আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দেখা থাইল্যান্ড (পর্ব-৩)

ওয়াকিং স্ট্রীট রাত্রের খাবার শেষে আমরা গেলাম ওয়াকিং স্ট্র্রীট। ওয়াকিং স্ট্রীট নাম শুনেই বুঝছেন হাটাহাটি করার রাস্তা। সন্ধ্যার পরে রাত দুইটা পর্যন্ত এই রাস্তায় কোন যান চলে না। সবাই হাটে আর নয়নভরে উপভোগ করে রাস্তার দুই পাশের বর্ণিল জগত। বাইরের জগত, পর্দারর আড়ালের জগত।

পাতায়া সৈকতের পাশেই প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে ওয়াকিং স্ট্রীটের আধিপত্য। বিনোদন ভরপুর রঙিন জগত। ওয়াকিং স্ট্রীট রাস্তায় নেমে প্রথমেই ভিমড়ি খেলাম। কই এলাম রে বাবা ! রাস্তার দুইপাশে বারের দোকান সারি সারি। দোকানের সামনে কামুকি ভঙ্গিমায় স্বল্পবসনের নারীরা আগন্তুকদের দিকে তাকিয়ে মোহময় হাসি দিচ্ছে।

কেউ যদি সেই হাসিতে সম্মোহিত হয়। তার জন্য কালো পর্দা ঢাকা বারে অপেক্ষা করছে আরো মোহনীয় জগত। [ওয়াকিং স্ট্রীটের লাস্যময়ী নারীরা] হলিউডের সিনেমায় এমন দৃশ্য দেখেছি। লাস ভেগাসের রঙিন আলোচ্ছটা এই পাতায়াতেই পাওয়া যাবে ভাবিনি। এখানে মদ, নারী, যৌনতা কোন ব্যাপারই না।

ওয়াকিং স্ট্রীট জুড়েই সারি সারি বারবনিতারা নিজেদের বিপননের জন্য তৈরি হয়ে আছে। প্রতি দশমিটার পর পর দালালরা আপনার সামনে হাজির হবে। হাতে প্লাকার্ড। চিৎকার করে আগন্তকদের আহবান জানাচ্ছে। *** শো দেখার জন্য।

কালো পর্দারর আড়ালে কী শো চলছে বারের সামনে দাড়ানো নারীদের ভঙ্গিমায় কিছুটা আন্দাজ করা যায়। [নাইট ক্লাব] পর্দার বাইরের দৃশ্যও কম উপভোগ্য নয়। ভোক্তাদের আকর্ষণে তাদের আয়োজনও ব্যপক। বারের দোকানে বসে মনের আনন্দে অ্যালকোহল পান করুন আর হাত ছোয়ালেই পাওয়া যায় এমন দূরত্বে উপভোগ করুন স্বল্পবসনা নারীদের উদ্দ্যম নৃত্য। অবশ্য একে নৃত্য না বলে জিমন্যাস্টিকের কসরতই বলাই বেশি মাননসই।

ছোট মঞ্চে রড ধরে স্বল্পবসনারা শরীরকে নানা ভঙ্গিমায় কষ্টকরভাবে ঘুরাচ্ছে। দেখে মায়ায় হয়। আহা বেচারীরা ! শুধু পানীয়র জন্যই আপনাকে পয়সা খরচ করতে হবে। এতোকাছে বসে এই যে স্বল্পবসনা নারীদের নৃত্য দেখেছেন তার জন্য কোন পয়সা খরচ না করলেও চলে। এইসব কিছু যদি আপনার কাছে অশ্লীল মনে হয় তাহলে না হয় নির্ভেজাল সঙ্গীতই শুনন।

অথবা ড্যান্স পার্টিতে যোগ দিন। অথবা রেস্তোরায় বসে সামুদ্রিক মাছ খেতে সন্ধ্যাটা উপভোগ করুন। ওয়াকিং স্ট্রীট কেউ এসে নিরাশ নাহয় তার সব ব্যবস্থায় এখানে করা আছে। যার যেমন খুশি মনভরে বিনোদন নিন। ইচ্ছা হলে পয়সা খরচ করুন, না করতে চাইলেও কেউ আপনাকে জোড় করবে না।

বিনোদনকেই এখানে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়েছে। বিনোদনের নামে কেউ যাতে হেনস্তা না হয় সে ব্যাপারে এরা বেশ সচেতন। [ওয়াকিং স্ট্রীটের রাস্তায় এক ভিক্ষুক। ভ্যাম্পায়ার সেজে এসেছে] ওয়াকিং স্ট্রীটে হাটতে হাটতেই দেখলাম স্ট্রীট ম্যাজিক শো, স্ট্রীট ড্যান্স। জীবনে প্রথমবার।

