মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় আমরা হয়তো জাতি হিসেবে মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ। এ লাইন পড়ার পর যার মনে বিন্দু মাত্র দেশপ্রেম আছে, তিনি আমাকে গাল মন্দ করতে ছড়বে না। আবার অনেকে এ লাইন পড়ার পর হয়তো পড়া বন্ধ করে দিতে পারেন। তাদের বলছি যত খারাপ লাগুক না কেন দয়া করে পুরো পোষ্টটি ধ্যর্য সহকারে পড়ুন। হয়তো আমার লেখার অদক্ষতার কারনে লেখাটি সুখপাঠ্য হবে না, তারপরও আশা যদি বিষয়টি কোনভাবে আপনাদের বুঝাতে পারি।
ঘটনার শুরু গত ৩০-০৭-২০১২ইং তারিখে “দৈনিক প্রথম আলো”তে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন থেকে। পত্রিকায় ১৬ নম্বর পৃষ্ঠাতে আমাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টেলিটক এর একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে 3G সেবা নিয়ে। বিজ্ঞাপন এ শুরুতেই বলা হচ্ছে, টেলিটক Gravity ক্লাব এ যোগ দিয়ে কোনরকম ধাক্বাধাক্কি-মারামারি ছাড়াই নিশ্চিত করুন আপনার কাঙ্ক্ষিত 3G সংযোগ। এরপর বোনাস অফার এ বলা হচ্ছে, Gravity ক্লাব রেজিস্টার্ড সর্বোচ্চ রিচার্জকারীদের ২ মাস পর থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে 3G সংযোগ প্রদান করা হবে।
তাহলে কি আমরা আবার দেখতে চলেছি সেই পুরোন নাটক?
আমরা দেখেছিলাম এই টেলিটক-ই যখন তাদের যাত্রা শুরু করে তখন মানুষ কিভাবে রাত জেগে লাইনে দাড়িয়ে, পুলিশের লাঠি পেটা উপেক্ষা করে সিম সংগ্রহ করতে গিয়েছিল।
দূর্ভাগ্য তাদের সবার ভাগ্যের শিকে ছিড়েনি। মুষ্টিমেয় কিছু লোক শুধুমাত্র সিম নয় ফরম পেয়েছিল। সেই ফরম নিয়ে আবার দৌড়াদৌড়ির পর সিম হাতে পাওয়া। বেশিরভাগ লোকের ইচ্ছা অধরাই থেকে গিয়েছিল। পরবর্তীতে আবার অনলাইন লটারির মাধ্যমে সিম ছাড়লো।
যাই হোক পুরোন প্যাচাল পারতে চাচ্ছি না। এখন যদি বলা যায় টেলিটকের অবস্থা কেমন? কি উত্তর দিবেন? কিছু চাকরিপ্রাথীর মানিব্যাগে টেলিটক সিম থাকে, বিভিন্ন নিয়োগের তথা কথিত ব্যাংক ড্রাফট করার জন্য। কিন্তু যাত্রার শুরুতে যদি তারা গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করত আজ অবস্থা কি দাড়াত?
তাহলে কি আমরা শংকিত থাকতাম কখন গ্রামীণ ফোন তাদের লভ্যাংশ তুলে নিয়ে যায় আর আমরা বৈদেশিক মুদ্রা রির্জাভের ঘাটতিতে পড়ি। এই চার বৈদেশিক কোম্পানি যে কত লভ্যাংশ দেশ থেকে নিয়ে যায় তার সঠিক হিসাব আমরা কেউ জানি না। তবে এক গ্রামীণফোন গত বছর ২০৫% লভ্যাংশ* অর্জন করেছে যা টাকার হিসেবে এক হাজার আটশত উন নব্বই কোটি টাকা।
আবার শুরু হয়েছে সেই পুরোন না্টক 3G নিয়ে, তাই বলি Gravity ক্লাব বুঝি না। যারা শত বাধা উপেক্ষা করে নিয়মিত টেলিটক ব্যবহার করেন তাদের সুবিধা দিবেন দেন তার সাথে 3G সংযোগের কি সম্পর্ক?
দেন তাদের 3G ফ্রি করে বা অর্ধেক মূল্যে বা অন্য কোন বিশেষ অফার, তাতে কে আপত্তি করছে? কিন্তু নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরোন নাটক হলে আমরা আমদের শেষ সুযোগ হারাব, যা আগে হারিয়েছি।
সরকারের কাছে কি এমন মেধা সম্পন্ন লোক নাই যারা সিম বা সেট ব্যবহারকারীর পরিসংখ্যান যাচাই করে ঢাকা শহরে আনুমানিক কত জন ৩জি সেবা গ্রহণ করতে পারে তার হিসেব বের করতে পারে। সেই সম্ভব্য সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুযায়ী পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এক কথায় কেউ যেন ৩জি সেবা গ্রহণ করতে চাইলে; তাকে যেন লটারি, লাইনে দাড়ানো বা খালি হাতে ফিরতে না হয়।
পরিকাঠামো, অবকাঠামো বা সক্ষমতার অজুহাত দেখাবেন, তা চলবে না। সেবা প্রদান করতে যা করার দরকার তা করুন আপনাদের বাধা দিচ্ছে কে, স্বাধীনতার পর থেকে বিমান যদি লোকসান গোনার পরও আজও সচল থাকতে পারে। আর টেলিযোগাযোগ একটি সম্ভবনাময় খাত হবার পরও কেন তার উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন না?
ব্যান্ডউইথ যেন নষ্ট করা না হয়। কিছু দিন আগেই একটি ব্লগ পোষ্ট পেড়েছিলাম তাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ যে পরিমান ব্যান্ডউইথ কিনেছে তার শুধু মাত্র এক তূতীয়াংশ ব্যবহৃত হচ্ছে আর অবশিষ্টাংশ নষ্ট হচেছ। এটি তো আর সঞ্চয় করে রাখার মত জিনিস না।
সেবা যেন স্রাশ্রয়ী মূল্যে প্রদান করা হয়। তাছাড়া যতই কিছুই করি না কেন গ্রাহক সংখ্যা আশানুরূপে বাড়বে না।
পরিশেষে একথা বলতে চাই কোন রকমের ভুল পদক্ষেপ, ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বা অযোগ্যতার করনে, ঘরের ছেলে ঘরে ফেরানো সুযোগ যেন হাত ছাড়া না হয়ে যায়। সবচেয়ে বড়, যারা নীতি নিধারক বা অন্যান্য বড় জায়গায় প্রতিষ্ঠিত, তারা দয়া করে আমাদের সুযোগ দিন দেশকে ভালবাসতে, দেশের জ্ন্য কিছু করার, তা যত প্রচ্ছন্নই হোক। খুব কষ্ট হয় যখন দেখি আমাদের দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অন্যান্য দেশ নিয়ে যায়।
*সূত্র:http://dsebd.org/displayCompany.php?name=GP
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।