আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দেখা থাইল্যান্ড (পর্ব-৫)

ছোট বেলায় স্কুল ম্যাগাজিন আমি একটা কবিতা লিখেছিলাম। কবিতার প্রথম লাইন দুইটি ছিল এমন 'আমি যদি হতাম পাখি, হতাম আমি নীল আকাশের সাথী। ' পাখি হবার আজন্ম সাধ কিছুটা হলে পূর্ণতা পেল এই পাতায়া শহরে। প্যারাগ্লিডিং এর কল্যাণে ক্ষণিকের জন্য পাখির মতো উড়ার দারুন অভিজ্ঞতা হলো। মাথার উপর নীল আকাশ, পায়ের নিচে নীল জল, মাঝখানে আমি কাধে প্যারাস্যুট কাধে ঝুলিয়ে শুন্যে হাওয়ায় ভাসছি।

এ এক দারুন অভিজ্ঞতা। ও প্যারাগ্লাইডিং ব্যাপারটা কী সেইটাও তো বলা হলো না। প্যারাগ্লাইডিং হলো স্টীমারের পিছনে প্যারাস্যুট বেঁধে অভিযাত্রীকে পাখির মতো উড়তে সাহায্য করা। পাতায়া থেকে কোরাল আইল্যান্ড যাবার পথে আমাদের গাইড প্যারাগ্লাইডিং এর জন্য মাঝ সমুদ্রে আমাদের নামিয়ে দিল। পাতায়া সৈকত থেকে স্টীমারে মিনিট পাঁচেক দূরে সমু্দ্রের মাঝে প্যারাগ্লাইডিংএর আয়োজন করা হয়েছে।

প্যারাগ্লাইডিং জন প্রতি পাঁচশ বাথ। বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৪০০ টাকা। প্রতিজন পাঁচ থেকে সাত মিনিটের জন্য প্যারাগ্লাইডিং-এ আকাশে উড়া সুযোগ পায়। এত অল্প সময়ের জন্য এমন আকাশ ছোয়া মূল্য! কিন্তু আকাশে উড়া বলে কথা, দলে দলে ছোট বড় সব বয়সী পর্যটকই প্যারাগ্লাইডিং-এর রোমাঞ্চ লুফে নিতে সারিবদ্ধ লাইনে দাড়িয়েছে। প্যারাগ্লাইডিং থেকে অপেক্ষায় যেন রোমাঞ্চ বেশি।

সেফ জ্যাকেট পরে প্রায় আধাঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে আছি। আর দেখছি, প্যারাগ্লাইডিং সম্পন্নদের উচ্ছ্বাস। প্যারাগ্লাইডিং করা একেকজনের চোখে মুখে যে আনন্দের হল্কা দেখা যায় তাতেই অপেক্ষমানদের রোমাঞ্চ বাড়িয়ে দেয়। নিঃসন্দেহে প্যারাগ্লাইডিং-এ অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা, যা সচারচর পাওয়া যায় না। দেখতে দেখতে আমার টার্নও এলো।

আমার সেফ জ্যাকেটের সাথে প্যারাস্যুটা বিশেষ হুকের মাধ্যমে আটকে দেওয়া হলো, আমি হাত পা সবই যেমন খুশি তেমন নাড়াতে পারবো কিন্তু নিচে পড়ে যাবো না। পিঠে প‌্যারাস্যুট বাঁধা শেষে প্যারাস্যুটের সাথে বাঁধা স্টীমার যেই ছুটলো ওমনি আমি এক পলকে আকাশে। আহা কী আনন্দ! দুই হাত প্রসারিত করলাম। পাখিরা কেমনে হাওয়ায় ভাসে উপলব্ধি করার চেষ্টা করলাম। আকাশে উঠে নিজেকে কেমন হালকা হালকা লাগছে।

উপস্থিত সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হতে বেশ লাগছে। সারাটা দিন যদি এমনি আকাশে ভেসে থাকা যেন! সেটা তো সম্ভব না। তাই মনে মনে প্রার্থনা করলাম ইস যদি প্যারাস্যুটটা ছিড়ে যায়! তাহলে মাঝ সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া অভিজ্ঞতাও হয়ে যাবে। আমি জানি যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া আছে, তাই মাঝ সমুদ্রে পড়ে অন্তত ডুবে মরবো না এইটা নিশ্চিন্ত।

অতএব প্যারাস্যুট ছিড়ে নিচে পড়ার প্রার্থনা করা যেতেই পারে। এখানে ব্যতিক্রম কিছু ঘটুক। কিন্তু প্রার্থনা কবুল হলো না আর সবার মতো নির্দিষ্ট সময় পর আমাকেও নিচে নামিয়ে দেওয়া হলো। প্যারাগ্লাইডিং শেষ হলেও এর রেস অনেকক্ষণ রয়ে যায়। সবচেয়ে অবাক হলাম যখন দেখলাম আমার অজান্তেই ওরা আমার প্যারাগ্লাইডিং এর মুহুর্তটা ওরা ফ্রেমবন্দি করে রেখেছে।

ফ্রেমেবাধা ছবিটা এতটাই লোভনীয় যে ওদের কাছ থেকে না কিনে পারা গেল না। সামান্য প্লাস্টিকের ফ্রেমে একটা ছবি, ১০০ বাথ। নো বার্গেনিং। প্রতি মিনিটেই একজন করে প্যারাগ্লাইডিং করছে। তাদেরকে সনাক্ত করে ঠিক তাদের কাছেই নির্দিষ্ট সময় পরে ছবি পৌছে প্রমাণ করলো থাইবাসী বিপনণটা ভালোই রপ্ত করেছে।

প‌্যারাগ্লাইডিং-এর ঘন্টা চারেক পরে আমরা যখন কোরাল আইল্যান্ড ঘুরে পাতায়া সৈকতে নামলাম তখন দেখি একজন আমাদের দলের সবার ছবি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমরা সবাই একের পর এক প‌্যারাগ্লাইডিং করেছি এমন নয়। দেখা গেছে আমি করেছি আমার পিছে অপরিচিত একজন সামনে অপরিচিত একজন। এর মাঝেই ঠিকই ওরা ঠিকই আমাকে আলাদা করে রেখেছে। তাই সবাই যখন নিজের প‌্যারাগ্লাইডিং এর আকর্ষণীয় ছবি ফ্রেমে বাঁধা অবস্থায় পেলাম।

তখন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। ১০০ বাথ তো ব্যাপারই না। পাতায়া শহরে এমন অনেক কিছুই আছে, কেউ আপনাকে জোর করবে না কিন্তু এমনভাবে ওরা উপস্থাপন করবে যে আপনার পকেট থেকে বাথ এমনি এমনিই বের হয়ে যাবে। থাইবাসী টাকা কামানো ফন্দী ভালই রপ্ত করেছে। (চলবে...) আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১ আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-২ আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৩ আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৪  ।


আরো পড়ুন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.