থাইল্যান্ডে অনেককিছুই ফার্স্ট টাইম ইন মাই লাইফ হয়ে আছে। ওয়াকিং স্ট্রীটে হাটতে হাটতে মনে হচ্ছিল আহ্ কী সুন্দর আলোঝলমলে পৃথিবী। কোথাও কোন দূঃখ নেই, কারও মনে কোন কষ্ট নেই। আনন্দই জীবন। জীবন মানেই আনন্দ।

ওয়াকিং স্ট্রীটে সন্ধ্যার পরে রাত, রাত থেকে মধ্য রাত কিভাবে যে পেরিয়ে যায়.... সানবাথ বাংলায় অর্থ দাড়ায় সূর্যস্নান। নেংটি পরে অথবা না পরে সূর্যের আলোর নিচে সাদা চামড়া রোদে পুড়িয়ে কালো করার ব্যর্থ চেষ্টায় সূর্যস্থান। এই সূর্যস্নান প্রথমবারের মতো স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলাম পাতায়ায় আমাদের প্রথমদিন সকালে। সেদিন পাতায়ার আকাশে ঝকঝকে রোদ। এত মূল্যবান রোদ এক মুহুর্ত বৃথা যেতে দিবো না এমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কতিপয় নেংটি পরিহিত সাদা চামড়ার নর-নারীকে দেখা গেল হোটেলের সুইমিংপুলে সকালবেলায়ই আয়েশিভঙ্গিতে সূর্যস্নানে মগ্ন।

সুইমিংপুলে নরদের থেকে নারীদের উপস্থিতি বেশি। সচরাচর নারীরায় একটু বেশি রুপ সচেতন কিনা! হোটেলের লিফট থেকে নেমে বাদিকে চোখ পড়তেই হঠাৎ থমকে গেলাম। গতকাল রাতে হোটেলে উঠেছি তাই রাতের আধারে দেখতে পারা যায়নি। এখন এই ঝকঝকে দিনের আলোয় হোটেলের সুইমিংপুলটা ঝিলমিল করছে। দেখে মনে হয় মার্বেল পাথরের তৈরি।

আয়তনে যেমন বড় তেমনি বেশ খোলামেলা। সুইমিংপুলের পাশে ঘুড়েবেড়ানো অথবা বিশ্রাম নেবার অথবা সানবাথ করার, যাই বলেন, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। সাতসকালেই সেই সুব্যবস্থার যথার্থ ব্যবহার সচেষ্ট সাদা চামড়ার নর-নারীরা। সূর্যস্নান দেখার প্রথম অভিজ্ঞতা মনকে যে পুলকিত করেছিল। সময়ের সাথে সাথে সেই পুলকভাবটা ম্লান হয়ে গেল।

পাতায়া সৈকত, কোরাল আইল্যান্ডে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। এখানে এইটাই স্বাভাবিক। সাদা চামড়ার এই মানুষগুলো বহু দূর থেকে এখানে এসেছে প্রাণভরে রোদের আলো শরীরে মাখামাখি করতে। এমন ঝলমলে আকাশ, রোদ এদের কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। শরীরে প্রতিটি কোষই এই স্বপ্নিল আলোর স্পর্শ পেতে চায় চোখে রোদচশমা।

হাতে বই অথবা কানে হেডফোন। প্রায় নগ্ন হয়ে নির্লিপ্তভাবে ঘন্টার পর ঘন্টার এরা কিভাবে খোলা আকাশের নিচে সময় কাটায় মনে কৌতুহল জাগায়। সত্যি বলছি, প্রথম প্রথম হা করে তাকিয়ে ছিলাম। অতি উৎসাহী বাঙলার সন্তানেরা সূর্যস্নান দৃশ্যগুলো ডিজিটাল ক্যামেরার মেমরি কার্ডে সংরক্ষণ করতে লাগলো। কিন্তু সূর্যস্নানরতরা নির্বিকার।

তাদের ভাবের কোন পরিবর্তন হলো না। তালি যেমন এক হাতে বাজে না তেমনি যাদের ছবি এত আগ্রহভরে তোলা হচ্ছে তাদের যদি কোন ভাবান্তর না হয় তাহলে সেই কাজে মজাটা কোথায়। তাই বাঙালী সন্তানেরাও অল্পসময়ের মধ্যে উৎসাহ হারিয়ে ফেলল। সানবাথ না আসুন প্রকৃতি দেখি। (চলবে...) আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১ আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-২  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

আরো পড়ুন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.