আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্য না মিথ্যা? সে জানে, সে ই বিচার করুক। আপাতত আমি মুড়ি খাইতে থাকি। (সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে)



মাথার নিচে ঘররর... ঘরররর... করে ভাইব্রেশন হচ্ছে মোবাইলের এলারমের... মোবাইল কাছে নিয়ে ঘুমানো হারাম। শরীরের ক্ষতি করে। বহুত আগে থেকে জানি, কিন্তু কেন জানি তাও কাজটা বার বার করি, আর করবো না। বের হতে হবে, বহুদূর যেতে হবে... ঠিকানা চিনিনা... এলাকার নামটা জানি শুধু, খুজে বের করব। অচেনা জায়গা খুজে বের করতে সমস্যা না, মজাই লাগে।

কিন্তু সমস্যা আজকে হরতাল। পুলিশের দাবড়ানি খেলে দৌড়াতে পারবো না, বাম হাঁটুর লিগামেন্টে প্রবলেম আছে। ধরা খেয়ে যাবো... দু-চার ঘা তো খাবোই... সেই সাথে শ্বশুরবাড়ির জামাই আদর... সব ভেবে নিয়ে বের হলাম, শরীরে ১০২ ডিগ্রী জ্বর। প্রচন্ড উত্তেজনা কিন্তু শরীর কাপছে না। ধরে নিলাম জ্বরের কম্পন যদি একটা ডান দিকে মুখী সরল ছন্দিত কম্পন হয় তব জ্বরের কম্পন বাম দিক মুখী সমমানের তরংগ... সুতরাং নিউট্রাল স্টেট এ আছি।

বাসা থেকে বের হয়েই বিপদ... সকালের মিষ্টি রোদের বদলে কড়া রোদ, দু মিনিটের ভিতরে মাথা চক্কর দিতে আরম্ভ করল... হাতে মোবাইল, জিপিএস কানেকশন অন করেই রিকশা নিলাম। যতদূর পথ চিনি রিকশা ছাড়া গতি নেই। তারপর হাটতে হতে পারে কপালে থাকলে। প্রতিটা মিনিট পার করছি, আর কেমন যেন লাগছে... মনে হচ্ছে গতকাল রাতেও ঘুমাতে যেয়ে কত রকম দুঃস্বপ্ন দেখেছি... একদিনের ছোট কোন ঘটনার দুঃস্বপ্ন না... দীর্ঘ দুবছর ধরে একটু একটু করে জমে উঠা ঘটনার দুঃস্বপ্ন! একটা অতি সাধারন মনস্তাত্ত্বিক বিষয় লক্ষ্য করুন... আপনি এমন একজন কে চিনেন যাকে হারানোর ভয় আপনার আগে কখনও ছিল না... কিন্তু হুট করে একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতি মুহূর্তে ভয় পাচ্ছেন হারিয়ে ফেলার...! কেমন লাগবে অনুভুতিটা? ঠিক তেমন বোধ করছি। সম্পূর্ণ অচেনা একটা জায়গার বিন্দুতে এসে দাড়িয়েছি... পিছনে চেনা পথ, সামনে অচেনা দুরত্ব।

আগাবো কিনা ভাবছি। গুগল ম্যাপে বার বার লোকেশন দেখছি। এখন সাড়ে চার কিলোমিটার বাকি। সোয়া ছয় কিলো রিক্সায় আসছি! অবাক লাগছে! যেই ঢাকা শহরে আমি টিএসসি টু শংকর হেটে হেটে যাই, সেই আমি রিকশায়! তাও এত দূর অতিক্রম করলাম!... নাহ, এবার আগানো যাক... হাটা ধরলাম। বেলা সাড়ে এগারোটা।

মধ্যদুপুর ই বলা যায়। হাটছি আর দুই কোন একটা মোড়ে এসে মোবাইল অন করে লোকেশন দেখছি কোন রাস্তা ধরবো... মাথার ভিতর ঘুরতেছে প্রথম দিনের কথা গুলো। বিকালটার কথা। অতি স্বল্প সময়। তার চোখে অন্যের মায়া আর আমার চোখে তাকে জুড়ে কল্পনার ছায়া... আড়চোখে তাকানোর চেষ্টা... বুঝতে না দেয়ার সচেতনতা... বেলা বারোটা সাইত্রিশ।

