে ধীরে সত্যের পথে ধাবিত করবে, পক্ষান্তরে মিথ্যাবাদী একজন মানুষের সংস্পর্শ মিথ্যার দিকেই পরিচালিত করে। এই মর্মে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেন, 'হে ইমানদাররা. আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমরা সত্যবাদীদের সাথী হও। [সুরা আত্-তাওবা, আয়াত : ১১৯]
রাসুল (সা.) বলেছেন, 'সত্যবাদিতাকে গ্রহণ করো তোমরা, কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য জান্নাতের পথে পরিচালিত করে, একজন লোক সর্বদা সত্য বলতে থাকে এবং সত্যবাদিতার প্রতি অনুরাগী হয়, ফলে আল্লাহর কাছে সে সত্যবাদী হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে যায়'।
[মুসলিম]
একই বাণীটি হাদিসের অন্য গ্রন্থে একটু আলাদাভাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে মহানবী (সা.) বলেছেন, 'তোমাদের সত্য কথা বলা উচিত, কেননা সত্যবাদিতা অবশ্যই পুণ্যের দিকে পরিচালিত করে, আর নিশ্চয়ই পুণ্য জান্নাতের দিকে পরিচালিত করে। ' এ ব্যাপারে তিনি আরো বলেছেন, 'সত্য হলো প্রশান্তির মাধ্যম এবং মিথ্যা হলো দুশ্চিন্তা বা ভয়ের উৎস। মিথ্যা কেবল দুশ্চিন্তার সৃষ্টিই করে না, মিথ্যাবাদীরা দুর্বল চিত্তের অধিকারী হয়। তাই আমাদের সবাইকে মিথ্যা বলা ত্যাগ করে সত্যবাদী হতে হবে।
সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য। সত্য চিরন্তন এবং সত্য সর্বদাই বিজয়ী। সত্যের শক্তি অপরিসীম। সত্যের মোকাবিলায় মিথ্যা সর্বদাই পরাভূত। সত্যকে গ্রহণ করা এবং সত্য কথার বিজয়ী অবস্থানের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেন, '(হে নবী) বলো, সত্য এসেছে আর মিথ্যা অন্তর্ধান করেছে।
মিথ্যাকে অন্তর্ধান করতেই হবে। [সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮১]
সত্যবাদিতা বিদায় নিচ্ছে আমাদের জীবন থেকে। সত্যবাদী মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে দিন দিন। সামান্য থেকে সামান্য কারণেও সত্য কথাকে ত্যাগ করছি আমরা। গ্রহণ করছি মিথ্যাকে এবং নিজের অজান্তেই জাহান্নামী মানুষের তালিকাভুক্ত করছি নিজেকে।
শেষ নবী হজরত মুহাম্মাদের (সা.) উম্মত হিসেবে যা কখনোই কাম্য নয়। নবীজির (সা.) জীবনাদর্শ গ্রহণ করে আমাদের সত্যবাদী হওয়া উচিত। সত্যবাদী মানুষকে সঙ্গী বানানো প্রয়োজন। সত্য একজন মানুষকে কেবল ধর্মীয় 'অর্জনে'র ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখে, ব্যাপারটা কখনোই এমন একপক্ষীয় নয়। সত্যবাদিতা প্রতিটি মানুষকে তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ এবং ঝামেলামুক্তভাবে বসবাস করতে সহযোগিতা করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।