হাইওয়ে পার হতে পারছি না... একে তো জ্বর, তার উপর মাথা ঘুরতেছে ভন ভন করে। এত ব্যস্ত রাস্তা কিন্তু ফুটোভার ব্রিজ নেই। শালার ঢাকা শহর! একটু দূরে গেলেই বিশাল ফ্লাইওভার শুরু হবে! ওটার নিচে গেলেই ছায়া পাবো। পার হলাম। একটু যেয়ে বামে মোড় নিলাম।

মোবাইল এর লোকশনে নীল বিন্দুটা বিপ বিপ করতেছে যে আমি ঠিক পথেই আছি। আর মিনিট বিশেক হাটলেই গন্তব্য। বেলা পৌনে একটা। দোকান থেকে পানির বোতল কিনলাম। ঢক ঢক করে খাইলাম।

মনে হচ্ছে অমৃত সুধা। দোকানটাতে দেখলাম আইসস্ক্রিম আছে কি কি? কিন্তু পকেটে ততটা টাকা নেই। ঈদে শেষ করে ফেলছি। যা আছে তা দিয়ে আইসক্রিম খেলে সমস্যায় পড়তে পারি ফেরার পথে। একে তো গরিবী হাল, সুতরাং ঘোড়া রোগের দরকার নেই।

শেষ অব্দি গেলাম, পৌছালাম। বিরক্তি না উৎকণ্ঠা বুঝলাম না, কিন্তু অনেকটা ওইরকম সুরের কন্ঠটা শুনলাম। যদি দেখা পেতাম। ভাল হত। কিন্তু সিচুয়েশন তো ভাবতে হবে।

পাগলামী সবাই করতে পারে না। ফিরে আসলাম, রাজধানীর প্রানকেন্দ্রে এসে একপ্লেট ভাত আর সবজী ডাল খেলাম... মধু... পুরাই মধু। আমি তৃপ্ত। মোড়ে একজন ফকির ভিক্ষা করছে... অসাধারন সুরে গাইছে... ঈদের কারনে হয়ত তার অন্য সঙ্গীরা আজ নেই, ছুটিতে আছে। একদিন নবী মুস্তাফা রাস্তা দিয়া হাইটা যায় একটা ছাগল বান্ধা ছিল গাছেরও তলায় রে... এবার বাড়ী ফেরার পালা... আমি কালো মানুষ... আমার পছন্দের রঙ কালো আমার পরনের গেঞ্জিও কালো... অন্ধকারে দাড়ালে খুজে পাওয়া যায় না... আলোর নিচে দাড়ালে অস্বস্তি লাগে... কৃষ্ণবস্তুর মত আলো শোষন করি... ঝামেলা তৈরী করি... অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমি হাটতে ভালবাসি... হিমুর মত, তবে হিমুর হাতে জিপিএস মেশিন থাকে না, আমার হাতে থাকবে... গন্তব্য ঠিক করে পথ হারাতে ভাল লাগে না, তাই... হরতালের দিনে বহুদূর পথ হেটে হেটে যেতে ভাল লাগে... র‍্যাব/পুলিশের ভয় করে... তবে সমস্যা নেই... ধরা খেলে বলবো অনেক বড় সন্ত্রাসী! ক্রসফায়ার করেন... মরে গেলে বেচে যাই... জানি করবে না, সাহস কম... হাতে পায়ে গুলি করে পঙ্গু বানিয়ে দিবে... র‍্যাব হলে করবে... আমার ভিতর পাপ বোধ নেই, সত্য কথা বলি...তাই ভয় কম উনারা বাদে... কিন্তু মাঝে মাঝে ভয় জেকে বসে যখন পরীতে আছর করে... স্নিগ্ধ, শুভ্র, শ্বাশত, মুক্ত, পবিত্র সে... কিন্তু পরীর কাছে আমি সাইকো... নিছক পাগল এবং বিরক্তিকর পাগলামী... তবে ব্রেন শার্প আছে...মনে রাখি সব... দিন শেষে বিষয়টা উপভোগ্য... বুড়িগঙ্গার পাড়ে চাঁদনী রাতে একবার ঘুরবো... চাদনী রাতে নদীর দুর্গন্ধ কমে যায়... দুইটা হাত আছে... একটা হাত ধরার কেউ থাকলে ভাল লাগবে... বাকি হাত পকেটে রাখব... ছিনতাইকারীদের হাত থেকে পকেট তো বাচাতে হবে... আমার হয়ত এক প্লেট ভাত আর সবজী ডালে চলে যাবে।

কিন্তু তার???

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.